পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব কারনে মানুষ সবচেয়ে বেশি মারা গেছে তাদের মধ্যে বড় একটি কারন দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ানক ও নির্মম। একটি দুর্ভিক্ষে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর জনশূন্য হয়ে যায়। পড়ে থাকে নিথর কংকালসার দেহ। আর সেই দেহগুলো পরিণত হয় কাক আর শকুনদের খাদ্যে। চলুন জেনে আসা যাক পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহ কিছু দুর্ভিক্ষের কাহিনী।
১. চীনের মহাদুর্ভিক্ষ (১৯৫৯–১৯৬১)
১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত চীনে সংঘটিত দুর্ভিক্ষটি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি নির্মম ও ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। গবেষকদের হিসাবমতে এ দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩ কোটি এবং প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ফ্রানক ডিকোটারের মতে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। সরকারি হিসাব মতে চীনের সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ সিচুয়ান প্রদেশে প্রতি সাতশো জনের মধ্যে এগারো জন মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়।
চীনের মহাদুর্ভিক্ষ সম্পর্কে জিন জিয়াং এর একটি সরকারি দলের সচিব ইয়ু দিহং বলেন,
“আমি এক গ্রামে গিয়ে ১০০ লাশ দেখি, তারপর অন্য গ্রামে অন্য ১০০ লাশ দেখেছি। কেউ তাদের দিকে মনোযোগ দেয়নি। লোকেরা বলে যে কুকুর লাশ খাচ্ছিল। কিন্তু তা সত্য না। কারন তার আগেই মানুষ কুকুর খেয়ে ফেলেছিল।”
এ দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা হয় প্রতিকূল আবহাওয়া, সামাজিক চাপ, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সরকারি বিধান দ্বারা আরোপিত কৃষিতে আমূল পরিবর্তন। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুং ক্ষমতায় আসার পর কৃষিতে ব্যক্তিমালিকানা বন্ধ করে বিরাট পরিবর্তন আনেন। উক্ত নীতি মেনে চলতে ব্যর্থ হলে চীনা জনগণের উপর নেমে আসতো নানা নিপীড়ন। সরকার আরোপিত নীতি ও ব্যবসার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক চাপ রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। এ সময় সমবায় চাষ ও ব্যক্তিগত খামার নিষিদ্ধ করা হয়। লক্ষ লক্ষ কৃষককে জোরপূর্বক লৌহ ও ইস্পাত নির্মাণে বাধ্য করা হয়। ফলে দেখা দেয় খাদ্য সংকট এবং নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।
২. ১৯০৭ সালে চীনে দুর্ভিক্ষ
১৯৫৯ সালের আগে চীনের জনগণের আরো একবার করাল দুর্ভিক্ষের অভিজ্ঞতা হয় ১৯০৭ সালে। বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর ইতিহাসে এটি ২য় ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ। এ সময় প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০০ মানুষ খাদ্য অভাবে অনাহারে মারা যায়।
এ দুর্ভিক্ষের কারন হিসাবে দায়ী করা হয় সে সময়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যাকে। পূর্ব-মধ্য চীন সে সময়ে এক মারাত্মক ঝড় ও বন্যার সম্মুখীন হয়। এ সময় ফসলের প্রায় শতভাগ বন্যার কারনে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নেমে আসে ভয়াবহ খাদ্য সংকট এবং দেখা যায় ইতিহাসের দ্বিতীয় করুণ দুর্ভিক্ষ।
৩. ভারতীয় উপমহাদেশে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর (১৭৭০)
বাংলা ১১৭৬ সালে দুর্ভিক্ষ ঘটেছিলো বলে এর নাম ছিয়াত্তরের মন্বন্তর বলা হয়। অত্যধিক বৃষ্টিপাত ও বন্যার করাল গ্রাসে প্রায় সব ফসল নষ্ট হয়। সে সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্বের ফলে অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। ১৭৬৮ সালে আদায়কৃত রাজস্ব ১৫.২১ মিলিয়ন রুপির চেয়ে ১৭৭১ সালে আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ৫,২২,০০০ রুপি বেশি ছিল, অথচ এর আগের বছর দুর্ভিক্ষ ঘটে যায়। এভাবে মুনাফা লুট ও অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার কারণে জনমানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। পরিণতিতে মারাত্মক দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকাগুলো হয়ে পরে জনশূন্য।
এছাড়াও ১৭৮৩ থেকে ১৭৮৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে অনেক গুলো দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বাংলায় সেই সময় তুলনামূলক কম দুর্দশা থাকলেও বোম্বে, মাদ্রাজ, মহীপূর, পাঞ্জাব এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের কিছু অঞ্চল মারাত্মক দুর্ভিক্ষের কবলে পরে। এ সময় খাদ্যের অভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষ মারা যায়।
৪. বাংলায় পঞ্চাশের মন্বন্তর (১৯৪৩)
১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষটি পঞ্চাশের মন্বন্তর (বাংলা ১৩৫০) নামে পরিচিত। এ মন্বন্তরে বাংলাজুড়ে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ না খেয়ে মারা যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার (তৎকালীন নাম বার্মা) দখল করে নেয়ার পর তেতাল্লিশের মন্বন্তর শুরু হয়। ওই সময় বার্মা ছিল চাল আমদানির বড় উৎস। ভারতে নিয়োজিত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসক সেনা ও যুদ্ধে নিয়োজিত কর্মীদের বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুত করা হয়। ফলে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় চালের দাম। সে সময় জাপানের ভারত দখলের একটা সম্ভাবনা ছিল। তাই দখলের পর খাদ্য যাতে শত্রুর হাতে না যায় তাই ব্রিটিশ সরকার আগাম কিছু ব্যবস্থা নেয়। বাংলাজুড়ে নৌকা ও গরুর গাড়ী বাজেয়াপ্ত নয় তো ধ্বংস করে ফেলা হয়। এতে বিতরণ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সারা বাংলায় খাদ্যের হাহাকার পড়ে যায়। পথে প্রান্তরে না খেয়ে লুটিয়ে পড়তে থাকে মানুষ। বুভুক্ষু হাজার হাজার মানুষ একমুঠো অন্নের জন্য ধাই করছিল কলকাতার দিকে। দেখা গেছে, এসব অভাগা দলে দলে পথের ওপর পড়ে ধুঁকছেন আর আবর্জনার পাশে উচ্ছিষ্টে ভাগ বসাতে পরস্পর লড়ছেন। একই সময় ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং তাদের তোষামুদে অবস্থাপন্ন ভারতীয় লোকজন বাড়িতে বসে ভূড়িভোজ করছেন।
৫. রাশিয়ার দুর্ভিক্ষ (১৯২১–১৯২২)
১৯২১ সালের রাশিয়ার দুর্ভিক্ষের কারন ছিল হঠাৎ রাজনৈতিক পরিবর্তন ও প্রতিকূল আবহাওয়া। এ সময় ৫০ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
সে সময় খাবারের জন্য মানুষ অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ করতেও বাধ্য হয়েছিল। পোকামাকড়, কাদামাটি, গাছের পাতা, মৃত প্রাণী, এমনি মানুষের মাংস পর্যন্ত খেয়েছে অনেকে। বেঁচে থাকার তাগিদে অনেকে নিজ সন্তানকে হত্যা করে পর্যন্ত মাংস খেয়েছে। অনেকে আবার কবর খুঁড়ে মৃত মানুষের মাংস খেয়েছে। মানুষ হত্যার পুলিশি রিপোর্ট থানায় অগ্রাহ্য করা হত সে সময়, কারন তখন মানুষ হত্যাকে বেঁচে থাকার একটি উপায় হিসেবে ধরে নেয়া হত।
৬. উত্তর কোরিয়ার দুর্ভিক্ষ (১৯৯৪–১৯৯৮)
খুব সম্প্রতি ঘটে যাওয়া দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশ গুলোর মধ্যে উত্তর কোরিয়া একটি। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত উত্তর কোরিয়া একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। উত্তর কোরিয়ার মোট জনসংখ্যা ২.২ কোটির মধ্যে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
অর্থনৈতিক ভুল ব্যবস্থাপনা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সহযোগীতা হারানো ছিল এ দুর্ভিক্ষের মূল কারন। এ ছাড়া ক্রমাগত বন্যা ও খরা অন্যতম কারন বলে মনে করা হয়।
৭. ভিয়েতনামে দুর্ভিক্ষ (১৯৪৪–১৯৪৫)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের দখলে থাকাকালীন সময়ে ভিয়েতনাম এক নির্মম দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ফ্রান্স ও জাপানের দখলদারিত্বকেই মূলত এ দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা হয়। একদিকে জনগণ অনাহারে মরছে, অপরদিকে ফ্রান্স এবং জাপান পাওয়ার স্টেশনে জ্বালানীর জন্য ধান এবং গম ব্যবহার করে। ফ্রান্সের দখলে থাকাকালীন ভিয়েতনামে প্রশাসন ব্যবস্থা পুনর্গঠন করা হয় এবং জোরপূর্বক ফ্রান্স ভিয়েতনাম থেকে অর্থ নিয়ে যেতো। এ ছাড়া ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপকহারে ফসলের ক্ষতি হয়। এসব কারনে ভিয়েতনামে দুর্ভিক্ষ হয় এবং এ দুর্ভিক্ষে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ মারা যায়।
zyprexa erectile dysfunction
buy lamisil without a prescription – order generic fulvicin 250 mg purchase grifulvin v pill
para que sirve zofran 4 mg
can zoloft and wellbutrin work well together