অটোমান সাম্রাজ্যের শুরুর দিকের ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশী জানা যায় না, সেগুলো বিভিন্ন পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে ঢেকে আছে। অটোমান রাজবংশের প্রতিষ্ঠা নিয়ে চালু রয়েছে বিভিন্ন মতবাদও। তবে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যাকে মনে করা তিনি ছিলেন আর্তঘুরুল। তিনি একটি গোত্রপ্রধান হিসেবে এশিয়া মাইনরে একদল বিবদমান লোককে যুদ্ধরত অবস্থায় দেখেন এবং তারাও সে যুদ্ধে যোগদেন। আর্তঘুরুল যে দলকে সাহায্য করেছিলেন তারা জয়ী হয় এবং পরে জানতে পারেন তার পক্ষের দল ছিল সেলজুক রাজার বাহিনী এবং তারা যুদ্ধ করছিল মঙ্গোলদের বিরুদ্ধে। আর্তুঘুরুলের উপকারের জন্য সেলজুক সুলতান তাকে সুগতে বসবাস করার জন্য জমি পুরষ্কার দেন। এই পরিপেক্ষিতে আর্তুঘুরুল তাকে গ্রিকদের বিরুদ্ধে আরও একটি যুদ্ধ জিততে সহায়তা করেন। এভাবে অটোমান রাজবংশের বীজ বপন হয়। এটা ছাড়াও আরও কিছু কল্প কাহিনী প্রচলিত আছে, যার মধ্যে আর্তুঘুরুলের ছেলে উসমানের স্বপ্ন অন্যতম। একবার উসমান একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিমের বাড়িতে রাত কাটান। ঘুমানের আগে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিটি তাকে একটি বই দিয়ে যান পড়ার জন্য। বইয়ের ওপরের নাম পড়তে গিয়ে উসমান দেখতে পান সেটি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ‘কুরআন’। উসমান পড়তে শুরু করেন এবং সারারাত কুরআন পাঠ করে যান। ভোর বেলা তিনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন, তখন তিনি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে একজন দেবদূতকে দেখতে পান। তিনি উসমানকে বলেন, “যেহেতু তুমি এতটা শ্রদ্ধার সাথে কুরআন পাঠ করেছো, সেহেতু তোমার সন্তান এবং তাদের সন্তানেরা যুগ যুগান্তর ধরে সম্মানপ্রাপ্ত হবে।”
একাদশ শতাব্দির সময় এশিয়া মাইনরে আগত তুর্কিরা আরব সমাজের মুসলিমদের সাথে মিশে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করেন কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দিতে যারা এশিয়া মাইনরে যারা এসেছিল তাদের অধিকাংশ ছিল পৌত্তলিক এবং ধারণা করা হয় যে এদের মধ্যে অটোমানরাও ছিল যারা পরবর্তীতে সেলজুক সুলতান আলাউদ্দীনের অনুগ্রহ লাভ করেন এবং সুলতান তাদের নিজের বাহিনীতে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে না রেখে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন যেখানে তাদের কাজ ছিল আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা এবং বাইজেন্টাইন গ্রিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নব্য প্রাপ্ত ক্ষমতা ব্যবহার করা।
দক্ষ প্রশাসক হিসেবে উসমানের অবদান
অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের নামকরণ করা হয় উসমানের নামে। উসমান যেমন একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন তেমনি ছিলেন একজন দক্ষ সৈনিক। সেই সাথে উসমানের চারিত্রিক গুণাবলির মধ্যে জ্ঞান এবং সহিষ্ণুতাও ছিল। উসমানকে তার আশেপাশের ছোট বড় সকলেই শ্রদ্ধা করতেন কারণ তিনি শাসক হিসেবে কারো উপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দিতেন না। ফলে তার অনুসারীদের মধ্যে কোন সংঘর্ষ ছিলনা, সবার মধ্যে ছিল শুধুই বিশ্বস্ততা। তার অনুসারীরা তার সাথে কাজ করতো এবং তাকে শান্তিপূর্ণভাবে মান্য করতো। আর এভাবেই একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে সামাজিক ঐক্য গড়ে ওঠে এবং রাষ্ট্র স্থায়ীত্ব লাভা করে। এর পাশাপাশি উসমান নিজেদের সেনাবাহিনী গঠন করে নিজেরাই বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতো। উসমান খলিফা ওসমানের মতাদর্শকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলেন এবং খলিফা ওসমানের মতো সম্পদ এবং শক্তির চেয়েও ন্যায় বিচারকে উপরে স্থান দিয়েছিলেন। একই সাথে শাসণ কার্যের উপর ছিল তার ব্যক্তিগত সার্বভৌমত্ব, সে কারণে সেই সময়ের অন্যান্য রাজবংশের মতো অটোমানদের মধ্যে বংশগত কোন দ্বন্দ ছিলনা। উসমানের প্রতিবেশী গ্রাম এবং দূর্গের অধিকাংশ নেতা ছিলেন খ্রিস্টান এবং তারা এক সময় শত্রু ছিলেন কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তারা তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অটোমান ভূখন্ডের মাঝে সব খ্রিস্টানকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা হয়নি বরং বিপুল সংখ্যক খ্রিস্টান নিজেদের পছন্দে ইসলাম গ্রহণ করে কারণ এ সকল খ্রিস্টান মনে করতো বাইজেন্টাইন শাসকেরা তাদের অবহেলা করছে এবং কনস্টান্টিনোপলে প্রশাসন ক্রম অবনতির দিকে যাচ্ছে। ফলে বাস্তববুদ্ধি বশত তারা সুশৃঙ্খল এবং বিশ্বস্ত উসমানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এর ফলে মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ খুলে যায় এবং এশীয় গ্রিকরা নতুন বিশ্বাস এবং নতুন শাসনের দিকে ঝুঁকে যায়। এভাবেই অটোমান তুর্কিরা শুধু যাযাবর নয় বরং স্রষ্টা এবং নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অটোমানরা ছিল আদর্শ সমাজের নমুনা যাদের লক্ষ ছিল বাইজেন্টাইনদের মতো হওয়া অর্থ্যাৎ তাদের ক্ষমতা দখন করা যেভাবে সেলজুক তুর্কিরা আরব সাম্রাজ্যের শূণ্যস্থান পূরণ করেছিল।
ধীরস্থির ভাবে রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি
প্রতিবেশীদের রাজ্যগুলো দখল করে নিজের রাজ্যের সীমানা বাড়ানোর প্রতি উসমানের কোন তাড়াহুড়া ছিলনা। ধীরস্থির চরিত্রের উসমান পরিকল্পনা মাফিক অপেক্ষা করছিলেন সুযোগের। তার মতবাদ ছিল বেঁচে থাকা এবং শেখা আর এভাবেই বাইজেন্টাইন ভূখন্ডে কাজ করা। সেই সময় বাইজেন্টাইনরা তিনটি শহরে শাসণ করতো। দক্ষিণে ছিল বুরসা, মাঝখানে ছিল নিকাইয়া এবং উত্তরে ছিল নিকোমেডিয়া। তিনটি স্থান উসমানের রাজধানী থেকে মাত্র একদিনের পথ দূরত্বে ছিল কিন্তু উসমান প্রথমেই আক্রমণ করেননি। কিন্তু তিনি জানতেন কনস্টান্টিনোপলের কাছে এ অঞ্চলের দূর্গ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সে কারণে নিজস্ব কিছু দূর্বলতা এবং আক্রমণের জন্য যথাযথ সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে তার নিজের বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পায়। এক সময় আর্তুঘুরুলের ৪০০ যোদ্ধা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০০০ যোদ্ধার এক বিশাল বাহিনীতে কিন্তু উসমানের সামনে যোদ্ধা সংগ্রহের আরও সুযোগ ছিল।
প্রতিবেশী অঞ্চল সমূহের বেকার সৈন্যদের নিজ দলে টেনে আনেন খুব সহজে কারণ এই সৈন্যরা দীর্ঘদিন ধরে কনস্টান্টিনোপলের কাছে থেকে অবহেলা আর উৎপীড়নের স্বীকার হয়ে আসছিল। চতুর্দশ শতাব্দির প্রথম বছরে ক্ষমতা গ্রহণের ১২বছর পর করুণ হিসারে উসমান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়ান। নিকোমিডিয়ায় অটোমানরা লুট করা শুরু করে তখন গ্রিক সৈন্যরা তাদের বাধা দিতে এসে সহজেই হেরে যায়। সাধারণ একজন নেতার কাছে রাজ বাহিনী হেরে যাওয়ার কারণে বাইজেন্টাইন শাসকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয় এবং তারা উসমানের অঞ্চলকে বিবেচনা করতে শুরু করে ফলে উসমানের সুখ্যাতি বেড়ে যায়। সেই সাথে আশাপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোদ্ধারা তার দলে যোগ দেয় এবং গর্বভরে উসমানের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু। কিন্ত উসমান এতে উৎসাহী নিকোমিডিয়াতে কোন আক্রমণ না করে অপেক্ষা করতে থাকেন আরও একটি সুযোগের। সাত বছর পর যখন তিনি নিজেকে যথেষ্ঠ শক্তিশালী ভাবছিলেন তখন তিনি নিকোমিয়ার পিছনে সার্কাযা নদীতে আক্রমণ করেন এবং বিজয়ী হিসেবে প্রথমবারের মতো বসফরাসে প্রবেশ করেন। ধীরে ধীরে এর পূর্বে কৃষ্ণসাগরের বিভিন্ন সমুদ্রবন্দর ও দূর্গ দখল করে নিতে থাকেন এবং বুরসা ও নিকোমিডিয়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ করে দেন। সমুদ্রপথে এই দুই শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তিনি স্থলপথে বুরসাতে আক্রমণ করেন এবং ১৩২৬ সালে সেটি নিজের অধিকারে নেন এবং উসমান মৃত্যুবরণ করেন। অধিকৃত বুরসায় অটোমানদের প্রথম রাজধানী স্থাপন করা হয় এবং উসমানের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বুরসাতে সমাহিত করা হয়।
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ওরহানের ভূমিকা
ঐতিহাসিকভাবে উসমান গোত্রপ্রধান হিসেবে একটি জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিলেন। তার ছেলে ওরহান সেই গোত্রকে একটি রাষ্ট্রে রূপদেন এবং উসমানের পৌত্র সেটিকে সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। উসমানের দুই ছেলের মধ্যের ওরহান ছিলেন ছোট, উসমানের বড় ছেলের মধ্যে ক্ষমতার কোন মোহ ছিল না, তিনি নিজেকে এখান থেকে সরিয়ে নেন ফলে সাম্রাজ্যের ভার পড়ে ওরহানের উপর। আচরণের দিক থেকে ওরহান ছিলেন সভ্য এবং নিজের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ছিলেন একজন জাদুকর। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নীতিবান। উসমানের তুলনায় তার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সুবিস্তৃত এবং কাজকর্মে ছিলেন শক্তিশালী। ফলে যুদ্ধ কিংবা রাষ্ট্রগ্রহণ উভয় ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত দক্ষতা দেখান। প্রথমে তিনি নিকাইয়া এবং নিকোমিডিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শহর দুটির প্রতিরক্ষা দেয়াল ছিল অত্যন্ত মজবুত। তবু ওরহান নিকাইয়া শহরে প্রথমে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন, এ সময় নিকাইয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসেন সম্রাট তৃতীয় আন্দ্রোনিকাস কিন্তু ১৩২৯ সালে অটোমানদের সাথে পেলিকাননের যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি তাড়াহুড়ো করে কনস্টান্টিনোপলে ফিরে যান। ফলে নিকাইয়া ওরহানের দখলে আসে, আট বছে পর একই ভাবে নিকোমিডিয়াও তার অধিকারে চলে আসে। তিনটি শহর পতনের পর অটোমানরা সে অঞ্চলের বাসিন্দাদের অর্থ সম্পদসহ অন্যত্র চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন কারণ ওরহান কোন লুন্ঠনকারী নন বরং স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে থাকার জন্য তিনটি শহর দখল করেন। কিন্তু সেখানের অধিবাসীরা সেই সুযোগ না নিয়ে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য, চাষবাস চালিয়ে যান এবং চারপাশে গড়ে ওঠা নতুন পরিবেশের সাথে যোগদান করেন। ওরহান নতুন তিনটি শহর মিলে যে রাষ্ট্র গঠন করেন সেটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করে।
এশিয়া জুড়ে মঙ্গোলদের আগমণের মতো ইউরোপে তুর্কদের প্রবেশ হটাৎ করে হয়নি বরং ধীরে ধীরে ক্রমানুসারে এর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছিল এব এর ফলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ভাগ্যকাশভেঙে পড়া এবং পতনের ক্ষেত্রে বড় একটি ভূমিকা রেখেছিল। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনৈক্যও বড় ভূমিকা রেখেছিল। ধর্মীয় থেকে রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে খ্রিস্টান শক্তিসমূহের মধ্যে ঐক্যের অভাব, পূর্বের বিরুদ্ধে পশ্চিম, গোঁড়া খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক খ্রিস্টান, গ্রিকদের বিরুদ্ধে রোমান- সবখানেই ছিল অনৈক্য। ফলে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে দূর্যোগের মুখে পড়ে। চতুর্দশ শতাব্দির প্রথম দিকে বাইজেন্টাইন সম্রাট দ্বিতীয আন্দ্রেনিকাশ ক্যাটালান গ্র্যান্ড কোম্পানির ভাড়া করাবিশাল খ্রিস্টান সৈন্য বহরকে সহায়তা করার জন্য আহ্বান করেন। এই সৈন্য দলের প্রধান ছিল রজার দে ফ্লোর। প্রথমে তারা গ্রিকদের হয়ে অটোমান তুর্কিদের সাথে যুদ্ধ করে কিন্তু পরবর্তীতে তারা গ্রিকদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ জড়িয়ে পড়ে। গালিপল্লীতে তারা হেডকোয়ার্টার স্থাপন করে রাষ্ট্র তৈরির করার চক্রান্ত করছিলেন কিন্তু রজার দে ফ্লোর নিজ কক্ষে খুন হোন। ফলে ক্যাটালান সৈন্যরা গ্রিকদের উপর আরও চড়াও হয় ফলে গ্রিকরা অটোমান তুর্কিদের সাহায্য চান। এভাবে ইউরোপে অটোমানদের প্রবেশ হয়। পরে তুর্কিরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে তাদের নেতা হালিল স্বাধীন ভাবে কাজ করার অনুমতি জোগাড় করেন। কিন্তু গ্রিকেরা সেই চুক্তি ভঙ্গ করে। কিন্তু হালিল আরো বেশী সৈন্য নিয়ে সম্রাট নবম মাইকেলের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এরপর চতুর্দশ শতাব্দি জুড়ে অটোমানরা বাইজেন্টাইন দ্বীপ এবং উপকূল অঞ্চলে হামলা এবং লুট চালাতে থাকে। এই ঘটনার সাত বছর পরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের গ্র্যান্ড চ্যান্সেলর জন কাটাকুজিন বালক সম্রাট জন পালাইয়োলগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে, তখন তার প্রয়োজন ছিল তুর্কিদের সহায়তার। তিনি ওরহানের সাহায্য কামনা করেন বিনিময়ে তিনি তার কন্যা থিয়োডরাকে ওরহানের সাথে বিয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ওরহান তার প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং ১৩৪৫ সালে ওরহান ছয় হাজার সৈন্য নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেন। তিনি ইউরোপে আসেন কাটাকুজিনকে সহায়তা করতে, থ্রেস দখল করতে, আড্রিয়ানোপলকে ভয় দেখাতে এবং কনস্টান্টিনোপল অবরোধ করতে। পরের বছর ওরহানের সাথে বাইজেন্টাইন রাজকুমারী থিয়োডরার বিয়ে হয়। পরবর্তীতে অটোমানদের সহায়তায় এবং সামরিক মেত্রীর মাধ্যমে ১৩৪৭ সালে কাটাকুজিন কনস্টান্টিনোপলে প্রবেশ করেন। এভাবে অটোমানরা ইউরোপে পা রাখেন শত্রু হিসেবে নয় বরং বন্ধু হিসেবে।
১৩৫৩ সালে ওরহানের ছেলে সুলেমান পাশা অটোমান বাহিনী নিয়ে হেলেনপন্ট অতিক্রম করেন দূর্গ দখল করার জন্য যেটি কাটাকুজিন ওরহানকে দিতে চেয়েছিলেন। এই দূর্গের অবস্থান ছিল গালিপল্লী এবং আজিয়ান সাগরের মাঝখানে। সুলেমান এ দূর্গ দখল করে এশিয়া থেকে আগত প্রথম অটোমান বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে দ্রুততার সাথে সফল ভাবে আরো কিছু বসতি স্থাপন করেন। এর ফলে খ্রিস্টান নেতারা নিজেদের ভূমিতে মুসলিমদের অধিকারে চলে যায়। এভাবেই অটোমানদের দখল কার্য শুরু হয় এবং বাইজেন্টাইন ভূমিতে অটোমান নিয়ম-নীতি আরোপ হতে থাকে। অটোমান মুসলিমরা সেখানকার স্থানীয় কৃষকদের উপর থেকে পুরাতন জমিদারি প্রথা বিলোপ করেন এবং তাদের কাছে থেকে সামান্য কর নেওয়ার নিয়ম চালু করেন। এভাবে বাইজেন্টাইন আমলের সামাজিক ও রাজনৈতিক অনৈক্য দূর করে অটোমানরা সবকিছুর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন এবং স্থানীয় কৃষকেরা প্রথম কোন মুসলিম শাসককে কর দেওয়া শুরু করে। প্রথম দিকে অটোমানরা গালিপল্লীর বেশীর ভাগ এবং মর্মর সাগরের ইউরোপিয়ান অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। এ সময় কাটাকুজিন ওরহানের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনে দশ হাজার মুদ্রার বিনিময়ে জিম্পি দূর্গ ফেরত চান। ওরহান সেটি মেন কিন্তু চুক্তির আরেকটি শর্ত অনুযায়ী গালিপল্লী ফেরত দিতে তিনি অস্বীকার করেন। ওরহান বলেন,” গালিপল্লীর দেয়াল তার সামনে অস্ত্রবলে ভেঙে পড়েনি বরং ঈশ্বরের ইচ্ছায় হয়েছে।” এ বিষয়ে তিনি আর আলোচনা করতে রাজি হননি ফলে কাটাকুজিন অপমানিত বোধ করেন কিন্তু ওরহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তিনি কোন সাহায্য পাননি। বরং তিনি কনস্টান্টিনোপলকে অটোমানদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে তাকে তিরষ্কার করেন এবং জন পালাইয়োগের রাজত্ব কামনা করেন। পরবর্তীতে কাটাকুজিন ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে একটি আশ্রমে চলে যান।
১৩৫৭ সালে হালিল এবং থিয়োডরার পুত্রসন্তানকে জলদস্যুরা ধরে নিয়ে যায়। তখন সুলতান ওরহান চান সম্রাট জন পালাইয়োগ নিজে গিয়ে উদ্ধার করে আনুক। এই ফাঁকে অটোমান বাহিনী থ্রেসের দিকে অগ্রসর হলে সম্রাজ জন ফোকাইয়াতে অবরোধ করেন। পরবর্তীতে সম্রাট জানান তিনি সৈন্যদের ওপর কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারেননি এবং ওরহানের কাছে ক্ষমা চান কিন্তু ওরহান তখন সম্রাটের প্রভু হিসেবে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। ১৩৫৯ সালে সম্রাট নিজে ওরহানের কাছে এসে শান্ত করার চেষ্টা করেন, তখন ওরহান সম্রাটের নিকট একটি চুক্তি পেশ করেন। সেখানে সম্রাট সুলতানের ছেলের মুক্তিপণের অর্ধেক টাকা দিতে রাজি হন এবং থ্রেসে অটোমানদের অবস্থানকে মেনে নেন। জন কাটাকুজিন অটোমানদের ইউরোপে সৈন্য হিসেবে পরিচিতি দিয়েছিলেন কিন্তু জন পালাইয়োলগ তাদের অভিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেন। পরবর্তীতে ১৩৬২ সালে ওরহান মারা যান।
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন – Click here.
purchase lamisil pills – order generic griseofulvin griseofulvin generic