অপারেশন জ্যাকপট: পাকিস্তানী বাহিনীর ভীত কাঁপিয়ে দেয়া আত্মঘাতী মিশন (দ্বিতীয় পর্ব)

0

প্রথম পর্বের পর-

অপারেশন জ্যাকপট:

বাঙালী নাবিকদের পরিকল্পনা ছিলো সাবমেরিন ম্যানগ্রো সম্পূর্ণ বিস্ফোরকের সাহায্যে ভস্মীভূত করে দেয়ার পরে যদিও তা বাতিল করা হয়। যার কারণ ছিলো দুইটি। প্রথমত, ফ্রান্সের মাটিতে পাকিস্তানী সাবমেরিন ধ্বংস করা হলে সারাবিশ্বে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে এবং দ্বিতীয়ত এতো কম সময়ে সাবমেরিন ধ্বংসের জন্য বিপুল সংখ্যক বিস্ফোরক জোগাড় করাও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।

৮ এপ্রিল ১৯৭১। বিমানযোগে বোম্বে বিমান বন্দরে অবতরণ করেন বিদ্রোহী বাঙালী অফিসাররা।

বিদেশের মাটি হতে গঠিত হওয়া এই দলটিই ছিলো পাকিস্তান সামরিক বাহিনী হতে বিচ্যুত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রথম এবং বড় আকারের একটি সামরিক দল। এই ৮ জন বাঙালীর দ্বারা গঠিত ৪০০ জনের নৌ-কমান্ডিং ফোর্স মুক্তিযুদ্ধ তথা সারাবিশ্বের জন্য একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

অপারেশন জ্যাকপট
অপারেশন জ্যাকপট
Source: Daily Sun

বোম্বে হতে নয়াদিল্লীতে পৌঁছে হোটেল রণজিতে দেখা হয় ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার মিঃ শর্মার সঙ্গে। ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের ধরিয়ে দিতে পাকিস্তান সরকার বিরাট অঙ্কের পুরষ্কার ঘোষণা করে এবং তাঁদের অবর্তমানে সামরিক আইনে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়। অপরদিকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সদ্য ফেরত বাঙালীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলো। অনেক রকমের প্রশ্ন করা হলো তবে বাঙালী অফিসারদের উত্তর বলিষ্ঠ একটাই, ‘তাঁরা মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে পালিয়ে এসেছে।‘ এমন সোজাসাপ্টা উত্তরে নিশ্চিত হলো এদের দ্বারা ভারতের মাটিতে গুপ্তচরবৃত্তি বা কোন অসৎ উদ্দেশ্য এই বাংলার সন্তানদের মধ্যে থাকতে পারে না। তুষ্টচিত্তে তাঁদের থাকার অনুমতি দেয়া হয়।

এদিকে মিঃ শর্মা নৌ কমান্ডো বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য গাজী মোঃ রহমত উল্লাহকে নির্দেশ দেন। তাঁদের উৎসাহ আরো দ্বিগুণ হয় যখন প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী এই পরিকল্পনায় দিক নির্দেশনা দিতে শুরু করেন আর সাথে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল এস এম নন্দা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা রায় চৌধুরীর সংযুক্ততা আরো গতিশীল করে তুলে তাঁদের।

ব্যাপারটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং কর্নেল ওসমানী জানতেন।

সময় ১৩ মে, ১৯৭১ সাল। শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নৌ-কমান্ডের প্রশিক্ষণ।

চট্টগ্রামে অপারেশন জ্যাকপট পরিকল্পনায়
চট্টগ্রামে অপারেশন জ্যাকপট পরিকল্পনা
Source: dailyswadhinbangla.com

নৌ-কমান্ডের প্রশিক্ষণ বেশ কষ্টসাধ্য এবং ঝুঁকিতে ভরপুর। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দীর্ঘসময় ধরে সাঁতার কাঁটা (বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনে প্রায় ২০-২৫ মাইল) এবং দম ধরে রেখে পানির নিচে দীর্ঘসময় ধরে ডুব দিয়ে থাকা। এরমধ্যে আরো কষ্টসাধ্য হলো গামছার সাথে ইট প্যাঁচিয়ে শরীরের সাথে বেঁধে সাঁতার কাঁটা। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, শত্রুদের ঘাঁটিতে যাতে সাঁতার কেটে মাইন স্থাপনের ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতা প্রদান করা। ভারতীয় নৌ কমান্ডার এম এন সামন্তের অধীনে এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জি মার্টিসের সার্বিক পরিচালনায় এভাবেই প্রস্তুতি চলছিলো তাঁদের মুর্শিদাবাদের পলাশীতে ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী একটি জনশূন্য দুর্গম এলাকায় একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। যদিও বাঙালী ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রেজা বেশ কয়েকদিন ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন। ক্যাম্পের আশেপাশে ছিলো ঘন জঙ্গল। স্বাভাবিকভাবে সাপের উপদ্রব ছিল বেশি তাই ক্যাম্পের আশেপাশে গর্ত খুঁড়ে ফেলে রাখা হতো কাঁটাযুক্ত গাছের ডালপালা। প্রশিক্ষণ ছিলো মূলত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর। যেমন: সাঁতার কাঁটার পাশাপাশি কিভাবে পানির নিচে বিস্ফোরণ করা যায় সে বিষয়ে। বলাবাহুল্য এই ব্যাপারটি ছিলো সবচেয়ে বেশি বিপদজনক কারণ একটু এদিক ওদিক হলেই শেষ। কতোটা বিপদজনক তা বুঝতে বলা যায়, বিস্ফোরণ কালীন ৫০০ গজের মধ্যে অবস্থানরত যেকোনো প্রাণীর ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

তাছাড়া অস্ত্র চালানো, গ্রেনেড ও বিস্ফোরক চার্জ করা সম্পর্কেও প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। বাহিনীতে সদস্যের সংখ্যা ৮ হতে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় চারশো এর বেশি। এরমধ্যে বেশিরভাগ ছিলো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র যা এসেছিলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, মাদারীপুর, বরিশাল ও চাঁদপুর অঞ্চল হতে।

বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হতো লিমপেট মাইন, এদের উৎপাদন যুগোস্লাভিয়ায়। নৌ কমান্ডোদের জন্য আনা হলো পাঁচ কেজি ওজনের প্রায় ২০০০ লিমপেট মাইন যার বাজারমূল্য ছিলো প্রতিটি ১ হাজার ২০০ ইউ এস ডলার।

অপারেশন জ্যাকপট
Source: Bdnews24.com

নৌ-কমান্ডোরা কোনো ধরণের অস্ত্র বহন করতো না শুধুমাত্র একটি ছোরা বা চাকু ব্যতীত। নিরাপত্তার চেয়ে বরং এই ছোরা ব্যবহৃত হতো পানির নিচে থাকা জাহাজের অংশ পরিষ্কারে যেখানে প্রচুর শ্যাওলা জমে থাকতো এবং এরপর মাইন স্থাপন করে সেফটি পিন খুলে দ্রুত সটকে পড়া লাগতো কমান্ডোদের। তবে সেফটি পিন তাঁদের সঙ্গে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়া হতো যা হতে প্রমাণিত হবে তাঁরা মাইন প্রতিস্থাপনে সফল হয়েছেন। জীবন ঝুঁকি প্রবল এবং সামান্য ভুলে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও কমান্ডোরা এই অভিযানে বিন্দুমাত্র পিছপা হতো না।

সময় ১৪ আগস্ট, ১৯৭১ সাল। দিনটি ছিলো পাকিস্তানের জাতীয় দিবস। দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার পরে ১৪ আগস্টকে আক্রমণের দিন হিসেবে নির্ধারণ করার পিছেও ছিলো একটা অন্যতম উদ্দেশ্য। এদিনে পাকিস্তানীরা ব্যস্ত থাকবে তাদের জাতীয় দিবসের উদযাপনে যার কারণে তাদের নৌ ঘাঁটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয়ে উঠবে অনেকটা শিথিল।

তবে এই দিনে গেরিলা হামলার আশঙ্কায় নেয়া হলো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার কারণে সম্ভাব্য দিন বদলিয়ে ঠিক করা হলো ঠিক পরেরদিন হামলা চালানো হবে।

১৬০ জন নৌ কমান্ডোকে আগে হতেই ভাগ করে ফেলা হয়েছিলো ছয়টি দলে যাদের মধ্যে  ৬০ জন সদস্যের প্রথম দল চট্টগ্রাম বন্দর, দ্বিতীয় দল ২০ জন সদস্য নিয়ে চাঁদপুর বন্দর, তৃতীয় দল ১২ জন নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর, চতুর্থ দল ৪৮ জন নিয়ে খুলনার মংলা বন্দর, পঞ্চম দল ৮ জন নিয়ে দাউদকান্দি ফেরিঘাট এবং সর্বশেষ দল ১২ জন নিয়ে হিরণ পয়েন্ট আক্রমণের দায়িত্বে ন্যস্ত হয়। প্রত্যেক দলের নেতাদের অপারেশন জ্যাকপটের খুঁটিনাটি বিষয়াদি এবং টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে বিমানযোগে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লীতে এবং ১লা আগস্ট আবার পলাশীতে ফিরিয়ে আনা হয়। অপারেশনের সময় তাঁদের দেয়া হয় একটি করে ট্রানজিস্টার যার মাধ্যমে দুইটি গানের মাধ্যমে দলনেতারা জানতে পারবে কিভাবে অভিযান চালাতে হবে বা কবে অভিযান বন্ধ রাখতে হবে। নিয়ম হলো গান বাজানো হলে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং বাজানো না হলে অভিযান হতে বিরত থাকা লাগবে।

অপারেশন জ্যাকপট
Source: The Asian Age

দুইটি গানের মধ্যে ছিলো একটি পঙ্কজ মল্লিকের, “ আমি তোমায় যত শুনিয়েলেম গান, তার বদলে আমি চাইনি কোন দান।“ এবং দ্বিতীয়টি ছিলো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের “আমার পুতুল আজকে যাবে শ্বশুরবাড়ি, ওরে তোরা সব উলুধ্বনি কর।”

প্রথম গানটি বাজানো হলে বুঝা লাগবে ২৪ হতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপারেশন শেষ করার সব প্রস্তুতি নিতে হবে এবং দ্বিতীয়টি হলো ঠিক ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আঘাত হানতে হবে আর কোন কারণে গান বাজানো না হলে বিরত থাকা লাগবে এবং অপেক্ষা করতে হবে গান না বাজানো পর্যন্ত।

সময় তখন ১৫ আগস্ট, ১৯৭১ সাল।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নদী ও সমুদ্রবন্দরে চালানোর জন্য প্রস্তুত নৌ-কমান্ডোরা।

এই অপারেশনের নামকরণ করা হয়  “অপারেশন জ্যাকপট” যা ছিলো বিশ্বের বুকে অন্যতম দুঃসাহসিক অভিযান।

ব্রিগেডিয়ার সাবেগ সিংয়ের উপর ন্যস্ত ছিলো অপারেশন জ্যাকপটের পরিকল্পনার ও বাস্তবায়নের সবধরনের দায়িত্ব। প্রত্যেক কমান্ডো দল নিজ নিজ লক্ষ্যের জন্যে বেরিয়ে পড়তে লাগলো দ্রুত। স্বাধীনতা যুদ্ধাঞ্চলকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করা হয় যার মধ্যে ১০ নম্বর সেক্টর ছিলো নৌ-কমান্ডোর অধীনে। এই সেক্টরের কোন নির্দিষ্ট কমান্ডার ছিলো না বিধায় অপারেশনের সময় যে অঞ্চলে অভিযান চালানো হবে ওই সেক্টরের কমান্ডারের অধীনে অভিযান পরিচালিত হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরঃ

সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম বন্দরের অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সাবমেরিনার আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান শুরু হওয়ায় কিছু কিছু জায়গায় অভিযান সপন্ন হয় ১৬ আগস্টে। কমান্ডোরা জাহাজে মাইন স্থাপন করে ফেরত আসেন। কিছু মাইন নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বিস্ফোরিত হয়। বিকট শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে চট্টগ্রাম বন্দর এবং ৯৯১০ টন সরঞ্জামসহ ‘এম ভি হরমুজ’ এবং ১০,৩১৮ টন সরঞ্জামসহ ‘এম ভি আল-আববাস’ নামের দুইটি পাকিস্তানি জাহাজসহ বেশ কয়েকটি বার্জ ও জাহাজ ধ্বংস হয়। অভিযান শেষে আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী সহযোদ্ধাদের নিয়ে ফিরে আসেন ভারতে।

মংলা বন্দরঃ

১৩ ই আগস্ট, ১৯৭১ সাল। দল প্রধান আমিনুর রহমান খসরুর নেতৃত্বে ৬০ জন নৌ-কমান্ডো এবং ২০০ জন বাংলাদেশী সি এন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল নিয়ে গভীর জঙ্গল পাড়ি দিয়ে দলটি মংলা বন্দরে যখন পৌঁছায় তখন সময় সন্ধ্যে ৬টা প্রায়।

১৫ ই আগস্ট একশনে যাওয়ার নির্দেশনা পেয়ে ঠিক রাত বারোটায় মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা। এখানে কিছুটা গন্ডগোল বাঁধে পথনির্দেশক আফজালের ভুলের কারণে। যারকারনে অভিযানে পৌঁছাতে রাত দুটোর বদলে চারটা বেজে যায়। ওইদিকে অন্যান্য স্থানে অপারেশন শেষ। মংলার এই অপারেশনটি ছিলো সরাসরি সুইসাইড বা নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সামিল। তবুও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দল প্রধান আমিনুর রহমান খসরুর নেতৃত্বে ২০০ জন সি আন্ড সি বিশেষ কমান্ডো দল, হেভি মেশিন গান, মেশিনগান, এনরগা সহকারে পুরো দলকে ৩ জনের ছোট ছোট দল এবং ৬৬টি উপদলে ভাগ করে দেন আর নৌ-কমান্ডোদের ছাউনি দিতে (পিছ হতে কভার করা) মংলা বাঁধের পিছনে অবস্থান নেন। পিছে কভার হিসেবে থাকার জন্যে হাটুপানিতে মেশিন গান হাতে নেমে পড়েন সাব কমান্ডার রাজা ও খিজির। মংলা অপারেশন কমান্ডার আমিনুর রহমান খসরু এবং তাঁর সঙ্গে আরোও ২ জন নৌ- কমান্ডো এই অপারেশনে মংলা বন্দর এর অতিরিক্ত বাধা পার হয়ে অসীম সাহসিকতার সাথে সোমালীয় জাহাজ এস,এস,লাইটং-এ মাইন লাগান যার মধ্যে ছিলো ৭,০০০ হাজার টনের অস্ত্রসম্ভার এবং সেই সাথে এস.এস. লাইটং-কে ধ্বংস করেন। এই অপারেশনে নিখোঁজ হন যারা হয়তো স্রোতের টানে ভেসে গেছেন অথবা মারা গিয়েছেন অপারেশন চলাকালীন সময়ে। সর্বোপরী এই অপারেশনে ৩০ হাজার টন গোলা-বারুদ ও যুদ্ধের সরঞ্জাম ডুবে যায় সম্পূর্ণভাবে।

 

 পাকিস্তান নৌবাহিনী
পাকিস্তান নৌবাহিনী
Source: Army.mil

 

চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জ-দাউদকান্দিঃ

বদিউল আলমের নেতৃত্বে থাকা চাঁদপুরের অভিযানে ধ্বংস হয় কয়েকটি জাহাজ। অন্যান্য কমান্ডার আবদুর রহমান ও শাহাজাহান সিদ্দিকের নেতৃত্বে থাকা যথাক্রমে নারায়নগঞ্জ ও দাউদকান্দিতেও চালানো হয় সফল অভিযান।

পরিশেষে, অপারেশন জ্যাকপটের অংশ হিসেবে আগস্ট হতে ডিসেম্বর অবধি অভিযানে ৮ জন নিহত, ৩৪ জন আহত এবং ১৫ জন ধরা পড়েন। প্রত্যেকটা কমান্ডো গ্রুপের দুঃসাহসিক সফল অভিযানের খবর বিবিস, ভয়েজ অফ আমেরিকা নামক বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় গণমাধ্যমের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের চারিদিকে। এতোদিন পাকিস্তানীদের চালানো মিথ্যে আশ্বাসে বাহির হতে সাহায্যকারী জাহাজ পূর্ব পাকিস্তানে আসা বন্ধ হয়ে যায় হামলার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায়। কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা।

এই অভিযানটি সম্পূর্ণ ছিলো আত্মঘাতী কারণ বুকে বিস্ফোরক বেঁধে ঠিকভাবে লাগাতে না পারলে বা সতর্কীকরন এলার্ম বেজে উঠলে বেঁচে থাকার কোন উপায়ন্তর নাই। তবুও সবকিছু সম্ভব হয়েছিলো বেশ সংখ্যক বাংলার মুক্তিকামী দামাল ছেলের অবদানে যারা শেষ অবধি প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বসিয়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদারদের মেরুদন্ড। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের অন্যতম উজ্জ্বল অধ্যায় হলো এই ‘অপারেশন জ্যাকপট’। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এর প্রতিটা মুহূর্তের বর্ণনা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ও সাহসিকতার বিরল গাঁথা। এমন নজির সারাবিশ্বে বিরল।

 

Source Featured Image
Leave A Reply
sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More