পরিচিতি
সারা পৃথিবীতে যে কয়টি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার মধ্যে অটোমান সাম্রাজ্য ছিল ক্ষমতা,প্রতিপত্তি, ধন-সম্পদ, জ্ঞান-বুদ্ধিতে ভরপুর এক সাম্রাজ্য। বর্তমান তুরস্কের ইস্তাম্বুলসহ অন্যান্য শহরের মসজিদগুলি ও অটোমান সুলতানদের ব্যবহার করা তোপকাপি প্রাসাদসহ অন্য প্রাসাদগুলো দেখলে বোঝা যায় তাদের সাম্রাজ্য যেমন ছিল ধারে-ভারে অনেক এগিয়ে তেমনি তাদের শাসকগণে জীবনযাপন ও রুচিশীলতা ছিল সেই সময়কালে অন্যান্য সাম্রাজ্যের শাসকদের থেকে বেশী এগিয়ে। তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর থেকে সারা পৃথিবীর তিন টি মহাদেশ শাসন করা এই রাজবংশ টিকে ছিল ৬২৪ বছর। মুসলিম এই রাজবংশের শাসনতলে ছিল বর্তমান বিশ্বের ইউরোপের ক্ষমতাধর ফ্রান্স,হাঙ্গেরি,বুলগেরিয়া সহ প্রায় সকল দেশ ই। এছাড়া সুদীর্ঘ ৬২৪ বছর ব্যাপী অটোমান সুলতানগণ শাসন করেছেন এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহ সহ বর্তমান বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশ।
অটোমান সাম্রাজ্য বলতে বর্তমান তুরস্কের সাম্রাজ্য কে বুঝায়। তবে অটোমান সাম্রাজ্যের মত এত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে শাসন সেই সময়ে অন্য কোন সাম্রাজ্যের ছিল না,যে কারণে অটোমান সুলতান প্রথম সুলেমান কে বলা হত পৃথিবীর বাদশাহ। শৌর্য-বীর্য, অর্থ-সম্পদ,যুদ্ধকৌশল এর দিক দিয়ে অটোমানদের টেক্কা দেওয়ার মত অন্য রাজবংশ ছিল তবে না সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন হয়েছে কিন্তু রাতারাতি অস্তমিত হয়ে যায়। মুসলিম শাসন হিসেবে মুসলিম জাহানের খলিফার দায়িত্ব পালন করতেন অটোমান সুলতানগণ। মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগ অটোমান শাসনকাল, যে সকল দেশ কে আজ মুসলিম গুলো সমীহ করে চলছে সেই সকল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এক সময় অটোমান বাদশাহদের পদতলে এসে বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে লুটিয়ে পড়তেন। কিন্তু পৃথিবীর কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়, শৌর্যশালী অটোমান সাম্রাজ্যের গৌরবময় উত্থানের সাথে রয়েছে হতাশাময় পতন।
গোড়াপত্তনের ইতিহাস
অটোমান সাম্রাজ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশী দিন টিকে থাকা সাম্রাজ্য। ইউরোপ থেকে শুরু করে এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল অটোমান সাম্রাজ্য। কিন্তু এত বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করল কিভাবে? অটোমান সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন শুরু তুরস্কের আনাতোলিয়া থেকে। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের বাবা আর্তুগ্রুল গাজী ই মূলত অটোমান সাম্রাজ্যের ভিত্তিপ্রস্তর করে যান। আর্তুগ্রুল গাজী ছিলেন মঙ্গোলিয়ান বংশোদ্ভূত এক যোদ্ধা। তিনি এশিয়া মাইনর দিয়ে আনাতোলিয়া তে আসেন। তিনি যখন আনাতোলিয়া তে আসেন তখন এই অঞ্চলে বিভক্ত ছিল, এক অংশ দীর্ঘদিন যাবত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। অপর অংশে আধুনিক তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়ে সেলজুক সাম্রাজ্য ছিল। সেলজুক সাম্রাজ্যের তুর্কমান বা তুর্কি বংশোদ্ভূত সুলতান আলাউদ্দিন কে আর্তুগ্রুল এক যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য পুরস্কার হিসেবে তার সাম্রাজ্যের একটি অংশের শাসনকর্তা বানিয়ে দেন। আর্তুগ্রুল গাজীর মৃত্যুর পর এবং সেলজুক সাম্রাজ্য দিন দিন দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণে আনাতোলিয়া বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আর্তুগ্রুল গাজীর ছেলে প্রথম উসমান তার শাসনাধীন অঞ্চল কে বৃদ্ধি করে ১২৯৯ সালে নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি ই ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সুলতান। এরপর তার ছেলে ওরহান এবং সুলতান প্রথম মুরাদ সাম্রাজ্যের আরও বিস্তৃতি ঘটান। সুলতান প্রথম মুরাদ উসমানীয় রাজ্য থেকে উসমানীয় বা অটোমান সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।উসমানীয় সাম্রাজ্যে পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান বাইজেন্টাইন শাসকদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ছোট ছোট যুদ্ধ হয়। অবশেষে ১৪৫৩ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল বা ইস্তাম্বুল কে জয় করেন। সাম্রাজ্যের শক্তিশালী ভীত মূলত কনস্টান্টিনোপল জয় করার পর ই গড়ে ওঠে।
উত্থান
১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর অটোমান সাম্রাজ্যের দ্রুত বিস্তৃতি ঘটতে থাকে। এ সময় বেশ কয়েকজন সুদক্ষ শাসকের আগমন ঘটে অটোমান সাম্রাজ্যে তারা সাম্রাজ্যকে ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। এ সময় অটোমান সুলতানেরা ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের যে পথ সেটির বিস্তৃত অংশ দখল করে নেন ফলে এই অঞ্চলে বাণিজ্য করার জন্য অটোমানদের কর দিয়ে বাণিজ্য করত হতো ফলে অটোমান সাম্রাজ্য দ্রুত অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে থাকে।
সুলতান প্রথম সেলিম পারস্যের সাফাভি বংশের সম্রাট ঈসমাইল কে পরাজিত করে তিনি মিসরে উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম সেলিম এর পর তার সন্তান প্রথম সুলেমান রাজ্য কে সফলতার শিখরে নিয়ে যান। তিনি সর্বপ্রথম বেলগ্রেড জয় করেন। এছাড়া তিনি মোহাচের যুদ্ধে হাঙ্গেরি কে পরাজিত করে হাঙ্গেরি দখল করে নেন। তিনি ভিয়েনা দখল করার জন্য দুইবার ভিয়েনা অবরোধ করে রাখেন তবে তিনি সফল হতে পারেননি। তবে সুলতান সুলেমানের সময় অটোমান সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল সবচেয়ে বেশী। অস্ট্রিয়া,ফ্রান্স সহ ইউরোপের আরও কয়েকটি দেশ সুলতান সুলেমান কে বাদশাহ হিসেবে মেনে নেন।
ক্ষমতা ও দাপট
অটোমান বা উসমানী সাম্রাজ্যের বাদশাহদের ক্ষমতা ও দাপট এত বেশী ছিল যে তাদের সামনে কোন মানুষ মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারত না। বিশাল দক্ষ সেনাবাহিনী,প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র ও অঢেল অর্থের সামনে অন্য কোন সুলতান বা বাদশাহ মুখোমুখি হওয়ার সাহস পেতেন না। অটোমানদের ৬২৪ বছরের শাসনামলে তাদের রাজধানী কে বাইরের কোন শক্তি আক্রমণ করার সাহস করেনি যদিও সাম্রাজ্যের শেষের দিকে তাদের প্রতিপত্তি অনেক কমে গিয়েছিল। সুলতান সুলেমান হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে মোহাচের প্রান্তে মাত্র দেড় ঘণ্টায় যুদ্ধ জয় করেন,সে যুদ্ধে হাঙ্গেরির লুই নিজেও মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ফ্রান্সও সে সময় অটোমানদের সাথে মিত্রতা করতে বাধ্য হয় এবং তারাও অটোমান বিভিন্ন হারে কর ও উপঢৌকন পাঠাতো। সুলতান সুলেমানের সময় অটোমান স্থল ও নৌ উভয় দিকে ই অপরাজেয় ক্ষমতার অধিকারী,তাদের মুখোমুখি হওয়ার মত সাহস কেউ দেখাত না সে সময়। বাবা সেলিমের মত সুলতান সুলেমানও সাফাভিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। পারস্যের রাজা শাহ্ তাহমাস্প এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে করেন এবং বাগদাদ ছিনিয়ে নেন। সুলতান সুলেমান যেমন তার সাম্রাজ্য কে ক্ষমতা ও দাপটের দিক দিয়ে উচ্চতর আসনে নিয়ে গিয়েছিলেন তার পরবর্তী সুলতানেরা সেটা আর বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন নি। পরবর্তীতে সুদক্ষ সুলতানের অভাবে সাম্রাজ্যের দাপট ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ১৫২০ সাল থেকে ১৫৬৬ পর্যন্ত ৪৬ বছর সুলতান সুলেমান যখন শাসন করেছেন তখন তিন মহাদেশের বাদশাহ হিসেবে তাকে কেউ মেনে নিতে অস্বীকার করার সাহস পায়নি, যারা এই দুঃসাহস করেছে তাদের পরিণতি খুব খারাপ হয়েছে। সুলতান সুলেমানের পূর্বে তার বাবা প্রথম সেলিমের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ছিল প্রায় একই রকম ছিল। কিন্তু সুলেমানের মৃত্যুর পর থেকে এই সাম্রাজ্যে যোগ্য শাসকের অভাবে দিন দিন জৌলুস হারাতে বসে।
সাম্রাজ্যের পতন
অটোমান সাম্রাজ্যের পতন মূলত সুলতান সুলেমানের পর থেকে ই শুরু হয়। সুলতান সুলেমান নিজে যোগ্য শাসক হলেও তিনি তার যোগ্য উত্তরসূরি রেখে যেতে পারেননি। তার ছেলে ছেলেদের মধ্যে সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন শাহজাদা মুস্তাফা ও শাহজাদা বায়েজিদ কিন্তু তিনি তার দুই যোগ্য সন্তান কে মৃত্যুদণ্ড দেন ফলে একমাত্র উত্তরসূরি ছিলেন শাহজাদা সেলিম। তিনি সিংহাসনে আরোহণ করার পর প্রায় সময় প্রাসাদে মদ্যপ অবস্থায় থাকতেন এবং কবিতা লিখে সময় কাটাতেন। সাম্রাজ্যের কাজে মনোযোগ দিতেন না একেবারেই। এভাবে তার পরবর্তী কয়েকজন শাসক একই ভাবে প্রাসাদকেন্দ্রিক জীবনযাপন করতেন, যুদ্ধে ছিল তাদের চরম অনীহা। এভাবে সময় কাটতে কাটতে এমন অবস্থায় আসে যে যোগ্য শাসকের অভাবে অটোমান সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসানো হয় মোস্তাফা নামের একজন পাগল ব্যক্তি কে। অযোগ্য সুলতান,অযোগ্য উজিরে আযম, দুর্নীতিপরায়ণ সরকারি অফিসার,বিশ্বাসঘাতক মিত্রদের কারণে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন দিন দিন ত্বরান্বিত হতে থাকে। ১২৯৯ সাল থেকে ১৫৬৬ সাল পর্যন্ত শাসকের মধ্যে কোন অযোগ্য শাসক ছিলেন না অন্যদিকে ১৫৬৬ সাল থেকে ১৯২২ পর্যন্ত ১৩ জন সুলতানের মধ্যে মাত্র দুইজন দক্ষ শাসক ছিলেন। এদিকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের অভাব,দীর্ঘদিন কোন যুদ্ধ না করার কারণে অর্থনৈতিক ভাবে সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে ফ্রান্স সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ সমূহ অর্থনীতি ও অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে যাওয়ার কারণে তারা অটোমানদের আনুগত্য অস্বীকার যার ফলে সাম্রাজ্যের আয়তন দিনে দিনে ছোট হতে থাকে। সবকিছু মিলিয়ে সাম্রাজ্য চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্য দিয়ে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আসে। বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে অটোমান সাম্রাজ্যের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তুরস্কের অভ্যন্তরে বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৯০৮ সাল থেকে তুরস্কে তরুণদের বিপ্লবের ফলে দ্বিতীয় সাংবিধানিক যুগ শুরু হয়। বিপ্লবের ফলে ১৮৭৬ সালে তৈরি সংবিধান ও উসমানীয় সংসদ পুনরায় চালু করা হয়। বিপ্লবের পরবর্তী ছয় বছরে সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার শুরু হলেও মূলত এটি ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের সূচনা। ১৯১৪ সালের মধ্যে উসমানীয় সাম্রাজ্য ইউরোপের ও উত্তর আফ্রিকার অধিকাংশ অঞ্চল হারিয়ে ফেলে। এর মধ্যে সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার জন্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করে। যুদ্ধে জার্মানি ও অটোমানদের পরাজয় ঘটার পর ১৯১৮ সাল থেকে কামাল আতার্তুকের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয় এবং ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর অটোমান সালতানাতের বিলুপ্তি ঘটিয়ে স্বাধীন তুরস্কের সৃষ্টি হয়। অটোমানদের সর্বশেষ সুলতান ছিলেন ষষ্ঠ মেহমেদ। তার খলিফা পদে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ বসানো হয়। পরবর্তীতে ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ খিলাফত বিলুপ্ত করে দেওয়া হয় এবং দ্বিতীয় আবদুল মজিদ দেশত্যাগ করেন। অবসান ঘটে অটোমানদের গৌরবময় সাম্রাজ্যের।
ঐতিহ্য
অটোমান ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি মূলত ইসলামিক জীবনধারা নির্ভর। কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্য যতবেশী বৃদ্ধি পেয়েছে তত ই শিক্ষা,সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে তত বেশী বৈচিত্র্যময় হয়েছে। অটোমান সাম্রাজ্যে তুর্কি,ইউরোপিয়ান,আরব,আফ্রিকান,এশিয়ান অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল সে কারণে অটোমান সাম্রাজ্য এসব অঞ্চলের বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে অটোমান সাম্রাজ্য যেহেতু মূলত তুরস্ক কেন্দ্রিক সে কারণে এই সাম্রাজ্যের মূল স্বকীয়তা তুরস্কের ঐতিহ্য নির্ভর। অটোমান সাম্রাজ্যে কিছু নিয়ম-কানুন বছরের পর বছর ধরে চলে এসেছে। তার মধ্যে একটি কঠোর ও নির্মম নিয়ম ছিল সিংহাসনে উঠার জন্য ভ্রাতৃহত্যা কে বৈধতা প্রদান। অটোমান সাম্রাজ্যে সুলতান মারা যাওয়ার পর তার ছেলে সন্তান হবে, সেক্ষেত্রে যদি একাধিক ছেলে তখন নিজ শক্তিবলে শেষ পর্যন্ত যে টিকে থাকতে পারবে সে সিংহাসনে বসবে। সুলতান তৃতীয় মুরাদ তার ১৯ জন ভাই কে হত্যা কে সিংহাসনে আরোহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই আইন পরিবর্তন করা হয়।
অটোমান রাজপ্রাসাদের হেরেম সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে সুলতানের দাসীরা থাকত। অটোমান সুলতানদের মধ্যে মাত্র দুইজন সুলতান দাসীদের বিবাহ করেছিলেন, তার মধ্যে একজন সুলতান সুলেমান। হেরেম থেকে মূলত প্রাসাদ পরিচালনা করা হতো এবং প্রাসাদে সকল ষড়যন্ত্র হেরেমে হতো। হেরেমের ষড়যন্ত্র কখনো কখনো পরবর্তী সুলতান ঠিক করে দিত। অটোমান সাম্রাজ্যে সকলের জন্য সমান আইন বলবত ছিল,সুলতান কোন সাধারণ নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ণ করলে তাকেও জবাবদিহি করতে হতো এবং অটোমান সাম্রাজ্য ছিল অসাম্প্রদায়িক। অটোমান সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা করেছেন অনেক খ্রিস্টান জেনিসারিস। ক্যালিগ্রাফি অটোমান সাম্রাজ্যে একটি সম্মানজনক পেশা ছিল,আরবি ভাষায় প্রচুর পরিমাণ অটোমান স্টাইলে লেখা ক্যালিগ্রাফি এখনও তুরস্কে বর্তমানে যা তাদের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের দক্ষতা কে প্রকাশ করে। অটোমান সাম্রাজ্যে আরও কয়েকটি ঐতিহ্যের মধ্যে রয়েছে কার্পেট,জুয়েলারি এবং ক্ষুদ্র প্রতিকৃতি অঙ্কন। তুরস্কের কার্পেট শিল্পের খ্যাতি আজও সারা বিশ্ব জুড়ে রয়েছে। খাবারের মধ্যে ছিল কফি,শরবত,রাকি নামক অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়,পায়েস,চকলেট,কাবাব,ভাত,মাংস ইত্যাদি।
আবিষ্কার
অটোমান শাসনামলে বেশকিছু জিনিস আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং,মেকানিক্যাল এবং জ্যোতিষশাস্ত্রীয় কিছু জিনিস রয়েছে। অটোমানদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের মধ্যে রয়েছে প্রথম মেকানিক্যাল এলার্ম ঘড়ি,প্রথম স্প্রিংযুক্ত অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ঘড়ি, প্রথম মিনিট হিসাব করতে পারা ঘড়ি এবং প্রথম মিনিট ও সেকেন্ড হিসাব করতে পারা ঘড়ি অটোমানদের তৈরি। হেজারফান আহমেদ চেলেবি (১৬০৯-১৬৪০)নামক এক অটোমান ব্যক্তি ইস্তাম্বুলের গালাতা টাওয়ার থেকে লাফ দিয়ে বসফরাস সাগরের উপর দিয়ে উড়ে ৩৩৫৮ মিটার দূরের উস্কুদারে পৌঁছান। ১৮ শতকের প্রথম চতুর্ভাগের দিকে অটোমানরা বসন্ত রোগের ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেন যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মেরী ওর্টলি, যিনি ইস্তাম্বুলে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী ছিলেন। ১৭২০ সালের দিকে অটোমানরা একটি সাবমেরিন অথবা কোন পানির নিচে চালানো যায় এমন কোন জলযান আবিষ্কার করেন যা বিভিন্ন উৎসবের সময় চালানো হতো। অটোমানরা সর্বপ্রথম আর্মিদের ব্যাচ তৈরি করেন। আর্মিরা যখন কুচকাওয়াজ করতেন তখন তারা এই ব্যাচ পড়ে থাকতেন। অটোমানরা স্টিম ইঞ্জিন,স্টিম টার্বাইন এবং টেলিস্কোপের উন্নতি ঘটান।
স্থাপত্য
অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানগণ তাদের নামকে দীর্ঘদিন মানুষের মনে গেঁথে রাখার জন্য তৈরি করে গেছেন অপূর্ব সব স্থাপত্য। অটোমান স্থাপত্য মূলত সেলজুক,বাইজেন্টাইন এবং ইসলামিক স্থাপত্যশৈলীকে অনুসরণ করে তৈরি করা। অটোমান সুলতানেরা তাদের রাজত্বকালে সৃষ্টি করেছেন অপূর্ব সব মসজিদ।
অটোমানদের তৈরি এ সকল মসজিদ আজও পৃথিবীর বুকে অন্যতম সৌন্দর্যমন্ডিত মসজিদ। মসজিদ গুলোর মধ্যে রয়েছে সুলতান আহমেদ মসজিদ বা নীল মসজিদ,সুলেমানিয়া মসজিদ,রুস্তমপাশা মসজিদ,মিহরিমা সুলতান মসজিদ,ইয়েনি কামি মসজিদ,হাগিয়া সোফিয়া,সেলিমিয়া মসজিদ,তোপকাপি প্রাসাদ ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র :
১. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Culture_of_the_Ottoman_Empire
২. https://www.quora.com/What-are-some-Ottoman-inventions