সাধারণত কাগজের তৈরি প্রচলিত মুদ্রা বা এ সংশ্লিষ্ট কোন ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বস্তু ব্যবহার করে বাস্তব জীবনে এবং অনলাইনে লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো আপাতঃ দৃষ্টিতে কোন প্রকারের সমস্যা ছাড়াই মিটিয়ে ফেলা যায়। তবে বর্তমানে ব্যবহৃত এটিএম কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড অথবা অন্য ডিজিটাল স্বাক্ষর সম্বলিত বস্তুগুলো ব্যবহারে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে। এসবে লেনদেনের ক্ষেত্রে গ্রাহক ও গ্রহীতা উভয়কে তৃতীয় কোন পক্ষের উপর ‘ট্রাস্ট’ বা আস্থা রাখতে হয়, উদাহরণস্বরূপ ব্যাংক। তৃতীয় পক্ষ এই ব্যাংকে উভয় পক্ষ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের মুদ্রা পরিশোধ করে, যেটিকে ইংরেজিতে বলে ‘ডাবল স্পেন্ডিং’। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির আবির্ভাব। বিটকয়েন তেমনি একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি।
বিটকয়েন হল ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রোটকলের মাধ্যমে লেনদেন হওয়া সাংকেতিক মুদ্রা। বিটকয়েন লেনদেনের জন্য কোন ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা নিকাশ ঘরের প্রয়োজন হয় না। ২০০৮ সালে এক অজানা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সাতোশি নাকামোতো নামে এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রস্তাব করেন। তিনি/তারা এই মুদ্রাব্যবস্থাকে পিয়ার-টু-পিয়ার লেনদেন নামে অভিহিত করেন। বিটকয়েনের লেনদেনটি বিটকয়েন মাইনার নামে একটি সার্ভার কর্তৃক সুরক্ষিত থাকে। পিয়ার-টু-পিয়ার যোগাযোগ ব্যাবস্থায় যুক্ত থাকা একাধিক কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের মধ্যে বিটকয়েন লেনদেন হলে এর কেন্দ্রীয় সার্ভার ব্যবহারকারীর লেজার হালনাগাদ করে দেয়।
প্রস্তাবনা প্রকাশের পর থেকে সাতোশি বিটকয়েন ‘মাইনিং’ এর জন্য প্রথম সফটওয়্যার তৈরি করে। ‘মাইনিং’ হচ্ছে যে পদ্ধতিতে বিটকয়েন তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সাতোশি প্রথম বিটকয়েন মুদ্রা রিলিজ করে।
একটি লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে নতুন বিটকয়েন উৎপন্ন হয়। ২১৪০ সাল পর্যন্ত নতুন সৃষ্ট বিটকয়েনগুলো প্রত্যেক চার বছর পরপর অর্ধেকে নেমে আসবে। ২১৪০ সালের পর ২১ মিলিয়ন বিটকয়েন তৈরি হয়ে গেলে আর কোন নতুন বিটকয়েন তৈরি করা হবে না।
যেহেতু বিটকয়েনের লেনদেন সম্পন্ন করতে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন পরে না এবং এর লেনদেনের গতিবিধি কোনভাবেই অনুসরণ করা যায় না তাই বিশ্বের বিভিন্ন যায়গায় বিটকয়েন ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বৈধ পণ্য লেনদেন ছাড়াও মাদক চোরাচালান এবং অর্থপাচার কাজেও বিটকয়েনের ব্যবহার আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও বিটকয়েন ডিজিটাল কারেন্সি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার বিপরীতে এর দর মারাত্মক ওঠানামা, দুষ্প্রাপ্যতা এবং ব্যবসায় এর সীমিত ব্যবহারের কারণে অনেকেই এর সমালোচনা করেন।
দেখুন ডলারের বিপরীতে বিটকয়েনের বর্তমান মূল্য – ১ বিটকয়েন = ৭৭৮৫.৯৯ ডলার। (১৯/১১/১৭, রাত ৯ ঘটিকা)
একমাস আগেও যার মূল্য ছিল ৪৮০০ ডলার। এক বছর আগে মূল্য ছিল ৯০০-১০০০ ডলারের ভিতর। বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা ও মূল্য এত দ্রুত বাড়ছে অনেকেই একে বিশ্ব অর্থনীতির প্রতি হুমকি হিসাবে দেখছে। আবার অনেকের কাছে বিটকয়েন-ই অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।
বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে
বিটকয়েনের লেনদেন হয় পিয়ার টু পিয়ার বা গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোন কেন্দ্রীয় নিকাশ-ঘরের মধ্য দিয়ে যায় না কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই। বিটকয়েনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। সাধারণ মুদ্রা নোটের মতোই এটি এক ব্যক্তির কাছ থেকে অন্য ব্যক্তিকে পাঠানো যায়, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বা সরকার এটি ট্র্যাক করার চেষ্টা করে না। মুদ্রা তৈরির জন্য সিস্টেমটি ক্রিপ্টোগ্রাফির উপর নির্ভর করে। যেহেতু কোন কর্তৃপক্ষ বিটকয়েন প্রোডাকশন নিয়ন্ত্রণ করে না বা ট্র্যাক করে না, সিস্টেমকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যে নেটওয়ার্ক প্রতিটি লেনদেনের একটি ত্রুটিহীন রেকর্ড রাখে, পাশাপাশি মুদ্রার ইস্যু-করণ ট্র্যাক করে। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিটকয়েনের মোট সংখ্যা পুনঃনির্ধারন করা হয় যাতে করে বাস্তব মুদ্রার সাথে সামঞ্জস্য রাখা যায়।
ক্রিপ্টোকারেন্সির সুবিধা হচ্ছে এর নিশ্চয়তা। ফিজিক্যাল মুদ্রা হাতে পেলে আপনি যতটা নিশ্চিত, আপনার অ্যাকাউন্টে বিটকয়েন আসলেও আপনি ততোটায় নিশ্চিত। এ ছাড়া আপনি বিটকয়েন কোথায়, কীভাবে খরচ করছেন তা কেউ জানতে পারবে না। ডার্ক ওয়েবে বা ডার্ক মার্কেটে বিটকয়েনের রাজত্ব চলছে। তাই বিটকয়েনকে মুক্তবিশ্বের মুক্ত মুদ্রা বলা হয়।
বিটকয়েন মাইনিং
বিটকয়েন মাইনিং হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে লেনদেন যাচাই করা হয় এবং পাবলিক লেজারে যুক্ত করা হয় যা ব্লকচেইন নামে পরিচিত। এবং নতুন বিটকয়েন প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমেও তা যোগ করা হয়। যে কেউ ইন্টারনেটে উপযুক্ত হার্ডওয়্যার এর মাধ্যমে মাইনিং এ অংশগ্রহণ করতে পারেন। তবে তার জন্য ডেস্কটপ ও শক্ত হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা উচিত। মাইনিং প্রক্রিয়ায় ব্লকে সর্বশেষ লেনদেন কম্পাইলিং করা হয় কঠিন কোন পাজলের মাধ্যমে। অংশগ্রহণকারী পাজল সমাধান করতে পারলে পরবর্তী ব্লকে যায় এবং পুরস্কারের দাবি জানাতে পারে। বর্তমানে মাইনিং খুবই অলাভজনক। বিটকয়েন আয়ের অন্য মাধ্যমগুলো বেশি জনপ্রিয় এবং লাভজনক। পরবর্তীতে বিটকয়েন আয়ের পদ্ধতি আলোচনা করা যাবে।
বিটকয়েনের সুবিধা অসুবিধা
যেহেতু এটি অন্য মুদ্রার মতো নজরদারির ভিতর থাকে না তাই বিটকয়েনের দর স্থিতিশীল নয়। এর মূল্য অনেক বেশী ওঠানামা করে। জন্মের পর থেকে এর মূল্যের গ্রাফ দেখলেই তা অনুমান করা যায়। অনেকটা শেয়ার বাজারের মত। এছাড়া বিটকয়েন এখনো অনেক জায়গায় গ্রহণযোগ্য নয়। আপনার কয়েন অনলাইন ওয়ালেটে থাকলে তা হ্যাক হতে পারে।
অসুবিধার বিপরীতে অনেক সুবিধাও আছে। আপনি আপনার কয়েন যখন যাকে ইচ্ছা যতবার ইচ্ছা পাঠাতে বা গ্রহণ করতে পারবেন কারো অনুমতি ছাড়াই। আপনার প্রতিটি ট্রান্সেকশন নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। সবথেকে অবাক করার বিষয় বাস্তব মুদ্রা জালিয়াতি করা গেলও বিটকয়েনে জালিয়াতির কোন সুযোগ নেই।
তাই বলা যেতে পারে বিটকয়েন এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। মুদ্রা অর্থনীতি আজ এক সন্ধিক্ষণের সামনে দাড়িয়ে। মুহূর্তে মুদ্রা অর্থনীতির মানচিত্র পরিবর্তন করার ক্ষমতা নিয়ে আজ আমাদের সামনে বিটকয়েন।
order lamisil generic – buy cheap forcan buy generic grifulvin v for sale