ম্যারিটাল রেপ (বৈবাহিক ধর্ষণ) : আদৌ ধর্ষণ নাকি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্বামীর স্বেচ্ছাচারী অধিকার?

20

ধর্ষণ নিঃসন্দেহে সমাজের এবং মানুষের প্রতি অন্যতম জঘন্য একটি অপরাধ। বিশ্বের সকল দেশেই ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় এবং সকল দেশেই এটাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যাবস্থা করা আছে। আমাদের দেশেও দন্ডবিধি ১৮৬০’র ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা দেয়া আছে এবং ৩৭৬ ধারায় এর শাস্তির বিধান উল্লেখ করা আছে। কিন্তু বৈবাহিক ধর্ষণ? এটাকে কি আদৌ ধর্ষণের কাতারে ধরা হয়? এমনকি এমন কোন ধর্ষণের প্রকারভেদ আছে সেটা জানা আছে কত সংখ্যক মানুষের? উত্তরটা খুঁজতে গেলে আপনাকে হতাশ হতে হবে। যারা এই ব্যাপারে জ্ঞাত আছে তাদের মাঝে বেশিরভাগ মানুষই আবার এটাকে ধর্ষণ মানতে নারাজ। বিশেষকরে পুরুষ সমাজতো মোটেই না, এমনকি অনেক নারীও এটার বিপক্ষে চলে যাবেন। তবে এটাকে ধর্ষণের কাতারে ফেলতে রাজি এমন লোকের সংখ্যাও হয়তো কম হবে না।

ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধর্ষণ কি?

বৈবাহিক ধর্ষণ বলতে স্বামী কর্তৃক এমন আচরণকে বুঝায় যেখানে স্বামী তার স্ত্রীর সম্মতিব্যতীত এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও জোরপূর্বক শারীরিক সংসর্গে লিপ্ত হয়। অনেক পুরুষ এখানে প্রশ্ন তুলতে পারেন যে স্ত্রী কর্তৃকও স্বামী এরূপ আচরণের স্বীকার হতে পারেন। কিন্তু আমি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না কারণ আমাদের চারপাশে যেসব ধর্ষণের ঘটনা আমরা দেখতে এবং শুনতে পাচ্ছি সেগুলো পুরুষ কর্তৃক ঘটে আসছে।

তো স্বাভাবিকভাবে এই কথা শুনলে আমাদের সমাজের মানুষ ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিবে কারণ তাদের কাছে এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অংশ যেখানে স্বামী সর্বদা স্ত্রীর উপর আধিপত্য করে আসছে। আমাদের সমাজে বিয়ের পর অনেক স্বামীরাই স্ত্রীকে ব্যাক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে দেখে। তাদের কাছে ব্যাপারটা এরকম যে তারা বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েই স্বাবলম্বী না, তাদের নিজের উপার্জন থাকে না। তারা ভরনপোষণের জন্য সম্পূর্ণরুপে স্বামীর উপর নির্ভর করে বিয়ের পর। স্বামীরা এই সুযোগটা কাজে লাগায়। তারা ভাবে ভরণপোষণ দিচ্ছি সুতরাং স্ত্রীর উপর আমার একচেটিয়া অধিকার বজায় আছে। শারীরিক সংসর্গের সময় তারা স্ত্রীর সম্মতি নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। স্বামীরা ধরে নেয় এটা তার বৈবাহিক অধিকার। সমাজে বিয়ের মাধ্যমে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও নারী পরিবার গঠনের এবং সন্তান জন্ম দেয়ার অধিকার লাভ করে। কিন্তু এই বিয়ের মানে এই না যে স্বামী তার স্ত্রীর সম্মতি ব্যতীত শারীরিক সংসর্গে লিপ্ত হবার অধিকার রাখে। প্রাচীনকাল থেকেই স্বামীর স্ত্রীর উপর একচেটিয়া অধিকারের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত কিন্তু বর্তমানে দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর সময় এসেছে।

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বৈবাহিক ধর্ষণঃ

আমাদের দেশের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণ নামের অপরাধের বর্ণনা দেয়া হয় নি। ধর্ষণ সংক্রান্ত ধারা হচ্ছে দন্ডবিধি ১৮৬০’র ৩৭৫, ৩৭৬ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’র ধারা ৯। কিন্তু এই ধারা গুলোর কোথাও বৈবাহিক ধর্ষণের কথা বলা হয় নি, সুতরাং এর শাস্তির বর্ণনা দেয়া তো দূরের ব্যাপার। বরং দন্ডবিধির ৩৭৫ নম্বর ধারায় রেপের সংজ্ঞা থেকে বৈবাহিক ধর্ষণ ব্যাপারটাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে ৫ রকম উপাদানের কথা বলা হয়েছে। একটা দৃশ্যে বলা আছে একজন ব্যাক্তি যদি তার স্ত্রীর সাথে শারীরিক সংসর্গে লিপ্ত হয় যার বয়স কিনা ১৩ বছরের কম না সেই ক্ষেত্রে তা কখনো ধর্ষণ বলে গণ্য হবে না। সুতরাং এখানে ১৩ বা তার অধিক বয়সের স্ত্রীর সাথে যেকোন পরিস্থিতিতে এমনকি সম্মতি ব্যতীত যৌনসহবাসকেও ধর্ষণ বলে গণ্য করা হচ্ছে না। এদিক থেকে আমাদের দেশের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণ থেকে স্বামীকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে Domestic Violence (Prevention and Protection) Act প্রণয়ন করে যেখানে ৩(গ) ধারায় Sexual Abuse’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু যার কোন সুস্পষ্ট সংজ্ঞা, উপাদান বর্ণনা করা হয় নি।

কিছু পরিসংখ্যানঃ

২০১৩ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, চীন, ইন্দোনেশিয়ার ১০০০০ এর অধিক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের উপর জরিপ চালায়। সেখান থেকে বের হয়ে আসে ২৪% স্বামীরা তাদের স্ত্রীর সাথে জোরপূর্বক শারীরিকভাবে মিলিত হয় যেখানে কিনা তারা স্ত্রীর সম্মতি নেয়ার প্রয়োজনও মনে করে না। তন্মধ্যে ৩৮% পুরুষ স্ত্রীদেরকে শাস্তি প্রদান করতে জোরপূর্বকভাবে মিলিত হয়। ২০১১ সালে জাতিসংঘের দ্বারা পরিচালিত আরেকটি জরিপে বের হয়ে আসে ৮৭% বিবাহিত মহিলা স্বীকার করে যে তাদের স্বামীরা তাদেরকে সেক্সচুয়ালি অত্যাচার করে যেখানে ১২০০০ মহিলা অংশগ্রহণ করেন। ২০১১ সালের জাতিসংঘ রিপোর্ট বলে যে মাত্র ৫২ টি দেশ তাদের আইন সংশোধন করে ম্যারিটাল রেপকে অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছে যেখানে বাংলাদেশ ওই তালিকায় নেই।

বৈবাহিক ধর্ষণ
Source: TheHealthSite.com

ম্যারিটাল রেপঃ আদৌ রেপ?

আগেই বলেছি এটাকে বেশিরভাগ পুরুষই ধর্ষণ মানতে নারাজ। এমনকি অনেক মহিলাও এটাকে ধর্ষণ হিসেবে মেনে নিবেন না। এর কারণ হচ্ছে ছোটবেলা থেকেই পরিবার থেকে একটা মেয়েকে শেখানো হয় স্বামী হচ্ছে দেবতাতুল্য। তাই স্বামীর বিরুদ্ধে কথা বলতে বেশিরভাগ মহিলাই নারাজি। এটাকে রেপ বলে স্বীকার করে নিতে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। তবে সমাজে সচেতন নারীরা তাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা থেকে বের হয়ে আসছেন।

বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে তালিকাভূক্ত করা কি আদৌ দরকার?

এই অংশে এসে আমি একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করবো। কারো ভিন্নমত থাকতে পারে। আমি সেটাকে সম্মান জানাতে প্রস্তুত।

আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ বিবাহ করার মাধ্যমে শারীরিকভাবে মিলিত হবার বৈধতা পায়। তবে একজন নারীকে বিবাহ করার মানেই এটা হতে পারে না যে স্বামী তার স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই জোরপূর্বক শারীরিকভাবে মিলিত হবে কিংবা শারীরিকভাবে নির্যাতন করবে। প্রতিটি মানুষেরই যার যার মানবাধিকার রয়েছে। বাংলাদেশের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় নি। কিন্তু আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন সংশোধন করে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। তবে এটার আসন্ন ফলাফল সম্পর্কেও আমাদের ভাবতে হবে। কোন নারী তার স্বামীর উপর ব্যক্তিগত অন্য কোন আক্রোশ থেকেও আদালতে ধর্ষণের মামলা দায়ের করতে পারেন। আবার বিবাহের ফলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরিত্র একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সমাজে আমরা যেসকল ঘৃণ্যিত ধর্ষণকারীর কথা দেখে থাকি, সে আর স্বামীর অবস্থান আমার কাছে এক বলে মনে হয় না কারণ স্ত্রীর উপর স্বামীর একটা অধিকার বিয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যদিও সেটা জোরপূর্বক কিছু করাকে সমর্থন করে না বলেও মনে করি। আরেকটা বাজে পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে যদি স্ত্রী স্বামীর নামে মামলা দায়ের করে এই অভিযোগে। ওই স্বামী পরবর্তীতে তার স্ত্রীর সাথে সংসার করতে আর রাজী নাও হতে পারে। এর ফলে সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে আমি মনে করি।

এই অবস্থায় আমার মতামত হতে পারে এমন যে, বৈবাহিক ধর্ষণের পরিস্থিতিতে শুরুতেই আদালতে মামলা দায়ের না করে কোন সালিশের মাধ্যমে সেটাকে নিষ্পত্তি করা যায় কিনা। সুতরাং প্রচলিত আইনের সংশোধন এনে বৈবাহিক ধর্ষণের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করা এবং সালিশের মাধ্যমে তা কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায় সে ব্যাপারে গাইডলাইন প্রদান করা যেতে পারে। আর সেই সালিশটি হতে পারে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এবং কেইসের ফ্যাক্টস পক্ষদ্বয় আর মধ্যস্থতাকারী ছাড়া আর কেউ জানবে না। যদি মধ্যস্থতা করা সম্ভব হয়ে না উঠে সেই ক্ষেত্রে আদালতে যাওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। সবশেষে এর শাস্তি অবশ্যই প্রচলিত ধর্ষণের শাস্তির চেয়ে ভিন্ন হবে।

সর্বোপরি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোটা খুবই জরুরী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্ত্রীকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে বিবেচনা করার জঘন্য প্রথা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আর নারীর ক্ষমতায়ন ব্যাপারটাও গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।

Scholar Imam Gajjali says, “Never intercourse with your wife like a beast, first make her ready psychologically.”

Leave A Reply
20 Comments
  1. RickyGrila says

    reputable mexican pharmacies online cheapest mexico drugs п»їbest mexican online pharmacies

  2. RickyGrila says

    online pharmacy canada canadian pharmacy ratings canadian pharmacies compare

  3. RickyGrila says

    indian pharmacy paypal Generic Medicine India to USA Online medicine order

  4. StevenJeary says

    reputable indian pharmacies: buy medicines from India – best india pharmacy

  5. RickyGrila says

    escrow pharmacy canada Certified Canadian Pharmacies best canadian online pharmacy reviews

  6. RickyGrila says

    mexico pharmacies prescription drugs mexican pharmacy mexican mail order pharmacies

  7. RickyGrila says

    mexico drug stores pharmacies cheapest mexico drugs buying prescription drugs in mexico

  8. StevenJeary says

    india pharmacy mail order: indian pharmacy fast delivery – reputable indian pharmacies

  9. RickyGrila says

    reputable mexican pharmacies online mexico pharmacy medicine in mexico pharmacies

  10. Aaohut says

    buy rybelsus cheap – brand desmopressin desmopressin

  11. RickyGrila says

    india pharmacy mail order buy medicines from India Online medicine home delivery

  12. StevenJeary says

    purple pharmacy mexico price list: mexico drug stores pharmacies – mexico drug stores pharmacies

  13. RickyGrila says

    mexican online pharmacies prescription drugs cheapest mexico drugs mexican mail order pharmacies

  14. RickyGrila says

    reputable indian online pharmacy Cheapest online pharmacy indian pharmacy paypal

  15. StevenJeary says

    best online pharmacies in mexico: Mexican Pharmacy Online – buying prescription drugs in mexico online

  16. RickyGrila says

    canadian pharmacy world reviews certified canadian international pharmacy canada drugstore pharmacy rx

  17. RickyGrila says

    buying from canadian pharmacies canadian pharmacies cheap canadian pharmacy

  18. RickyGrila says

    mexico drug stores pharmacies mexico pharmacy mexico drug stores pharmacies

  19. RickyGrila says

    Online medicine home delivery Generic Medicine India to USA indian pharmacy

  20. RickyGrila says

    medication from mexico pharmacy Online Pharmacies in Mexico reputable mexican pharmacies online

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More