বেলা “০১:০৩”, একটা বেজে তিন মিনিট। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে লিখতে গেলে হয় “১৩:০৩”। এটা কি নেহায়েত একটা সময়? নাকি আছে কিছু বিশেষত্ব! ১৩:০৩ থেকে মাঝের “:” এই চিহ্নটা তুলে দিলে কি দাঁড়ায় ভেবেছেন? তখন সময় অনেক পিছিয়ে যায়, আমরা পৌছে যাই ১৩০৩সনে। ধারনা করা হয় ১৩০৩সনেই জোহার পালন করেছিলেন রাণি “পদ্মাবতী”। আর সেই কারনেই পরিচালক সাঞ্জেয় লীলা বানসালি ১৩:০৩ কে বেছে নিয়েছে তার পরবর্তী পিরিয়ড ড্রামা ফিল্ম “পদ্মাবতী”র ট্রেইলার ছাড়ার জন্য।
শুরুতেই এতো ডিটেইলিং বলে দিচ্ছে পরিচালকের জ্ঞান এবং দক্ষতার সীমা। কতটা সূক্ষ্মতার সাথে ছিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে এই ছোট্ট একটা পদক্ষেপ তা পরিষ্কার করে দেয়। শুধু মাত্র ট্রেইলার মুক্তি দেয়ায় এতো হিসেব কষা হলে পুরো সিনেমায় কি আছে তার প্রতি দর্শকের আগ্রহ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। তার উপর পরিচালক সাঞ্জেয় লীলা বানসালি। যার ফিল্মকে বলা হয় “ভিজুয়াল ট্রিট”। ১৯৯৬ সালে “খামোশি” দিয়ে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে পথ চলা শুরু করলেও উনার সাফল্য শুরু হয় ১৯৯৯ সালের “হাম দিল দে চুকে সানাম” এবং ২০০২ এর “দেবদাস” থেকে। তখন থেকেই বানসালির পরিচালনা মানে বিশাল ক্যানভাস, লার্জার দ্যান লাইফ সেট, কালচারাল পিউরিটি, ড্রামা, ডায়লগবাজি আর উত্তেজনা। একটি ফিল্মের সাথে বানসালির নাম যুক্ত হয়া মানেই নির্দিষ্ট এক দল দর্শক জুড়ে যাওয়া। “পদ্মাবতী”ও তার ব্যতিক্রম না। বরং পরিচালক পদ্মাবতীকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য পর্যায়ে। শারদীয় উৎসবে কেবল মাত্র পোষ্টার দিয়ে যদি একজন ইন্টারনেট কাঁপাতে পারে, তার সেই ফিল্মের রিলিজের অপেক্ষা করা যায় না, ট্রেইলারেই অনেক কিছু বলতে হয় ।
সিংহলের রাজকন্যা পদ্মাবতী, চিতোরের রাজা রত্নসেন, দিল্লীর সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি, রাজা দেবপাল – এসকল চরিত্র নিয়ে রচিত কাল্পনিক কাহিনীর কাব্যরূপ পদ্মাবতী। ১৫৪০ সালে মালিক মুহাম্মদ জয়সি “পদুমাবৎ” রচনা করেন, যা মধ্যযুগের বাঙালি কবি আলাওল “পদ্মাবতী” নামে অনুবাদ করেন। সিংহলের অতুলনীয় সুন্দরী রাজকন্যা পদ্মাবতীকে বিয়ে করেন মেবার রাজ্যের রাজা রাজপুত রত্নসেন। এদিকে পদ্মাবতীর সৌন্দর্যের কথা শুনে তাকে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি। খিলজির পদ্মাবতীকে পাওয়ার উন্মাদনা, রত্নসেনে তার স্ত্রীকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা পরিশেষে নিজের সম্মান বাঁচাতে পদ্মাবতীর জোহার পালন, এই হলো পদ্মাবতীর মূল গল্প।
ট্রেইলারে পরিচালক গল্পের তেমন কিছু প্রকাশ করেন নি (কাব্য ভিত্তিক গল্প হয়ায় তার তেমন প্রয়োজন ও ছিলনা)। ট্রেইলার জুড়ে ফুটে উঠেছে সে সময়ের রাজপুতানী সংস্কৃতি। প্রতিটা ফ্রেম নিয়ে যায় ৭০০ বছর পেছনে। সেট তৈরি তে বিন্দু মাত্র কার্পণ্য করা হয় নি তা স্পষ্ট। কত টুকু গ্রাফিক্স ব্যবহার করা হয়েছে তা বলা মুশকিল, কারণ সব কিছু এতোটাই প্রাণবন্ত যেন দৃশ্য গুলো সেই সময়েই ধারণ করা। গ্রাফিক্স ব্যবহার করলেও এতো নিখুঁত গ্রাফিক্সের জন্য বাহবা দিতেই হয়। পোষাকের ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়েছেন আরো এক ধাপ। পদ্মাবতী, রত্নসেন থেকে খিলজি সবার পোষাকে দেয়া হয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ছায়া। পদ্মাবতীর রাজকীয় সাজ হোক কিংবা রন্তসেনের রাজপুত যোদ্ধার বেশ কিংবা খিলজির হিংস্র যোদ্ধা অবতার সব কিছুই যেন প্রতিটা চরিত্রের জন্য কথা বলে। ট্রেইলারে তেমন কোন সংলাপ নেই, তবুও স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় কার কি চরিত্র। ট্রেইলারে আলোক সজ্জা অন্যতম আকর্ষণ। কোথাও আলোর আধিক্য নেই। প্রদিপ আর মশালের আলোর যে আভা থাকার কথা সেই আভা ধরে রাখার সফল চেষ্টা দেখা যায়।
ট্রেইলারের শুরুতেই দেখা যায় রন্তসেন উটের পিঠে করে আসছেন, তার পেছনে আসছে পর্দা দেয়া পালকিতে পদ্মাবতী। তাদের বিয়ে দিয়েই ফিল্ম শুরু তা বোঝাই যাচ্ছে, তার পর রত্নসেনের যুদ্ধে যাওয়ার দৃশ্য এবং খিলজির আবির্ভাব। কি নিয়ে যুদ্ধ কিভাবে তার সূচনা তা বলা হয় নি। কিন্তু যুদ্ধের অসাধারণ কিছু দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। দীর্ঘ আট বছরের যুদ্ধকে কিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তাই এখন প্রশ্ন। চাইলে যুদ্ধতেই শেষ করা যেতো। কিন্তু পরবর্তী দৃশ্যে অসংখ্য পালকি দেখা যায়, তার মানে রত্নসেন কে খিলজির বন্দি করা এবং পদ্মাবতীর কৌশলে তাকে ছাড়িয়ে আনা পর্যন্ত টানা হয়েছে। শেষতক পদ্মাবতীর ঐতিহাসিক জোহার যাত্রা।
ধারণা করা যায় প্রায় সম্পূর্ণ কাব্য নিয়েই তৈরি করা হয়েছে “পদ্মাবতী”র চলচ্চিত্র রূপ। সাঞ্জয় লীলা বানসালি এ ধরনের ফিল্ম তৈরি তে পটু তা ইতিপূর্বে প্রমাণিত। দিপিকা পডুকোন এবং রনবীর সিং দুজনেই পিরিয়ড ড্রামায় তাদের দক্ষতার প্রমান দিয়েছেন “বাজিরাও-মাস্তানী”তে, ট্রেইলারে শাহীদ কাপুর তার দুই সহ অভিনেতাকে পাল্লা দিয়েই অভিনয় করেছেন। ট্রেইলারে অন্যান্য চরিত্র গুলোকে তুলে ধরা হয় নি, কিন্তু ভালোই করবে এমনটা আশা করা দোষের কিছু হবে না। ইউটিউবে প্রথম দিনেই পদ্মাবতীর ট্রেইলার ছাড়িয়েছে কোটির ঘর। শুধু ভারত নয় গোটা বিশ্বে এমন নিদর্শন বিরল। ১লা ডিসেম্বর ভারতের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে পদ্মাবতী। কোন উৎসব না থাকলে এতো বড় বাজেটের ফিল্ম সাধারণত মুক্তি দেয়া হয় না, কিন্তু তার হিসেব করছে না পদ্মাবতী। কারন এই ফিল্ম নিজেই উৎসব নিয়ে আসবে। তার আগে ইন্টারনেট কাপাবে এই ফিল্মের কিছু গান তা বলাই বাহুল্য। এবার মুক্তির অপেক্ষা মাত্র।
ট্রেইলারটি দেখে নিতে পারেন ঃ
buy rybelsus 14 mg pills – glucovance generic buy desmopressin paypal