মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহীমঃ ফ্রম ডুংরি টু দুবাই

41

 

অপরাধকে দিয়েছিলেন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। তার দলের গ্যাংস্টাররা প্রতিমাসে পেয়ে গেছেন ভালো আকারের বেতন। ভারতীয় অপরাধ জগতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত করিয়েছিলেন। সমীহ আদায় করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতে। তার ভয়ে কাঁপতেন ভারতের সকল খ্যাতিমান ফিল্মস স্টার, ক্রিকেটার ও বিজনেসম্যানরা। তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অজস্র সিনেমা। তিন দশক যাবত তিনি মুম্বাই পুলিশ তথা ভারতীয় আদালতের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে একজন সম্মানিত মেহমান। ফোর্বস ম্যাগাজিনে তার নাম উঠেছিলো পৃথিবীর প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায়। প্রতিপক্ষকে ধ্বংস করা হোক কিংবা নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করা কোনটিতেই ভয়ংকর পদক্ষেপ নেয়া বা প্রভাব খাটানোতে জুড়ি নেই তার। তিনিই হলেন ভারতীয় আন্ডারওয়ার্ল্ডের অঘোষিত সম্রাট দাউদ ইব্রাহীম হাসান কাসকার।

তার পেছনে রয়েছে পৃথিবীর তাবৎ গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। বিশ্বের শীর্ষ দশ ওয়ান্টেড ক্রিমিনালের তালিকায় তার নাম আছে তিন নাম্বারে। তাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২৫মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ২০০৮ সালে ফোর্বসের বিশ্বের শীর্ষ পলাতক অপরাধীদের তালিকায় চতুর্থ স্থানে ছিলেন দাউদ। ২০১১ সালেও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস এর তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। ভারতীয় পুলিশের পলাতক অপরাধীদের তালিকায় এক নম্বরেই রয়েছে তার নাম। কিন্তু তিনি আজও সকল ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুরো নাম দাউদ ইব্রাহিম কাসকার। পিতার নাম ইব্রাহিম কাসকার। বড় ভাই সাবির ইব্রাহিম কাসকার। জন্ম ২৭ ডিসেম্বর ১৯৫৫ সালে। বাবা ইব্রাহিম কাসকার ছিলেন মুম্বাই পুলিশের হেড কনস্টেবল। ইব্রাহিম কাসকারের ৭ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে দাউদ ইব্রাহিম ছিলেন ২য় সন্তান। তার পরিবারের বসবাস ছিল ডুংরি বস্তিতে। মুম্বাই রেলস্টেশনে টেলিফোন বুথ থেকে টাকা চুরির মাধ্যমে অপরাধ জগতে হাতেখড়ি হয় দাউদ ও তার বড় ভাই সাবির ইব্রাহিম কাসকারের। বাবার শত চেষ্টা দুই ভাইকে আন্ডারওয়ার্ল্ড এর রঙচঙে দুনিয়া থেকে দূরে রাখতেই পারেনি। ধীরে ধীরে ছোটখাটো অপরাধের মধ্যে দিয়ে হাত পাকাতে থাকে দুই ভাই। ওই সময় ডুংরি এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল বাসু দাদা। শাবির-দাউদ মিলে বাসু দাদা গ্রুপকে ঠেকাতে তখন ইয়ং কোম্পানি নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেন, যা পরে ডি-কোম্পানি নামে পরিচিতি পায়। এই ডি-কোম্পানি পরে দাউদ ইব্রাহিমের পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র হয়ে ওঠে। হত্যা, গুম, অপহরণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, হুন্ডি ব্যবসা সবই নিয়ন্ত্রণ করে এই ডি কোম্পানি। বাসু দাদা আর তার শিষ্যদের লোহার রড আর খালি হওয়া সোডার বোতল দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে শাবির ও দাউদ গ্রুপ। অপরাধী মহলে এর ফলে জায়গা করে নিতে আর অসুবিধা হয়নি ডি-কোম্পানির।

দাউদ ইব্রাহীম
দাউদ ইব্রাহীম
Source: Mashable

তৎকালীন মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ড এর সবচেয়ে বড় ডন ছিলেন হাজি মাস্তান, করিম লালা আর ভরদারাজন মুদালাইয়ার। তিন ডন একতাবদ্ধ হয়ে পুরো মুম্বাই শাসন করতেন। দক্ষিণ ও কেন্দ্রীয় মুম্বাই ছিল করিম লালার এলাকা আর উত্তর ও পূর্ব মুম্বাই ছিল ভরদারাজন এর এলাকা। আর হাজি মাস্তান মুম্বাই বন্দরের সকল চোরাকারবারি নিয়ন্ত্রণ করতেন। হাজি মাস্তান ছিলেন বোম্বের প্রথম ধনী ডন। তাকে কেন্দ্র করেই করিম লালা আর ভারদারাজন তাদের অপরাধের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। সঙ্গী শুকুর বখিয়াকে নিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে অঢেল বিত্তের মালিক হন হাজি মাস্তান ওরফে সুলতান মির্জা। পাঠান গ্যাং তৎকালীন সময়ের সবচে ভয়ঙ্কর গ্যাং ছিল। সেই দলের প্রধান ছিলেন করিম লালা। দাউদ আর সাবির প্রথমে করিম লালার দলের হয়ে চোরাকারবারি শুরু করে। করিম লালার ছেলের সাথে দ্বন্দ্বের ফলে দলে থেকে বের করে দেয়া হয় দুভাইকে।

তারপর দুই ভাই যোগ দেয় মাস্তানের গ্যাং এ। সত্তর দশকের মাঝামাঝিতে হাজি মাস্তান গ্রেপ্তার হলে সকল ক্ষমতা এসে পরে দুই ভাইয়ের হাতে। হাজি মাস্তানের ছত্রছায়ায় বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠা দাউদ আর সাবির তাদের নিজস্ব গ্যাং তৈরির কাজ শুরু করে। ছোটবেলা থেকেই দাউদের স্বপ্ন ছিল করিম লালার মত বড় ডন হওয়ার। ৭০ এর দশকে দুই ভাই মিলে প্রতিষ্ঠা করে D-Company। তাদের প্রভাব দিন বাড়তেই থাকে। এতদিন মুম্বাইয়ের ডনেরা কিছু নীতি মেনেই অপরাধ জগত চালাতেন। তারা কখনো মাদক ব্যবসা ও খুন করার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু দাউদ সব নীতি আর প্রথা ভেঙ্গে দিলেন। তিনি শুরু করলেন মাদকের ব্যবসা। টাকার বিনিময়ে খুনের সংস্কৃতি (যাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে “সুপারি” নামে ডাকা হতো) চালু করলেন দাউদ। এই অবস্থায় করিম লালার ছেলে আমিরজাদা ও আলমজেবের সাথে মুম্বাই এর দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয় দাউদের।

দাউদের সাথে
Source: Lede India

তৎকালীন মুম্বাইয়ের উঠতি গ্যাংস্টার ছিল মানিয়া সুরভে। দাউদের সাথে দ্বন্দ্বে সে প্রতিষ্ঠা করে মুম্বাইয়ের প্রথম হিন্দু গ্যাং। দাউদের সাম্রাজ্যে ভাগ বসানোর স্বপ্নে বিভোর মানিয়া হাত মিলান পাঠান গ্যাং এর  সাথে। আমিরজাদা ও আলমজেবের সাজানো ছকে মানিয়া সুরভে এর হাতে খুন হয় দাউদের ভাই সাবির। এটিই ছিল মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রথম মার্ডার। ১৯৮১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফাঁদে ফেলে খুন করা হয় সাবিরকে। ওইদিন সাবির তার প্রেমিকা, স্থানীয় নাচিয়ে চিত্রাকে সঙ্গে নিয়ে বান্দ্রায় বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। প্রথম থেকেই সাবিরের গাড়ির পিছু নিয়েছিল সুরভের বাহিনী, আমিরজাদা আর আলমজেব। প্রভাদেবি এলাকার সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরের উল্টা পাশের একটি পেট্রোল পাম্পে তেল নেওয়ার জন্য গাড়ি থামালে সাবিরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে ঘাতকরা। চিত্রাকে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়। সে সরে যাওয়া মাত্রই চতুর্দিক বৃষ্টির মত গুলি ছোড়া হয় সাবিরকে লক্ষ্য করে। সাবিরকে হত্যার পর সুরভের বাহিনী এগিয়ে যায় ছোট ভাই দাউদের বাসভবনের দিকে। সৌভাগ্যবশত ফটক পাহারায় থাকা দাউদের প্রধান সহযোগী খালিদ পালোয়ান দূর থেকে সুরভ ও আমিরজাদার গাড়ি চিনে ফেলে। আক্রমন হওয়ার আগেই খালিদ ও অন্যরা বাড়ির বিশাল স্টিলের গেটটি আটকে দেয়। দুই পক্ষের গোলাগুলি বেশ কিছুক্ষণ চললেও তাতে কেউ গুরুতর আহত হয়নি।

রাতের শেষ প্রহরে দাউদের কানে যায় সাবিরের মৃত্যুর খবর। ভাই হত্যার প্রতিশোধ স্পৃহায় পাগল হয়ে পড়া দাউদ একে একে মারতে শুরু করে পাঠান গ্যাং এর সদস্যদের। শুরু হয় মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর গ্যাং ওয়ার। এসময় পাঠান গ্যাং এর প্রায় ৫০জনকে হত্যা করা হয়। ভাই সাবির হত্যার মুল পরিকল্পনাকারী আমিরজাদা, আলমজেব, সামাদ খান আর মানিয়া সুরভেকে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে দাউদ। একদিন তার কাছে খবর আসে সামাদ খান সম্পর্কে। উঠতি গ্যাংস্টার অরুণ গাউলি ও তার বন্ধুদের BRA গ্যাং এর সহায়তায় হত্যা করা হয় সামাদ খানকে। সাবির হত্যার সাত মাস পর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মুম্বাইয়ের একটি আদালতে শুনানি চলাকালে আমিরজাদাকে গুলি করে হত্যা করে দাউদের লোক। আমিরজাদার হত্যার ফলে পাঠানরা প্রচণ্ড মাত্রায় খেপে যায়। আমিরজাদা হত্যার পরিকল্পনাকারী বড় রাজনকেও একইভাবে কোর্ট প্রাঙ্গনে হত্যা করার পরিকল্পনা করে পাঠান ডন আলমজেব। আলমজেব এজন্য আবদুল কুঞ্জুকে ভাড়া করে। নির্ধারিত দিনে বড় রাজনকে কোর্টে তোলা হয়। নৌবাহিনীর অফিসার সেজে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির হয় আব্দুল কুঞ্জু। একেবারে নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে পুলিশকে বোকা বানিয়ে সে গুলি করে বড় রাজনকে। বড় রাজনের হত্যার পর পাল্টা আঘাত হিসেবে পুলিশকে প্রচুর টাকা খাইয়ে মানিয়া সুরভেকে এনকাউন্টারে হত্যা করায় দাউদ। মুম্বাইয়ের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম এনকাউন্টার। বড় রাজনের হত্যাকারী আব্দুল কুঞ্জুর সাথে বিবাদ ছিল আরেক উঠতি গ্যাংস্টার ছোটা রাজনের। আব্দুল কুঞ্জুকে হাসপাতালে ফিল্মি কায়দায় হত্যা করে দাউদের খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে ছোটা রাজন। ততদিনে হাজি মাস্তান রাজনীতিবিদ বনে গেছেন আর ভারদারাজন চেন্নাই পালিয়ে গেছেন। সামাদের হত্যার পর করিম লালার প্রভাবও কমতে শুরু করে। পুরো মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেন দাউদ ইব্রাহিম। গ্যাংস্টার ছোটা রাজনকে নিয়ে গড়ে তোলেন তার অপরাধের সাম্রাজ্য। স্বর্ণ চোরাচালান, জাল টাকার ব্যবসা, অস্ত্র সরবরাহ, চাঁদাবাজি, কন্ট্রাক্ট কিলিংসহ প্রায় সকল অপরাধের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন নিজের হাতে। সমগ্র মুম্বাই জুড়ে কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব। একে একে তার দলে যোগ দিতে থাকেন ছোটা শাকিল, লম্বু শাকিল, আবু সালেম, টাইগার মেমনরা। পুরো মুম্বাই এর অপরাধের ধারা বদলে দিলেন দাউদ। মুম্বাইয়ে ভালো-খারাপ সকল কাজেই তাকে দিতে হতো বখরা। তার অনুমতি ছাড়া হতো না কোন অপরাধ।

দাউদের
Source: Quora

দাউদের সঙ্গে বলিউডের সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। তার দেয়া পার্টিতে ভিড় পড়ে যেতো বলিউডের অনেক তারকার। চিত্রনায়ক অনিল কাপুরকে দেখা গিয়েছিল দাউদের সাথে স্টেডিয়ামে একসাথে বসে খেলা দেখতে। দাউদের অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনা করেছিলেন সনু নিগম, অলকা ইয়াগ্নিক ও অনু মালিকসহ অনেক গায়করাই। তার সাথে নায়িকা অনিতা আইয়ুবের সম্পর্ক ছিল। অনিতা আইয়ুবকে সিনেমায় না নেয়ায় প্রযোজক আইয়ুব সিদ্দিকিকে হত্যা করেছিলো দাউদের লোকেরা। নায়িকা মন্দাকিনীর সাথেও সম্পর্ক ছিল দাউদের। অভিনেতা সালমান খান আর সঞ্জয় দত্তের সাথে দাউদের বন্ধুত্ব ছিল ওপেন সিক্রেট। বলিউডের অনেক সিনেমায় টাকাও লগ্নি করেছিলেন দাউদ।

দাউদের অপরাধের মাত্রা ছাড়ানোর ফলে মুম্বাই পুলিশ মাঠে নামে। একে একে মুম্বাই পুলিশের হাতে এনকাউন্টারে মারা পড়তে থাকে দাউদের সঙ্গী সাথীরা। এই সময়েই দাউদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে গুজরাটের বিখ্যাত ডন আব্দুল লতিফের। পুলিশের তৎপরতায় ১৯৮৪ সালে প্রাণভয়ে মুম্বাই ছাড়েন দাউদ। তিনি দুবাই গিয়ে নিজের অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দিলেন। সেখানে বসেই গড়ে তুললেন এশিয়ার সবচেয়ে বড় অপরাধ সিন্ডিকেট। মুম্বাইয়ে তার সাম্রাজ্য চালাতে থাকলেন ছোটা রাজন। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দাউদের হয়ে মুম্বাই পরিচালনা করতেন রাজন। এই সময়েই তার সাথে দাউদের মত ভিন্নতা হয়। তিনি ছেড়ে দেন দাউদের গ্যাং। হয়ে উঠেন দাউদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। একই সময়ে মুম্বাইয়ে দাউদকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে থাকেন আরেক ডন অরুণ গাউলি। কিছুটা ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে দাউদের সাম্রাজ্য। এমন সময়ে দাউদের ছোট বোন হাসিনা পার্কার হাতে তুলে নেন দায়িত্ব।

দাউদ
Source: mydigitalfc

বোম্বে নগরীতে ১৯৯৩ সালে বাবরি মসজিদ ইস্যুতে মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা হওয়ায় পাকিস্তানের আইএসআইয়ের ছত্রছায়ায় দাউদ বোম্বেতে বোমা হামলার পরিকল্পনা করে। এ কাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে টাইগার মেমন ও ইয়াকুব মেমন। এই হামলায় ২৩৭ জন মারা যান। প্রায় ১২০০ মানুষ আহত হন। পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে হামলার মুল পরিকল্পনাকারী ছিলেন দাউদ। আর তাকে ভারতে বোমা হামলার সরঞ্জাম এনে দেন গুজরাটের ডন লতিফ। দাউদ হয়ে পড়েন ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী। আবদুল লতিফকে এনকাউন্টারে মেরে ফেলে গুজরাট পুলিশ। আমিরাত সরকারের সাথে বন্দী বিনিময় চুক্তি করে দাউদকে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয় ভারত। সেই মুহূর্তে দাউদ ISI এর সহায়তায় পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। আইএসআইয়ের আশ্রয় প্রশ্রয়েই করাচীতে আছেন বলে ভারতের গোয়েন্দারা তথ্য দেন। মুম্বাই এর দাঙ্গার সময়েই দাউদের কাছে একে-৪৭ নেয়ার খবর প্রকাশিত হলে বিপাকে পড়েন সঞ্জয় দত্ত। কিছুদিন আগে এই মামলায় তার সাজাও হয়েছে। ৮৯-৯০ সাল থেকেই দাউদের ডান হাত হিসেবে পুরো সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন ছোটা শাকিল।

২০০২ সালে পর্তুগালের লিসবন থেকে গ্রেফতার হন দাউদের আরেক সঙ্গী আবু সালেম। আবু সালেম টি সিরিজের মালিক গুলশান কুমারের কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। চাঁদা না দেয়ায় আবু সালেম তাকে হত্যা করেন। ২০০৩ সালে দাউদ তার ভাই ইকবাল কাসকারকে মুম্বাইয়ের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। আর পাকিস্তানের করাচী থেকে পুরো নেটওয়ার্ক চালান দাউদ ও তার ভাই আনিস ইব্রাহিম। দাউদের যে ক’জন বিশ্বস্ত লোক রয়েছে তার মধ্যে আফতাব বাতকি অন্যতম। এ আফতাবের কাজ হল বিশ্বে বিভিন্ন দেশে জাল টাকার বিস্তার করা। দুবাই থেকে আফতাব সব নিয়ন্ত্রণ করে। তার হাত রয়েছে বাংলাদেশ পর্যন্ত। বাংলাদেশেও জাল টাকা বা ডলারের সাথে দাউদের হাত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। নেপালের স্টক মার্কেটে দাউদের অর্থ খাটে। এমনকি নেপালের অনেক মন্ত্রী চলে দাউদের টাকায়। ভারতের দাউদের রয়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। রিয়েল এস্টেট থেকে শুরু করে গার্মেন্টস পর্যন্ত এ ব্যবসার প্রসার দ্রুত বাড়ছে। গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, দুবাই ভিত্তিক আল মনসুর ভিডিও এবং করাচী ভিত্তিক সাদাফ ট্রেডিং কোম্পানি দাউদের। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দাউদ পাইরেটেড ভারতীয় ছবি বিক্রি করেন। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা Raw এর মতে, ভারতের ১ বিলিয়ন ডলারের পাইরেসি ব্যবসার ৭০ ভাগই দাউদের দখলে। দাউদের অন্যতম খাস লোক ইকবাল মিরচির মাধ্যমে চলে মাদক ব্যবসা। শিপিং, এয়ারলাইন্স ও অন্যান্য ক্ষেত্রে তাঁর বিনিয়োগ আছে এবং ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে তাঁর ব্যবসার স্বার্থ। তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭.৫ হাজার কোটি রুপি। দাউদের জীবন আজও সাধারন মানুষের কাছে এক অসীম আগ্রহের বিষয়। তাকে নিয়ে আজ পর্যন্ত অনেক সিনেমা তৈরি হয়েছে বলিউডে। এদের মধ্যে অন্যতম সিনেমাগুলো হচ্ছে “Once Upon a Time in Mumbai”, “D-Day”, “Company”, “Black Friday”, “Shootout at Wadala”, “Shootout at Lokhandwala”, “D”। তার বোন হাসিনা পার্কার কে নির্মিত হয় “হাসিনা পার্কার” মুভিটি।

ছোটা রাজনের বিয়েতে স্বস্ত্রীক দাউদ ইব্রাহিম।
ছোটা রাজনের বিয়েতে স্বস্ত্রীক দাউদ ইব্রাহিম
Source: Daily Bhaskar

দাউদের পরিবারে রয়েছে স্ত্রী মেহজাবিন শেখ, ছেলে মইন নওয়াজ ও তিন মেয়ে মাহরুখ, মেহরিন ও মেজিয়া। গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যমতে তারা সবাই করাচীর ক্লিফটনের আবাসিক এলাকায় পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ISI এর পাহারায় বেশ আরামেই রয়েছে। তার মেয়ে মাহরুখ এর বিয়ে হয়েছে সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার জাভেদ মিয়াদাদ এর ছেলের সাথে। আর আজকালের গোয়েন্দা সূত্রের খবরে জানা যায়, দাউদের একমাত্র ছেলে মইন অপরাধ জগত থেকে দূরে গিয়ে একজন মৌলভির জীবন বেছে নিয়েছে। দাউদ ইব্রাহিম এ নিয়ে বেশ হতাশ। এছাড়াও প্রধান সঙ্গী ছোটা শাকিল এর সাথে ভাই আনিস ইব্রাহীমকে নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছেন তিনি। তার বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী নির্বাচন নিয়ে বেশ হতাশায় ভুগছেন তিনি।

নিজের ক্ষুরধার অপরাধী মস্তিষ্ক দিয়ে সমগ্র দুনিয়াকে খাবি খাওয়ানো দাউদ ইব্রাহিম আজ বার্ধক্যে উপনীত। তার গড়ে তোলা অপরাধের সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকারের পথে। আর পৃথিবীর ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী ডন আজ নিজের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছে চরম হতাশায়। একজন অপরাধী যার হাতে লেগে আছে হাজারো লাখো মানুষের রক্ত, তার জীবনেই কি কষ্টকর পরিণতি হবে সেটা সময়ই ভালো বলে দেবে হয়তো।

তথ্যসূত্রঃ

১. https://en.wikipedia.org/wiki/Dawood_Ibrahim

২. http://www.rdshayri.com/status/dawood-ibrahim-biography/

৩. Dongri to Dubai – Six Decades of Mumbai Mafia – S. Hussain Zaidi

৪. https://www.indiatoday.in/india/story/dawood-ibrahim-pakistan-karachi-974276-2017-04-29

৫. http://www.frontline.in/static/html/fl1607/16070420.htm

ইতিবৃত্ত

Leave A Reply
41 Comments
  1. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# online shopping pharmacy india

  2. RickyGrila says

    mail order pharmacy india buy medicines from India indian pharmacy

  3. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# india pharmacy

  4. RickyGrila says

    pharmacy website india indian pharmacy world pharmacy india

  5. MichaelLIc says

    http://indiaph24.store/# reputable indian online pharmacy

  6. StevenJeary says

    online pharmacy india: indian pharmacy fast delivery – indian pharmacy

  7. RickyGrila says

    mexican pharmaceuticals online Mexican Pharmacy Online mexican pharmacy

  8. RickyGrila says

    indian pharmacy paypal indian pharmacy fast delivery buy prescription drugs from india

  9. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# india pharmacy mail order

  10. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico

  11. RickyGrila says

    canadian pharmacies compare Certified Canadian Pharmacies canadian pharmacy review

  12. StevenJeary says

    canadian online pharmacy reviews: northwest canadian pharmacy – canada pharmacy reviews

  13. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

  14. RickyGrila says

    mexican online pharmacies prescription drugs Online Pharmacies in Mexico medicine in mexico pharmacies

  15. MarcelZor says

    https://canadaph24.pro/# canadian 24 hour pharmacy

  16. RickyGrila says

    india online pharmacy buy medicines from India best india pharmacy

  17. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico online

  18. MarcelZor says

    http://canadaph24.pro/# online canadian pharmacy reviews

  19. RickyGrila says

    buying prescription drugs in mexico cheapest mexico drugs buying prescription drugs in mexico

  20. StevenJeary says

    best canadian online pharmacy: Prescription Drugs from Canada – canadian pharmacy review

  21. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# pharmacies in mexico that ship to usa

  22. MichaelLIc says

    http://indiaph24.store/# top 10 pharmacies in india

  23. RickyGrila says

    online pharmacy india indian pharmacy top 10 online pharmacy in india

  24. MarcelZor says

    https://canadaph24.pro/# buying from canadian pharmacies

  25. RickyGrila says

    prescription drugs canada buy online Prescription Drugs from Canada cheap canadian pharmacy online

  26. StevenJeary says

    online shopping pharmacy india: indian pharmacy – top online pharmacy india

  27. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

  28. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# Online medicine order

  29. RickyGrila says

    mexico drug stores pharmacies cheapest mexico drugs buying prescription drugs in mexico

  30. MarcelZor says

    http://canadaph24.pro/# legitimate canadian pharmacy online

  31. RickyGrila says

    canada drugs online reviews canadian pharmacies my canadian pharmacy

  32. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# canada ed drugs

  33. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# indian pharmacy paypal

  34. RickyGrila says

    п»їlegitimate online pharmacies india Generic Medicine India to USA indian pharmacies safe

  35. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# mexico pharmacy

  36. RickyGrila says

    indian pharmacies safe indian pharmacy fast delivery cheapest online pharmacy india

  37. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# mexican drugstore online

  38. RickyGrila says

    safe canadian pharmacies cheapest pharmacy canada safe canadian pharmacies

  39. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# top online pharmacy india

  40. MarcelZor says

    http://canadaph24.pro/# onlinecanadianpharmacy 24

  41. RickyGrila says

    pharmacy website india buy medicines from India buy medicines online in india

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More