একা একা ভ্রমণে বা সোলো ট্র‍্যাভেলিং-এ নারীদের জন্য ৬ টি টিপস

1

একা ভ্রমণ করতে ভালবাসেন এমন লোক এখন নেহাতই কম না। প্রকৃতি অথবা লোকালয়ের সান্নিধ্যে একা একা ভ্রমণের মজাটাও কিন্তু একেবারে অন্যরকম। এমনকি খুব দূরে কোথাও না, হাল্কা পরিচিত বা একেবারে অপরিচিত জায়গায় মিনিট দশেক নিজেই এলাকাটায় হাটতে হাটতে নিজের মাঝে ডুব দিয়ে এলেও একা ঘোরার মজাটা টের পেতে থাকবেন। তবে এ লেখার মূল উদ্দেশ্য একা একা ভ্রমণ বা সোলো ট্র‍্যাভেলিং না। মেয়েদের একা একা বা দলগতভাবে ভ্রমণের সুবিধায় প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য, উপদেশ বা টিপস যাই বলেন তা সহজভাবে তুলে ধরাই এ লেখার উদ্দেশ্য। তবে সর্বোপরি সবার ক্ষেত্রেই এই টিপসগুলি কাজে লাগবে।

-একা একাই কোনো মেয়ের ভ্রমণ করা সম্ভব নাকি?

-কি কন ভাই? কই পইড়া আছেন মিয়া??

বাংলাদেশেই সোলো উইম্যান ট্র‍্যাভেলারের সংখ্যাই প্রচুর, বিদেশের দিকে তাকাতেও হবে না। অন্য কাউকে না চিনলেও ওয়াসফিয়া নাজরীনকে তো চিনেন। বাংলাদেশের প্রথম ব্যক্তি যিনি সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন সোলো উইম্যান ট্রেভেলার হিসেবে।

বিস্তারিত ট্র‍্যাভেল প্লান করে নিন, দেখে নিন কোথায় কি, কিভাবে কি:

অনেক ট্র‍্যাভেলারের কাছেই ভ্রমণের বিস্তারিত পরিকল্পনা করাটা ভ্রমণ করার থেকেও বেশি আনন্দ দিয়ে থাকে। নির্জন কোনো সৈকতেই হোক আর সুন্দর একটা শহর, গন্তব্য যেটাই হোক আগে বিস্তারিত জেনে নিন কোথায় কি আছে। কোন এলাকাটায় কি কি আছে দেখার মত, কোন জায়গা এড়িয়ে যাবেন, হাসপাতাল-পুলিশ স্টেশন কোথায়, ট্রান্সপোর্ট সুবিধা কি রকম এরকম প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিন যা ইন্টারনেট থেকে পান।

পূর্বেই যারা জায়গাটা ঘুরে এসেছেন তাদের অভিজ্ঞতা আর মতামতকে গুরুত্ব দিন। ট্যাক্সিতে ঘুরবেন নাকি কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করবেন আগেই সিদ্ধান্ত নিন। কোনো বিশেষ ট্র‍্যাভেল-আকর্ষণ থাকলে তা সেফ বা নিরাপদ কিনা জেনে নিন। যেমন: কায়াকিং, প্যারাগ্লাইডিং করার জায়গা থাকলে সেফটি জনিত ব্যবস্থা কেমন তা জেনে নিন আগেভাগেই। এই তথ্যগুলি পাবেন ইন্টারনেটে বিভিন্ন ট্র‍্যাভেল ফোরামে।

সোলো ট্র‍্যাভেলিং

মিশে যেতে চেষ্টা করুন এলাকাটির সাথে:

কোনো নতুন জায়গায় গিয়ে নিজেকে আউটসাইডার ভাবাটা আসলে বোকামি। এতে আপনি ভ্রমণের সুখ আর নিরাপত্তা দুটোতেই হাল্কা ঝক্কিতে পড়ে যেতে পারেন। বিদেশ যাত্রা হলে জেনে নিন জায়গাটির ড্রেস কোড কেমন, বিশেষ কোনো বডি লেংগুয়েজ আছে কিনা।

কোনো জায়গার সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মিশে যেতে পোষাক খুব সহযোগিতা করে। যেমন: এদেশে ঘুরতে আসা বিদেশী কোনো মেয়েকে সচরাচর সালোয়ার-কামিজেই দেখতে পাবেন। শর্টস আর টপ্স গায়ে দিয়ে নেমে যেতে দেখবেন না। এটা এক ধরণের নিরাপত্তা প্রদান করে যার মাধ্যমে সহজেই কেউ বুঝিয়ে দিতে পারে যে এই সংস্কৃতিকে হাল্কা ভাবে হলেও ব্যক্তিটি ধারণ করেন।

প্রয়োজনে ভান করুন যে জায়গাটি আপনার অচেনা নয় কিংবা এ এলাকায় বা আশেপাশেই আপনি দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন। এতে আজেবাজে লোকের দৃষ্টি আর ধান্দাবাজ দালালদের সহজেই এড়াতে পারবেন।

প্রাধান্য দিন নিজের তাৎক্ষণিক প্রবৃত্তিকে:

ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Instinct, যার মানে হল সহজাত বা তাৎক্ষণিক প্রবৃত্তি। আপনি কোনো জায়গায় গিয়ে বা কোনো কিছু দেখেই তাৎক্ষণিকভাবে অনেক কিছুই বুঝে ফেলতে পারেন। যেমন: এই লোকটি কাছে ঘেঁষতে চাচ্ছে বারবার অথবা এই লোক এত কথা বলছে বারবার কোনো মতলব থাকতে পারে। এইসব চিন্তা মাথায় আসলে গুরুত্ব দিন। মাথা ঠান্ডা রেখে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপারটা সমাধান করুন। সন্দেহ মনে আনলেও চোখ-মুখের অভিব্যক্তিতে আনবেন না। মুখে হাসি, কন্ঠে দৃঢ়তা রেখে বলুন, “ভাইজান, হইতেসে না ব্যাপারটা” বা “কি যে কন না ভাই??” উত্তেজিত হবেন না। প্রয়োজনে কষ্ট হলেও ভান করুন “আমি ত এলাকারই মাইয়া।”

দেখবেন একটা আনন্দ জেঁকে ধরছে মনে আর নিজেই তৈরি করছেন নিজের নিরাপত্তা-বেষ্টনী। পুরুষ লোক কিন্তু নারীর দৃঢ় কন্ঠ আর দৃষ্টি ভয় করে মনে মনে, মাথায় রাখতে পারেন। আপনি হয়ত সচরাচর “ভাইজান”, “বইন” অথবা “Yo Buddy” সুরে কথা বলেন না। কিন্তু মনে রাইখেন, “Words have power.”

সোলো ট্র‍্যাভেলিং

গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সবসময় কাছে রাখুন:

পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, টিকিট, চাবি এসব ছাড়াও খুচরা টাকা, টুকটাক ওষুধ, ইমার্জেন্সি কাপড় কাছেই রাখুন সবসময়। ভ্রমণে দরকার লাগবে না এমন জিনিস পরিহার করুন। পলিব্যাগ খুব ভাল কাজে দেয় অনেক কিছুতেই। এছাড়াও কাগজ-কলম, ব্লেড অথবা এন্টিকাটার ছোট একটি পার্সে রাখুন ইমার্জেন্সি কাজে বা নিরাপত্তার খাতিরে।

সবসময় সবচেয়ে খারাপ কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকুন:

“বৃষ্টি পড়বে কি!! এ দুদিন ধরে তো বৃষ্টি হচ্ছে না”-এমন সংশয় নিয়ে রিস্ক নিবেন না। সবকিছু ভাল মতই হবে এটা ভেবে নিবেন না আগেভাগেই।

আপনার পার্স চুরি হয়ে যেতে পারে, পাসপোর্ট হারাতে পারে, অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন এসব ভাবনা মাথায় রেখে অগ্রীম প্লান রাখুন। কিছু টাকা লুকিয়ে রাখুন প্রয়োজনে কোথাও। একদম আস্থা না পেলে কারো হাতে ক্যামেরাটা দিয়ে বলবেন না একটা ছবি তুলে দিতে। খাওয়া-দাওয়ার আগে খাবারের মেন্যু কি, দাম কত তা নি:সংকোচে জিজ্ঞেস করে খান। বাড়তি ফোন ব্যালেন্স রিচার্জ কার্ড  আর পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখুন।

নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করুন:

কাছের লোকজন বা বন্ধু-বান্ধবকে নিয়মিত আপডেট দিন “কোথায় যাচ্ছেন”, “কি করবেন এরপর?” এসব তথ্য।  প্রয়োজনে ফেসবুক চেক-ইন ব্যবহার করুন তবে সব ক্ষেত্রে চেক-ইন না দেয়াটাই ভাল। ফ্লাইট নাম্বার, গাইডের নাম্বার, হোটেলের নাম্বার, ট্যুর প্লান বারবার চেক করুন কত টাকা হাতে আছে, কে মেসেজ করল এগুলোর সাথে। আর শুধু নিজের ফোন থেকেই কাছের লোকের সাথে যোগাযোগ না করে হোটেলের ফোন, নতুন পরিচিত হওয়া লোকটির ফোন থেকেও বাসায় বা কাছের লোকের সাথে যোগাযোগ করুন। এতে ছোটবড় যেকোনো বিপদ থেকেই দ্রুত উদ্ধার হবেন।

 

একা একা ভ্রমণ বা সোলো ট্র‍্যাভেলিং কিন্তু মনে এক পরম প্রশান্তি আর আত্ম-বিশ্বাস এনে দেয়। পজিটিভ চিন্তাভাবনার চেষ্টা করুন সবসময়। দুনিয়া বহুদূর এগিয়েছে, এগিয়েছে সব জাতি-গোষ্ঠী। এমন মোক্ষম সময়ে যদি অহেতুক ভয় বা সংশয়ে পিছিয়ে থাকেন তবে টেরই পাবেন না পৃথিবীর কোথায় কি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।

 

ছবি ঃ Pixabay

Leave A Reply
1 Comment
  1. Fcfwel says

    brand rybelsus 14mg – buy glucovance generic cheap desmopressin

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More