অযান্ত্রিক অভিযানে ট্যাক্সি ড্রাইভার : ঋত্বিক, সত্যজিৎ ও স্করসেসির চলচ্চিত্রের মোটর চালকেরা
আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে ট্যাক্সি ড্রাইভার খুব চেনা জানা একটি চরিত্র, হয়তো আমাদের প্রতিবেশী, যে কিনা প্রধান চরিত্র হিসেবে বিশেষভাবে বাংলা চলচ্চিত্রে স্থান পেয়ে এসেছে । সে চেনা জানা মোটরগাড়ির চালককে নিয়ে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম পুরধা চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটক ও সত্যজিৎ রায়ের যথাক্রমে বিখ্যাত দুটি চলচ্চিত্র রয়েছে। ঋত্বিক ঘটকের আযান্ত্রিক (১৯৫৮) ও সত্যজিৎ রায়ের অভিযান (১৯৬২)। একজন চলচ্চিত্র প্রেমী হিসেবে ‘মোটরগাড়ি চলাক’ চরিত্রের কথা উঠতেই ইতোমধ্যে মারটিন স্করসেসির কানের ‘পাল্ম ডি`অর’ জয়ী কাল্ট ক্ল্যাসিক ট্যাক্সি ড্রাইভার (১৯৭৬) চলচ্চিত্রের কথা আপনার স্মরণে এসে গেছে । চলুন এই তিন ‘মোটরগাড়ি চালক’ নিয়ে অল্পবিস্তর জানা যাক –

Source: Pinterest
বাংলার অন্যতম দুই চলচ্চিত্রকারের দুটি চলচ্চিত্র ও মারটিন স্করসেসির ট্যাক্সি ড্রাইভার নিজস্ব গল্প ও নির্মাণ স্বকীয়তায় অনন্য তা বলার অপেক্ষা রাখে না । ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ নির্মাণে ‘ট্রাভিস বিকেল’ চরিত্র বাছাই ও মনস্তাত্ত্বিক ভিত্তিতে ‘অভিযান’ এর প্রভাব স্পষ্ট, সত্যজিত রায়ের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়ার’ এক সাক্ষাৎকারে তার চলচ্চিত্রে অভিযানের প্রভাব নিয়ে মারটিন স্করসেসি বলছিলেন,
‘‘My first view of Satyajit Ray was at the Cannes Film Festival, somewhere in the mid-70s. I had grown up watching his classics, the Apu trilogy, Devi, Mahanagar and Charulata. Each appeared a classic unparalleled to me. In sheer terms of content and cinematic excellence.”
‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’ নির্মাণে ‘অভিযান’ সহ সত্যজিৎ রায়ের কাজ যে স্করসেসিকে অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে তা স্পষ্টতই অনুধাবনীয় ।
এখন যদি আসে ঋত্বিক ঘটকের অযান্ত্রিক ও সত্যজিৎ রায়ের অভিযানের কথা, তবে দেখা যাবে এই দুই চলচ্চিত্রের মধ্যকার বিশেষ মিল রয়েছে । অযান্ত্রিকের ‘বিমল’ (কালি ব্যানার্জি অভিনীত) ও অভিযানের ‘নারা সিং’ (সৌমিত্র চ্যাটার্জি অভিনীত) যেন একটি চরিত্রেই তাঁরা আলাদা চলচ্চিত্রে দুই প্রেক্ষাপটের কথা বলছে। আমারা এই ট্যাক্সি ড্রাইভারদের পরিবারকে চিনি না, সবটা গল্প জুড়েই বিমল, নারা সিং একা ! একদিকে অযান্ত্রিকের বিমলের পরিবার বলতে কেউ নেই, চলচ্চিত্রে শিশু চরিত্র সুলতানের সাথে বিমলের কথাবার্তায় জানতে পারি পনের বছর আগেই তার মা মারা গেছে, অন্যদিকে অভিযানের নারা সিং একা-ভবঘুরে মানুষ তারও মোটরগাড়ি ছাড়া আর কিছু নেই । বিমল ও নারা সিং দুজনেই সরাসরি ভাবে মোটরগাড়ির উপর নির্ভরশীল। তাঁদের জীবন যেন মোটর গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাঁদের মোটরগাড়ি স্বাধীন চরিত্র ।

Source: Pinterest
সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের ছোট গল্প ‘অযান্ত্রিক’ অবলম্বনেই ঋত্বিক ঘটক একই নামে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র অযান্ত্রিক (১৯৫৮)। ডার্ক-কমেডি ধাঁচের চলচ্চিত্র অযান্ত্রিকে জগদ্দলের (মোটরগাড়ির ডাকনাম) অভিব্যাক্তি প্রকাশে শব্দের ব্যবহার অভূতপূর্ব নাটকীয়তার সৃষ্টি করে ,অনেক সময় সরাসরি জগদ্দলকে দেখা যায় বিমলের প্রশ্নের উত্তর দিতে ! কখনো কখনো জীবন্ত হয়ে জগদ্দল বিমলকে ছাড়িয়ে প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছে ,এমনও মনে হতে পারে বিমলকে নিয়ন্ত্রণ করছে তার গাড়ি ‘জগদ্দল’। চলচ্চিত্রের শেষ দিকে এসে জগদ্দলের বিদায় ও বিমলের মানসিক পরিস্থিতি তাঁদের আত্মিক সম্পর্কের জানান দেয় নিঃসন্দেহে।
অযান্ত্রিকের চার বছর পর, ১৯৬২ সালে তাঁরাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস ‘আভিযান’ অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র তৈরি করেন । পূর্বেই জেনেছি বিমলের মতো ট্যাক্সি ড্রাইভার নারা সিং ছিলো সেই চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র । এখানে বলে রাখা ভালো, অযান্ত্রিক দেখার পর যদি অভিযান দেখেন তবে বাংলার আরেক খ্যাতিমান পরিচালক মৃণাল সেনের মতো আপনিও অনেক জায়গায় মিল পাবেন । হ্যাঁ সত্যজিৎ রায় ‘অযান্ত্রিক’ থেকে অনুপ্ররনা নিয়েই ‘ অভিযান ’ তৈরি করেন তা বলা যায় । এ বিষয়ে সত্যজিৎ রায়ের সরাসরি স্বীকারক্তি নেই, তবে ঋত্বিকের ‘ অযান্ত্রিক ’ নিয়ে মূল্যায়ন পূর্বক তাঁর উক্তি,
‘ ঋত্বিকবাবু,সিনেমাটা সময় মত রিলিজ করলে আপনি পথিকৃৎ হতেন ’ ।
এই মূল্যায়ন থেকে এটা অন্তত স্পষ্ট যে , শিল্পমানের দিক থেকে সত্যজিৎ রায় অযান্ত্রিককে অন্য উচ্চতায় রাখেন ।

অযান্ত্রিক, অভিযানের পর সেই বিমল ও নারা সিং ১৯৭৬ সালে ‘ট্রাভিস বিকেল’ হয়ে ট্যাক্সি ড্রাইভারে উঠে আসলো, এমনটা বললে কি ভুল বলা হবে ? হ্যাঁ আবারও বলা ভালো , এই তিনটি চলচ্চিত্রেই স্বতন্ত্র গল্পই উপস্থাপিত হয়েছে । কোথায় যেন মিল পাবেন ট্রাভিসের সাথে নারা সিং এর , নারা সিং এর সাথে বিমলের । আর এই মিলনেই স্থান, সময়ভেদে তিন চালক একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে।

source: cinematerial
নিজস্ব মূল্যায়ন তৈরির জন্য বিখ্যাত এই তিনটি চলচ্চিত্র দেখা আবশ্যক, দেখা না হয়ে থাকলে দেখার অনুরোধ রইল । সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের মধ্যকার ট্যাক্সি ড্রাইভার সম্পর্কিত একটি প্রচলিত ঘটনা দিয়ে আলোচনার সমাপ্তি টানছি ।
“রাতে ঋত্বিক ঘটক ট্যাক্সি করে বাড়ি ফেরার সময় গাড়ি থেকে নেমেই ভাড়া না মিটিয়েই চলে যাচ্ছিলেন এমন সময়,
ট্যাক্সি ড্রাইভার – ‘ভাড়া, স্যার…’
ঋত্বিক ঘটক – ‘আমার কাছে টাকা নেই। তুমি এক কাজ করো – এখান থেকে সোজা ১/১ বিশপ লেফ্রয় রোডে চলে যাও। সেখানে গিয়ে দেখবে , একটা ঢ্যাঙা লোক দরজা খুলবে। ওকে বোলো, ঋত্বিক ঘটক ট্যাক্সি করে ফিরেছে , সঙ্গে টাকা ছিল না । ও টাকা দিয়ে দেবে’ ।
সেই ঢ্যাঙা লোকটি ভাড়া মিটিয়েও দিতেন, আর তিনি হলেন মানিক বাবু ,পরিচিত নাম সত্যজিৎ রায় !”
তথ্যসূত্র-
vikaspedia.in
shaptahik.com
IMaTL had fewer, less prominent, and irregular distributed nuclei and were often attached to residuals of vasa recta or inner medullary CD IMCD Fig levitra precio espana