বিশ্বকাপের চোকার্স সাউথ আফ্রিকাঃ এ চোকিং যেন রূপকথার অঘটনকেও হার মানায়! (শেষ পর্ব)
প্রথম পর্বের পর-
২০০২ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিঃ
২০০২ সালে চোকার প্রোটিয়ারা যেন আবার প্রমাণ করল আসলে “চোকার্স” তকমাটা তাদের সাথেই যায়। সেই বছর ১২ দলের অংশগ্রহণে শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল আইসিসির মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। গ্রুপ পর্বের দুইটা ম্যাচ জিতে খুব ভালোমতই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে গেল সাউথ আফ্রিকা। কিন্তু সেই সেমিফাইনালেই গিয়ে যেন বাঁধল বিপত্তি। সেমিফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সংগ্রহ ছিল ২৬১ রান। জবাবে খুব ভালোমতই এগোচ্ছিল সাউথ আফ্রিকা।৩৮ ওভারে একসময় সাউথ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১৯৪। সাউথ আফ্রিকার জয়টা তখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত ১১৯ বলে ১১৬ রান করে হার্শেল গিবস রিটায়ার্ট আউট হলে যেন সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল! তাই ৫০ ওভার শেষে ভারতের চেয়ে ১০ রান কম করে তাদের সংগ্রহ দাঁড়াল ২৫১ রান। ১০ রানে পরাজিত হয়ে নিজেদের চোকার্স প্রমাণিত করল প্রোটিয়ারা।
২০০৩ বিশ্বকাপ:
২০০৩ সালে যেন সাউথ আফ্রিকা ঘরের মাঠেই আঘটনের শিকার হলেন। গ্রুপ পর্বের ৬ খেলায় ৩ জয় নিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিতে হয় স্বাগতিক আফ্রিকানদের। অথচ ভাগ্য সহায় হলে গ্রুপ পর্বে ৫ জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারত সাউথ আফ্রিকা। প্রথম ম্যাচেই ৯৬ বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকার স্বপ্নভঙ্গ করা সেই ব্রায়ান লারার ১১৬ রানের জন্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৩ রানে হেরে যায় সাউথ আফ্রিকা। গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার সাথে জিতলেই সুপার সিক্সে চলে যেত সাউথ আফ্রিকা। ঐ ম্যাচে পরে ব্যাট করা সাউথ আফ্রিকাকে ডাক ওয়ার্থ লুইস হিসেবে ৪৫ ওভারে ২৩০ রান করলেই জয় হয়ে যেত। কিন্তু শন পোলক মাঠে খবর দিয়ে গেলেন ৪৫ ওভারে ২২৯ রান করলেই চলবে। তাই মুরালিধরনের করা আগের বলে ৬ মেরে ২২৯ রানে পৌঁছালেও শেষ বলটি ব্লক করেন ব্যাটসম্যান মার্ক বাউচার। পরে দেখা গেল ২২৯ নয়, ডাকওয়ার্থ লুইসে দরকার ছিল ২৩০ রান। তাই ম্যাচটি টাই হয়ে যায় এবং প্রথম রাউন্ড থেকেই স্বাগতিক সাউথ আফ্রিকা বিদায় নেয়। ততদিনে “চোকার্স” তকমাটি সুন্দরভাবে লেগে গেছে সাউথ আফ্রিকার ভিতরে।
২০০৭ বিশ্বকাপ:
২০০৭ বিশ্বকাপের সময় ক্রিকেট বিশ্বে চলছিল অস্ট্রেলিয়ার একক আধিপত্য। তবুও প্রায়েম স্মিথের নেতৃত্বে সাউথ আফ্রিকা দলে ছিল গিবস, বাউচার, ভিলিয়ার্স, পোলক আর এনটিনির মত তারকা খেলোয়াড়ে ভরপুর। ঐ বিশ্বকাপে ১৬ টি দল ৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রথম রাউন্ডের খেলা খেলে। গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও সুপার এইটে উঠে সাউথ আফ্রিকা। সুপার এইটে ঐ সময়ের আন্ডারডগ বাংলাদেশের কাছে হেরে বসে সাউথ আফ্রিকা। তবুও চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনালে যায় সাউথ আফ্রিকা। কিন্তু সেমিফাইনালে ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়তে পারল না আফ্রিকানরা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১৪৯ রানে গুটিয়ে গিয়ে সাউথ আফ্রিকা প্রমাণ করল বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে তাদের জন্য জয়লাভ করা আসলেই পাহাড় জয় করার সমতুল্য।
২০০৭ ওয়ার্ল্ড টি–টুয়েন্টি:
২০ ওভারের টি-টুয়েন্টি খেলার প্রথম আসর অনুষ্ঠিত হয় চোকারদের দেশ সাউথ আফ্রিকাতেই। প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ২০৬ রানের পাহাড়সম টার্গেট ১৪ বল বাকি থাকতেই টপকিয়ে যায় সাউথ আফ্রিকা। তখন বুঝাই যাচ্ছিল ঘরের মাঠে সাউথ আফ্রিকা মনে হয় কোনো দর্শককে হতাশ করবে না। কিন্তু সুপার এইট পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৩৭ রানে হেরে সেমিফাইনালেও উঠতে পারল না স্বাগতিকরা। এবার তাদের বিদায় নিতে হল নেট রান রেটের করাল থাবার জন্য।
২০১১ বিশ্বকাপ:
২০১১ বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকা যা করেছে তা মনে হয় ব্যাখ্যা করার কোনো ভাষা নেই। গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের সাথে ৬ রানে হারলেও স্বাগতিক ভারতকে হারিয়ে গ্রুপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভালোভাবেই সেমিফাইনালে উঠে প্রোটিয়ারা। কিন্তু ভাগ্যের লিখন যেন না খণ্ডন হওয়ার ন্যায়। কোয়ার্টার ফাইনালে সাউথ আফ্রিকার খেলা পড়ল নিউজিল্যান্ডের সাথে যারা এই উপমহাদেশে খেলতে একদম অপারদর্শী। কোয়ার্টার ফাইনালে পুরোপুরি ফেভারিট ছিল সাউথ আফ্রিকা। কিন্তু কে জানত ঐ সাউথ আফ্রিকা কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বসবে। ৫০ ওভারে জেসি রাইডারের ৮৩ রানের সুবাদে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ২২২ রানের টার্গেট দাঁড়া করায় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু তখনকার সাউথ আফ্রিকার কাছে এই টার্গেট মামুলিই ছিল। অন্ততপক্ষে গ্রুপ পর্বে তাদের পারফরমেন্স সেই কথাই বলে। ২২২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ভালো জয়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছিল সাউথ আফ্রিকা। ২৫ তম ওভারে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ১০৮। কিন্তু হঠাৎ করেই অবাক করে দিয়ে সাউথ আফ্রিকার স্কোর ১০৮/২ থেকে হয়ে গেল ১৩২/২। সেই ম্যাচে কোয়ার্টার ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৪৯ রানে হেরে আর সেমিফাইনালে যাওয়া হল না সাউথ আফ্রিকার। তখন পর্যন্ত অনেকবারই নক-আউট পর্বে গেলেও অবাক করা বিষয় হল সাউথ আফ্রিকা তখন পর্যন্ত প্রতিটি নক-আউট পর্বের প্রথম ম্যাচেই ছিল পরাজিত দলের কাতারে।
২০১৫ বিশ্বকাপ:
২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সাউথ আফ্রিকার দুর্ভাগ্য দেখে বোধহয় অনেক ক্রিকেটপ্রেমী দর্শক কেঁদেই দিয়েছিল। সেবার সাউথ আফ্রিকা চোক করলেও তাদের একটা অর্জন ছিল। ২০১৫ সালের আগে সাউথ আফ্রিকা কখনো বিশ্বকাপের নক-আউট পর্বে জয় লাভ করতে সক্ষম হয় নাই। কিন্তু সেবার প্রুপ পর্বে ভারত আর পাকিস্তানের কাছে হারলেও গ্রুপে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে যায় সাউথ আফ্রিকা। কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলংকাকে যেন তুলোর মত উড়িয়ে দিল সাউথ আফ্রিকা। তাহির আর ডুমিনির স্পিনে ১৩৩ রানেই শেষ হয়ে যায় শ্রীলংকার ইনিংস। জবাবে মাত্র ১৮ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সাউথ আফ্রিকা। কিন্তু সেমিফাইনালে গিয়ে যেন আবার মাথায় ভূত চেপে বসে সাউথ আফ্রিকার। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৩ ওভারে ২৮১ রানের সংগ্রহ দাঁড়া করায় সাউথ আফ্রিকা। জবাব দিতে নেমে শেষ মুহূর্তে ২ বলে ৫ রান লাগত নিউজিল্যান্ডের। তখন ডেল স্টেইনের বলে ছক্কা হাকিয়ে সাউথ আফ্রিকাকে আবারো চোকার্স প্রমাণিত করেন গ্র্যান্ট ইলিয়ট। তবে খেলা শেষে বিমর্ষ ডেল স্টেইনকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ইলিয়টের হাত বাঁড়িয়ে দেওয়া ক্রিকেট বিশ্বে অনেক প্রশংসিত হয়। সেই ম্যাচে এ বি ডি ভিলিয়ার্স আর ডেল স্টেইন যদি সহজ রান আউটের সুযোগগুলো হাতছাড়া না করত তাহলে হয়তবা প্রথমবারের মত সাউথ আফ্রিকা বিশ্বকাপের ফাইনালে চলে যেত। কিন্তু তারা যে ‘চোকার্স’ নামে পরিচিত তা যেন তারা তাদের পরিচিতি থেকে সরাতে একদমই অক্ষম।
তথ্যসূত্রঃ
cricketcountry.com
sportskeeda.com
espncricinfo.com
cricket.com.au
terbinafine 250mg price – buy fluconazole 100mg online oral griseofulvin
buy metformin online – order glycomet sale precose sale