মেরি মেলন, সাধারণ নামের সাধারন একজন রমণী। কিন্তু তার হাতেই কিংবা বলা যায় তার হাতের জন্যই মৃত্যু বরণ করতে হয় মার্কিন সরকারের মতে তিন জন, আবার কারো কারো মতে পঞ্চাশের অধিক মানুষকে।
১৮৬৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আয়ারল্যন্ডে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৮৮৩ সালে মাত্র পনেরো বছর বয়সে তিনি ইউনাইটেড স্টেটস এ মাইগ্রেট করেন, এবং সেখানেই তার চাচা চাচীর সাথে বসবাস শুরু করেন। একসময় তিনি বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের রাঁধুনী হিসেবে যোগদান করেন। সমস্যার শুরুটা এখান থেকেই।
১৯০০ সাল থেকে ১৯০৭ সাল নাগাদ তিনি নিউইয়র্ক ও তার আশপাশের কিছু এলাকায় প্রায় সাতটি পরিবারের (পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত নয়, কারন উনি তথ্য গোপন করতেন) রাঁধুনী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। সর্বপ্রথম উনি যে পরিবারে রান্না শুরু করেন দুই সপ্তাহের মাঝেই সেই পরিবারের সদস্যদের জ্বর এবং পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যায়। সেখান থেকে তখন তিনি চলে যান ম্যানহাটনে। সেই পরিবারেও শুরু হয় একই উপসর্গ, এইবার একজন মারাও যায়। তখন সেখান থেকে তিনি এক আইনজীবীর বাড়িতে কাজ নেন সেখানেও একই ঘটনা ঘটে। এভাবে বারবার উনি কাজের স্থান বদলাতে থাকেন এবং যেখানেই যান একই ঘটনা ঘটতে থাকে। ১৯০৬ সালে অবশেষে উনি অয়েস্টার বে তে চার্লস হেনরী ওয়ারেন নামে এক ধনী ব্যাংকারের বাড়িতে কাজ নেন। সেই পরিবারের এগারোজন বাসিন্দার মাঝে ছয় জনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। সেই সময় অয়েস্টার বে তে টাইফয়েড এর প্রকোপ প্রায় ছিলনা বললেই চলে। অবশেষে জর্জ সোপার নামে এক টাইফয়েড গবেষককে নিযুক্ত করা হয় এই মহামারীর কারন অনুসন্ধানের জন্য। উনি ১৯০৭ সালে মত দেন যে সম্ভবত এই আইরিশ রাঁধুনী মেরী মেলন এই রোগের বিস্তারের কারন। কিন্তু মেরী ছিলেন শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। তাছাড়া মেরী এত দ্রুত কাজ বদলাত যে তাকে খুঁজে পাওয়াই ছিল বেশ কষ্টের কাজ।
হঠাৎ একদিন সোপার খবর পেলেন যে, পার্ক এভিনিউ তে হঠাৎ করে টাইফয়েডের প্রকোপ বেড়ে গেছে। দ্রুত সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন সেখানকার রাঁধুনী মেরী মেলন। যখন মেরীর কাছে যান তখন তিনি পরীক্ষার জন্য নিজের মল এবং মুত্র দিতে অস্বীকৃতি জানান। তখন সোপার মেরীর বিগত পাঁচ বছরের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে দেখেন যে তিনি যে যে পরিবারে কাজ করেছেন প্রায় সব পরিবারই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছে। অবশেষে নিউইয়র্ক সিটি হেলথ এসোসিয়েশন জোসেফ বেকার নামে একজন ডাক্তারকে পাঠায়, এবং বেকার পুলিশ সহযোগে গিয়ে মেরীকে কাস্টডিতে নিয়ে আসে।
পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা যায় তার মলের সাথে জীবন্ত টাইফয়েডের জীবানু বের হচ্ছে। আরও পরীক্ষা নিরিক্ষার পর দেখা যায় তার পিত্তথলিতে এই জীবানুগুচ্ছ আছে যেগুলো তার কোন ক্ষতি করছে না কিন্তু সে বাহক হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে। যেহেতু টাইফয়েড ফিকো ওরাল রুট অর্থাৎ জীবানুগুলো মলের সাথে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং খাবারে সাথে দেহের ভিতরে যায়, সুতরাং রাঁধুনী হিসেবে খুব সহজেই সে এই রোগ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষ তখন তার পিত্তথলি কেটে ফেলার পরামর্শ দেয় কিন্তু সে সেটা করতে অস্বীকৃতি জানায়, এমনকি নিজের পেশা বদলের ব্যাপারেও সে আপত্তি জানায়। তখন তাকে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড এর এক ক্লিনিকে গৃহ বন্দী করে রাখা হয়। অবশেষে ইউজিন এইচ পোর্টার, নিউ ইয়র্ক স্টেট কমিশনার অফ হেলথ, ১৯১০ সালে এই শর্তে মুক্তি দেন যে, সে আর রান্নার কোন কাজ করবে না।
মুক্তি দেয়ার পর তাকে কাপড় ধোঁয়ার কাজে নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু এই কাজটা তার খুব একটা পছন্দ হচ্ছিল না, তাছাড়া এই কাজের বেতন তার আগের কাজের চেয়ে বেশ কম ছিল কয়েক বছর এভাবে কাজ করার পর তিনি এই কাজ ছেড়ে দেন এবং নিজের নাম পালটে আবার রান্নার কাজ শুরু করেন। এই সময় তিনি নিজের নাম পালটে মেরী ব্রাউন রাখেন।
এর পরবর্তী কয়েক বছর তিনি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন, এবং প্রত্যেক জায়গাতেই টাইফয়েড মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি এত দ্রুত কাজ এবং জায়গা বদলাতেন যে, তাকে খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল কর্তৃপক্ষের জন্য। অবশেষে ১৯১৫ সালে নিউইয়র্কের এক মহিলা হাসপাতালে হঠাৎ টাইফয়েড মহামারী আকারে দেখা যায়। ২৫ জনের বেশি আক্রান্ত হয়, তার মাঝে দুই জন মারাও যায়। এবারও তিনি কাজ ছেড়ে পালান। কিন্তু এইবার পুলিশ তাকে ধরে ফেলতে সমর্থ হয়। এবং পুনরায় তাকে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড হসপিটালে গৃহবন্দি হিসেবে পাঠানো হয়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি গৃহবন্দি ছিলেন।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, এত এত মানুষের মাঝে টাইফয়েড ছড়িয়ে তিনি নিজে মারা গেছেন নিউমোনিয়াতে। মেডিকেলের ভাষায় এই ধরনের বাহককে বলা হয়ে থাকে এসিম্পটোমেটিক কেরিয়ার। এই ধরনের কেরিয়ার টাইফয়েড ছাড়াও এইচ আই ভি, এপস্টিন বার ভাইরাস এই গুলোর ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়।
এই বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত টাইফয়েড মেরি ১৯৩৮ সালে মারা যান। মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয় যাতে তার মৃতদেহ থেকেও টাইফয়েড ছড়াতে না পারে।
পাবলিক হেলথের ইতিহাসে টাইফয়েড মেরি একটি দুঃস্বপ্ন ছিল। তার জন্য বেশ কিছু মানুষের অকালে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি আসলেই অপরাধী ছিলেন, তাকে কি আমরা খুনী বলতে পারি?
সোর্সঃ উইকি, ব্রিটানিকা
order rybelsus 14mg generic – order desmopressin online cheap buy desmopressin spray
zyprexa for anxiety and depression
terbinafine 250mg pills – order fluconazole without prescription brand griseofulvin
zofran odt peds dosing