প্রাচীন যুগে বাংলা (বর্তমানের বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ) কোন অখন্ড রাজ্য বা রাষ্ট্র ছিল না। তখন এর বিভিন্ন অংশ অনেক গুলো অঞ্চলে বিভক্ত ছিল। বাংলার এই অঞ্চলগুলোকে তখন সমষ্টিগতভাবে নাম দেয়া হয় “জনপদ”। আর এই জনপদগুলো – পুন্ড্র, গৌড়, বঙ্গ, তাম্রলিপ্ত, হরিকেল, চন্দ্রদ্বীপ, বরেন্দ্র, সমতট নামে পরিচিত ছিল। পুন্ড্র ও বঙ্গ ছিল এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন।
বলা হয় যে, ‘পুন্ড্র’ নামের এক জাতি পুন্ড্র জনপদ গড়ে তুলেছিল। খ্রিঃপূঃ ৩,০০০ অব্দে লিখিত বৈদিক সাহিত্য ও মহাভারতে এ জাতির উল্লেখ আছে। মহাভারত অনুযায়ী রাজা বলির পাঁচ পুত্র – অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ , পুন্ড্র ও সূম্ম ভারতের পূর্বাঞ্চলে পাঁচটি জনপদ প্রতিষ্ঠা করে। এদের মধ্যে পুন্ড্র একটি। পুণ্ড্রনগর ছিল এ জনপদের রাজধানী।
সম্ভবত মৌর্য সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে (খ্রিঃপূঃ ২৭৩-২৩২ অব্দ) প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্য স্বাধীন সত্তা হারায় । মৌর্যরা বাংলা শাসন করার জন্য পুণ্ড্রনগরেই রাজধানী স্থাপন করে।
খ্রিঃপূঃ ১৮৫ সালের দিকে মৌর্যদের শাসনামল শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাংলায় বিভিন্ন রাজ্যগূলোর মধ্যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়। ৩০২ খ্রিঃ এ গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এর অবসান হয় এবং মৌর্যদের মতো গুপ্তদেরও এদেশে রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। ৫ম-৬ষ্ট শতকে পুন্ড্র পুণ্ড্রবর্ধনে রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানের বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী জেলা জুড়ে বিস্তৃত হয়। রাজমহল-গঙ্গা-ভাগীরথী হতে আরম্ভ করে করোতোয়া পর্যন্ত মোটামুটি সমস্ত উত্তর বঙ্গই সে সময় পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তরভূক্ত ছিল। সেন আমলে এর সীমানা দক্ষিণে পদ্মা পেরিয়ে বর্তমান ২৪ পরগণার খাড়ি ও ঢাকা-বরিশালের সমুদ্র তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
৬ম শতকে গুপ্ত সাম্রাজ্য পতনের মুখে পড়ে এবং তাদের অধিকৃত অঞ্চল সমূহ সম্ভবত ৫৬৭-৭৯ খ্রিঃ এর মধ্যে তিব্বতী রাজা সাম্বাতসনের অধিকারে চলে যায়। পরে ৭ম শতকে পুণ্ড্রনগর “পরবর্তী গুপ্ত বংশ” এর “মহাসামন্ত” শশাংকের সাম্রাজ্যের অধীনে আসে, কিন্তু এই সময় পুণ্ড্রবর্ধন তার প্রাচুর্য হারিয়ে ফেলে।
চীনা প্রাদ্রী হিউয়েন সাং ৬৩৯-৪৫ সালে পুণ্ড্রবর্ধন ভ্রমণ করেন। পুণ্ড্রবর্ধন সম্পর্কে হিউয়েন সাং যে উদ্ধৃতি দেনঃ
“এখানে ২০টি বৌদ্ধ মঠ এবং ৩০০০ এরও বেশি ব্রেথ্রেন ছিল যারা ‘সুবৃহৎ ও ক্ষুদ্র যানবাহনগুলো’ কে অনুসরণ করত; দেব-মন্দিরগুলোর সংখ্যা ১০০ ছিল এবং বিভিন্ন শ্রেণীর অনুসারীরা অস্থির থাকত, দিগম্বর নির্গ্রন্থের সংখ্যা ছিল অসংখ্য”।
পাল বংশের আমলে ১২ খ্রিঃ পুণ্ড্রনগরকে দুর্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে ছিল, তবে কোন শক্তি কেন্দ্র ছিল না। ১৩ শতকে মুসলিম শাসনের প্রাথমিক পর্যায়ে এটিকে শাসনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় তবে এর তেমন কোন গুরুত্ব ছিল না। ক্রমেই পুণ্ড্রনগর তার স্বকীয়তা হারিয়ে মহাস্থান নামে পরিচিত হয় ।
বর্তমানের বগুড়া হতে সাত মাইল দূরে মহাস্থানগড় প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতেরা অনুমান করেন।
সুত্রঃ বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা-প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সেলিম, প্রফেসর ড. সুলতানা নিগার চৌধুরী, প্রফেসর প্রদ্যুত কুমার ভৌমিক এবং উইকিপিডিয়া ।
cost terbinafine 250mg – fluconazole 100mg sale grifulvin v usa