বাংলা মুভি রিভিউ – ঢাকা অ্যাটাক

0

উপমহাদেশের সিনেমার নিজস্ব ২টা ভাগ আছে, মাসি ফিল্ম ও ক্লাসি ফিল্ম। অন্যান্য ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রিতে যে এই দুই ঘরানার ফিল্ম হয় না তা নয়। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এই বিভাজন ব্যাপক হারে দেখা যায়। মূলত এই ভাগের মূলে দর্শক।

মাসি ফিল্মে প্রাধান্য পায় মনোরঞ্জন, নাচ-গান মার-পিট এবং নায়ক ভিলেনের দ্বন্দ নিয়ে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক ছবি। আর ক্লাসি ফিল্মে প্রাধান্য পায় ব্রেইনস্টরমিং। সুন্দর গল্পের বুনন, সুদক্ষ পরিচালনা কৌশলে বাস্তবিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্মিত চলচিত্রকে ক্লাসি ফিল্ম বলা হয়।  সাধারনত ক্লাসি ফিল্মের দর্শকের কাছে মাসি ফিল্ম হচ্ছে আবর্জনা, পক্ষান্তরে মাসি দর্শকদের কাছে ক্লাসি ফিল্ম হচ্ছে দুর্বোধ্য (সহজ ভাষায় মাথা ব্যথা)। উপর তলার মানুষের গায়ে মাখা দামি পারফিউমের ঘ্রান আর নিচু তল্লাটের খেটে খাওয়া মানুষের ঘামের গন্ধ যেমন এক জায়গায় পাওয়া যায় না, ক্লাস এবং মাস দর্শকের সম্পর্কটা অনেকটা অমনি। এই দুই ধরনের দর্শকে একেই প্রেক্ষাগৃহে একই সময়ে দেখতে পাওয়া যায়না বললেই চলে।  কিন্তু, এমন একটা বিরল দৃশ্যের সাক্ষি হয়ে এলাম “ঢাকা-অ্যাটাক”  দেখতে গিয়ে। যেখানে ক্লাস এবং মাস উভয় স্তরের দর্শকের উপস্থিতি একই সাথে দর্শনীয় এবং উপভোগ করার মত।

মুভির শুরুতে, কিছু সন্ত্রাসী একটি ল্যাবে হামলা চালিয়ে বেশ কিছু রাসায়নিক দ্রব্য চুরি করে নিয়ে যায়,  যেগুলো দিয়ে বিস্ফোরক বোমা বানিয়ে সেগুলো দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা! আর এই সন্ত্রাসী দল কে ধরতে গিয়ে একের পর এক কাহিনী রচিত হয়! পুলিশ সদর দপ্তরে একের পর এক মিটিং, সোয়াট দলের অপারেশন, বোম্ব স্কোয়াড সদস্যদের ছোটাছুটি, তবে শেষ পর্যন্ত কি হয়, তা না হয় হলে গিয়েই জানবেন !

আমাদের দেশে পুলিশের একশন নিয়ে, তাদের দায়িত্ব নিয়ে পুলিশকে পজিটিভ ভাবে উপস্থাপন এই প্রথমবার ! অনেকেই হয়তো সমালোচনা করবেন যে, কিছু ডায়ালগ বেশি খামখেয়ালিপনার সাথে করা হয়েছে, এডিটিং আরেকটু ভালো হতে পারতো, নায়িকাকে মানায় নি…….


কিন্তু আমাদের মাথায় রাখতে হবে, আরেফিন শুভর কাছে ‘মিশন ইম্পসিবল‘ মুভির নায়কের মতো অভিনয় আশা করাটা বোকামি ! তবে আমরাও এখন চলচ্চিত্র শিল্পে বেশ উন্নতি করছি, যার শুরুটা হলো ঢাকা এ্যাটাক! ভুলভ্রান্তি থাকবেই, পরেরবার যখন এরকম এ্যাকশন ধর্মী সিনেমা আরো তৈরি হবে তখন সংশ্লিষ্টরা হয়তো এই ভুলগুলো শুধরে নিবেন, একটা সময় দেখা যাবে,  আমাদের বাংলা সিনেমাও হলিউডের এ্যাকশন সিনেমার চেয়ে কম কিছু নয়! ভালো কিছুর জন্য একটু সময় তো লাগবেই, তাই না?


তবে মুভিটির দুই নারী চরিত্রই যথেষ্ট বিরক্তিকর! টানটান মুহুর্তের সময় এমন এমন আবদার! হলে গিয়ে মনে হল দর্শকরাই চেঁচিয়ে তাদের সেই আবদার ফিরিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু কি আর করা বলুন, ভালোবাসা তো এমনই! পুরো দেশের নিরাপত্তার বোঝা আপনার মাথায়, সেই কঠিন মুহুর্তে আপনি যেনো ভালো থাকেন, সেই চিন্তা তো আপনার আপনজনের থাকবেই ! আমরা কেউই চাই না, আমাদের আপনজনদের কোনরকম ক্ষতি হোক! তাহলে মাহী চাইলে দোষ কি! 

স্ত্রীর সন্তান হবার মুহুর্তেও তার পাশে থাকতে না পারার অাকুতিটাও যে একজন সোয়াট সদস্যের জন্য কতোটা মর্মান্তিক, সেটা কি সিজার অপারেশনের টেবিলে শুয়ে স্ত্রী টের পান?
কিন্তু ডাকটা যখন আসে দেশের প্রয়োজনে, সেখানে হাজার বাধা আসলেও দেশের ডাকে সাড়া দেওয়াটাই তো সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের কাজ!


কিন্তু আপনার প্রিয়জনের কথা হলো ‘আপনাকেই কেনো যেতে হবে, ডিপার্টমেন্টে কি আর কেউ নেই’!
আমরা সবাই যদি সবাইকে ইনডিভিজুয়াল চিন্তা করি, তাহলে তো সবারই প্রিয়জন আছে! কিন্তু দেশের প্রয়োজনে যেতে যেহেতু হবেই, সেখানে আমি গেলে ক্ষতি কি! বরং এটাই তো তৃপ্তি ! যে আত্বতৃপ্তির আশায় আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা আপনজনের শত বাধা সত্বেও ঝাপিয়ে পড়েছিলেন, একটি পতাকাকে রক্ষার জন্য!
প্রিয় পাঠক,  ঢাকা অ্যাটাক মুভিটাও শেষ হয়েছে অামাদের জাতীয় পতাকাটা অর্জনের মাধ্যমেই!

আর একটা বিষয়, ভিলেন একটা চলচ্চিত্রের মূল আকর্ষণ। ভিলেন চরিত্রের কাস্টিং ছিল অসাধারণ। তার ব্যাকগ্রাউন্ডও বেশ চমকপ্রদ। কেননা একজন ছেলে শুধু শুধু অপরাধী হয় না, তার পেছনে থাকে কিছু ঘটনা, কিছু দূর্ঘটনা, কিছু কথা, কিছু গল্প। একজনের চরিত্র গঠন হয় তার জেনেটিক এনভায়রনমেন্ট ইন্টারেকশনের ভেতর দিয়ে। এই বিষয়টা বেশ ভালভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে এই মুভিটিতে। এটা প্রশংসা করার মত।

সর্বোপরি এটি হলে গিয়ে সবার সাথে দেখার মত একটি মুভি। চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নতির জন্য দর্শকের হলমুখি হওয়া যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন হলমুখি করার মত মানের ছবি। সে প্রত্যাশা আমাদের মিটেছে।

 

Author:  

 

Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More