তথ্য প্রযুক্তির প্রসার ও গণতান্ত্রিক বিশ্বে জবাবদিহিতার অবিচ্ছেদ মাধ্যম হিসেবে গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। এই অবাধ স্বাধীন গণমাধ্যমের কল্যাণে আজ আমরা পৃথিবীর আনাচে-কানাচে ঘটে যাওয়া সকল বিষয় সম্পর্কে যেমন জানতে পারছি তেমনি কোথাও কোন অন্যায়-অবিচার ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তা জানতে পেরে পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতেও পারছি। প্যালেস্টাইনের মত স্বাধীনতাকামীদের জন্য মানবিক সমর্থন থেকে শুরু করে মানব-বন্ধন পর্যন্ত করছি। আর পিছনে গণমাধ্যমও তাদের জায়গা থেকে ভূমিকা পালন করছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এই অবস্থার ব্যত্যয় ঘটে গণমাধ্যমে ওঠে আসে না অনেক দু:খ দুর্দশা ও স্বাধীনতার দাবি-দাওয়ার চিত্র। আজ এমনই এক জনপদের চিত্র তুলে ধরব। যার অবস্থা আফ্রিকার কোন দেশে নয় আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতেই এই চিত্র বিদ্যমান, হ্যাঁ ভারতের সেভেন সিস্টারস এর কথাই বলছি। আজকের পর্বে থাকছে ভারতের সেভেন সিস্টারস এর পরিচয় এবং তাদের সম্পর্কে কিছু চিত্র।
সেভেন সিস্টারস:
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সাতটি অঞ্চলকে একত্রে সেভেন সিস্টারস বলা হয়। এই অঞ্চলগুলো হল আসাম, মিজোরাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড। পাহাড়-পর্বত ঘেরা এই অঞ্চলটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাছাড়া এটির বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য লাভ করার পিছনে অন্যতম কারণ হল এ অঞ্চলের অধিবাসী। কেননা এখানে প্রায় অর্ধশতাধিক জনগোষ্ঠী ও বিভিন্ন ধর্মের লোকজনের বাস। সুতরাং জাতিগত বৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, জীবনযাত্রার ভিন্নতা তাদেরকে আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এদের সকলের একত্রে আয়তন প্রায় ২.৫ লক্ষ বর্গ কি.মি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৩.৮ কোটি। এদের উত্তরে ভুটান, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চীন, পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলে মায়ানমার এবং পশ্চিমে বাংলাদেশ। শুধু উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অল্প একটু জায়গা সিকিমের সাথে মিলিত হয়ে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে একত্রিত হয়েছে। তবে উল্লেখ করার মত বিষয় হল এই অঞ্চল সমূহ কখনোই ভারতের অংশ ছিল না, বিভিন্ন সময় নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ভারতের সাথে একত্র হয়।

Source: Wikimedia.org
প্রাক-কথন:
সেভেন সিস্টারস এর এ অঞ্চল সমূহ কখনোই ভারতের কোন অংশ বা ভারতের কোন অধীনস্থ অঞ্চল হিসেবে ছিল না। ভারতের সাথে যুক্ত হবার পূর্বে এদের সকলেই তাদের নিজেদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শাসন ভোগ করত। এমনকি যখন আর্যরা সমগ্র ভারত দখল করে নিয়েছিল তখনও এ-অঞ্চলে গারো, খাসিয়া, নাগ, মিজোদের মত অনার্যরাই তাদের নিজেদের শাসন পরিচালনা করত। পূর্বকালে এ-অঞ্চল সমূহ প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। অঞ্চল সমূহ হল-মনিপুর, ত্রিপুরা ও আসাম।
ব্রিটিশ পরবর্তী যুগে এসে আসাম ভেঙ্গে যথাক্রমে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয় ও অরুণাচল গঠিত হয়। ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে আসাম স্বাধীন থাকলেও ব্রিটিশরা আগমনের পর একে তাদের শাসনের আওতায় নিয়ে আসে এবং একে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ভারত স্বাধীনতার পর ভারতের একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ হিসেবে আসামকে মর্যাদা দিয়ে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হয়।
মনিপুর রাজ্য ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবার পিছনে কাহিনী হল-প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মনিপুরী রাজা বার্মা কর্তৃক আক্রান্ত হতে পারেন এই ভয়ে ব্রিটিশ শাসকদের সাহায্য কামনা করেন। ফলে এতদিন ধরে ব্রিটিশরা মনিপুর অধিকার করতে না পারলেও এই সুযোগে মণিপুরকে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে নিয়ে আসে। কিন্তু এসময় তারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর ১৯৪৯ সালে মণিপুরের রাজা বুধচন্দ্রের সহায়তায় মণিপুর কে ভারতের অধীনে নিয়ে আসে।

মুঘলদের শাসনের শেষের দিক থেকেই ত্রিপুরা নিজেদের শাসন ভোগ করে আসছিল। ব্রিটিশদের সময়কালেও ত্রিপুরা মহারাজা এ-অঞ্চলে শাসন পরিচালনা করতেন। কিন্তু এসময় ব্রিটিশদের সাথে তাদের সমঝোতা গড়ে উঠে। ভারত স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সালে বাংলার গণমুক্তি পরিষদ আন্দোলনের মাধ্যমে ত্রিপুরাকে ভারতের সাথে একীভূত করা হয়। ১৯৬২ সালে একীভূত অঞ্চল হিসেবে ভারতের কেন্দ্র হতে শাসিত হতে থাকে, সর্বশেষ ১৯৭২ সালে তাদেরকে প্রদেশের মর্যাদা দান করা হয়।
বর্তমান অবস্থাঃ
জাতিগত ভিন্নতা, ভারতীয়দের শোষণের শাসন, স্বায়ত্ত শাসনের দাবী, স্বাধীন হবার আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি কারণে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে এদের উষ্ণ-সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। কোন কোন সময় এই বিরোধ সশস্ত্র সংঘাতে রূপ ধারণ করে। কেননা ইতিমধ্যে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী, যাদেরকে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং ভারতের দাবী এসব সংগঠনকে পাকিস্তান ও চীন মদত দিচ্ছে যাতে ভারতের এ-অঞ্চলকে ভারত থেকে আলাদা করতে পারে। তবে এসব সংগঠনের দাবী তারা শুধু স্বাধীনতার দাবীতে তাদের নিয়মতান্ত্রিক পন্থার আশ্রয় নিয়েছে। যেহেতু ভারতীয়রা তাদের কে স্বাভাবিকভাবে স্বাধীন হতে দিবে না তাই তারা দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে।
তাছাড়া এসব অঞ্চলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবার পেছনে এখানকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী এমন কি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা ঘটে। জাতিগত দাঙ্গা, চোরাচালান, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের মত ঘটনা এখানে হরহামেশাই ঘটে থাকে।
এই অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্বাধীনতার দাবী তোলে নাগারা। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ১৪ই আগস্ট ১৯৪৭ সালে তারা নিজেদেরকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে স্বাধীন নাগাল্যান্ড গঠনের দাবী করে। কিন্তু ভারত তাদের এই স্বাধীনতাকে মেনে নেয়নি ফলে পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতাকামী সংগঠন “নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল” কর্তৃক তাদের স্বাধীনতার পক্ষে গণভোটের আয়োজন করে এতে নাগাল্যান্ড জয়লাভ করে। কিন্তু এবারও ভারত তাদের এই দাবীকে প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৯৬৩ সালে তাদের কে আসাম থেকে আলাদা করে ভারতে ১৬তম প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। এরপর থেকেই “নাগা ন্যাশনাল কাউন্সিল” বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে পরে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা সশস্ত্র পথ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। ফলে ভারতীয় বাহিনীর সাথে তাদের নানা সংঘর্ষ বাধে।
এর পরবর্তী সময়ে ১৯৮০ সালে গঠিত হয় “ন্যাশনাল সোশালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড” তারা চীনের মাও সে তুং এর আদলে বৃহৎ নাগা রাষ্ট্র গঠনে সোচ্চার ছিল। তাছাড়া “নাগাল্যান্ড ফেডারেল আর্মি” নামে আরেকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী রয়েছে। দাবি করা হয় তাদের প্রায় শতাধিক সেনা চীনে প্রশিক্ষণরত। তবে ভারত সরকার তাদের উপর ব্যাপক হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের কে অনেকটা দুর্বল করে ফেললেও তাদের স্বাধীনতার দাবী আজও জীবিত।

Source: nEWS BD71
আসাম প্রদেশের স্বাধীনতার দাবীকে নাকচ করে দেবার জন্য ভারত যে দমন নীতি গ্রহণ করে এরই ফল হিসেবে আসামে জন্ম নেয় বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এর মধ্যে প্রধান সংগঠন হল “ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম” বা উলফা। ১৯৭৯ সালে আসামকে স্বাধীন করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তারা আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকেই তারা সংগ্রামী পথ অবলম্বন করে আসছে। তাদের এই পথ রুদ্ধ করে দেবার জন্য ভারতীয় প্রশাসন বরাবরই সোচ্চার ছিল। তাদের কার্যকলাপকে এ অঞ্চলে কঠোর হাতে দমন করার জন্য ১৯৯০ সালে উলফাকে নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু তাদের কার্যক্রম থেমে যায়নি। তারা বিভিন্ন গোপন পন্থা ব্যবহার করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে । দাবি করা হচ্ছে তারা পার্শ্ববর্তী দেশের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে তাদের অস্ত্র যোগান থেকে শুরু করে তাদের নেতাদের গা-ঢাকা দিয়ে পালিয়ে থাকা পর্যন্ত সকল কাজে এই পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকেই বেছে নিচ্ছে। তাছাড়াও এ-অঞ্চলে এনডিএফবি, ডি এইচ ডি, এন এস সি এর মত বিদ্রোহী গোষ্ঠী এ অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে।
এর বাহিরে সেভেন সিস্টারস অঞ্চলের প্রধান প্রধান স্বাধীনতাকামী সংগঠন গুলো হল -অরুণাচলে অরুণাচল ড্রাগন ফোর্স, ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব অরুণাচল। মেঘালয়ে গারো ন্যাশনাল কাউন্সিল, এ এন বি সি, এইচ ইন এল সি। মণিপুরে -ইউনাইটেড লিভারেশন ফ্রন্ট, পিপলস লিবারেশন আর্মি, মনিপুর লিবারেশন আর্মি। মিজোরামে এইচ পি সি, বি এন এল এফ ও মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। ত্রিপুরায় ত্রিপুরা পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা প্রভৃতি সংগঠন নিজ নিজ অঞ্চলে স্বাধীনতার দাবীতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। তবে তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল তারা নিজেরা সুসংগঠিত না।
অপর দিকে ভারতের প্রশাসনের দমন নীতির কারণে তাদের অগ্রযাত্রা বহুদূর আগাতে পারে নি। ভারত সরকার এসব অঞ্চলে প্রয়োজনের তুলনায় বহু অতিরিক্ত সৈন্যবাহিনী মোতায়েন করে রেখেছে। ফলে তারা এ অঞ্চলে অনেকটা অঘোষিত সামরিক শাসন পরিচালনা করছে। এ অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী চেতনা কে ধ্বংস করার জন্য প্রশাসন কর্তৃক নানা রকম সুবিধা প্রদান করে ভারতের অন্য সমতল অঞ্চল থেকে এখানে জনসংখ্যা স্থানান্তর করে নতুন বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। এসব নতুন অধিবাসী ও সেনাবাহিনীর যৌথ নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এসব অঞ্চলের স্থায়ী অধিবাসীরা। ফলে অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাধ্য হয়ে সরকারের সাথে শান্তি চুক্তি করছে। এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বহু স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী এলাকার সাথে তাদের সম্পর্ক:
বর্তমানে সেভেন সিস্টারস অঞ্চলের সাথে তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের সম্পর্ক কেমন এই বিষয়ে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে বিভিন্ন সময়ের সংবাদপত্রের বর্ণনা এবং ভারত সরকারের এই অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসব বিশ্লেষণ করে এবিষয়ে তাদের সম্পর্কে ধারনা করা হয় এই অঞ্চলের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চীন, পাকিস্তান, মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল প্রভৃতি দেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা পেয়ে থাকে। কোন কোন সময় এসব দেশের সরকার বা অন্য কোন নির্দিষ্ট গ্রুপের সহায়তা লাভ করে থাকে।
ধারনা করা হয় নাগাল্যান্ডের বিদ্রোহী সংগঠন চীন কর্তৃক সরাসরি সহায়তা লাভ করে এমনকি নাগাল্যান্ডের কয়েকশত বিদ্রোহী নিয়মিতভাবে চীনে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণে ব্যস্ত। কিন্তু চীন এই দাবী বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। অপরদিকে আসামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীরা সরাসরি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আই এস আই এর সরাসরি মদতপুষ্ট বলে মনে করা হয় এবং তারা পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বলে ধারনা করা হয়। এছাড়াও উলফা তাদের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে গোপন আস্তানা ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছে। তাদের উল্লেখযোগ্য আস্তানা সমূহ হল নাগাল্যান্ডের মন জেলায় মায়ানমার সীমান্তে, আসামের নলবাড়ি, ভুটান ও বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রামে তাদের ক্যাম্প রয়েছে বলে ধারনা করা হয়। তবে ভুটান সরকার তাদের একটি ক্যাম্প সনাক্ত করে তা ধ্বংস করে ফেলে।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও সিলেটে যে অস্ত্র-বোঝাই বাঙ্কারের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল তাকে উলফার আস্তানা হিসেবে অনেকের দাবী। তাছাড়া তারা বাংলাদেশের ভূমিকে বিভিন্নভাবে ব্যাবহারের চেষ্টা করে যাচ্ছে ১৯৯৭ সালে উলফার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক “অনুপ চেটিয়া” ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পরেন এবং দীর্ঘদিনের মামলা জটিলতার পথ পাড়ি দিয়েও সে রক্ষা পায়নি। ২০১৩ সালের দিকে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে ভারতীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়া হয়। তাছাড়াও বেশ কয়েকজন বিদ্রোহী সদস্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে পাকিস্তান, থাইল্যান্ডে গমন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাছাড়াও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী মায়ানমার ও নেপালের রুট ব্যবহার করে চীন ও পাকিস্তান থেকে অস্ত্র আমদানি করে।
এই অঞ্চলের স্বাধীনতা দাবীর পেছনে প্রধান কারণ হল এই অঞ্চলের ভিন্ন জাতিসত্তা যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় এবং নিজেদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে চায়। তার উপর ভারতীয় কর্তৃক তাদের উপর শোষণের শাসন। তাদের এই স্বাধীনতার দাবী কতটুকু যৌক্তিক তা সময়ই বলে দিবে। অপরদিকে ভারতীয় সরকারের পক্ষ হতে তাদেরকে দমিয়ে রাখার নামে তাদের উপর নিপীড়ন ও তাদের কে সন্ত্রাসী হিসেবে নিষিদ্ধ করা কি যুক্তিসঙ্গত কিনা তাও ভাববার বিষয়। তবে শান্তিকামী মানুষদের আশা ভারত সরকার তাদের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে চলে আসবে। যদিও ইতোমধ্যে এই রকম কিছু শান্তি প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে কিন্তু তা সম্মেলিত বিদ্রোহীদের সাথে হয়নি। তাছাড়া আধুনিক গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যদি সম্ভব হয় গণভোটেরও আয়োজন করা যেতে পারে যেমনটা হয়েছে যুক্তরাজ্যে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার ইস্যুতে।