একজন বোলারের অন্যতম বড় হাতিয়ার হচ্ছে ইয়র্কার। ইয়র্কার বল খেলতে প্রায় সব ব্যাটসম্যানকেই বেশ বেগ পেতে হয়। কিন্তু নব্বই দশকে একজন ব্যাটসম্যান ইয়র্কার বলকে নিয়ে রীতিমত মত ছেলে খেলা করত। ইয়র্কার আসা মাত্রই লেগ সাইড দিয়ে বলকে সীমানার বাহিরে পাঠিয়ে দিত। শুধু ইয়র্কার নয়, কোন প্রকারের বলকেই নূন্যতম সমীহ করত না। তার একটাই নেশা বলকে সীমানা ছাড়া করা। বিশ্বের মস্তবড় নামকরা বোলার গন তার নাম শুনলে কেঁপে উঠত। এতক্ষণ যার বর্ণনা করা হল তিনি হলেন, সনাথ জয়াসুরিয়া। ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে এই নামটি অত্যন্ত পরিচিত ও প্রিয় একটি নাম। তার বিধ্বংসী ব্যাটিং সকল বয়সের দর্শকদের আনন্দ দিত। ক্রিকেটের প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন নতুন এক ধারা। তার দানবীয় ব্যাটিংয়ের জন্য তাকে “মাতারার হ্যারিকেন” উপাধি দেওয়া হয়।
একটা সময় ছিল যখন শ্রীলংকার জনগণ হিসেব করত জয়াসুরিয়া কত রান করেছে আর মুরালীধরন কত উইকেট নিয়েছে। জয়াসুরিয়া আউট হয়ে গেলে, টিভি আর রেডিও গুলোও অফ হয়ে যেত। শ্রীলংকা যখন ভারত সফর করেছিল, তখন এক ভারতীয় সমর্থকের প্লে-কার্ডে লেখা ছিল, “We Want A Mother to Give Birth to a Jayasuriya in India”।
শ্রীলংকার দক্ষিণাঞ্চলের মাতারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন ৩০ জুন, ১৯৬৯ সালে। বাল্যকাল থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার অদম্য নেশা ছিল। তার ভাই চন্দানা জয়াসুরিয়া তাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করত। কলেজে পড়ার সময় থেকেই তার ক্রিকেট প্রতিভা প্রকাশ পেতে থাকে। ১৯৮৮ সালে আন্তঃকলেজ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে জয়াসুরিয়া তার কলেজকে নেতৃত্ব দেন। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে চমৎকার খেলে জয়াসুরিয়া। ফলাফল স্বরূপ নির্বাচিত হয়, টুর্নামেন্টের সেরা ব্যাটসম্যান ও অলরাউন্ডার হিসেবে।
তার অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে তিনি শ্রীলংকা অ-১৯ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হয়। একই বছর তার নেতৃত্বে শ্রীলংকা অ-১৯ বিশ্বকাপে অংশগ্রহন করে। বিশ্বকাপে তার পারফরমেন্স যথেষ্ট ভালো ছিল। পরের বছর শ্রীলংকা বি টিমের সদস্য হিসেবে পাকিস্তান সফর করে। এই সফরে টানা দুটি ডাবল শতক করে জয়াসুরিয়া। তার এই অনবদ্য ফর্ম নির্বাচকদের মনযোগ আর্কষণ করতে সক্ষম হয়। জয়াসুরিয়া তার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিং করাতেও সমানভাবে পারদর্শী ছিলেন। তার মারমুখী ভঙ্গির কারণে তিনি ব্যাটিং এ সবসময় ভালো রান পেত না, কিন্তু তার বোলিং বরাবরের মতই ভালো ছিল।
সাল ১৯৮৯, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বক্সিং ডে ওয়ানডে ম্যাচে অভিষেক ঘটে দানবীয় ব্যাটিংয়ের পিকাসো সনাথ জয়াসুরিয়ার। শুরুর দিকে জয়াসুরিয়া মূলত একজন বোলার ও হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে স্থান পেত। তার কাজ ছিল শেষের দিকে ব্যাটিং করতে নেমে দলের রানকে সমৃদ্ধ করা। বোলার হিসেবে জয়াসুরিয়ার অবদান বেশ ভালোই ছিল। কিন্তু তার হার্ট হিটিং ব্যাটিং দর্শকদের মনোরঞ্জন করত। অভিষেকের দিন থেকে ১৯৯৫ সার পর্যন্ত জয়াসুরিয়ার ব্যাটে ভালো রান আসত না। মারমুখী স্টাইলের কারণে সে খুব দ্রুতই আউট হয়ে যেত। এই বছর গুলোতে জয়াসুরিয়ার ব্যাটিং এভারেজ কখনোই ৩০ এর বেশি ছিল না।
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ, জয়াসুরিয়ার ভাগ্য পরিবর্তনের বছর। এই বিশ্বকাপের মাধ্যমেই জয়াসুরিয়া তার জাত পুরো বিশ্বের কাছে চিনিয়ে দেয়। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে নিয়ম ছিল যে, প্রথম ১৫ ওভার সার্কেলের বাইরে মাত্র ২ জন ফিল্ডার থাকতে পারত। শ্রীলংকার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা, জয় জয়াসুরিয়াকে ওপেনিং করতে অনুমতি দিলেন। যাতে তার পাওয়ার ফুল ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত রান করতে পারে। জয়াসুরিয়া ও অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান বেশ দক্ষতার সাথে দিয়েছিল। আন্ডার ডগ হিসেবে বিশ্বকাপ শুরু করেছিল শ্রীলংকা। প্রথমে ১৫ ওভারে প্রায় সকল দল গড়ে ৬০-৬৫ রান তুলত। কিন্তু জয়াসুরিয়া সৃষ্টি করে নতুন রেকর্ড। মারমুখী ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে শ্রীলংকা ভারতের বিপক্ষে প্রথম ১৫ ওভারে করে ১১৭ রান, কেনিয়ার বিপক্ষে ১২৩, ইংল্যান্ডের সাথে করে ১২১ রান। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় জয়াসুরিয়া কতটা সফল ছিল শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে। শুরুর ওভার গুলোতে প্রাপ্ত রান গুলো খেলা শেষে পার্থক্য গড়ে দিত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৪৪ বলে ৮৪ রানের দানবীয় ইনিংস খেলে। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে ছিল জয়াসুরিয়ার রাজত্ব। শুধু ব্যাটে নয়, বোলার হিসেবেও বেশ সফল ছিল জয়াসুরিয়া। মিতব্যয়ী বোলিং আর গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উইকেট নিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতেন। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান বিশ্বসেরা বোলার গ্লেন মেগ্রাকে কখন প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, কোন ব্যাটসম্যানকে বল করা তার জন্য খুব অপ্রীতিকর ছিল, জবাবে মেগ্রা জয়াসুরিয়া সম্পর্কে বলেছিল, “It is always a massive compliment to someone to say they changed the game, and his performance in the 1996 World Cup changed everyone’s thinking about how to start an innings.”
অসাধারণ অবদানের জন্য জয়াসুরিয়া ১৯৯৬ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়। ব্যাট হাতে ৩৬ গড়ে ২২১ রান, বল হাতে ৭ টি উইকেট ও ৫ টি ক্যাচ নিতে সক্ষম হয়। ফলশ্রুতিতে শ্রীলংকা প্রথম বারের মত বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করে।
ব্যক্তিগত জীবনে সনাথ জয়াসুরিয়া প্রথম বিয়ে করে ১৯৯৮ সালে, শ্রীলংকার এয়ার লাইন্সের এক সেবিকা, সুমুদু কারুনানায়েকে কে। কিন্তু তাদের বিয়ে এক বছরের বেশি স্থায়ী হয় নাই। পরবর্তীতে জয়াসুরিয়া ২০০০ সালে আবার বিয়ে করে। এবারও বিমান সেবিকা, সান্দ্রা ডি সিলভাকে। তাদের দাম্পত্য জীবনে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। ২০১২ সালে সান্দ্রা- জয়াসুরিয়া দম্পতি পরস্পরকে ডিভোর্স দেয়।
বিশ্বকাপের পর জয়াসুরিয়া আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠে। তার পারফরমেন্স শ্রীলংকাকে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তির খেতাব এনে দেয়। জয়াসুরিয়ার সমসাময়িক আরো আগ্রাসী ব্যাটসম্যান ছিল, কিন্তু কেউই ধারাবাহিক ছিল না। দ্রুত রান তুলার কারণে, জয়াসুরিয়া বেশ কয়েকটি রেকর্ড নিজের নামে করে নেয়। সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি ও অর্ধশত রান করার রেকর্ড নিজের নামে করে নেয় জয়াসুরিয়া। তার দ্রুত অর্ধশত রানটি ছিল ১৭ বলে, যা ১৯ বছর পর্যন্ত টিকে ছিল। অন্যদিকে তার দ্রুততম সেঞ্চুরিটি ছিল মাত্র ৪৮ বলে। জয়াসুরিয়া রেকর্ডগুলোকে বেস্ট হিসেবে মনে করা হয় কারণ তিনি যখন রেকর্ডগুলো করেছিলেন তখন ফিল্ডিং রেস্টিংকশন ছিল না। জয়াসুরিয়ার ব্যাটিং দর্শন ক্রিকেট বিশ্বে নতুন আলোড়নের সৃষ্টি করে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ পরবর্তী ম্যাচ গুলোতে জয়াসুরিয়ার ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট কখনোই ৮০ নিচে নামেনি। ১৯৯৭ সালে জয়াসুরিয়া উইজডেন ক্রিকেটার অব দ্যা ইয়ার নির্বাচিত হয়। ২০০০ সালে জয়াসুরিয়া ভারতের বিপক্ষে ১৮৯ রানের বিশাল ইনিংস খেলে। যা তার ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ। একের পর এক সেঞ্চুরি ও অর্ধশত রানের মাধ্যমে জয়াসুরিয়া বিশ্ব ক্রিকেট তথা শ্রীলংকা ক্রিকেটকে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যায়।
শুধু ওয়ানডে নয় টেস্ট ক্রিকেটেও জয়াসুরিয়া ছিল সমানভাবে উজ্জ্বল। অনেক ক্রিকেট বোদ্ধা মনে করেছিল মারমুখী ব্যাটিং টেস্ট ক্রিকেটে কোন কাজে আসবে না। কিন্তু জয়াসুরিয়া তাদের ভুল প্রমাণ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ভারতের সাথে ৩৪০ রানের বিশাল ব্যক্তিগত ইনিংস দাড় করায়। যা তৎকালীন যুগে শ্রীলংকান ব্যাটসম্যানের জন্য ছিল একটি রেকর্ড। একের পর এক সেঞ্চুরি ও অর্ধশত করে সমালোচনার কড়া জবাব দেয়। ২০০৪ সালে তার টেস্ট ব্যাটিং গড় ছিল ৫৬.৫০! তার সম্পূর্ণ টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩১ টি অর্ধশত, ১৪ টি শতরান, ৩ টি দ্বি শতকের সৌজন্যে ৪০ এভারেজে ৬৯৭৩ রান করে। ২০০৭ সালে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত শ্রীলংকা দলের অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েছিল জয়াসুরিয়া। অধিনায়ক হিসেবে খুব একটা খারাপ ছিল না তিনি। যদিও ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দেয় জয়াসুরিয়া। ৩৮ টেস্ট ও ১১৭ ওয়ানডে ম্যাচে শ্রীলংকাকে নেতৃত্ব দেয় জয়াসুরিয়া।
২০০৬ সালে টি-২০ ফরমেটের প্রচলন শুরু হয় ক্রিকেট বিশ্বে। জয়াসুরিয়া মূলত অনেক আগে থেকেই এর প্রচলন শুরু করেছিল তার আগ্রাসী ব্যাটিং স্টাইলের মাধ্যমে। টি-২০ ক্রিকেটেও দারুণভাবে সফল হয় জয়াসুরিয়া। মাত্র ৩১ টি-২০ ম্যাচ খেলে ১২৯ স্ট্রাইক রেটে ৪ টি অর্ধশতরানের মাধ্যমে ৬২৯ রান করে। বোলার হিসেবে ৭ ইকোনমি রেটে ১৯ টি উইকেট লাভ করে।
বোলার জয়াসুরিয়া ও কোন অংশে কম ছিল না। একজন বাম হাতি বোলার হিসেবে নিজের দায়িত্ব বেশ ভাল ভাবেই পালন করতেন জয়াসুরিয়া। একজন মিতব্যয়ী বোলার হিসেবে বেশি খ্যাতি ছিল তার। ১৯৯৩ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট অর্জনই বলে দেয় বোলার হিসেবে কেমন ছিল জয়াসুরিয়া। শ্রীলংকা দলে প্রথমদিকে তার অন্তর্ভুক্তি হয়েছিল স্পিনার হিসেবে। পুরো ক্যারিয়ারে নিয়েছেন ৪৪০ উইকেট, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
তারপরও সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আসলেই ক্রিকেটার হিসেবে কেমন ছিল জয়াসুরিয়া? পাকিস্তানি বোলার ওয়াসিম আকরাম, জয়াসুরিয়া সম্পর্কে বলেছিল – “ আমাকে যে অল্প কজন বোলার সব সময় বাউন্ডারি ছাড়া করত, তাদের মধ্যে জয়াসুরিয়া অন্যতম। সে অনেক বেশি বিপদজনক ছিল”।
আরেক অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি বোলার গ্লেন মেগ্রা তার সম্পর্কে বলেছিল, “ যদি তুমি সঠিক স্থানে বল ফেলতে না পার তাহলে সে তোমাকে স্কুলবয় বানিয়ে দিব”।
ক্রিকেট ঈশ্বর খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার জয়াসুরিয়া সম্পর্কে বলেছিল, “ আমি ডন ব্র্যাডম্যানকে দেখি নাই কিন্তু আমি জয়াসুরিয়াকে দেখেছি। আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যানের মধ্যে সে অন্যতম”।
দুই দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে জয়াসুরিয়া যে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন তা অন্য কেউ দেখাতে পারে নাই। ৪৩৩ ওয়ানডেতে ১৩৪৩০ রান ও ৩২৩ উইকেট অর্জন করে। যার মধ্যে রয়েছে ৬৮ টি অর্ধশত ও ২৮ টি শতরানের ইনিংস। একজন অলরাউন্ডার হিসেবে তার সাফল্যের জন্য তাকে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার বলা হয়। পাশাপাশি ১১০ টেস্ট ম্যাচে ৪০ গড়ে ৬৯৭৩ রান ও ২ ইকোনমিক রেটে ৯৮ উইকেট অর্জন করেছেন। গড়েছেন বহু রেকর্ড আবার ভেঙ্গে দিয়েছেন বহু রেকর্ড। রেকর্ড সংখ্যক ম্যাচে হয়েছেন ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। জিতেছেন বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, এশিয়া কাপ সহ বহু ট্রফি।
পরিশেষে বলা যায়, জয়াসুরিয়া ক্রিকেট বিশ্বে একটি অনন্য নাম। তিনি নিজেই একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। প্রথাগত ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে সৃষ্টি করেছেন নতুন দর্শনের। বদলে দিয়েছেন ক্রিকেট সম্পর্কে মানুষের ধারনা। তার প্রাণবন্ত ব্যাটিং ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। যুগে যুগে সমস্ত ক্রিকেট প্রেমীদের মনের গভীরে স্থান করে নিবে সনাথ জয়াসুরিয়া নামক ক্রিকেটের এক দানব।
п»їbest mexican online pharmacies: Mexican Pharmacy Online – buying prescription drugs in mexico
https://indiaph24.store/# buy medicines online in india
canada pharmacy world Certified Canadian Pharmacies canadian drugs pharmacy
zofran percocet
http://canadaph24.pro/# best rated canadian pharmacy
http://canadaph24.pro/# canada drugs
https://canadaph24.pro/# canadian compounding pharmacy
mexico drug stores pharmacies: cheapest mexico drugs – mexican border pharmacies shipping to usa
https://indiaph24.store/# reputable indian online pharmacy
http://canadaph24.pro/# canadian drug stores
buy lamisil generic – buy generic forcan for sale grifulvin v
http://mexicoph24.life/# buying from online mexican pharmacy
http://indiaph24.store/# world pharmacy india
zetia 10 mg tablet
buy medicines online in india: Generic Medicine India to USA – best india pharmacy
https://mexicoph24.life/# pharmacies in mexico that ship to usa
crushing wellbutrin sr
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy meds
https://canadaph24.pro/# cheapest pharmacy canada
https://mexicoph24.life/# mexican online pharmacies prescription drugs
mexican border pharmacies shipping to usa: Online Pharmacies in Mexico – medication from mexico pharmacy
https://mexicoph24.life/# buying from online mexican pharmacy
https://indiaph24.store/# top 10 pharmacies in india
http://indiaph24.store/# top 10 pharmacies in india
https://mexicoph24.life/# best mexican online pharmacies
https://canadaph24.pro/# onlinecanadianpharmacy
http://canadaph24.pro/# maple leaf pharmacy in canada
http://mexicoph24.life/# best mexican online pharmacies
http://indiaph24.store/# india pharmacy mail order
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy sarasota
zyprexa 2.5mg
http://indiaph24.store/# buy prescription drugs from india