“অ্যাশেজ” টেস্ট সিরিজের ইতিবৃত্ত

2

 

খুব সম্প্রতি অ্যাশেজ টেস্ট সিরিজ শেষ হল । তাই গণমাধ্যমের ব্যাপক মাতামাতি ও প্রচারণার ফলে সবাই কমবেশি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার এই টেস্ট সিরিজের খবরাখবর রেখেছেন । বর্তমান যুগ টি-টুয়েন্টির যুগ । এখন আর পাঁচ দিনের টেস্ট খেলা দেখার ধৈর্যও মানুষের মধ্যে নেই । খুব সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে ও সাউথ আফ্রিকার মধ্যে সংঘটিত টেস্ট ম্যাচটি চার দিনে খেলা হয়েছে । টেস্ট ক্রিকেটের এতসব সংকটের মধ্যেও অ্যাশেজ টেস্ট সিরিজের এতটুকু পর্যন্ত আবেদন কমেনি বরং প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে পূর্ণ মাত্রায় । আজকের আর্টিকেলটিতে অ্যাশেজ ইতিহাস ও দীর্ঘ পথচলা নিয়ে কথা হবে ।

অ্যাশেজ এর বিখ্যাত ট্রফি
অ্যাশেজ এর বিখ্যাত ট্রফি Source:the daily mail

অ্যাশেজ ইতিহাসঃ

১৮৭৭ সালে মেলবোর্নে সর্বপ্রথম ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় । এর ঠিক পাঁচ বছর পর ১৮৮২ সালে তরুণ নির্ভর অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডে খেলতে আসে । একমাত্র টেস্ট ম্যাচটি ছিল টেস্ট খেলার তীর্থভূমি ওভালে । ম্যাচটি ছিল লো স্কোরিং ম্যাচ । অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৩ রান সংগ্রহ করতে সমর্থ হয় । ইংল্যান্ডও খুব বেশি ভাল করতে পারেনি । অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ৩৬ রানের লিড দিতে সমর্থ হয় । ১০১ রানেই থামে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস । দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া বেশ ভালোই ঘুরে দাঁড়ায় । হুগ ম্যাশের ৬০ বলে ৫৫ রান মিলে ১২২ রানে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় । সর্বশেষ ইনিংসে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ৮৫ রান । তখন ইংল্যান্ডের কাছে ৮৫ রান ছিল খুব সহজ একটা ব্যাপার । ওভালে উত্তেজিত দর্শকরা অপেক্ষায় আছে ইংল্যান্ডের জয় দেখার জন্য । এমনকি ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড় ডব্লিউ জি গ্রেস অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলার ফ্রেড স্পাফোর্থকে অবহেলা করেই বলেছিল যে, “ইংল্যান্ডের কাছে এটি কিছুই না, দিন শেষে আমরাই জিতব ।” ইংল্যান্ড দল সত্যি সত্যিই দারুণ খেলেছিল । ৫ উইকেট হারিয়ে ৭৫ রানে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড । আর মাত্র দশ রান দরকার ছিল ৪ উইকেটে । কিন্তু ২ রান যোগ না করতেই ফ্রেড স্পাফোর্থের শিকার হন চার ব্রিটিশ ব্যাটসম্যান । সর্বশেষ ব্যাটসম্যান টেড পেয়েট এই দুই রান করতে সমর্থ হয় । ৭৭ রানেই থেমে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস এবং অস্ট্রেলিয়া অবিশ্বাস্যভাবে ৭ রানের ঐতিহাসিক জয় অর্জন করে । ফ্রেড স্পাফোর্থ ৯০ রান দিয়ে ১৪ উইকেট নিয়ে ইতিহাসে স্থায়ীভাবে নিজের নাম অঙ্কিত করে । ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার জয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ ব্রিটিশ সাংবাদিক রেগিনাল্ড শেরলি বোকস দ্যা স্পোর্টিং টাইমসে “শোক সংবাদ” নামে একটি কলাম লেখেন । কলামটি ছিল এমন যে, দুঃখ ভারাক্রান্ত ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে স্মরণ করছি, যেটি ওভালে ধ্বংস (মারা যায়) হয়  (২৯আগস্ট, ১৮৮২)। এবং আরো বলেন যে পরবর্তী বছর অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করা হবে ।

এটিই বিখ্যাত সাংবাদিক শেরলির লেখা
এটিই বিখ্যাত সাংবাদিক শেরলির লেখা Source: Telegraph

ইংল্যান্ড দল অবশ্য ১৮৮২-৮৩ সফরে অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ঠিকই অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে সমর্থ হয় । চার ম্যাচ সিরিজের দুইটিতে ইংল্যান্ড জয়লাভ করে এবং একটিতে অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে । অপর ম্যাচটি ব্যাপক বিতর্কিত ছিল । অস্ট্রেলিয়া ওই ম্যাচটিতে নিজেদের জয় দাবি করলেও তা স্বীকৃতি পায়নি । এভাবেই শুরু হয় ক্রিকেট বিশ্বের ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক সিরিজের, যার নাম হয়ে উঠলো অ্যাশেজ । অবশ্য অফিসিয়ালভাবে অ্যাশেজ নামটি স্বীকৃতি পায় ১৯০৫ সালে উইসডেন ক্রিকেট এলমেনাকের মাধ্যমে ।

১৮৮২-৮৩ সালের ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল
১৮৮২-৮৩ সালের ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল Source:Telegraph

দ্যা  অ্যাশেজ আর্ন (ট্রফি):

এই ট্রফিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ট্রফির একটি । সাইজে ছোট হলেও এর তাৎপর্য কিন্তু কোন অংশেই কম নয় । ১১সেঃমিঃ লম্বা অনেকটা শ্যাম্পেইন এর বোতলের আদলে খাচ কাটা এই ট্রফিটি  অ্যাশেজ সিরিজের অন্যতম স্মারক হিসেবে পরিচিত  । এটার মূল ট্রফিটি লর্ডস স্টেডিয়ামে সংরক্ষিত থাকে এবং বিজয়ী দল একটি রেপ্লিকা ট্রফির মাধ্যমে বিজয় উদযাপন করে । মূলত মেলবোর্ন এর জেনথ ক্লার্ক নামের একজন মহিলা ১৮৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় বিজয়ী ইংল্যান্ড দলের ক্যাপ্টেন ব্লিগকে তার গানের টিচার ফ্লোরেন্স মার্ফির মাধ্যমে এই ট্রফিটি মজা করেই দেন । এই মজা করে দেয়া ট্রফিই একসময় ইতিহাসে পরিণত হয় । আরেকটি মজার ব্যাপার হল ইংল্যান্ড দলের অধিনায়ক ব্লিগ পরবর্তীতে গানের টিচার ফ্লোরেন্স মার্ফিকে বিবাহ করেছিলেন ।

সেই বিখ্যাত নারী ফ্লোরেন্স মার্ফি
সেই বিখ্যাত নারী ফ্লোরেন্স মার্ফি
Source:Telegraph

দুই দলের খেলার সমীকরণঃ

খেলার গড় সমীকরণ
খেলার গড় সমীকরণ Source: Wikipedia

সেই জন্ম থেকে চলে আসছে অ্যাশেজ সিরিজ । মাঝেমাঝে হয়ত বিভিন্ন বাধাঁবিপত্তির জন্য খেলা বন্ধ থাকলেও একদম থেমে যায়নি । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যাশেজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু যুদ্ধোত্তর সময় অ্যাশেজ ফিরে এসেছিল পূর্ণ উদ্দোম নিয়ে । মূলত পাঁচ সিরিজের খেলাই বেশি হয় । তবে বেশ কিছু বার চার ম্যাচ সিরিজ (১৯৩৮:১৯৭৫) ও বহুবার ছয় ম্যাচ সিরিজের খেলাও হয়েছে । এ পর্যন্ত মোট ৩৩০ টি ম্যাচ খেলা হয় । তার মধ্য থেকে অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে ১৩৪ টি ম্যাচে এবং ইংল্যান্ড জয়লাভ করে ১০৬টি ম্যাচে । সিরিজের হিসেবে, ৭০টি সিরিজের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে ৩৩টি সিরিজ, অন্যদিকে ইংল্যান্ড জয়লাভ করে ৩২ টি সিরিজে । এখান থেকেই বুঝা যায় যে, কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় এই টেস্ট সিরিজটি । আরেকটি তথ্য জেনে রাখা জরুরী, ১৮৮৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া বিজয়ী দল হিসেবে  অ্যাশেজ ট্রফি নিজেদের কাছে রাখতে সমর্থ হয় ৭৮ বছরের মত, অন্যদিকে ইংল্যান্ড রাখে ৫৫ বছরের কিছু বেশি । সর্বশেষ অ্যাশেজটিও জয়লাভ করে অস্ট্রিলিয়া । আগামী দুই বছরের জন্য এটা তাদের কাছেই থাকবে । ২০২০ সালে ইংল্যান্ডে ফিরবে এই ট্রফি । ইংল্যান্ড হয়ত এটা আবার পরবর্তী দুই বছরের জন্য নিজেদের করেই রাখতে চাইবে । কেননা ২০১৭-১৮ অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ড ৪-০ তে হেরেছে । অবশ্যই ইংল্যান্ড নিজেদের মাটিতে অজিদের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নিতে চাইবে এটাই অনুমেয় ।

তথ্যসূত্র ঃ

১. Wikipedia

২. Cricinfo.com

৩.Telegraph

৪. BBC

৫. The daily mail

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More