অভিনেতা : ঋত্বিক চক্রবর্তী , মমতা শংকর , পাওলি দাম , সৌরসেনী
পরিচালক : প্রতীম ডি গুপ্তা
বাঙ্গালী মানেই মাছ আর ভাতের সাথে সখ্য তাইতো কথায় বলে- মাছে ভাতে বাঙ্গালী। আর সেই মাছের ঝোল নিয়েও সিনেমা হয় সেটা কে ভাবতে পেরেছিল। আজকাল মাসালা মুভির ভিড়ে মন জুড়ানো গল্পের দেখা পাওয়াই ভার হয়ে গিয়েছে। সেই অতৃপ্তির জায়গায় এক পরিতৃপ্তি দিল মাছের ঝোল।
বাঙালি ভোজন-রসিক হলেও খাবার নিয়ে সিনেমার বালাই খুব একটা নেই। তাই নামের সাথেও একটা খটকা খেতে হয়। শুধুই কি মাছের ঝোল নাকি সাথে আরও কিছু আছে।
সিনেমার শুরুটাও হয়েছে এক ফরাসি রেস্তোরার টেবিল থেকে। একটা খাবার কি শুধুই খাবার নাকি তার সাথে থাকে রাঁধুনির একটা সিগনেচার যা কিনা ভাবায় খাবার সময়ও, দুইজনের সাথে একটা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করায়। একটা খাবারের দোকানে আমরা কি আমাদের বাড়ির খাবারের মত একটা তৃপ্তি পাইয়ে দেওয়া যা কিনা বাইরে থেকেও আমাদের নিজের ঘরকে মনে করিয়ে দেয়। একটা দুটো ছোট উপাদানও হতে পারে সেক্ষেত্রে মহামূল্যবান। আমাদের মা, খালা, দাদী,নানীর হাতের সেই রান্নার সাথে আমাদের সেই স্বাদটা কি আমরা বাইরে মেলাতে পারি? যারা সেটা পারে তারাই হয়ে উঠে এক মহা রাঁধুনি যার কাছে আমরা সবাই খেতে চাই।
এই গল্পটা একাধারে একটা রাঁধুনির গল্প, একটা অদম্য ছেলের গল্প, এক বার্থ স্বামী আর বাবার গল্প। মাছের ঝোল যেমন শুধু মাছে হয়না তার সাথে মশলা থেকে শুরু করে সবজিসহ নানা কিছু থাকে, আর তার সাথে লাগে নিত্য প্রয়োজনীয় ভাত তার সবকিছুই এ সিনেমায় আছে।
প্যারিসের বিশাল এক রেস্টুরেন্টের শেফ কাম মালিক দেব দত্ত ওরফে দেবু। তার নিজেরই রয়েছে দুই তিনটি রেস্টুরেন্ট। এর পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিভিশনেও রান্নার বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে থাকে। তার নামডাক তাই পৃথিবীজোড়া। হুট করে রান্নার নেশায় নিজের বাড়ি আর দেশ ছেড়ে পালোনো ছেলেটা ১৩ বছর পর মায়ের অসুখে দূরে থাকতে পারেনি। কারণ মাইই ছিল তার কাছে পুরো দুনিয়া। বহুবছর আগে মায়ের অসুখের সময় বানানো মাছের ঝোলটাই ছিল ছেলের কাছে মায়ের আবদার।
বাবার সাথে একটা দূরত্বের সম্পর্ক , ফ্রেঞ্চ প্রেমিকার সাথেও একটু আধটু টানাপোড়ন, হোটেলের শেফ মাতঙ্গিনী ওরফে ম্যাগির সাথে এক অদ্ভুত টান আর প্রাক্তন স্ত্রীর মুখ দেখে অতীতকে টেনে আনা সব কিছু চলেছে সমান্তরালে।
তাই বলে মায়ের আবদার সেই মাছের ঝোল বানাতেই হবে তার। তাই হোটেলের সেরা শেফ ম্যাগিকে নিয়ে তার সেই মাছের ঝোল অভিযান শুরু হয়। মা কি সেই স্বাদ খুঁজে পায় নাকি অন্যকিছু হয় তা না হয় সিনেমা দেখেই জানুন।
ছাপোষা বাঙ্গালী কখনো ছকে বাঁধা জীবন থেকে বের হতে পারেনা, পারেনা ঝুঁকির স্বপ্ন দেখতে যেখানে সে নিজের মত করে বাচতে পারে, উড়তে পারে হাওয়ায় ভর করে। একদিন সেই সাহসটাই দেবদত্তকে দিয়ে ফেলে মা। তাইতো ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে রান্নার নেশায় পাড়ি দেয় বিদেশ বিভূঁইয়ে। সেই অনিশ্চিত যাত্রায় সে আরেকটা মানুষকে জড়াতে চায়নি বলেই তার স্ত্রীকেও তাই রেখে যায় দেশেই। সেই সাথে আরও একটা নতুন জীবনের যা কিনা জানার ছিলনা তার তাই তার অধিকারটুকুও ছিলনা শেষে।
আর একদম শেষে একটা সোজা লাইনে দর্শকদের ছেড়ে দেননি পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত। দর্শকদের নিজস্ব চিন্তার উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন তার ফলে দর্শককে ভাবাবেও শেষটা।
এই ছবিটা পুরোটা একাই টেনেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী। প্রতিটা চরিত্রের ভেতরে তিনি যেভাবে ডুব দেন তাতে সেই চরিত্রের সাথে পুরোটা মানিয়ে যায়, একদম খাপে খাপ। সাথে মায়ের চরিত্রে মমতা শঙ্করও ছিলেন বেশ ভাল। সাবেক স্ত্রীর ভূমিকায় পাওলি দামকেও খুব একটা খারাপ লাগেনি। সৌরসেনী মিত্রও ছিলেন শেফ ম্যাগীর ভূমিকায় যাকেও কিনা মানিয়েছে ভালই। বাকিরাও যথাযথ ছিল।
প্রতিম ডি গুপ্ত পাঁচ অধ্যায় আর সাহেব-বিবি-গোলাম দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন। মাছের ঝোল দিয়ে তিনি জানালেন তিনি হারিয়ে যাওয়ার জন্য আসেননি।
সংগীতে ছিল অনুপম রায়। বরাবরের মতই তিনি অনবদ্য। দত্তক আর যে তোরে পাগল বলে গানটাই তার সাক্ষী।
এ শুধু একটা পারিবারিক সিনেমা নয়, এর সাথে পুরোনোকে ছেড়ে নতুনের দিকে স্বপ্নের আহবানে সাড়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তাই বলে মাছের ঝোলে কি কোন কাটা নেই? সবটুকুই কি ভাল। কাটা ফেলে মাছ যখন মুখে তুলে দেয় তখন আমরা কিন্তু কাটার কথা বেমালুম ভুলে যাই। তাই এই মাছের ঝোলে সবাই পরিতৃপ্তিই পাবেন আশা করি।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, আনন্দবাজার, টাইমস অফ ইন্ডিয়া
order generic semaglutide – buy glucovance pills for sale desmopressin cost
imitrex and wellbutrin
zofran dosage in pregnancy
zyprexa elderly