দ্য কোড অফ হাম্বুরাবি- পৃথিবীর প্রাচীনতম আইন সংকলনের ইতিবৃত্ত
ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্যের প্রজাদের পিতা সম্রাট হাম্বুরাবি প্রার্থনার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। তার চোখজোড়া বন্ধ। বিড়বিড় করে কি যেন পাঠ করছেন। পাঠ করছেন তো করছেন থামার কোন লক্ষণ নেই। তিনি অপেক্ষা করছেন দেবতার নির্দেশের। তার সামনে সিংহাসনে বসে আছেন স্বয়ং ন্যায়বিচারের দেবতা শামাস! হাম্বুরাবি চোখ খুললেন। দেবতার চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন। তার তর যেন সইছে না। কি দিবেন তাকে ঠাউর করতে পারছেন না তিনি। অবশেষে শামাস তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাকে প্রদান করলেন পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ আইন সংকলন।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ষষ্ঠ সম্রাট রাজা হাম্বুরাবি ও ন্যায়বিচারের দেবতা শামাসের এমন দৃশ্য সম্বলিত একটি ভাস্কর্য প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে। স্তম্ভের সামনে পিছনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লাইনে আক্কারীয় ভাষায় সংবাদপত্রের মত কলামে খোদাই করা আছে ২৮২ টি আইন। এই আইন সংহিতাই পৃথিবীর প্রথম আইন সংকলন হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর প্রথম আইন সংকলন কেমন ছিল তা জানবার আগে আমাদের জানতে হবে হাম্বুরাবি কে ছিলেন।
কে এই হাম্বুরাবি ?
হাম্বুরাবি মতান্তরে খাম্মুরাবি, আম্মুরাপি ব্যাবিলনের ষষ্ঠ সম্রাট হিসেবে ১৭৯২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়ার মসনদে অধিষ্ঠিত হোন। আদতে ষষ্ঠ সম্রাট হলেও তিনি নিজেকে ব্যাবিলনের প্রথম সম্রাট হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। সমগ্র মেসোপটেমিয়া, ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত পশ্চিম এশিয়ায় দখল নিয়ে তিনি ‘সর্বাধিপতি’ উপাধি ধারণ করেন। হাম্বুরাবির উত্থানের আগে ২০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে সুমেরীয় সম্রাট ডুংগির মৃত্যুর পর এমোরাইটদের একটি শাখা সমগ্র মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে। তখনকার সময়ে মেসোপটেমিয়া ছিল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রে বিভক্ত।
এমন অবস্থায় এমোরাইটরা মেসোপটেমিয়ায় গড়ে তোলে অধিকতর শক্তিশালী নগররাষ্ট্রের কাঠামো। ১৭৯২ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হাম্বুরাবির যখন ব্যাবিলনের সম্রাট হিসেবে অভিষেক হয় তখন তিনি ক্ষমতায় আরোহণ করেই এমোরাইটদের শক্তি খর্ব করতে পুরো মেসোপটেমিয়াকে একটি রাষ্ট্রের ভেতরে আনয়ন করে ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রগুলো বিলুপ্ত করে দেন। একজন অমিততেজ যোদ্ধা, সংগঠক ও প্রশাসক হাম্বুরাবির ৪২ বছরের শাসনে ব্যাবিলন তাদের স্বর্ণযুগ অতিক্রম করে। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে হাম্বুরাবিই নিজেকে “প্রজাদের পিতা” বলে ঘোষণা দেন। একইসাথে নিজেকে আক্কাদ ও সুমেরের সম্রাট দাবি করে বলেন, “Under my protection they prospered. Governed them in peace; in my wisdom I sheltered them”.
হাম্বুরাবির আইন সংহিতা
“আমি হাম্বুরাবি, দেবতা নির্ধারিত সম্রাট, ব্যাবিলনের প্রথম সমগ্র ইউফ্রেতিস অঞ্চলের বিজয়ী বীর। আমি আমার দেশের কানে প্রদান করলাম ন্যায়নীতির মন্ত্র এবং আমার প্রজাসাধারণকে দান করলাম সমৃদ্ধি। যে আমার প্রণীত আইন অমান্য করবে বা আইনের প্রতি অবমাননা পোষণ করবে দেবতার পক্ষ থেকে নেমে আসবে তার উপর অভিশাপ”.
আইন সংহিতার প্রারম্ভে এমন হুমকি দিয়ে তিনি নিজেকে “The king of righteousness” হিসেবে দাবি করেন। তার ক্ষমতা গ্রহণের আগপর্যন্ত বিচ্ছিন্ন নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রতিনিয়ত সংঘাত সংঘর্ষ বিদ্যমান ছিল। ধ্বজভঙ্গ আইনশৃঙ্খলা আর পুরোহিতদের প্রতি লেজুড়বৃত্তি মেসোপটেমিয়াকে করেছিল অশান্তির স্বর্গরাজ্য। এহেন অস্থিরমতি সময়ে হাম্বুরাবি ব্যাবিলনের ক্ষমতায় আরোহণ করে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাকল্পে নিজেকে সূর্যদেবতার আসনে আসীন করেন। তিনি দাবি করেন দেবতা মারদুক তার উপর দেশে পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। বিশৃঙ্খলতাপূর্ণ সাম্রাজ্যকে স্বস্তি দিতে প্রণয়ন করেন কঠোর আইনের শাসন। পারিবারিক, ব্যবসা বাণিজ্য, কৃষি, ফৌজদারি এমন নানা স্তরের আইন প্রণয়ন করে প্রচুর মৃৎফলকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন পুরো সাম্রাজ্যে। এই আইন সংকলনকে পৃথিবীর প্রথম আইন সংকলন বলা হলেও হাম্বুরাবির প্রায় ৪০০ বছর আগে সুমেরীয় রাজা লিবিট ইশতার ও ডুংগিও আইন সংকলন করেন। কিন্তু সেগুলো ছিল অপূর্ণাঙ্গ। হাম্বুরাবি সর্বপ্রথম পুরনো আইনগুলোর সমন্বয় ও সংস্কার সাধন করে একটি পূর্ণাঙ্গ আইনের খসড়া তৈরি করেন। ইতিহাসে তার এই আইন সংকলন বহুল পরিচিত দ্য কোড অফ হাম্বুরাবি নামে।
কোড অফ হাম্বুরাবির আবিষ্কার
১৯০১ সালে পারস্যের সুসা নগরীতে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জ্যক দ্য মর্গানের নেতৃত্বে খননকারী দলের কালো পাথরের স্মৃতিস্তম্ভে উৎকীর্ণ আইন ফলকের নিদর্শন আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে প্রায় ২০০০ হাজার বছর লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল হাম্বুরাবির এ আইন সংহিতা। মারদুক মন্দিরে স্থাপিত হওয়া এ স্তম্ভের আইন পরবর্তীতে মৃৎফলকের মাধ্যমে রাজ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয় যাতে করে জনসাধারণ আইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে।
কোড অফ হাম্বুরাবির স্বরূপ
২৮২ টি আইনের মধ্যে জাগতিক সকল বিষয়কেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পূর্ববর্তী সাম্রাজ্যের তিক্ত অভিজ্ঞতার দরুন এই কোডগুলোতে নিষ্ঠুরতার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহাসিকদের অভিযোগ, লঘুপাপে গুরুদণ্ড দেয়া হয়েছে এসব আইনের মাধ্যমে। যার উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত! তবে এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে আইন সংকলনে ইতিবাচকতার বৈশিষ্ট্যই সর্বাংশে সত্য। ইতিবাচকতা আর নেতিবাচকতার সিদ্ধান্তে পৌঁছাবার আগে আমরা দেখে নিব ঐতিহাসিক কোড অফ হাম্বুরাবির নানা দিক।
ফৌজদারি আইন
হাম্বুরাবির আইন সংকলনে ফৌজদারি আইন ছিল মূলত প্রতিশোধমূলক। অঙ্গহানির বিপরীতে অঙ্গহানি, মৃত্যুর বদলে মৃত্যু ছিল সাধারণ বিষয়। আইন সংহিতার ১৯৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোন সন্তান যদি তার বাবাকে আঘাত করে তবে যেই হাত দিয়ে সে আঘাত করেছে সেই হাত তার কেটে ফেলা হবে। ১৯৬ নং ধারাটি ছিল কিছুটা বৈষম্যমূলক। এক্ষেত্রে কোন সাধারণ নাগরিক যদি কোন অভিজাতের চোখ নষ্ট করত তবে তার শাস্তি হিসেবে ঐ নাগরিকের চোখ উপড়ে ফেলা হত। আবার একই কাজ যদি কোন অভিজাতের দ্বারা সংঘটিত হত তবে সে নির্দিষ্ট মুচলেকার বিনিময়ে পার পেয়ে যেত। ২০৬ নং ধারায় বলা হয়েছে, দুইজন লোক যদি পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আর এতে যদি কেউ আহত হয় তবে আহতের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দিলে আক্রমণকারী দায়মুক্তি পেতে পারে। ২১০ নং ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন লোক গর্ভবতী মহিলাকে আঘাত করে এবং আঘাতের কারনে যদি সে মারা যায় তবে আঘাতকারীর মেয়েকে হত্যা করা হবে।
মিথ্যা সাক্ষ্য সংক্রান্ত আইন
আইন সংহিতার প্রথম ধারাতেই মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারীর একহাত নেয়া হয়েছে। যদি কোন লোক কারো বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনে এবং সে যদি তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয় তবে অভিযোগকারীর শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে, কেউ যদি কারো বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনে তবে অভিযুক্তকে নদীতে ঝাপ দিতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয় তবে বুঝতে হবে সে নির্দোষ। আর যদি সাঁতরে তীরে উঠতে অপারগ হয় তবে বুঝতে হবে সে আসলেই দোষী! ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন নারী যদি তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে তবে অভিযোগকারী নারীর শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।
কৃষি আইন
ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য কৃষিনির্ভর হওয়ায় হাম্বুরাবি সরকার কৃষির উপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই কৃষিক্ষেত্রের জন্যও কিছু আইন প্রণয়ন করা হয়। আইন সংহিতার ৫৩-৫৬ ধারায় বলা হয়েছে, কোন কৃষক যদি সেচ ব্যবস্থায় অবহেলা করে এবং তার গড়িমসির দরুন অন্যের জমিজমার ক্ষতি হয় তবে সংশ্লিষ্ট কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাবতীয় ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে। এছাড়া কৃষকের অবহেলার কারনে যদি শস্যের আশানুরূপ ফলন না হয় তবে সেক্ষেত্রেও গুণতে হবে জরিমানা। অন্য এক ধারায় বলা হয়েছে, কোন কৃষক যদি টাকা ধার করে জমি ভাড়া নেয় এবং প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগের কারনে যদি ফসল উৎপাদন লাটে উঠে তবে সে বছর তাকে আর জমির ভাড়া দিতে হবেনা।
সম্পত্তি জবরদখল ও লুট সংক্রান্ত আইন
কোন ব্যক্তি যদি অভিযোগ করে যে, “এই জমি আমার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। আমি এর পক্ষে সাক্ষী উপস্থিত করতে পারি”। আর জমির বিক্রেতা যদি বলে, “আমি সাক্ষী উপস্থিত করতে পারি, এ জমি আমি বিক্রি করিনি”। এক্ষেত্রে বিচারক যদি মনে করেন বিক্রেতা আসলেই জমি বিক্রি করেছে অথচ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তবে বিক্রেতাকে চোর সাব্যস্ত করা হবে এবং তার চূড়ান্ত শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এভাবে ক্রেতাও যদি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে তারও বরণ করতে হবে একই পরিণতি। ২২ ও ২৩ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন ডাকাত যদি ডাকাতি করার সময় ধরা পড়ে তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আর যদি ডাকাত ধরা না পড়ে তবে ক্ষতিগ্রস্তের ক্ষতিপূরণ দিতে শহরের গভর্ণর বাধ্য থাকবেন। ২১ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন চোর যদি চুরি করার সময়ে ধরা পড়ে তবে যে জায়গায় ধরা পড়বে সে জায়গায়ই গর্ত তৈরি করে তাকে পুঁতে ফেলা হবে। মন্দির বা আদালতের সম্পদ চুরি করলেও একই ধরণের শাস্তির বিধান ছিল।
পারিবারিক আইন
আইন সংকলনের ১২৯ তম ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন নারী পরপুরষের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে তবে সংশ্লিষ্ট পুরুষ ও নারীকে বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে মারা হবে। এক্ষেত্রে স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেয় তবে শুধুমাত্র পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া পুরুষকেই সেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। ১৫৯-১৬০ ধারামতে, বিয়েতে পাত্রপক্ষ এবং কন্যাপক্ষ উভয় উভয়কে যৌতুক প্রদান করবে এবং বিয়ের আগেই তা পরিশোধ করতে হবে। স্ত্রী যদি স্বাস্থ্যগত দিক থেকে দুর্বল হয় তবে স্বামী ইচ্ছা করলে উপপত্নী গ্রহণ করতে পারবে। উপপত্নী স্ত্রী হিসেবে গণ্য না হলেও তার গর্ভের সন্তানের সমাজে স্বীকৃতি ছিল। সন্তানদের উপর পিতার ব্যাপক কর্তৃত্ব ছিল। এমনকি পিতা চাইলে সন্তানকে বিক্রিও করে দিতে পারত। আইন সংহিতার ১৯২ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন পালক সন্তান যদি তার মাকে বলে তুমি আমার নও তবে তার শাস্তি হিসেবে জিভ কেটে নেয়া হবে।
নারীদের অনুকূলের আইন
হাম্বুরাবির আমলে নারীদের যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হত। নারীদের অনুকূলে তার আইন সংকলনে বেশ কিছু আইন লিপিবদ্ধ করেন। আইনের ১৩১ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোন স্বামী যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ আনে এবং তার যদি কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ না থাকে তবে ঐ স্ত্রী যদি দেবতার নামে কসম কেটে বলে আমি পাপ করিনি তবে এ যাত্রা সে শাস্তি থেকে রেহাই পাবে। ১৪২ নং ধারা অনুসারে কোন স্বামী চাইলেই তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে না। তবে কোনভাবে যদি তালাক দিয়েই ফেলে তবে তা নগর কাউন্সিলের অনুমোদনের জন্য নেয়া হবে। নগর কাউন্সিল স্ত্রীর বক্তব্য শুনে যদি মনে করেন বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই তবেই তালাক সফল হবে। অন্যথা হবেনা।
ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন
আইন সংহিতার ১০৪-১১৮ ধারা পর্যন্ত ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত আইনের উল্লেখ আছে। বিক্রেতা কোন পণ্য যখন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেয় এবং পরবর্তীতে ক্রেতা যদি পণ্যে ত্রুটি খুঁজে পায় তবে সেক্ষেত্রে বিক্রেতা দায়ী থাকত না। ব্যবসায়িক বিনিময়ের জন্য লিখিত চুক্তিনামা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। লিখিত চুক্তি ছাড়া যদি কেউ পারস্পরিক লেনদেন করত এবং তা যদি কর্তৃপক্ষর নজরে আসত তবে তার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল। কোন পণ্য ক্রয় করলে তার প্রমাণ হিসেবে রশিদ প্রদান করা হত।। ক্রেতা যদি রশিদ ছাড়া পণ্য ক্রয় করত তবে তা চুরি বলে গণ্য করা হত।
দায়িত্ব অবহেলার শাস্তি
আইন সংহিতার ২১৯ নং ধারায় চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার শাস্তির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। কোন চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার দরুন কারো যদি অঙ্গহানি হয় অথবা মারা যায় তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের হাত কেটে নেয়া হত। চিকিৎসা গ্রহণের ক্ষেত্রে অভিজাত ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হত। যার কারনে অতিরিক্ত ফি নেয়ার কোন সুযোগ ছিল না। এতই কঠোরভাবে চিকিৎসা করা হত যে, চিকিৎসক দ্বারা যদি কোন পশুরও অনিষ্ট হত তারও ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হত। ২২৯ ও ২৩০ নং ধারায় বলা হয়েছে, নির্মাতার ভুলের কারনে যদি কোন বাড়ি বিধ্বস্ত হয় এবং তার ফলে যদি বাড়ির মালিকের মৃত্যু হয় তবে ঐ নির্মাতাকে শাস্তি হিসেবে প্রদান করা হবে মৃত্যুদণ্ড। আর যদি বাড়ির মালিক মারা না গিয়ে তার কোন সন্তান মারা যায় তবে নির্মাতার শাস্তি হিসেবে তার সন্তানকেও হত্যা করা হবে। এছাড়া, ২৩৩ নং ধারা অনুসারে কোন বাড়িতে যদি নির্ধারিত সময়ের আগেই ফাটল বা চিড় ধরা পড়ে তবে নির্মাতা নিজের খরচে সেটি পুনর্নির্মাণ করে দিবে। ধারা ৫ এ বলা হয়েছে, কোন বিচারকের রায় যদি পরবর্তীতে ভুল বলে প্রমাণিত হয় তবে সংশ্লিষ্ট বিচারক অভিযুক্তকে যে জরিমানা করেছিলেন তার ১২ গুণ জরিমানা নিজে প্রদান করে প্রকাশ্যে সবার সামনে থেকে বিচারক পদ থেকে অব্যাহতি নিবেন।
কোড অফ হাম্বুরাবির পর্যালোচনা
পৃথিবীর প্রাচীনতম সময়ে এমন সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার আইন সংহিতা সন্দেহাতীতভাবে প্রশংসার দাবিদার। এতদসত্ত্বেও হাম্বুরাবির প্রণীত এ আইনগুলোতে যথেষ্ট ত্রুটি বিদ্যমান ছিল। আইনের চোখে সবাই সমান হালের এমন তত্ত্বকে পাশ কাটিয়ে সমাজে বৈষম্যমূলক তিনটি শ্রেণী প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। অভিজাতশ্রেণী, সাধারণ নাগরিক এবং দাস এই তিন শ্রেণীর জন্য ক্ষেত্রবিশেষে ভিন্ন আইনের প্রয়োগ এই আইন সংকলনকে অবিসংবাদী করতে পারেনি। অনেকক্ষেত্রে দেখা যেত অভিন্ন অপরাধের জন্য সাধারণ শ্রেণীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও অভিজাতগণ নির্দিষ্ট পরিমাণ উচ্চমূল্যে জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধের তুলনায় শাস্তির ধরণও ছিল বেশ নিষ্ঠুর। নদীতে ঝাপ দিয়ে অপরাধী কিনা এমন ব্যবস্থা ছিল সবচেয়ে বেশি ত্রুটিপূর্ণ। শুধুমাত্র সাঁতার জানার কারনে অনেক অপরাধীও মুক্তি পেয়ে যেত। এক্ষেত্রে নির্দোষ ব্যক্তি সাঁতার না পারার কারনে শাস্তির সম্মুখীন হতে হত। তবে একথা বলতে দ্বিধা নেই যাবতীয় নেতিবাচক দিককে একপাশে রেখে দিলে হাম্বুরাবির আইন সংহিতা যুগের বিচারে অবধারিতভাবে এগিয়ে রয়েছে। ব্যাবিলন ছাপিয়ে তাই কোড অফ হাম্বুরাবি হয়ে উঠেছিল অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়। ফিনিশীয়, রোমান ও হিব্রু সভ্যতাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল হাম্বুরাবির আইন সংকলন। আধুনিক সৌদি আরবে এখনো চুরির শাস্তি হিসেবে হাত কেটে দেয়ার রীতি চালু আছে। জাস্টিনিয়ন ও বাইবেলের বেশকিছু আইনের সাথে হাম্বুরাবি প্রণীত আইনের মিল পাওয়া যায়। কিছু ঐতিহাসিকরা তো আরো একধাপ এগিয়ে দাবি করেন, বাইবেলে বর্ণিত নমরুদই হচ্ছেন সম্রাট হাম্বুরাবি!
তথ্যসূত্র :
Avalon.law.yale.edu
livescience.com
britannica.com
সভ্যতার ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগ-ড.আবু মো: দেলোয়ার হোসেন, মো: আব্দুল কুদ্দুস শিকদার
side effects of zofran in children
order repaglinide 2mg generic – order repaglinide 2mg pills buy generic jardiance online
can you crush zyprexa
zetia cholesterol medication