প্রযুক্তির ব্যবহারে যে ১০ টি চাকরি ভবিষ্যতে বিলীন হয়ে যাবে!

8

প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ করে দেয় ঠিকই, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রযুক্তির ব্যবহারে দিন দিন কমে যাচ্ছে কর্মসংস্থান। জেনে নিন, প্রযুক্তির ব্যবহারে যে ১০টি চাকরি বা কাজ নিকটবর্তী ভবিষ্যতে বিলীন হয়ে যাবে।

১. ক্যাশিয়ার বা কোষাধ্যক্ষঃ

বড় কোন দোকানে বা ব্যাংকে ক্যাশিয়ারের টাকা হিসেব করা দেখেতে দেখেতে কোটি টাকার স্বপ্ন দেখতেই পারেন কিন্তু অধিকাংশ মানুষই পণ্য কেনার পর যত দ্রুত সম্ভব টাকা পরিশোধ করে চলে যেতে চান। বর্তমানেই স্বয়ংক্রিয় চেকআউট মেশিনগুলো নির্ভুলভাবে এবং অতি দ্রুত টাকা হিসেব করা ও গ্রহণ করার কাজটি সুন্দরভাবে করে যাচ্ছে। তাছাড়া ক্রেডিট কার্ড, অনলাইন পেমেন্টের এই যুগে এমনিতেই সরাসরি ক্যাশের মাধ্যমে বিনিময় কমে যাচ্ছে।

ক্যাশিয়ার
Source: The Cheat Sheet

তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই, নিকটবর্তী ভবিষ্যতে লেনদেনের জন্য একজন ক্যাশিয়ার রাখা ও তাঁর বেতন দেয়ার প্রয়োজন পরবে বলে মনে হয়না।

২. সংবাদপত্র বিক্রয়ঃ

সকালবেলা এক কাপ চা আর সংবাদপত্র, আহ! যুগ যুগ ধরে অনেকের দৈনন্দিন জীবনে চলছে এই রুটিন। কিন্তু ল্যাপটপ আর স্মার্টফোনের এই যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে এবং সবাই ইন্টারনেটে বিভিন্ন সংবাদ পড়তেই বেশি পছন্দ করে আজকাল।

সংবাদপত্র
Source: Romania TV

এজন্যই গড়ে উঠছে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল আর বড় বড় সংবাদপত্রগুলো চালু করছে তাদের সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণ। যেমন আমাদের দেশে প্রথম ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল হচ্ছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (www.bdnews24.com)। এছাড়া প্রথম আলো, ডেইলি স্টার সহ অধিকাংশ জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণ রয়েছে।

৩. ট্র্যাভেল এজেন্ট/ টিকেট রিজার্ভেশন অফিসারঃ

ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনমত ভ্রমণের প্ল্যানিং, যানবাহনের ও হোটেলের টিকিট রিজার্ভেশন, কনফার্মেশন অথবা বাতিল করার দায়িত্ব পালন করে থাকে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। বিনিময়ে মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা দিতে হয় তাদের। বর্তমানে বিভিন্ন ট্র্যাভেল ওয়েবসাইটের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে যার মাধ্যমে একজন ভ্রমণকারী নিজেই নিজের ভ্রমণের ব্যবস্থাপনা করতে পারেন।

ট্র্যাভেল এজেন্ট/
Source: LinkedIn

একটা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে এসব ওয়েবসাইট ভিজিট করে বিমানের বা বাসের টিকিট বুকিং, হোটেলের রুম থেকে শুরু করে প্ল্যানিং ও যাবতীয় কার্যক্রম খুব সহজেই করে ফেলা যায় অল্প সময়েই।

৪. ডাটা এন্ট্রি অপারেটরঃ

ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে ডাটা বা তথ্য কোন একটি সফটওয়্যারে ইনপুট দেয়া বা সংরক্ষণ করা বা নির্দিষ্ট উপায়ে বিন্যস্ত করা। কম্পিউটার ব্যবহারের শুরু থেকেই ডাটা এন্ট্রির কাজের প্রয়োজন ছিলো, আছে এবং থাকবে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নতির সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে এই কাজের ধরণ এবং কমে যাচ্ছে টাইপ করে ডাটা এন্ট্রি করার প্রয়োজনীয়তা। এখন অনেক উন্নত সফটওয়্যার তৈরি হচ্ছে যা নিজে নিজেই অনলাইনে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে বের করতে পারে এবং সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলাদা করে তা বিন্যস্ত ও সংরক্ষণ করতে পারে।

ডাটা এন্ট্রি
Source: ডাটা এন্ট্রি

এছাড়া স্পিচ রিকগনিশনের মত প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও ক্রমবিকাশের সাথে সাথে এখন ভয়েস কম্যান্ডের মাধ্যমে তথ্য ইনপুট দেয়া যায় এবং কয়েক বছরের মধ্যে নির্ভুলভাবে ইনপুট দেয়া যাবে। তখন আর টাইপ করে তথ্য ইনপুট দিতে হবে না। আর এর সাথে ফুরিয়ে যাবে টাইপিস্ট বা ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের প্রয়োজনীয়তা।

৫. টেলিমার্কেটিংঃ

টেলিমার্কেটিং হচ্ছে টেলিফোন বা মোবাইলের মাধ্যমে মার্কেটিং। একসময় মার্কেটিং এ টেলিমার্কেটিং ছিলো খুবই ব্যবহৃত একটি মাধ্যম। যেখানে সম্ভাব্য কাস্টমারদের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে সরাসরি ফোন দেয়া হতো কাস্টমারদের এবং পণ্যের দাম, অফার ইত্যাদি জানানোর মাধ্যমে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করা হতো ফোনেই, যা ছিলো অনেক সময় বিরক্তিকর। বর্তমানে টেলিভিশন, ইউটিউব ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের পণ্যের দাম ও অফারের কথা জানানো হয় এবং মার্কেটিং করা হয়।

Source: GizmoSupport

তাছাড়া বিভিন্ন কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে রবোকলের একটি সিস্টেম চালু হয়েছে যার মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক গ্রাহক কে অটোমেটেড ফোন দেয়া হয় এবং পণ্যের মার্কেটিং করা হয়।

৬. রেফারী বা আম্পায়ারঃ

যেকোনো খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য দায়িত্বে একজন বিচারক থাকেন। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলায় নিরপেক্ষভাবে দুপক্ষের খেলোয়াড়দের কার্যক্রম লক্ষ্য করেন এবং ভুলত্রুটি নির্দেশ করেন। যেমন, ফুটবলে এ দায়িত্বে যিনি থাকেন তাঁকে বলা হয় রেফারী আর ক্রিকেটে আম্পায়ার। এ পদটি খুব সম্মানের হলেও, বর্তমানে ভিডিও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে কম্পিউটারের মাধ্যমে ভিডিও বিশ্লেষণ করে আরো নিখুঁত সিদ্ধান্ত দেয়া যায় এবং এটার ব্যবহার ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

Source: Hills Football Association

ফুটবলে ও ক্রিকেটে অনেক সিদ্ধান্তই রিভিউ এর মাধ্যমে প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেয়া হয়। তাই সে সময় আর খুব বেশি দেরি নেই, যখন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলার সকল সিদ্ধান্তই প্রযুক্তির সাহায্যে নেয়া হবে।

৭. ট্যাক্সি ড্রাইভারঃ

ড্রাইভার বিহীন গাড়ি একসময় ছিলো শুধু সাইন্স ফিকশনেই সীমাবদ্ধ অথবা জেমস বন্ড সিনেমার রসদ, কিন্তু প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে এই কল্পনা এখন বাস্তবের খুব কাছাকাছি। টেসলা, উবার, ওয়েমো (গুগল), টয়োটা, বিএমডাব্লিউ সহ বর্তমানে অনেক বড় বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানই ড্রাইভার বিহীন গাড়ী তৈরির কাজ করছে এবং আশা করা যায় ২০২১ সালের মধ্যে রাস্তায় এই বিনা ড্রাইভারের গাড়ি দেখা যাবে।

Source: Bizfluent

এসব গাড়ি আস্তে আস্তে সারা বিশ্বেই জনপ্রিয়তা পাবে এবং ব্যবহৃত হবে। কারণ  স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিতে পারবে এবং সবসময় শতভাগ মনোযোগের সাথে চলবে। যদিও এটাকে নিখুঁত এবং পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য করে তুলতে আরো অনেক সময় লেগে যাবে তবে এটা হয়ে গেলে ট্যাক্সি ড্রাইভাররা একরকম বিপাকেই পরবেন।

৮. ডাক কর্মীঃ

প্রতিটি দেশেই ডাক বিভাগ সাধারণত সরকারের অধীনেই থাকে এবং এর মাধ্যমে চিঠি, কাগজপত্র ও টাকা পাঠানো যায়। বর্তমানে বিভিন্ন প্রাইভেট কুরিয়ার সার্ভিস আর ইলেকট্রনিক মেইল, সোশাল মিডিয়া ইত্যাদির ব্যবহারের ফলে চিঠি সাধারণত পাঠানোই হয়না।

ডাক কর্মীঃ
Source: ডাক কর্মীঃ

পাঠানো হবেই বা কেন? মাত্র কয়েক মিলিসেকেন্ডে হাজার হাজার মাইল দূরে যদি বার্তা পাঠানো যায় তাহলে দি দরকার কয়েক দিন বা সপ্তাহ অপেক্ষা করার? তাছাড়া ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং এর এই যুগে টাকা ট্র্যান্সফার করাও খুবই সহজ। তাই দিন দিন ডাক কর্মীদের প্রয়োজন ও চাহিদা ফুরিয়ে যাচ্ছে।

৯. কৃষকঃ

খাদ্য আমাদের অন্যতম প্রধান মৌলিক চাহিদা। আর খাদ্য উৎপাদনে কাজটি করে থাকেন একজন কৃষক। তাই কৃষি ও কৃষক ছাড়া জীবনধারণ অসম্ভব। জমির পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা রাখা, জমিতে বীজ বপন, সার দেয়া, ফসল তোলা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে বিপুল সংখ্যক কৃষক কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকার উৎস কৃষিকাজ। কিন্তু কৃষি প্রকৌশলের উন্নতি ও আধুনিকীকরণের ফলে খুব শীঘ্রই কৃষিতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাবে।

 চাকরি
Source: The Scottish Farmer

ড্রোনের সাহায্যে জমির পরিমাণ নির্ণয়, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে বীজ বপন, ফসল কাটা, গাছ থেকে ফসল আলাদা করা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ করা হবে। ফলে, এসব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে মাত্র একজন কৃষকই বিপুল পরিমাণ জমিতে কৃষিকাজ করতে পারবেন। বর্তমানে, আমাদের দেশেই বীজ বপন, ফসল কাটার যন্ত্রের ব্যবহার অল্পবিস্তর শুরু হয়েছে। তাছাড়া গাছ থেকে ফসল ছাড়ানো, প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজ অনেক আগে থেকেই মেশিনের সাহায্যে করা হয়ে আসছে।

১০. লাইব্রেরিয়ানঃ

পৃথিবীতে জ্ঞান চর্চা ও সভ্যতার বিকাশে বইয়ের কোন বিকল্প নেই। তাই বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা ছিলো, আছে এবং থাকবে। কিন্তু দিন দিন বই পড়ার জন্য আমাজন কিন্ডল, ট্যাবলেট বা ইলেক্ট্রনিক বুক রিডার (এডোবি রিডারের মত পিডিএফ রিডার) চাহিদা বেড়েই চলেছে। ট্যাবলেট কিংবা আমাজন কিন্ডলে খুব সহজেই ডিজিটাল ফরম্যাটে থাকা যে কোন বই বা ম্যাগাজিন পড়ে ফেলা যায়।

 চাকরি
Source: k–k.club

পাশাপাশি গড়ে উঠছে গুগল বুকস এর মত অনলাইন লাইব্রেরি। এসব লাইব্রেরিতে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা যে কোন বই পড়া যায় ইচ্ছামত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ইন্টারনেট ভিত্তিক লাইব্রেরি গড়ে তোলার কাজ শুরু করে দিয়েছে। বড় বড় প্রকাশনীও তাদের মুদ্রিত বইগুলোকে ডিজিটাল ফরম্যাটে রূপান্তরের কাজ শুরু করে দিয়েছে। ফলে প্রথাগত লাইব্রেরি গুলো খুব দ্রুত আবেদন হারাচ্ছে। তাই খুব সহজেই এটা অনুমেয় যে, লাইব্রেরিয়ান এর কাজটি একসময় নিতান্তই বিরল হয়ে যাবে।

Leave A Reply
8 Comments
  1. Ywrimh says

    order rybelsus 14 mg – semaglutide 14mg pill order desmopressin for sale

  2. Dxufch says

    lamisil sale – buy diflucan 100mg online cheap order griseofulvin pill

  3. Gavygp says

    order lamisil 250mg online – griseofulvin order online buy griseofulvin cheap

  4. Lxgfim says

    buy generic metformin 1000mg – purchase metformin order precose 50mg generic

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More