দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার দি গ্রেট: ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা!

0

দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডারের কথা জীবনে একবারও শোনেননি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত এই দিগ্বিজয়ীর জীবনের নানা ঘটনা পরিক্রমা নিয়ে আজকে আমাদের এই আয়োজন।

আলেকজান্ডার যিনি আলেকজান্ডার দি গ্রেট হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত, খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৬ সাল থেকে ৩২৩ সাল পর্যন্ত মেসিডোনিয়ার রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নেতৃত্বের এ সময়ে তিনি গ্রিসকে একত্রিত করে করিন্থীয় লীগের পুনঃনির্মাণ করেন। পারস্য সাম্রাজ্য জয় করেন এবং পারস্য, ব্যাবিলন ও এশিয়া রাজত্ব করে এই অঞ্চলে মেসিডোনীয় উপনিবেশ স্থাপন করেন। টগবগে যুবক অবস্থায় মাত্র ৩২ বছর বয়সে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এই গ্রিক বীর।

আলেকজান্ডার দি গ্রেট
Source: Telangana Today

প্রাথমিক জীবন

“আলেকজান্ডার দি গ্রেট” প্রাচীন গ্রিক মেসিডোনিয়ান রাজ্যের পেলা অঞ্চলে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫৬ সালের ২০ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। মেসিডোনের ফিলিপ-২ তার পিতা এবং নিওটোলেমাসের রাজকন্যা ও মেসিডোনের রানী অলিম্পিয়া তার মাতা ছিলেন। তরুণ রাজপুত্র আলেকজান্ডার এবং তার রাজকন্যা বোনেরা পেলার রাজকীয় আদালতের তত্বাবধানে বেড়ে উঠতে থাকেন।

আলেকজান্ডার দি গ্রেট
মেসিডোনিয়ান রাজ্যের পেলা অঞ্চল Source: AwesomeStories

কোঁকড়ানো চুল ও কালো চোখের অধিকারী বাড়ন্ত আলেকজান্ডার তার বাবাকে এ সময় খুব কমই দেখেছিলেন কারণ বেশির ভাগ সময়ই ফিলিপ-২ কোন না কোন সৈন্য শিবির অথবা পরনারী প্রণয়ে জড়িয়ে ব্যস্ত থাকতেন। যদিও তার মা রানী অলিম্পিয়া আলেকজান্ডারকে মানুষ করতে শক্তিশালী এবং আদর্শ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবুও আলেকজান্ডার তার বাবার অনুপস্থিতি এবং পরকীয়া মনোভাবের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ছিলেন।

আলেকজান্ডার তার আত্মীয়ের অভিভাবকত্বে এপিরাসের স্টার্ন লিওনিদাসের তত্বাবধানে তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। আলেকজান্ডার গণিত, অশ্বারোহণ এবং তীরন্দাজের শিক্ষা দেওয়ার জন্য রাজা ফিলিপ শিক্ষক লিওনিদাসকে ঠিক করেন। কিন্তু কিশোর ছাত্র আলেকজান্ডার সামলাতে লিওনিদাসের খুব বেগ পেতে হত। এরপর আলেকজান্ডারের জন্য পরবর্তী শিক্ষক হিসেবে ঠিক করা হয় লাইসিম্যাকাসকে যিনি সবসময় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে কিশোর আলেকজান্ডারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। লাইসিম্যাকাস সর্বপ্রথম খেয়াল করেন যে, আলেকজান্ডার বিশেষ করে যোদ্ধা অ্যাকিলিসের চরিত্রের অভিনয়ে বেশ আনন্দিত হতেন ও মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করতেন।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪৩ সালে রাজা ফিলিপ-২ পুত্র আলেকজান্ডারকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বিখ্যাত দার্শনিক এরিস্টোটলকে মেজিয়ার নিম্ফস মন্দিরে নিয়োগ দেন। প্রায় তিন বছরের প্রশিক্ষণে এরিস্টোটল আলেকজান্ডার ও তার কিছু কাছের বন্ধুকে দর্শন, কাব্য, নাট্য, বিজ্ঞান এবং রাজনীতি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। এরিস্টোটল লক্ষ করেন হোমারের ইলিয়াড আলেকজান্ডারকে একজন বীর যোদ্ধা হতে বেশ অনুপ্রাণিত করছে। আর এজন্যই এরিস্টোটল আলেকজান্ডারের জন্য একটি সংক্ষিপ্তাকারে গ্রন্থ তৈরি করে তাকে দেন যাতে তিনি সৈন্য শিবিরে গিয়েও তা পড়ে উদ্দীপনা লাভ করতে পারেন।

আলেকজান্ডারের শিক্ষক এরিস্টোটল
চিত্র: আলেকজান্ডারের শিক্ষক এরিস্টোটল Source: ancient-origins.net

আলেকজান্ডার খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০ সালেই মেজিয়াতে তার শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং তার মাত্র এক বছর পরে কিশোর বয়সেই সেনাবাহিনীতে সৈন্য হিসেবে যোগদান করেন। তার প্রথম সামরিক অভিযান ছিল থ্রাসিয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৮ সালে আলেকজান্ডার একটি অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে এথেনিয়ান ও থেবান সৈন্যদের পরাজিত করে তার পিতাকে সাহায্য করেন।

এরপর ফিলিপ-২ একবার করিন্থীয় লীগে সমস্ত গ্রীক রাজ্য (স্পার্টা ছাড়া) একত্রিত করার জন্য তাঁর প্রচারাভিযান চালিয়ে সফল হয়েছিলেন এবং মূলত তারপর থেকে পিতা ও পুত্রের মধ্যে জোট ভেঙে যায়।

আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপ-২
চিত্রঃ আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপ-২ Source: AwesomeStories

রাজা ফিলিপ-২ কিছুদিন পর জেনারেল এটলাসের ভ্রাতুষ্পুত্রী ক্লিওপেট্রা ইরিদিয়েসকে বিয়ে করেন এবং আলেকজান্ডারের মা অলিম্পিয়াকে রাজপ্রাসাদ থেকে বের করে দেন। আলেকজান্ডার ও তার মা রানী অলিম্পিয়াকে জোর করে মেসিডোনিয়া থেকেও তাড়িয়ে দেওয়া হয় এবং তারা মেসিডোনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে অলিম্পিয়ার বাবার বাড়ি এপিরাসে এসে আশ্রয় নেন। পরবর্তীতে আলেকজান্ডার এবং তার পিতার মধ্যবর্তী বিরোধ নিরসনের পূর্ব পর্যন্ত তারা এ অবস্থাতেই ছিলেন।

মেসিডোনিয়ার রাজা

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৬ সালে মোলোসিয়ানের রাজার সাথে আলেকজান্ডারের বোনের বিয়ে হয় তার নামও ছিল আলেকজান্ডার। এই বিবাহ অনুষ্ঠানে পসানিয়া নামক মেসিডোনিয়ার এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির হাতে রাজা ফিলিপ-২ খুন হন।

তার পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার যেভাবেই হোক সিংহাসন ধরে রাখার পণ করেন যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। তিনি দ্রুতই মেসিডোনিয়ার সেনাবাহিনীর সমর্থন লাভ করেন; বিশেষ করে তাকে সহায়তা করেন সেনাপতি এবং সৈন্যরা যারা ক্যারোনিয়ার যুদ্ধে আলেকজান্ডারের সাথে একসাথে যুদ্ধ করেছিল। এরপর সেনাপতি আলেকজান্ডারকে সামন্ত রাজা ঘোষণা করেন এবং সিংহাসনে আরো সম্ভাব্য উত্তরাধিকারীদেরকে হত্যা করার জন্য তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। নির্বাসিত রানী অলিম্পিয়াও এবার তার পুত্রের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। তিনি ফিলিপের পরবর্তী স্ত্রী ক্লিওপেট্রার কন্যাকে হত্যা এবং ক্লিওপেট্রাকে প্ররোচিত করে আত্মহত্যা করিয়ে সিংহাসন উত্তরাধিকার শূন্য করে  নিজ পুত্রের সিংহাসন নিশ্চিত করেন।

মেসিডোনিয়ার সামন্ত রাজা হওয়া স্বত্বেও প্রথমে আলেকজান্ডার করিন্থীয় লিগের স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ পাননি। বরং গ্রীসের দক্ষিণাঞ্চল গুলো ফিলিপের মৃত্যুতে উল্লাসিত হয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার জল্পনা কল্পনা করতে থাকে। কিন্তু এথেন্সের নিজস্ব এজেন্ডা ছিল এবং তা অনুযায়ী গণতান্ত্রিক ডেমোস্টেনেসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র লীগের দায়িত্ব নেওয়ার চিন্তা করছিল।

তারা যখন স্বাধিকার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আলেকজান্ডার তখন দক্ষিণে তার সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং থেসালির রাজ্যগুলোকে নিগৃহীত করে নিজেকে করিন্থীয় লিগের নেতা হিসেবে জাহির করেন। পরবর্তী সময়ে লিগের সম্মিলিত সভায় সকল সদস্যই আলেকজান্ডারকে লিগের নেতা হিসেবে মেনে নেন।

অভিযান এবং বিজয়

আলেকজান্ডার তার উত্তর প্রচারাভিযানের শেষের দিকে গুজব প্রচার করেন যে, গ্রীক নগর-রাষ্ট্র থ্যাবস মেসিডোনিয়ার সৈন্যবাহিনীকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে সৈন্য ঘাঁটি স্থাপন করেছে। অন্যান্য নগর-রাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্রোহের আশঙ্কা তৈরি করে এই অজুহাতে আলেকজান্ডার তার বিশাল সেনাবাহিনী (৩০০০ অশ্বারোহী এবং ৩০০০ পদাতিক) নিয়ে দক্ষিণে গ্রিক উপদ্বীপের ডগার দিকে এগিয়ে যান। এদিকে আলেকজান্ডারের জেনারেল ও পেমেনিয়ন ইতিমধ্যেই এশিয়া মাইনরে অভিযানের পথ তৈরি করেছেন।

আলেকজান্ডার এবং তার বাহিনী থ্যাবসে এত দ্রুত গতিতে এসে পৌঁছান যে এই নগর-রাষ্ট্র তার প্রতিরক্ষার জন্য অন্যদের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার সুযোগও পায়নি। আক্রমণের তিন দিন পরে, আলেকজান্ডার থ্যাবসে ব্যাপক গণহত্যা চালান। থ্যাবসে চালানো এই ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড দ্বারা আলেকজান্ডার অন্যান্য বিদ্রোহী রাজ্যের প্রতি সতর্কবাণী নির্দেশ করেন। তার ভয়ঙ্কর কৌশল অব্যর্থ ভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয় এবং ফলে এথেন্স সহ অন্যান্য গ্রীক নগর-রাষ্ট্র সমূহ মেসিডোনিয়ান সাম্রাজ্যের সাথে মৈত্রী করে ও এর প্রতি নিরপেক্ষ থাকার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৪ সালে, আলেকজান্ডার তার এশিয়া অভিযান শুরু করেন এবং সে বছরের বসন্তে ট্রয়ে পৌঁছান। আলেকজান্ডার গ্রানিয়াস নদীর কাছাকাছি পৌঁছলে ফার্সি রাজা ড্যারিয়াস-৩ এর সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হন এবং প্রায় অনায়াসেই ড্যারিয়া বাহিনীকে পরাজিত করেন। গ্রানিয়াস নদীর পার্শ্ববর্তী ড্যারিয়া বাহিনীকে পরাজিত করে আলেকজান্ডার এবং তার সেনাবাহিনী এশিয়া মাইনরের দক্ষিণ উপকূল জুড়ে গর্ডিয়ামে যান। যেখানে তারা শীতকালীন বিশ্রামে থাকেন।

আলেকজান্ডার দি গ্রেট
চিত্র: পারস্য আক্রমণ Source: bolshoyvopros.ru

খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৩ সালের গ্রীষ্মে আলেকজান্ডার ও ড্যারিয়াসের বাহিনীর আবার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় এবার যদিও আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী ছিল সংখ্যালঘু তবু তিনি ড্যারিয়াসেরে সেনাবাহিনীকে আবারও পরাজিত করার জন্য নতুন সামরিক কৌশল প্রণয়ন করেন এবং ড্যারিয়াসকে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৩ সালের নভেম্বরে ড্যারিয়াসকে পরাজিত ও পলাতক দেখিয়ে আলেকজান্ডার নিজেকে পারস্যের রাজা ঘোষণা করেন।

ড্যারিয়াস
চিত্র: ড্যারিয়াস Source: Livius.org

আলেকজান্ডার পরবর্তী লক্ষ ছিল মিশর জয় করা। মিশরের পথে গাজা আক্রমণ করে আলেকজান্ডার সহজেই বিজয় লাভ করেন। এবং একই ভাবে মিশরও প্রতিরোধ ছাড়াই পতিত হয়। সেখানে তিনি খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩১ সালে গ্রিক সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে আলেকজান্দ্রিয়ার শহর প্রতিষ্ঠিত করেন। এভাবেই আলেকজান্ডার “ব্যাবিলন ও এশিয়া সহ বিশ্বের প্রায় এক চতুর্থাংশের শাসক” হন।

মেসিডোনিয়ান সাম্রাজ্যের মানচিত্র
চিত্র: মেসিডোনিয়ান সাম্রাজ্যের মানচিত্র Source:Livius.org

আলেকজান্ডার পরবর্তীতে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৭ সালে পূর্ব ইরানের অ্যারাইমাজের দুর্গ দখল করে মেসিডোনিয়ান উপনিবেশ তৈরি করেন। সেখানে প্রিন্স অক্সাইর্টসকে বন্দী করার পর আলেকজান্ডার তার কন্যা রোক্সানাকে বিয়ে করেন।

খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৮ সালে আলেকজান্ডার উত্তর ভারতে রাজা পোরাসের বাহিনীকে পরাজিত করেন। তার প্রতি পোরাসের আনুগত্য দেখে আলেকজান্ডার তাকে ক্ষমা করেন ও রাজা হিসাবে পুনর্বহাল করেন। আলেকজান্ডারের  সেনাবাহিনী গঙ্গার পূর্বদিকে পৌঁছে আর সামনে এগোনোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সিন্ধু বরাবর ফিরে আসার পথে আলেকজান্ডার মালি যোদ্ধাদের দ্বারা আহত হন।

আলেকজান্ডার দি গ্রেট
চিত্র: পোরাসের বাহিনীর পরাজয় Source: history.com

আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর মৃত্যু

১৩ই জুন, খ্রিষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেকজান্ডার যখন ব্যাবিলনে (বর্তমান ইরাকে) কার্থেজ এবং রোমের বিজয়ের কথা ভাবছিলেন সে সময় হঠাৎ করে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর মাত্র কয়েকমাস পরেই স্ত্রী রোক্সানার কোল জুড়ে তার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

মেসিডোনিয়ায় আলেকজান্ডারের ভাস্কর্য
চিত্র: মেসিডোনিয়ায় আলেকজান্ডারের ভাস্কর্য

আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য সম্রাট শূন্য হয়ে ধ্বসে পড়ে এবং অন্তর্ভুক্ত জাতিসমূহ একে অন্যের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এভাবে কালের পরিক্রমায় গ্রীস এবং প্রাচ্যের সমন্বয়ে গঠিত আলেকজান্ডারের সাম্রাজ্য বাস্তবতা ছেড়ে উঠে আসে ইতিহাসের পাতা জুড়ে।

Sources:

  1. https://www.biography.com/people/alexander-the-great-9180468
  2. http://www.bbc.co.uk/history/historic_figures/alexander_the_great.shtml
  3. http://www.history.com/topics/ancient-history/alexander-the-great
  4. https://www.britannica.com/biography/Alexander-the-Great
  5. http://www.historyofmacedonia.org/AncientMacedonia/AlexandertheGreat.html
Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More