ফকল্যান্ড যুদ্ধঃ ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াইয়ে ইংল্যান্ড আর আর্জেন্টিনা
যখনই কোন দ্বন্দ্ব বা ঝগড়া হয় দুই পক্ষের মধ্যে তখন দুই পক্ষের কাছেই আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা থাকে, কারণ থাকে সেই দ্বন্দ্ব টা কে ন্যায্যতা দান করার জন্য। সেইরকমই একটি ব্যাপার হল ফকল্যান্ড যুদ্ধ এর ঘটনাটি। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশ দুইটির নিজেদের আলাদা আলাদা কারণ রয়েছে এই যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার পিছনে। চলুন দেখে নেয়া যাক কখন শুরু হয়েছিল এই ফকল্যান্ড যুদ্ধ, কেন হয়েছিল আর কিভাবেই বা এর আরম্ভ টা হয়েছিল সে সম্পর্কে।
গ্রেট ব্রিটেনের ফকল্যান্ড দ্বীপ কিংবা আর্জেন্টিনার লাস মালভিনাস যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এই দ্বীপে ১৯৮২ সালে সংঘটিত হয়েছিল সংক্ষিপ্ত ও অঘোষিত ফকল্যান্ডের যুদ্ধ। আর্জেন্টিনা ও গ্রেট ব্রিটেনের মাঝে হয়েছিল এই যুদ্ধ টি ফকল্যান্ডের মালিকানা কাদের কাছে থাকবে সেই দ্বন্দ্বে।
ফকল্যান্ড দ্বীপ টি নিয়ে দ্বন্দ্বের শুরুঃ
দ্বন্দ্বের শুরু টা হয়েছিল যখন আর্জেন্টিনা ১৯ শতকের শুরুর দিক থেকে ফকল্যান্ড দ্বীপের মালিকানা দাবি করে আসছিল কিন্তু গ্রেট ব্রিটেন ১৮৩৩ সালে এই দ্বীপ দখল করার পর থেকে যে অল্প সংখ্যক আর্জেন্টিনিয়ান ছিল তাদের কে দ্বীপ থেকে উৎখাত করে এবং দ্বীপের উপর আর্জেন্টিনার মালিকানা দাবিকে নাকচ করা শুরু করে তখন।
আর্জেন্টিনা দ্বীপের মালিকানা দাবি করার ভিত্তি ছিল ১৮০০ সালে তারা স্প্যানিশ রাজের কাছ থেকে এই দ্বীপ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল সেটা। আর তাছাড়া এই দ্বীপ আর তাছাড়া দ্বীপ টি দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূ খণ্ডের অনেক নিকটে অবস্থিত। কিন্তু ব্রিটেনের দাবি ছিল যে ১৭ শতক থেকে তারা এই দ্বীপ এর প্রশাসনের দায়িত্বে আছে এবং এটি ব্রিটিশ রাজের অংশ তাই এর উপর অধিকার গ্রেট ব্রিটেনের। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকেই আর্জেন্টিনা জাতিসংঘের কাছে ফকল্যান্ড দ্বীপের মালিকানা পাওয়ার জন্য সুপারিশ করে আসছিল এবং ব্রিটেনের সাথে সমঝোতা করার চেষ্টা চালাচ্ছিল। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না এই দ্বন্দ্বের।
ফকল্যান্ড যুদ্ধের শুরুঃ
ফকল্যান্ড দ্বীপের মালিকানা নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা সমঝোতার আলোচনা বাদ দিয়ে আর্জেন্টিনার সামরিক জান্তার প্রধান লিওপোল্ডো গালতিয়েরি ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ড দ্বীপ আক্রমণ করেন। তবে গালতিয়েরির দ্বীপ আক্রমণের এই সিদ্ধান্ত টি পুরোপুরি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। কেননা একসময় বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ আর্জেন্টিনার অবস্থা ঐ সময় খুব একটা ভাল ছিলনা। অর্থনৈতিক দুরবস্থা, খুন, হত্যা ও অপরাধের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল যার ফলে লোকজন সরকারের উপর ভরসা হারাতে শুরু করে। এই সময়ে ফকল্যান্ড দ্বীপের মালিকানা আর্জেন্টিনার করতে পারলে সামরিক সরকারের উপর মানুষের ভরসা পুনরায় ফেরত আসবে এই বিশ্বাস থেকেই গালতিয়ের ফকল্যান্ড দ্বীপ আক্রমণ করেন।
আক্রমণ করার জন্য গোপনে একটি এলিট বাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজ চলছিলো। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়ায় ১৯ মার্চ ১৯৮২ সালে ছেদ পড়ে যখন ব্রিটেন নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ জর্জিয়ায় জাহাজে কাজ করে এমন আর্জেন্টিনিয়ানরা নিজেদের পতাকা উড়ায়। এই দক্ষিণ জর্জিয়া ফকল্যান্ড থেকে ৮০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত।
২ এপ্রিল পোর্ট স্ট্যানলি তে অবস্থানরত অল্পসংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে লড়াই করে আর্জেন্টিনার সামরিক বাহিনী ফকল্যান্ড দ্বীপে আক্রমণ করে।তাদের কে আদেশ করা হয়েছিল নিজেদের বাহিনীর ক্ষতি হলেও যেন তারা ব্রিটেনের সামরিক বাহিনীতে হতাহতের ঘটনা না ঘটায়। পরের দিন আর্জেন্টিনার বাহিনী দক্ষিণ জর্জিয়া দখল করে নেয়। এবং এপ্রিলের শেষের দিকে এসে প্রায় ১০,০০০ সৈন্য মোতায়েন করে ফকল্যান্ড দ্বীপে যদিও এই বিশাল সংখ্যক সৈন্যের মধ্যে অধিকাংশই ছিল অদক্ষ। আর তাছাড়া নিকটবর্তী শীতকালে এই বিশাল বাহিনীর চাহিদা পূরণ করার মত পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্য, পোশাক এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা ছিলনা আর্জেন্টিনার কাছে।
গালতিয়ের এর পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের লোকজন এই যুদ্ধের প্রতি সমর্থন জানানো শুরু করলো এবং তারা রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সামনে জমায়েত হওয়া শুরু করলো এই যুদ্ধে একাত্মতা প্রকাশ করার লক্ষে। আর্জেন্টিনার আক্রমণ দেখে চুপ করে থাকেনি ব্রিটেন সরকার। এই আক্রমণের পাল্টা জবাব স্বরূপ ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ফকল্যান্ড দ্বীপের ২০০ মাইল এলাকা কে যুদ্ধ সীমানা হিসেবে ঘোষণা করলেন। সরকার খুব দ্রুত একটি নৌ টাস্ক ফোর্স গড়ে তুলল যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৩০ বছরের পুরাতন এইচএমএস হারমেস ও নতুন এইচএমএস নামে দুইটি বিমান বাহক এবং সৈন্য বহন করার জন্য ‘কুইন এলিজাবেথ ২’ ও ‘ক্যানবেরা’ নামে দুইটি প্রমোদ তরী।
৫ এপ্রিল এই বাহক গুলো যাত্রা আরম্ভ করে এবং পথিমধ্যে তাদের আরও শক্তিশালী করে তুলার জন্য তাদের সাথে আরও সৈন্য ও জাহাজ যোগ করা হয়। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্রেট ব্রিটেনের পক্ষ নেয় এই যুদ্ধে এবং সকল আর্জেন্টাইন ঘাঁটি থেকে ইউরোপীয় সামরিক উপদেষ্টাদের ফিরিয়ে আনা হয়। যদিও অধিকাংশ ল্যাটিন আমেরিকান দেশ গুলো আর্জেন্টিনার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল এই যুদ্ধে কিন্তু একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে চিলির ক্ষেত্রে। চিলি প্রতিবেশী দেশ আর্জেন্টিনার সাথে দূরত্ব বজায় রাখছিল কারণ বিগল চ্যানেলে একটি দ্বীপ নিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। চিলি কে নিয়ে হুমকি অনুভূত হওয়ায় আর্জেন্টিনা তাদের এলিট বাহিনীর অধিকাংশ সৈন্য কে ফকল্যান্ড থেকে দূরে তাদের মূল ভূখণ্ডে মোতায়েন করে। অপরদিকে তারা ভেবেছিল যে যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বন্দ্বে নিরপেক্ষ অবস্থান নিবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তারা মধ্যস্থতায় আসতে ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি গ্রেট ব্রিটেন কে সমর্থন করা শুরু করে। এমন কি গ্রেট ব্রিটেন কে এয়ার টু এয়ার মিসাইল, যোগাযোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, বিমানচালনার জ্বালানী সহ অন্যান্য সামরিক মজুদ দিয়েও সহায়তা করে। এছাড়া সামরিক বুদ্ধিমত্তা দিয়েও সহায়তা করে।
এপ্রিলের ২৫ তারিখে ব্রিটিশ টাস্ক ফোর্স যখন যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে ৮,০০০ মাইল চলে এসেছিল তখন ব্রিটিশ সৈন্যের আরেকটি ছোট দল দক্ষিণ জর্জিয়া দ্বীপ পুনর্দখল করে নেয় এবং আর্জেন্টিনার একটি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাব মেরিন দখল করার পায়তারা করতে থাকে। ২ মে আর্জেন্টিনার একটি সেকেলে প্রমোদ তরী জেনারেল বেল্গ্রানো কে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে ডুবিয়ে দেয় ব্রিটিশ একটি নিউক্লিয়ার সাব মেরিন।
এই বিতর্কিত ঘটনার পর আর্জেন্টিনার অন্য যুদ্ধ জাহাজ গুলো তারা বন্দরে রাখা শুরু করে এবং নতুন একটি জার্মানিতে তৈরি ডিজেল ইলেকট্রিক সাব মেরিন নিয়ে আসে। আগের সাব মেরিন টির তুলনায় এই সাব মেরিন টি ব্রিটেনের জন্য বেশ হুমকি স্বরূপ ছিল কারণ এই সাব মেরিন থেকে টর্পেডো নিক্ষেপ করা হচ্ছিল এবং কদাচিৎ সেই টর্পেডো গুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছিল।
ঐ সময়ে ব্রিটিশ নৌ বাহিনী এবং আর্জেন্টিনার স্থলভাগে অবস্থানকারী বিমান বাহিনীর মাঝে বেশ জোরেশোরে যুদ্ধ লেগে যায়। আর্জেন্টিনার বিমান গুলোর মধ্যে প্রধানত ছিল যুক্তরাষ্ট্রে ও ফ্রান্সে তৈরি কিছু পুরাতন মডেলের যুদ্ধ বিমান যেগুলোতে শুধু অতি মাত্রার বিস্ফোরক বোমা বহন করা যেতো কিন্তু তাতে কোন রাডার এর সুবিধা ছিলনা যা দিয়ে বোমা হামলার জন্য লক্ষ্য স্থির করা যেতো। কিন্তু তা স্বত্বেও তারা আক্রমণে সফল হচ্ছিল কারণ তারা অনেক বেশি দক্ষ ছিল এবং বিমান চালক রাও অনেক বেশি নিবেদিত প্রাণ ছিল এই যুদ্ধের ক্ষেত্রে। তার উপর আর্জেন্টিনা ফ্রান্সের কাছ থেকে নতুন কয়েকটি যুদ্ধ বিমান কিনে যেগুলো থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করা যেতো। যদিও এই নতুন বিমান সংখ্যায় কম ছিল কিন্তু তাদের কার্যকারিতা ছিল অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। কারণ ফকল্যান্ড যুদ্ধক্ষেত্রটি আর্জেন্টিনার যুদ্ধ বিমানের রেডিয়াসের একদম কাছে ছিল তাই ব্রিটিশ বাহিনীর উপর হামলা করার জন্য তাদের বেশি সময়ের দরকার হয়নি ফলে অল্প কিছু নতুন বিমান দিয়েই বারবার আক্রমণ করতে পারছিল।
অপরদিকে ব্রিটিশ বাহিনীর জন্য চিন্তার বিষয় ছিল যে তাদের কাছে মাত্র ২ টি বিমান বাহক ছিল। যদি এর মধ্যে একটি বাহক ও দুবে যায় আব ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে যুদ্ধে হার মানা ছাড়া তাদের কাছে আর কোন উপায় ছিল না। আকাশ পথে যুদ্ধ করার জন্য তাদের কাছে মাত্র ২০ টি নৌ হ্যারিয়ার জেট বিমান ছিল যা থেকে স্বল্প দূরত্বে এয়ার টু এয়ার মিসাইল নিক্ষেপ করা যেতো। বেশি দূরত্বে আক্রমণ করতে না পারার এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য তারা কিছু রণতরী নৌ বহরের সামনের দিকে স্থাপন করলো রাডার পিকেট হিসেবে। কিন্তু তাদের রণতরীর মধ্যে সব গুলোতে উন্নত অস্ত্র কিংবা মিসাইল আটকানোর মত ব্যবস্থা ছিলনা। যা ব্রিটিশ সৈন্য বাহিনী কে আরও বেশি দুর্বল করে ফেলে। ৪ মে আর্জেন্টিনা এক্সসেট মিসাইল দিয়ে ব্রিটিশ বিমানবাহক এইচএমএস ডুবিয়ে দেয়। ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার ২০/৩০% বিমান ও ধ্বংস হয়ে যায়।
এত বাধা বিপত্তি স্বত্বেও ব্রিটিশ বাহিনী ফকল্যান্ড দ্বীপে অবতরণ করতে সক্ষম হয়। ব্রিটিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সরাসরি আক্রমণের আশংকা থেকে আর্জেন্টিনার স্থলভাগের বাহিনীর প্রধান মারিয়ো মেন্ডেজ তার বাহিনী কে রাজধানী স্ট্যানলির আশেপাশে জড়ো করতে থাকে তাদের গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সরাসরি আক্রমণ না করে ব্রিটিশ টাস্ক ফোর্সের প্রধান জন ওড ওয়ার্ড এবং স্থল বাহিনীর প্রধান জেরেমি মুর সিদ্ধান্ত নেন প্রাথমিক ভাবে তারা পূর্ব ফকল্যান্ড এর উত্তর উপকূলে স্যান কার্লোস বন্দরে অবস্থান নিবে এবং সেখান থেকে স্থলপথে স্ট্যানলি আক্রমণ করবে। তারা হিসাব করে দেখেছিল যে এতে করে ফকল্যান্ডে বসবাস কারী বেসামরিক ব্রিটিশ নাগরিক ও সামরিক বাহিনীর হতাহতের ঘটনা অনেক টা কমাবে।
২১ মে অনেকটা বাধাহীন ভাবেই ব্রিটিশ বাহিনী স্থলভাগে অবতরণ করলেও আর্জেন্টিনার বাহিনীর প্রায় ৫,০০০ শক্তিশালী সৈন্য মিলে প্রতিরক্ষা বলয় গড়ে তুলে যেটা ভাঙ্গার জন্য অনেক শক্ত লড়াইয়ের দরকার ছিল। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার বিমান বাহিনী ব্রিটিশদের উপর হামলা বহাল রাখে এবং অনবরত তাদের নৌ বহরে হামলা করে দুইটি রণতরী সহ হেলিকপ্টার বাহী একটি জাহাজ ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও আরও অনেক রণতরীর গুরুতর ক্ষতি সাধন করে তারা। কিন্তু এত কিছুর পরও তারা যথেষ্ট পরিমাণ ব্রিটিশ বিমান বাহক ধ্বংস করতে পারেনি বা জাহাজ ডুবাতে পারেনি যার কারণে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর যুদ্ধ বিপন্ন হতে পারে। আর তাছাড়া লড়াই করতে গিয়ে আর্জেন্টিনার ও অনেক জেট বিমান, হেলিকপ্টার ও অন্যান্য যুদ্ধযান ধ্বংস হয়।
স্যান কার্লো বন্দরের বেলামুখ থেকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী খুব দ্রুত দক্ষিণের দিকে অগ্রসর হতে থাকে আবহাওয়া অনেক বেশি প্রতিকূল হওয়া স্বত্বেও। অনেক দিন পর্যন্ত খুব কঠিন যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সৈন্য রা স্ট্যানলির পশ্চিম ভাগ দখল করতে সক্ষম হয়। ব্রিটিশ বাহিনী রাজধানী ও প্রধান বন্দর ঘেরাও করার পর আর্জেন্টিনার আর বুঝতে বাকি থাকেনা যে যুদ্ধে তাদের হার নিশ্চিত। নিশ্চিত হার আন্দাজ করতে পেরে মেন্ডেজ দ্বন্দ্ব নিরসন করার লক্ষ্যে ১৪ জুন আত্মসমর্পণ করেন।
দক্ষিণ জর্জিয়ার ৫০০ মাইল দক্ষিণপূর্বে অবস্থিত দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপ থেকে একটি ছোট সৈন্যদল কে অপসারণ করে ব্রিটিশ বাহিনী।
ফকল্যান্ড যুদ্ধ এর ফলাফলঃ
যুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটিশ রা ১১,৪০০ জন আর্জেন্টিনিয়ান নাগরিক কে জেলবন্দি করে যদিও যুদ্ধ শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে তাদের কে মুক্ত করে দেয়। আর্জেন্টিনা ঘোষণা করে যুদ্ধে সব মিলিয়ে ৬৫০ জনের প্রাণ যায় যার মধ্যে অর্ধেকের মত মারা গিয়েছিল জেনারেল বেল্গ্রানো ডুবে যাওয়াতে। ব্রিটিশ রা জানায় তাদের ২২৫ জন মারা গিয়েছিল এই যুদ্ধে। সামরিক ক্ষেত্রে দক্ষ ব্যক্তিরা পরবর্তীতে এই দ্বন্দ্বের অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্ক করেছেন কিন্তু বেশির ভাগ লোকের বিতর্ক ছিল আই যুদ্ধে দুই দেশ কর্তৃক ব্যবহৃত সাব মেরিন ও মিসাইল নিয়ে। আর তাছাড়া তারা আকাশ পথে শত্রু কে থামানো বা ঘায়েল করার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের অপারদর্শিতার কথা ও বলেছেন অনেকে।
এই যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর আর্জেন্টিনায় সামরিক জান্তার পতন ঘটে। নিজেদের করা আক্রমণে নিজেদের দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে হেরে যাওয়ায় আর্জেন্টিনার সামরিক প্রধানের উপর সাধারণ জনগণ অনেক ক্ষুব্ধ হয়। যার ফলস্বরূপ সেখানে সামরিক শাসন উৎখাত হয়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
অপরদিকে শাপে বর হওয়ার মত ঘটনা ঘটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে। ব্রিটেনে ফকল্যান্ড যুদ্ধ এর আগে কনজারভেটিভ পার্টির জন্য তেমন কোন সমর্থন ছিল না। কিন্তু মার্গারেট থ্যাচারের নেতৃত্বে যুদ্ধ জয়ের পর কনজারভেটিভ পার্টির সমর্থক অনেক গুণ বেড়ে যায় এবং পরের বছর সংসদ নির্বাচনে মার্গারেট থ্যাচার পুনর্মেয়াদে নির্বাচিত হন। একেই বলে কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।
is zofran safe to use during pregnancy
zyprexa nausea