মাওবাদী আন্দোলন : ভারত সরকারের বিষফোঁড়া

4

মাওবাদ শব্দটি মূলত চীনের বিপ্লবী নেতা মাও-সেতুং এর সাথে জড়িত। মার্ক্সবাদ বা লেনিনবাদের মত মাও-সেতুং এর সামাজিক ও রাজনৈতিক চিন্তাধারাই মাওবাদ নামে পরিচিত আর এই মতাদর্শের অনুসারীবৃন্দকেই বলা হয় মাওবাদী হিসেবে। ১৯৫০-৬০ এর বছর গুলোতে এটি বিকশিত হয় এবং একটি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মাওবাদ এর অনুসারীরা তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রতিষ্ঠায় অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং তা সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলনে রূপ নেয়। মাওবাদী আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিরা ভূমি ও ভৌগোলিক সুবিধা যেমনঃ পাহাড়,জঙ্গল, জলাভূমি ইত্যাদি ব্যবহার করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিচ্ছিন্নভাবে তাদের আক্রমণ পরিচালনা করে থাকে। শত্রুপক্ষকে আক্রমণের ক্ষেত্রে গেরিলা পদ্ধতি অনুসরণ করে বলে আন্দোলনকারীরা মাওবাদী গেরিলা বা মাওবাদী বিদ্রোহী নামে পরিচিতি পায়।

ভারতের মাওবাদী আন্দোলন

ভারতে সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন মূলত শুরু হয় ১৯২০ সালের দিকে। দেশকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করতে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শীদের দ্বারা এই আন্দলনের সুত্রপাত হয়। কিন্তু ১৯৪৭ সালে বৃটিশরা ভারত ছাড়লেও বামপন্থি মতাদর্শ থেকে যায় অগোচরে। তারপর স্বাধীনতার কিছুকাল পরেই দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্র-প্রদেশে প্রথম বারের মত মাওবাদী আন্দোলন স্থায়ীভাবে আত্বপ্রকাশ করে। সেই থেকে শুরু। এর পর থেকেই চলে আসছে মাওবাদী আর সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর স্বশস্ত্র আক্রমণ আর পাল্টা আক্রমণ।

ভারতের মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহ
ভারতের মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহ Image source: PakistanTribe

প্রথম সরকারবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৬৭ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাকশালবাড়ি নামক এক সুদূর গ্রাম থেকে। একজন কৃষককে তার জমি চাষ করতে না দেয়া থেকে বিরোধ শুরু হয়ে তা রূপ নেয় সরকারবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে যা স্থায়ী হয় ৭২ দিন পর্যন্ত। তবে ঐ সময় নাকশালবাড়িতে সংগঠিত আন্দোলন প্রতিরোধ করা গেলেও তা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা মাওবাদী মতাদর্শীদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠে। নাকশালবাড়ি থেকেই পরবর্তীতে নাকশালবাদ শব্দটি আসে এবং নাকশালবাড়ি আন্দোলনের অনুকরণে সংঘটিত আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিরা নাকশালবাদী হিসেবে পরিচিতি পায়। এছাড়াও তাদেরকে মাওবাদী নাকশালবাদীও বলা হয়। তবে ১৯৭২ সালের মধ্যেই সরকারের কঠোর দমন নীতির ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের মাওবাদী বিদ্রোহীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এরপর দীর্ঘদিন পর্যন্ত মাওবাদী বিদ্রোহীরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

ভারতের মাওবাদী আন্দোলন  এর বর্তমান পর্যায়টির সূচনা মূলত ২০০৪ সাল থেকে। ১৯৭৬ সালে ভারতের অন্ধ্র-প্রদেশে পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পি ডব্লিউ জি) বা জনযুদ্ধ নামে (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী)একটি বিদ্রোহী সংগঠন সক্রিয় ছিলো। এছাড়া একই সময়ে পূর্ব ভারতের বিহার রাজ্যে মাওবাদী কমিউনিষ্ট সেন্টার (এম সি সি) নামে আরেকটি সংগঠন কার্যক্রম চালাচ্ছিলো। তারপর ১৯৯২ সালে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি (সি পি আই) নামে একটি মাওবাদী গ্রুপ যাত্রা শুরু করা যা ভারতের তিনটি রাজ্যঃ অন্ধ্র-প্রদেশ, ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। অবশেষে ২০০৪ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর পিপলস ওয়ার গ্রুপ ও ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি একত্রিত হয়ে ভারতীয় কমিউনিষ্ট পার্টি(মাওবাদী) নামে বর্তমান মাওবাদী বিদ্রোহের সূচনা করে। বর্তমানে ভারতের অন্ধ্র-প্রদেশ, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার , উড়িশ্যা, ছত্তিশগড় সহ বিভিন্ন রাজ্যে মাওবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে মাওবাদী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা গুলো “রেড করিডোর” নামে পরিচিত।

মাওবাদী গেরিলা কারা তাদের সংখ্যা

সরকারবিরোধী বামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন গুলোর সাথে যুক্ত সশস্ত্র আন্দোলনকারী ব্যক্তিরাই মাওবাদী গেরিলা হিসেবে পরিচিত। মাওবাদী বিদ্রোহীদের মতে, তারা ভারতের পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের কল্যাণে ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় লড়াই করছে। তাদের লক্ষ্য মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া নয় বরং সশস্ত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি কমিউনিষ্ট প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আর অনেকের মতে, এই কাজে স্থানীয় জনগোষ্ঠির সমর্থনও রয়েছে।

স্বশস্ত্র যুদ্ধে নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ
স্বশস্ত্র যুদ্ধে নারী ও শিশুদের অংশগ্রহণ Image source: Redspark

মাওবাদী গেরিলাদের বেশিরভাগ সদস্যই আসে আদিবাসী গোষ্ঠী গুলো থেকে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির শোষণের শিকার পিছিয়ে পড়া এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী তাদের জীবন ধারণের নূন্যতম অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তারা যোগ দেয় মাওবাদী গেরিলা বাহিনীতে।

ভারতের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য। তথ্যমতে, এই সকল অঞ্চলেই প্রায় ৮ কোটি ৪০ লাখ আদিবাসীদের বসবাস যাদের জীবিকার উৎস প্রকৃতিকে ঘিরেই। কিন্তু মাইনিং কোম্পানী গুলোর দৌরাত্মে তাদের জীবন ও জীবিকা হুমকির সম্মুখে পড়ে। খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ফলে চরম দারিদ্রের মাঝে বসবাস করা এই বিপুল জনগোষ্ঠী ভূমিহীন হয়ে পড়ে। ভিটামাটি হারিয়ে অনেকে অন্যত্র পাড়ি জমাতে শুরু করে। জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত এই দিশেহারা জনগোষ্ঠীর ভূমির অধিকার আদায়ে তাদের সংগঠিত করে তোলে মাওবাদী বিদ্রোহীরা। দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীও নিজেদের অধিকার আদায়ের স্বপ্নে হয়ে উঠে নিষিদ্ধ মাওবাদী গেরিলা।

মাওবাদী গেরিলাদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেক তথ্যমতে, ভারতে মাওবাদী গেরিলাদের সংখ্যা ১০,০০০ থেকে ২০,০০০ হাজারের মধ্যে। তবে সরকারি হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা অনেক কম। সরকারি হিসাবে ভারতের বিভিন্ন উগ্রপন্থী বিদ্রোহীদের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার ৫শ জন। বর্তমান সরকারের তৎপরতায় মাওবাদী বিদ্রোহিরা বিশেষ সুবিধা করে  উঠতে পারছেনা। ফলে তাদের কার্যক্রম অনেকটাই গুটিয়ে গিয়েছে।

এক দশক আগেও যেখানে ভারতের ২০ টি রাজ্যের ২০০ টি জেলায় মাওবাদী বিদ্রোহীদের কার্যক্রম সচল ছিলো তা বর্তমানে ১০টি রাজ্যের ১০৬টি জেলায় সংকুচিত হয়ে এসেছে। অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড ও ছত্তিশগড় রাজ্যগুলোর রেড করিডোর হিসেবে অঞ্চল গুলোতে সরকার হাজার হাজার আধা-মিলিটারি বাহিনী নিযুক্ত করেছে। এছাড়া ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মাওবাদী বিদ্রোহকে সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীন হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেন। ২০০৯ সালে শুরু হওয়া এই অভিযানের নাম ছিলো “অপারেশন গ্রিন হান্ট”। এই অভিযান শুরুর পর থেকে দু পক্ষের সংঘর্ষে অনেক সাধারন জনগন ও নিহত হয়। তথ্যমতে, ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ২০ হাজার সাধারন জনগন প্রাণ দিয়েছে।

অপারেশন গ্রিনহার্ট চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল
অপারেশন গ্রিনহার্ট চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর টহল Image source: Twitter

মাওবাদী বিদ্রোহের কারণ–  

ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য দরিদ্র, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায় করা। প্রাথমিকভাবে ১৯৬৯ সালে মাওবাদী নেতা মুপালা লক্ষন রাও এর নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে কৃষাণ বিদ্রোহের মাধ্যমে মাওবাদী আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের কারণ ছিলো গরিব কৃষকদের প্রতি ধনী হিন্দু ভূস্বামীদের অন্যায় আচরন ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলা। কিন্তু দরিদ্র কৃষকদের ক্ষোভ-দুঃখ প্রশমিত করার পরিবর্তে মাওবাদী বিদ্রোহীদের দমনে সমাজের উচ্চবিত্ত শোষক শ্রেণির সহায়তায় ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোরতা বিদ্রোহীদের সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়।

একদম শুরু থেকে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যায় যে, মাওবাদী বিদ্রোহ ও তাতে আদিবাসীদের সম্পৃক্ততার অনেক কারণ রয়েছে। যেমনঃ সীমাহীন দারিদ্র, ভূমিকরদের শোষণ, সম্পদের অসম বন্টন, জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হওয়া ইত্যাদি। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার ও অকথ্য নির্যাতন থেকে বাঁচতে আদিবাসীরা মাওবাদী বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দেয়।

নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আদিবাসীদের যৌন নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও বিভিন্ন ধরণের হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা এই সকল বিষয়ে লেখালেখির ফলে তারাও নিরাপত্তা বাহিনীর লক্ষ্যে পরিণত হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত নজরদারি বাহিনী গুলো বিভিন্ন কারণে নির্দোষ গ্রামবাসীদের হয়রানি করে থাকে। এ সকল নজরদারি বাহিনীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতন ও হত্যা সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এসকল বিষয় গুলোই মাওবাদী আন্দোলন কে তরান্বিত করতে ভূমিকা পালন করেছে।

শান্তি চুক্তির পর নেপালী মাওবাদী সমর্থকদের মিছিল
শান্তি চুক্তির পর নেপালী মাওবাদী সমর্থকদের মিছিল Image source: newsclick.in

নেপালের মাওবাদী বিদ্রোহ

ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে নেপালে মাওবাদী বিদ্রোহের সূচনা হয়। বিভিন্ন সময়ে নেপাল জুড়ে কয়েকটি মাওবাদী সংগঠনের কার্যক্রম থাকলেও ১৯৯৪ সালে পুষ্প কমল দহল ওরফে প্রচন্ড নামক একজন বিদ্রোহীনেতার নেতৃত্যে “ইউনিফাইড কমিউনিষ্ট পার্টি অব নেপাল” নামে একটি মাওবাদী সংগঠন যাত্রা শুরু করে।এই দলটি মূলত নেপালের কমিউনিষ্ট পার্টি (ইউনিটি সেন্টার) এর একটি অংশ। ইউনিটি সেন্টার নেপালের অনেক গুলো বামপন্থী সংগঠনের সমষ্টি। নেপাল থেকে রাজতন্রকে হটিয়ে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে কমিউনিষ্ট পার্টি অব নেপাল(মার্শাল), কমিউনিষ্ট পার্টি অব নেপাল(ফোর্থ কনভেনশন), প্রলেটারিয়ান ওয়ার্কার্স ওর্গানাইজ্রশন ও কমিউনিষ্ট পার্টি অব নেপাল(জনমুখী), এই চারটি দলের সমন্বয়ে ইউনিটি সেন্টার তাদের স্বশস্ত্র আন্দোলনের শপথ নেয়।

কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই দলটি রাজনৈতিক ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এর ফলে ইউনিটি সেন্টার এর মতাদর্শের সাথে দ্বিমত থাকায় পুষ্প কমল দহল ইউনিটি সেন্টার থেকে বের হয়ে এসে  “ইউনিফাইড কমিউনিষ্ট পার্টি অব নেপাল (মাওবাদী)” গঠন করে। তারপর ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ বিভিন্ন স্বশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চলতে থাকে। নেপালী পুঁজিবাদী সরকারের মতে, নেপালের মাওবাদী গেরিলাদের বেশিরভাগ সৈন্যই প্রাক্তন গোর্খা বৃটিশ ভারতীয় সৈনিক। তাদের বসবাস মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহে এবং তারাই মাওবাদী গেরিলাদের যুদ্ধের প্রশিক্ষন দেয়। ২০০৩ সালের এক সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নেপালে ঐ সময় প্রায় ৩১ হাজার ৫শ সশস্ত্র যোদ্ধা ছিলো। এছাড়াও প্রায় দেড় লাখ সক্রিয় সদস্য ও এক লাখ নেপালী সর্বাত্বক ভাবে মাওবাদীদের সহযোগিতা করছিলো। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর সশস্ত্র আন্দোলনের পর মাওবাদী বিদ্রোহী দলটি তাদের কার্যপ্রনালী ও নিয়ম নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনে। তারা ধীরে ধীরে নারী ও শিশুদের দলে টানতে থাকে যারা নেপালের মাওবাদী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

মাওবাদী আন্দোলন
Source: Virginia Quarterly Review

সশস্ত্র মাওবাদী আন্দোলন ধীরে ধীরে সমগ্র নেপালে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর দীর্ঘ দশ বছর জনযুদ্ধের পর ২০০৬ সালে নেপালের সাতটি রাজনৈতিক দল ও মাওবাদী গেরিলাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যার মাধ্যমে দীর্ঘ জনযুদ্ধের অবসান হয়।

ভারতের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিটিতে রাজতন্ত্রের বিলোপ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। অবশেষে ২০০৮ সালে নেপালে জাতীয় নির্বাচন সংগঠিত হয়। নির্বাচনে মাওবাদীরা ৫৭৫টি আসনের মধ্যে ২২৯টি আসন পায়। নির্বাচনে কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয় কিন্তু মাওবাদীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় মাওবাদী নেতা প্রচন্ড প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই প্রচন্ড ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হন। আর এর মাধ্যমে নেপাল তার পূর্বের সংকটাবস্থায় ফিরে আসে। জনযুদ্ধ না থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ভারতীয় আধিপত্য বিস্তার থেমে থাকেনি।

এরপর ২০১৩ সালের নভেম্বরে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি ভোট পায় মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০০৮ সাল অপেক্ষা ভোটের পরিমান কমে যাওয়ার কারণ ছিলো মাওবাদীদের দলীয় কোন্দল। নির্বাচনের পর মহন বৈদ্যের নেতৃত্যে মাওবাদীদের একটা দল পৃথক হয়ে যায় ও নির্বাচন বর্জন করে। অন্যদিকে প্রচন্ডের নেতৃত্যে কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) অন্যান্য দলের সাথে বিরোধী দলে চলে যায়।

নেপাল সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো রাষ্ট্রের জন্য ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করা। অবশেষে, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালের জন্য সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন জনগোষ্ঠির অধিকারের প্রশ্নে আবারো আন্দোলন শুরু হয়। বলা যায়, সংবিধান প্রণয়ন বা নির্বাচন- কোনটাই সেই অর্থে নেপালের রাজনীতি ও জনজীবনে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারেনি। বিভিন্ন জটিলতার পর ২০১৭ সালে, সংবিধানের ভিত্তিতে আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে, দ্বিতীয় বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেনে মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল (প্রচন্ড)। এই গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে হিমালয় ঘেরা ছোট্ট দেশ নেপালে আবার শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করাই যায়।

Source Featured Image
Leave A Reply
4 Comments
  1. Hwvvlt says

    buy generic rybelsus online – purchase glucovance pills buy generic desmopressin

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More