কয়েক যুগ ধরে চলতে থাকা মধ্যপ্রাচ্য সংকটের অন্যতম ঘটনা হল আরব-ইসরায়েল সংকট। ইসরায়েল যেমন চাচ্ছে তাদের স্বপ্ন রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করতে, ঠিক অন্যদিকে ফিলিস্তিনও চাচ্ছে তাদের ন্যায্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকার। এসব কিছু মিলিয়ে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য এখনো উত্তপ্ত। গেল কিছুদিন আগে এই উত্তেজনা নতুন মাত্রা লাভ করে। এসময় একদিকে যখন শান্তি প্রতিষ্ঠাতার মাইল ফলক দাবী করে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমে তাদের দূতাবাস স্থাপন করছে ঠিক একই সময় অন্য-প্রান্ত গাজায় ফিলিস্তিনদের উপর দিয়ে চলতে মৃত্যুর মিছিল। তবে কেন এই হাজার হাজার ফিলিস্তিনী নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আন্দোলনে গিয়ে মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণ করে নিচ্ছে? আর কেনইবা ইসরায়েলিরা তাদের উপর আক্রমণ করছে? ইসরায়েলিদের কি আসলেই এই অঞ্চলে থাকার অধিকার আছে? আন্তর্জাতিক বিশ্বের ভূমিকা কি ঠিকমত পালন করা হচ্ছে? ফিলিস্তিনদের ভবিষ্যৎ কি? এসব প্রশ্ন অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। তবে কেউ কেউ এর পেছনের কারণগুলো জানে আবার অনেকেই হয়তো জানেনা। তাদের জন্যই এই পর্বটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সকল সংকট ও পেছনের কথা ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ।
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমি:
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস শত বছরের চেয়েও কম। কিন্তু বহুকাল আগে খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে এ অঞ্চলে তাদের বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায় সেসময় তারা ইসরায়েল হিসেবে আলাদাভাবে পরিচয় লাভ করে নি।
ইসরায়েলরা মুসা (আ:) এর বংশধর তাই তাওরাতে বর্ণিত ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি ‘ক্যানান’কেই বর্তমানে ফিলিস্তিন, জেরুজালেম এবং জর্ডন, সিরিয়া, মিশরের কিছু অংশ হিসেবে ইসরায়েলরা দাবী করে, যদিও তাদের এ দাবির পিছনে অন্যদের মতানৈক্য রয়েছে। যিশুর আবির্ভাবের পর তাদের ক্ষমতার পট পরিবর্তন হতে থাকে, এর ধারাবাহিতায় খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতকের দিকে কনস্টান্টিনোপল সাম্রাজ্য কর্তৃক তাদের ক্ষমতা হারাতে থাকে, তার পরবর্তী সময়ে ৭ম শতকে তারা পারস্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পরে।
এরপর ক্রুসেডের মধ্যদিয়ে কিছু সময়ের জন্য জেরুজালেম খ্রিষ্টানদের হাতে চলে যায় এবং ১১৮৭ সালে আবার মুসলমানদের হাতে চলে আসে। এসব ডামাডোলে এ অঞ্চলে ইহুদিদের অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পরে যার দরুন তারা ইউরোপে পাড়ি জমাতে শুরু করে। ফলে রাশিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং জেরুজালেম থেকে তাদের অবস্থান প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে। অপরদিকে ১৮৮২ সালে রাশিয়ার ইহুদীদের দ্বারা “জায়ন” আন্দোলন শুরু হয়।
জায়ান হল জেরুজালেমের একটি পাহাড়, যাকে তারা ঐক্যবদ্ধ হবার নিদর্শন হিসেবে গ্রহণ করে এবং তারা ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও আলাদা ইহুদী রাষ্ট্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৮৯৭ সালে “জায়োনিস্ট” সংঘ গড়ে তোলে। তারপর থেকেই তারা ধীরে ধীরে প্যালেস্টাইন অঞ্চলে অল্প পরিমাণে আগমন করতে থাকে। এরই ধারাবাহিতায় ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় আর্থার ব্যালফোর কর্তৃক প্রকাশিত হয় “ব্যালফোর ঘোষণা”। যার প্রধান বক্তব্য হল প্যালেস্টাইন অঞ্চলে ইহুদীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গড়ে তোলা।
এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা অটোমানদের হাত থেকে ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। ফলে প্যালেস্টাইন অঞ্চলে ইহুদীদের আগমন বৃদ্ধি পায়। তার উপরে ১৯৩৩ সালে হিটলার কর্তৃক ইহুদী নিধন শুরু হলে এই অংক বিশাল হয়ে দাড়ায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময় বিপুল পরিমাণ ইহুদী সমগ্র বিশ্ব থেকে এখানে এসে জড়ো হয়। ফলে বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাদের সংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাবার কারণে তা অঞ্চলের স্থানীয় আরব মুসলিমদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাছাড়া ইহুদীদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তারা প্যালেস্টাইনের নতুন নতুন ভূমি অধিগ্রহণ করতে থাকে যা প্যালেস্টাইনসহ তার আশে-পাশের আরবরা সহজে মেনে নিতে পারেনি। ফলে শুরু হয় ইহুদী বনাম আরব বিরোধ।
এরমধ্যেই গঠিত ইহুদীদের সন্ত্রাসী সংঘটন “ইর্গুন কিং” যাদের নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালের জেরুজালেমের কিং ডেভিড হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ সহ আরও বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যার অধিকাংশই ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে। ফলে ইহুদী-মুসলিম সংঘাত চরমে উঠে। এইসময়ে ব্রিটিশরা চাতুর্যের সাথে এই অঞ্চলে দায়িত্ব জাতিসংঘের হাতে অর্পণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে এ অঞ্চল থেকে বিদায় নেয়।
জাতিসংঘ ১৯৪৭ সালে জেরুজালেমসহ সমগ্র প্যালেস্টাইন অঞ্চলকে তিন ভাগে ভাগ করে-পশ্চিমাংশে ইসরায়েল, পূর্বাংশে প্যালেস্টাইন এবং জেরুজালেমকে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। এরপর ১৯৪৮ সালের ১৫মে জাতিসংঘ ইসরায়েলকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর পরই ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া স্বীকৃতি দান করে। অপরদিকে কৌশলে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতার বিষয়টি এড়িয়ে যায়। যা আরবলীগ কর্তৃক ব্যাপক সমালোচিত হয়। ফলে শুরু হয় আরব-ইসরায়েল সংঘাত এতে জড়িয়ে পরে মিশর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক প্রভৃতি আরব রাষ্ট্র। এর ধারাবাহিকতায় আরব-ইসরায়েলদের মধ্যে ১৯৫৬ ও ১৯৬৭ সালে বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই সংঘাত বর্তমান পর্যন্ত গড়িয়েছে যদিও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্যালেস্টাইনরা সকলের সহায়তা হারিয়ে একাই লড়ে যাচ্ছে ইসরায়েলদের বিরুদ্ধে।
প্যালেস্টাইনের উপর ইসরায়েলের দখলদারিত্ব ও অত্যাচার:
১৯৪৭ সালে যখন প্যালেস্টাইনকে দুই ভাগ করে তখন মোট ভূমির ৫৭% ইসরায়েলকে এবং বাকি ৪৩% দেয়া হয় প্যালেস্টাইনকে। যদিও এই ভাগ করা ছিল প্যালেস্টাইনের উপর বড় ধরনের অবিচার। কারণ তখন প্যালেস্টাইনের জনসংখ্যা ছিল ইসরায়েলের তুলনায় অধিক। কিন্তু এখানেই শেষ নয় ইসরায়েলকে উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে সীমানা নির্দিষ্ট না করে দেয়ার সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে তারা প্রায় ৭৭% ভূমি দখল করে নেয়।
এর ফলে ফিলিস্তিনদের উপর নেমে আসে নির্মম অত্যাচার নির্যাতন ও তাদেরকে করা হয় বাস্তুহারা। এতে শুরু হয় ফিলিস্তিনের হত্যা মিছিল যা বর্তমান সময় পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্যালেস্টাইন পশ্চিম তীর ও গাজায় নামে মাত্র স্বায়ত্তশাসন লাভ করে কিন্তু চারপাশে ইসরায়েলের বহুতল বসতি ও ক্রমবর্ধমান অত্যাচারের ফলে প্যালেস্টাইনদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে।
২০০০ সাল পরবর্তী সময়ে প্যালেস্টাইনের রাজনৈতিক সংগঠন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে চালাতে থাকে হত্যাকাণ্ড এবং এর পিছনে বিশ্ব মিডিয়াসহ প্রথম বিশ্বের দেশসমুহ সমর্থন দিতে থাকে। ২০১৪ সালে হামাস গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের অত্যাচারের জবাব দেয়ার জন্য মিসাইল ছোড়া শুরু করে। কিন্তু ইসরায়েলের আধুনিক সমরাস্ত্রের সামনে তাদের এই মিসাইল নিছক প্রতিবাদ মাত্র। অপর দিকে ইসরায়েল প্যালেস্টাইনের সামরিক/বেসামরিক মানুষদের উপর চালায় ভয়াবহ নারকীয় হত্যাকাণ্ড, দেড়-মাসের অধিক সময় ধরে চলতে থাকা এ-যুদ্ধে প্রায় তিন হাজারের অধিক প্যালেস্টাইনের নাগরিক নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়। তার-পরবর্তী সময়ে থেমে থেমে প্যালেস্টাইন সীমান্তে চলে গ্রেপ্তার, খুন, নির্যাতন। এর ধারাবাহিতায় গত ১৫মে ২০১৮, প্যালেস্টাইনের ৭০তম নাকবা দিবসের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর উপর হামলা চালায়। এতে কমপক্ষে ৬০জন নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়। যাকে ইসরায়েল নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা হিসেবে প্রচার করছে, যা স্পষ্টতই একধরনের প্রোপাগান্ডা।
ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাত ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের ভূমিকা:
প্যালেস্টাইনে হাজারো নিরীহ শিশু, নারী-পুরুষ নিহত হচ্ছে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি-ক্রিয়া কি? বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব মানবাধিকারের বিষয়ে সোচ্চার থাকলেও আজ কেন তারা শুধু প্যালেস্টাইনের বিষয়ে নীরব তা শান্তিকামী মানুষদের মনে প্রশ্ন থেকে যায়। তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখা উচিত। ইসরায়েলের জন্মের সূত্রপাত হয় বর্তমানের অন্যতম সুশীল রাষ্ট্র যুক্তরাজ্যে। তাদের জন্মলগ্ন হতেই ব্রিটিশরা তাদের সাহায্য করে আসছে। ফলে তারা প্যালেস্টাইনের সকল অন্যায় অবিচার দেখেও সবক্ষেত্রে থাকে নীরব।
তার-পরবর্তীতে যে দেশটির ভূমিকা উল্লেখ করতেই হবে সেটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তারা সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময়কাল হতে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে চলছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইসরায়েলকে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আরব-ইসরায়েলের যুদ্ধের পর আরব অঞ্চল যখন বিশ্বের উপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বড় হুমকির মুখে পড়ে। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র একদিকে যেমন সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরবদেশে তাদের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, অপরদিকে তাদের আশঙ্কাও ছিল যদি আরব বিশ্ব একত্র হয়ে যায় তখন কি হবে, কিভাবে তাদের দমিয়ে রাখবে।
এই আশঙ্কা থেকে ব্যাকআপ ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েলকে মদদ দিয়ে তাদের হাতে রাখে, এর বাহিরেও বহু সংখ্যক ইহুদী ব্যবসায়ী মার্কিন মুল্লুকে বহু ধন বিনিয়োগ করে ফলে ইহুদীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা তাদের জন্য আবশ্যক ছিল। ফলে ইসরায়েলের সকল অপরাধ মার্কিনীদের সামনে ম্লান হয়ে যায় এবং ইসরায়েলের অবৈধ দখলদারিত্বকে সমর্থন করে। অপরদিকে ফিলিস্তিনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান ও ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের ছুতা ছুড়ে সমর্থন দিয়ে দেয়। এর ধারাবাহিকতায় মার্কিন তথা পশ্চিমা লেজুড়বৃত্তি করা দেশ সমূহ সহসাই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে নেয়।
কিন্তু এখন প্রশ্ন থেকে যায় আরব বিশ্ব প্যালেস্টাইনের অধিকারের ব্যাপারে সোচ্চার নয় কেন? এর পিছনে প্রধান কারণ হল সৌদি আরব, মিশর, কাতার স্পষ্টতই মার্কিনদের আঙুলের ইশারায় চলছে। ফলে মার্কিনীদের মতের বিরুদ্ধে তারা শক্ত অবস্থান নিতে পারছে না। তাছাড়া ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াদের নিজেদের অবস্থাই নাজুক অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার জন্য। তুরস্ক ও ইরান কিছু প্রতিবাদের ভাষা ব্যাবহার করলেও এর পিছনে প্রধান কারণ থাকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ। ফলে ফিলিস্তিনের পাশে শক্ত অবস্থান নিয়ে কেউই দাঁড়াচ্ছে না। সুতরাং স্রোতের বিপরীতেই চলতে হচ্ছে স্বাধীনতাকামী এই মুসলিম দেশটি।
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ:
ফিলিস্তিনের আগামীর ভবিষ্যৎ কি হবে? আসলেই কি ফিলিস্তিনীরা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করতে পারবে নাকি স্বাধীনতা তাদের কাছে সারাজীবন স্বপ্ন হিসেবেই থেকে যাবে? তা যদিও সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না, তবে পূর্বের ইতিহাস এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে কিছুটা ভবিষ্যৎ আভাস পাওয়া সম্ভব। তাহলে প্রথমেই একটা পরিসংখ্যান দেখা যাক-
১৮২২ সালে প্যালেস্টাইন অঞ্চলে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল ২৪,০০০ এর কাছাকাছি যা তখনকার এ অঞ্চলের বসবাসরত জনসংখ্যার ১০% এর নিচে। তার-পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা বেড়ে ১৯২২ সালের দিকে ৬৫,০০০ এ উপনীত হয়। এটি ছিল মূল জনসংখ্যার প্রায় ১৬% এর মত। কিন্তু এর মধ্যে ব্যালফোর ঘোষণা প্রকাশিত হওয়ায় এবং হিটলারের ইহুদীরা বিশাল আকারে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ-অঞ্চলে আগমন করতে থাকে। ফলে ১৯৩৬ সালে তার পরিমাণ দাড়ায় ৩ লক্ষতে, আর ১৯৪৮ সালে এই পরিমাণ পৌঁছে যায় ৬ লক্ষে। বর্তমান ইসরায়েলের জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ লক্ষাধিক।
অপরদিকে প্যালেস্টাইনের জনসংখ্যা ১৯৪৮ সালে যেখানে ছিল ১কোটি ১০ লক্ষের মত, বর্তমান সময়ে তা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫লক্ষের কাছাকাছি এবং তাদের উপর চলমান হত্যাকাণ্ড ও বাস্তু-চ্যুত করার কারণে এই সংখ্যা ক্রম পতনের দিকে। তাছাড়া প্যালেস্টাইনকে ভাগ করার সময় ৪৩%ভূমি প্যালেস্টাইনদের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ইজরাইলের ভূমি আগ্রাসনের কারণে তা কমে ৩৩% এসে দাঁড়িয়েছে এবং এই আগ্রাসন বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে।
এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে ইসরায়েলের আগ্রাসন কে যদি না ঠেকানো যায় তবে অচিরেই এ-অঞ্চল থেকে প্যালেস্টাইন নামের একটি জাতিসত্তার বিলুপ্তি ঘটে যাবে। যেমনটা ঘটেছিল রেড ইন্ডিয়ান ও হূন জাতির ক্ষেত্রে। যেহেতু প্যালেস্টাইনদের এই নিধনের পেছনে বিশ্ব-মোড়ল রাষ্ট্রসমূহের পরোক্ষ ইন্ধন রয়েছে, তাই এ দাবীকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। অপরদিকে হামাসের প্রতিরোধে ইসরায়েল প্যালেস্টাইনদের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। তাই যদি হামাস ও ফাতাহ সকল ভেদাভেদ/কোন্দল ভুলে একই পতাকা-তলে সমবেত হয়ে স্বাধীনতার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় এবং আরব-লীগের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা থাকে তাহলে এ-অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠাসহ স্বাধীন প্যালেস্টাইনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব। তবে ফাতাহ -হামাস কি একই পতাকা তলে সমবেত হবে এবং আরবলীগ কি তাদের ভূমিকা পালন করতে পারবে তা এখন দেখার বিষয়।
প্যালেস্টাইন তথা মধ্যপ্রাচ্যে চলতে থাকা এই নির্মম হত্যা যজ্ঞ, নির্যাতন সমগ্র বিশ্বের শান্তিকামী সকল মানুষকে আহত করে। আধুনিক সকল সমরাস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনের হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু ও নারীর বুক ঝাঁঝরা করে মানবাধিকারকে প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে চলছে। বিশ্বের যেসব দেশ মানবাধিকারের কথা বলে ফেনা তুলে ফেলে তারাও নিজেদের স্বার্থে এখানে নীরব । অপরদিকে জাতিসংঘের মত প্রতিষ্ঠানও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। যদি ইসরায়েল ফিলিস্তিনদের উৎখাত করেই ফেলে তার-পরবর্তী লক্ষবস্তু হবে এর পার্শ্ববর্তী অন্যদেশ সমূহ অর্থাৎ জর্ডান, সিরিয়া, মিশর। এতে এ-অঞ্চলের অবস্থা আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আসংখা থাকবে না। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ এবং এ-অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা।
rybelsus cost – purchase glucovance pill DDAVP uk
buy terbinafine 250mg for sale – order fulvicin buy griseofulvin sale