প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর উদ্ভূত জটিল শ্রম সমস্যাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা। ভার্সাই চুক্তির অংশ হিসেবে ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আইএলও। ইউরোপে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ছিল অনেকদিনের দাবি। ১৯১৯ সালের ১১ই এপ্রিল স্বাধীন ও জাতিপুঞ্জের সহযোগী সংগঠন হিসেবে এর পথ চলা শুরু হয়।
কেন আইএলও প্রতিষ্ঠা করা হল?
আইএলও প্রতিষ্ঠা করার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হল।
১. শ্রমিকদের অধিকার আদায়:
শিল্প বিপ্লবের ফলে ইউরোপের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক আমূল পরিবর্তন আসে। ফলে এই ধারায় শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অনেক কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের বিভিন্নভাবে শোষণ করত ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতো। বিশেষত বাসস্থান সংকট ছিল মহামারী রূপে। তাই শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণে আইএলও ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
২. বেতন বৈষম্য বিদূরিত করণ:
শ্রমিকদের মধ্যে বেতন বৈষম্য নতুন কিছু নয়। বিশেষত নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীরা উৎপাদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেও সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হত। তাই আইএলও বেতন কাঠামো বেধে দিয়ে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও এক কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
৩. শ্রম সময়:
শিল্প বিপ্লবের ফলে কারখানায় বড় রকমের উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠে। ফলে শ্রমিকদের দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করিয়ে গেলেও সেই অনুসারে মজুরী দেয়া হত না। শিকাগোতে ঊন-বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এসে আট ঘণ্টা কর্ম-ঘণ্টার দাবিতে বিক্ষোভ করে। এই আন্দোলনের সফলতার ধারার অব্যাহতি থেকেই আইএলও প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
৪.কর্ম সংস্থানের পরিবেশ:
শিল্প বিপ্লবের ফলে কারখানার পরিবেশ দিন দিন মলিন হতে থাকে। এছাড়াও ইঞ্জিনের ব্যবহারের ফলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হয়। সুতরাং আইএলও এর আশু কারণ এখানেও নিহিত ছিল।
৫.বেকারত্ব সমস্যা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বেকারত্ব সমস্যার সবচেয়ে বেশি প্রকট আকার দেখা যায়। বিশেষত যুদ্ধ ফেরত সৈন্যরা, যাদের সরকার আগে ব্যবহার করে যুদ্ধ পরিচালনা করেছে কিন্তু যুদ্ধ শেষে নিজ গ্রামে কিংবা বাসস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছে তাদের নিয়ে এক জটিল অবস্থার জন্ম হয়। সুতরাং এই বেকারত্বের জোয়ার মোকাবেলার জন্য আইএলও এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ছিল অবশ্যম্ভাবী।
আইএলও এর প্রতিষ্ঠা:
১৯১৯ সালের ১১ এপ্রিল আইএলও প্রতিষ্ঠা পায় যা কিনা ভার্সাই চুক্তির একটি অংশ ছিল। যাহোক সংস্থাটি ১৯৪৬ সালে জাতিসংঘের অন্যতম সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এর প্রধান অফিস অবস্থিত। ৫৬ জন্য সদস্য নিয়ে এর গভার্নিং বডি তৈরি হয়। ২৮ জন বিভিন্ন সরকারি রিপ্রেজেন্টিভ ১৪ জন শ্রমিক আর ১৪ জন মালিক শ্রেণি থেকে নিযুক্ত হয়। বিভিন্ন দেশের সমন্বয়েও বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এটির প্রেসিডেন্ট গাই রাইডার। বর্তমানে সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের উন্নয়ন ও অধিকার রক্ষায় বেশ সফলতার সাথে কাজ করে আসছে। সংস্থাটি বর্তমানে ১৮৭ সদস্য বিশিষ্ট।
আইএলও এর উদ্দেশ্যঃ
আইএলও কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রধান উদ্দেশ্য সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল।
প্রথমত, বিশ্বে তখনই শান্তি নিশ্চিত ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে যখন এটি সামাজিক সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে।
দ্বিতীয়ত, বেতন বৈষম্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইএলও মনে করে যে মালিক শ্রেণি অনেকসময় শ্রমিককে দিয়ে অধিক কাজ করালেও তার যথার্থ পারিশ্রমিক দেয়না যা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।
তৃতীয়ত, আইএলও কাজের পরিবেশকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখে কেননা এরসাথে শ্রমিকের স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত। সুতরাং ভালো কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে আইএলও সর্বদা তৎপর। গর্ভবতী কিংবা অসুস্থতাজনিত অবস্থায় ছুটি না দেয়া ইত্যাদিও দেখে থাকে।
চতুর্থত, শ্রমিকের কর্ম ঘণ্টা নির্ধারণ করার পাশাপাশি তার যথার্থ বিনোদনের জন্য ব্যবস্থা করা। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটিছাটা নিশ্চিত করতেও আইএলও যথেষ্ট মনযোগী।
পঞ্চমত, বেকারত্ব আজকের দিনে একটি মারাত্মক সমস্যা। আবার তা যদি হয় হুট করে চাকুরী ছাটাই কিংবা এমন বিষয় যা সাধারণ শ্রমিককে চরম দুর্দশায় ফেলবে। এমন সব বিষয় এড়াতে আইএলও তৎপর।
ষষ্ঠত, আইএলও শিশু শ্রমকে অনুৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এছাড়াও কর্মক্ষেত্রে নারীরা অরক্ষিত তা নিয়েও আইএলও সচেষ্ট।
আইএলও এর প্রাথমিক দিকের কার্যাবলী:
১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠা পেয়েই প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। প্রথম আন্তর্জাতিক শ্রমিক কনফারেন্স বসে ওয়াশিংটন এ। এখান থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া হয় যার মাধ্যমে নারী ও যুবকদের সুবিধার্থে কিছু নীতি হাতে নেয়া হয়।
১৯২০ সালে জেনেভায় সংস্থাটি পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করে দেয়। আইএলও এই সময়ে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়ে শ্রমিকদের উন্নয়ন সাধনে ভূমিকা রাখে।
গ্রেট ডিপ্রেশন ও যুদ্ধকালীন সময়ে আইএলও:
যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেট ডিপ্রেশনের ফলে সমগ্র বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। তখন বিশ্বনেতারা অনুভব করেন যে আন্তর্জাতিক সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। ১৯৩৪ সালে আইএলও তে যোগদান করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে এর হেড-কোয়াটার কিছুদিনের জন্য কানাডায় নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে এই সংস্থাটি জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থায় পরিণত হয়। জেনে রাখা ভালো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী সংস্থাগুলোর মধ্যে আইএলও অন্যতম একটি।
বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আইএলও:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বে আইএলও আরও জোরেশোরে কাজ শুরু করে। বিশেষত নব্য স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর অংশগ্রহণ ছিল অন্যতম একটি বিষয়। ১৯৬০ সালে জেনেভায় গড়ে উঠে ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ। ১৯৬৫ সালে সংস্থাটি তুরিনে শ্রমিকদের জন্য ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করে। ১৯৬৯ সালে সংস্থাটি পঞ্চাশ বর্ষপূর্তিতে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করে। স্নায়ু-যুদ্ধকালীন সময়ে সংস্থাটি অনেকটা যুক্তরাষ্ট্র ঘেঁষা হয়ে উঠে। পরবর্তীতে সংস্থাটি জাতিসংঘের এমডিজি ও এসডিজি লক্ষ্য পূরণের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্রঃ
১. http://www.ilo.org/global/about-the-ilo/history/lang–en/index.htm
২. http://www.ilo.org/washington/ilo-and-the-united-states/brief-history-and-timeline/lang–en/index.htm
৩. https://en.m.wikipedia.org/wiki/International_Labour_Organization
৪. https://www.thenational.ae/uae/a-history-of-the-international-labour-organization-1.492268
side effects of stopping zetia
buy generic lamisil 250mg – purchase griseofulvin online buy grifulvin v cheap
is zyprexa a sedative
zofran tablets price
wellbutrin sr message board