আমরা এমন একটা সময়ে এমন একটা সমাজে বাস করছি, এখানে একটার পর একটা বিজ্ঞাপন ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা বলে বোঝাতে চাচ্ছে আমরা ভাল নেই। খুব সচেতন ভাবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বানানো হচ্ছে বিভিন্ন আকারের সমস্যা এবং আপনাকে আপ্রাণ বোঝানো হচ্ছে, আপনার নগণ্য বোধ করা উচিৎ নানা কারণে।
ব্যাপারটি কিন্তু এমনই ঘটছে।
বিজ্ঞাপনে যে চরিত্র দেখানো হয় তা আপনার আমার কাছের কেউ হয় না। বিজ্ঞাপনে যে গল্প তুলে ধরা হয় তাও আপনাকে আমার গল্পটা তুলে ধরে না। শুধুমাত্র পণ্য বিক্রিকে কেন্দ্র করেই আপনার অজান্তেই ধীরে ধীরে অভাববোধ তৈরি করে থাকে এক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা।
আমাদের সামনে বারবার হাজির করা হয় যেসব নারী মডেলকে তারা সচরাচর সবাই স্লিম হয়ে থাকে, কথা বলে কলের পুতুলের মত, তাদের দাঁত উঁচু থাকে না, মুখে থাকে না কোনো দাগ। আপনি যখন আয়নার সামনে দাঁড়ান আপনি সচেতন ভাবে না হলেও অবচেতনেই বোধ করতে থাকেন, আমাকে এমন দেখালে ভাল হত বা আমার চুল কেন এত লম্বা ও সিল্কি না।
আমাদের দেশের নাগরিক ও সরকার সবক্ষেত্রে এখনো এতটা সচেতন না তাই আমরাই মূলত বলির পাঠা হচ্ছি একটা বৃহৎ ষড়যন্ত্রের, যা হয় খুব সুচারুভাবে বেড়ে উঠছে কারো শাণিত মগজের ছোঁয়ায় নয়ত খুবই অবহেলায় দালানের ছাদের কার্নিশে বড় হতে থাকা বটগাছের মত।
কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা মিডিয়ার বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সরাসরি প্রভাবিত হয়। গবেষণা বলে যে, অনেক কম বয়সী মেয়েরাই শুধুমাত্র ম্যাগাজিনে বা সোশাল মিডিয়ায় ওজন কমানোর ছবি দেখে বা স্লিম মডেলের ছবি দেখে ওজন কমিয়ে স্লিম হতে মরিয়া হয়ে ওঠে যদিও তাদের যেই ওজন ও গঠন রয়েছে তা যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্যকর। মানতেই হবে, মেয়েরা আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে চায় এবং লোকে মেয়ে মাত্রই আকর্ষণীয় হতে হবে এমন একটা ধাঁধায় ঘিরে ফেলেছে মেয়েদের।
আপনার আমার শরীর যেকোনো ধরণ ও গড়নেরই হতে পারে এবং এটিই খুব স্বাভাবিক কিন্তু তা সত্ত্বেও ম্যাগাজিন, লিফলেট, টেলিভিশন, বিলবোর্ডে আপনি যাকে মডেল হিসেবে দেখছেন সে সচরাচর আপনার মত থাকছে না। সে আপনার চেয়ে অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
আপনাকে এভাবে ধরে-বেঁধে জাতে উঠাতে ব্যস্ত আজকের দিনের সব কয়টি বিজ্ঞাপন। পণ্য যাই হোক না কেন, একজন আকর্ষণীয় স্বল্পবসনা মডেল জুরে দিলেই এর বিক্রি বৃদ্ধি পায়। হাস্যকর হলেও এটাই সত্যি কথা। মেয়েদেরই শুধু নয়, সুঠাম আকর্ষণীয় ছেলে মডেলদেরও এভাবেই উপস্থাপন করা হয়।
এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সন্তানকে শেখাতে চায় তাদের পেশীবহুল দেহ না হলে তাদের পুরুষত্ব কমে যাবে।
এমন দৃষ্টিভঙ্গির বীজ বপনকে একটা রাজনৈতিক অস্ত্র বলে মনে করেন অনেক মনস্তাত্ত্বিক।
ঠিক একইভাবে বিজ্ঞাপন আমাদের বোঝায় আমরা যেই ত্বক নিয়ে জন্মেছি তা আমাদের আকাঙ্ক্ষিত হওয়া উচিৎ না।
ফর্সা হতেই হবে, মুখে দাগ থাকলে এটা একটা খুঁত, শরীরের বিভিন্নস্থানে লোম থাকা চলবে না-এসব হীনমন্যতার জন্মদাতা হল আজকের বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলি। আজ এক দশক যাবত প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় এমন সব ট্রিটমেন্টে যা সম্পূর্ণভাবে অপ্রয়োজনীয় এবং এ সমস্ত ট্রিটমেন্ট যে সমস্যাগুলির সমাধানে করা হয় তা সম্পূর্ণভাবে মিডিয়া দ্বারা উদ্ভূত। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর তেমন প্রভাব ফেলে না বিজ্ঞাপনের চটকদারিতা যতটা না এর প্রভাব বয়:সন্ধিকালীন ছেলেমেয়েদের। শতকরা ৭০-৮৫ ভাগ কিশোরী ভাবে তাদের পায়ে লোম থাকা একটি বৃহৎ সমস্যা যেটি আসলে সম্পূর্ণ একটি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক বিষয়। মুখে ব্রণের দাগকে অস্বাস্থ্যকর ভেবে নেয় অনেকে যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা হরমোনের স্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলেই হয়।
আমরা যেসব বিজ্ঞাপন দেখে থাকি তার অনেকগুলিই বহুজাতিক কোম্পানির হয়ে থাকে। তারা যেই মডেল ব্যবহার করে থাকে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভারতীয় অথবা বিদেশী।
জাতিগতভাবে সতর্ক হওয়ার সময় চলে যাচ্ছে যদি না আমরা সচেতন হয়ে লাগাম ধরতে না পারি। যদি লাগাম নাই ধরতে পারি তবে অন্তত এটুকু যেন যার যার জায়গা থেকে করে যেতে পারি যাতে কোনো উটকো লোকে উটকো সমস্যা বানিয়ে আমাদের মনস্তত্ব ও পকেট নিয়ে খেলার সাহস বন্ধ করে দেয়।
buy semaglutide – generic glucovance buy DDAVP cheap