মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য: অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের এক গবেষণাধর্মী সৃষ্টি
“চলে গেলেন না ফেরার দেশে আমাদের আর এক বাতিঘর। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ইতিহাস নির্মাণ করে নিজেই ইতিহাস হয়ে গেছেন। উপমহাদেশে সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি একটি জাতি নির্মাণে অংশ নিয়েছেন। এমন বর্ণাঢ্য জীবনের দেখা মেলে না সচরাচর। সমস্ত কাজের মধ্য দিয়ে তিনি শেকড়ের সন্ধান করেছেন। তিনি জাতীয় জীবন, ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে আমাদের বাতিঘর ছিলেন। তার সুললিত বক্তৃতা আমাদের মোহাবিষ্ট করে রাখতো। প্রিয় এই মানুষটি থাকবেন আমাদের অন্তরে, জীবনভর শ্রদ্ধার আসনে।”- অভিনেতা ও অ্যাক্টিভিস্ট সৈয়দ আপন আহসান।
আজকের লিখাটা তাকে নিয়েই। “জাদুঘরে কেন যাব” রচনাটির কথা নিশ্চয়ই আমাদের সবার মনে আছে। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রম এ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে রচনাটি। জাদুঘরে কেন যাব এর লেখক আনিসুজ্জামান বাংলাদেশের একজন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও মনস্বী অধ্যাপক ছিলেন। আজকে তার একটি গ্রন্থ নিয়ে কিছুটা জানা যাক।
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক এর পিএইচডি গবেষণা গ্রন্থের সামান্য পরিবর্তিত রূপ “মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য” নামে ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হয়। সেকালের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় এই পাণ্ডুলিপি পড়ে লিখেছিলেন
“দশ-এগারো বছর আগে আনিসুজ্জামানের এই গবেষণা-গ্রন্থটির পান্ডুলিপি আমার কাছে এসেছিল পরীক্ষা ও প্রতিবেদনের জন্যে। পাণ্ডুলিপিটি পড়ে আমি তরুণ গবেষকের শ্রম, নিষ্ঠা ও অনুসন্ধিৎসায়, তাঁর তথ্যসংগ্রহের শৃঙ্খলায়, তাঁর তথ্যনির্ভর যুক্তিতে, সর্বোপরি তাঁর স্বচ্ছ মুক্ত বুদ্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির ঔদার্যে সাতিশয় প্রীত ও বিস্মিত হয়েছিলাম। বলা বাহুল্য, পান্ডুলিপি-গ্রন্থটি আমার সপ্রশংস অনুমোদন লাভ করেছিল, এবং আনিসুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট উপাধি লাভ করেছিলেন।”- নীহাররঞ্জন রায়, ১৯৭১, নয়াদিল্লী।
চতুর্থ মুদ্রণের ভূমিকায় লেখক তার নিজ পরিবার সম্পর্কে বলেছেন। লেখক এর জন্ম কলকাতায় হওয়া সত্ত্বেও ছেচল্লিশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং সাতচল্লিশের ভারত বিভাগ তথা বঙ্গ বিভাগের ফলে সাতচল্লিশের অক্টোবরে খুলনায় চলে আসেন লেখক। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরে আসেন ঢাকায়।
পুরো গ্রন্থকে সাজানো হয়েছে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে চার অধ্যায়ে রয়েছে দেশ ও কালের পরিচয়। ১৭৫৭ সাল থেকে ১৯১৮ পর্যন্ত ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে মুসলমানদের নানা সংস্কার আন্দোলন ও বিদ্রোহের মত ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সৈয়দ আহমদ বেরিলভি প্রবর্তিত তরিকা ই মুহম্মদিয়া(ওয়াহাবি আন্দোলন নামে খ্যাত), তিতুমীর ও শরিয়তউল্লাহর আন্দোলন থেকে শুরু করে স্যার সৈয়দ আহমদ ও নওয়াব আব্দুল লতিফের সংস্কার আন্দোলন পর্যন্ত। সেই সাথে তৎকালীন পটভূমিকার পরিপ্রেক্ষিত তিনি কিছু প্রচলিত মতের বিপক্ষে তার যুক্তি দেখিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে মুসলিম জমিদারদের স্থলে হিন্দু জমিদারদের স্থলাভিষেক, ইংরেজ এবং মুসলমানদের পারস্পারিক বিদ্বেষ, মুসলমানদের ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণে অনীহা ইত্যাদি। এসব প্রচলিত মত সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন এবং নিজস্ব যুক্তি বুদ্ধি তথ্য উপাত্তের সাহায্যে নিজস্ব ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন।
প্রথম অধ্যায়ের বিচরণ ১৭৫৭ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধ থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। তবে আলোচনার সুবিধার্তে পলাশীর যুদ্ধপূর্ব কিছু ঘটনাও এখানে উল্লেখিত হয়েছে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে ১৮০১ থেকে ১৮৫৭ পর্যন্ত। অর্থাৎ ভারতবর্ষে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সম্প্রসারিত হওয়ার থেকে শুরু করে সিপাহী বিদ্রোহ পর্যন্ত।তৃতীয় অধ্যায় ১৮৫৮ থেকে ১৯০৫। সিপাহী বিদ্রোহের পরবর্তী অবস্থা অর্থাৎ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনভার ব্রিটিশ রাজ বা রানী ভিক্টোরিয়ার কাছে হস্তান্তর থেকে শুরু হয়ে বঙ্গভঙ্গ পর্যন্ত।চতুর্থ অধ্যায় ১৯০৫ থেকে ১৯১৮। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে বিপক্ষে তুমুল আলোচনা, তীব্র প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি কাল পর্যন্ত।
ইংরেজ শাসন আমলে বাংলার সমাজ ব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন দেখা যায়। গ্রামকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থার জায়গায় শহরকে কেন্দ্র করেই সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকে। এছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জীবনের মূল মাপকাঠি যা আগে ছিল জমি তা থেকে রূপান্তরিত হয় মুদ্রায়। মুদ্রাভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নগদ অর্থের অভাবে মুসলমান কৃষক ও কারিগরদের অবস্থা শোচনীয় হতে শুরু করে।
বিভিন্ন আন্দোলন বিদ্রোহ সম্পর্কেও আলোকপাত করেছেন লেখক। সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ববর্তী মুসলমান সমাজের আন্দোলন মূলত ধর্ম সংস্কার আন্দোলন রূপেই সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত সিপাহী বিদ্রোহের বেশ কিছুকাল পরে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যবাদ এর দেখা যায় যা পরবর্তীতে মুসলিম জাতীয়তাবোধে রূপ নেয় উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে।
গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাগ সাহিত্য ও চিন্তাধারা। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের অবদানে সমৃদ্ধ। এর তুলনায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূচনা লগ্নে বাঙালি মুসলমানদের পশ্চাৎপদতা বিস্ময়কর।সামাজিক ইতিহাসের দিকে দৃষ্টিপাত করে এ সংকটের কারন ব্যাখ্যা করেছেন লেখক। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের সূচনা ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ধরা হলেও ১৮৬০ এর পূর্বে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের বিকাশ সেইঅর্থে ঘটেনি। এবং সর্বোপরি ১৮৬৯ সালের মশাররফ হোসেনের “রত্নবতী”এর পূর্বে বাংলা সাহিত্যে মুসলমান লেখকের সাহিত্যকর্ম সেইঅর্থে নেই। ১৮৭০ এর দিকে বাঙালি মুসলমানদের মনে আধুনিক শিক্ষা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয় এবং তারা জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যক্ষেত্রে অবদান রাখতে শুরু করেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকেই অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের শেষ লগ্নে মুসলমানদের মধ্যে বিদেশি শব্দবহুল কাব্য রচনার একটা ধারা গড়ে ওঠে। ভাষা বৈশিষ্ট্যের কথা স্মরণ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এই ধারাকে মিশ্র ভাষারীতির কাব্য নামে আখ্যা দিয়েছেন। সাধারণভাবে এ ধারার সাহিত্য মুসলমানি বাংলা কাব্য, বটতলার পুঁথি, বা দোভাষী পুঁথি নামে পরিচিত। এই ধারার কাব্যে আধুনিক জীবনযাত্রার কোনো ছাপ নেই। এই ধারার দৃষ্টিভঙ্গি মূলত মধ্যযুগীয়। অসাধারণ ও অলৌকিক জীবনকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা এই ধারার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। পঞ্চম অধ্যায় এ ধারার কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত পুরনো ধারায় লেখা কিন্তু মিশ্র ভাষারীতির কাব্য নয় এমন রচনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ষষ্ঠ অধ্যায়ে। এই সময় থেকেই ধীরে ধীরে গদ্য রচনা শুরু হয় এবং সেইসাথে সংবাদপত্রের সূচনা- যাকে আধুনিকতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলা যেতে পারে তারও শুরু হয় এই সময় থেকেই। এই ভাবধারা মূলত মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সাধারণ বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে বিচিত্র এবং ভাষারীতির দিক দিয়েও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ অপেক্ষাকৃত কম।
বাঙালি মুসলমানের আধুনিক সাহিত্য সাধনার সূত্রপাত ১৮৭০ থেকে বলা যেতে পারে। পূর্বেই বলা হয়েছে ১৮৭০ এর আগে প্রকৃতপক্ষে আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে মুসলমান রচিত সাহিত্যকর্ম খুব একটা দেখা যায়না। এছাড়াও ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দকে কে যুব-বিভাগ ধরার আরেকটা যুক্তি রয়েছে। এসময় থেকে সরকারি শিক্ষানীতির পরিবর্তনের ফলে বাঙালি মুসলমানের মধ্যে আধুনিক শিক্ষার প্রসার ঘটে।
১৮৭০ থেকে ১৯১৮ অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষ পর্যন্ত- এই প্রায় ৫০ বছরের সাহিত্যকর্মকে তিনটি অধ্যায় আলোচনা করা হয়েছে। যেসব সৃষ্টিধর্মী লেখকদের গ্রন্থাদি ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রকাশিত হয় তাদের আলোচনা করা হয়েছে সপ্তম অধ্যায়ে। অষ্টম অধ্যায় রয়েছে ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক রচনায় এবং রাজনীতি ও সমাজনীতির আলোচনায় উৎসাহী সাহিত্যিকগণ । নবম অধ্যায়ে আমরা পাই বিশ শতকের সৃষ্টিধর্মী লেখকদের আলোচনা।
তাছাড়া সামগ্রিকভাবে আধুনিক যুগের মুসলিম লেখকদের কে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন লেখক।
প্রথম পর্যায়ে পড়ে সৃষ্টিধর্মী লেখকেরা। সাহিত্য সৃষ্টিই এদের মূল উদ্দেশ্য। মীর মশাররফ হোসেন, কায়কোবাদ, মোজাম্মেল হক- এদের সৃষ্টিধর্মী সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে দেখিয়েছেন লেখক। সাধারণভাবে এই ধারার লেখকদের সাহিত্যের মূল উপজীব্য মুসলমানদের জীবনযাত্রা ও ঐতিহ্য। আরেকটি ভাগ হিসেবে ধরা যেতে পারে তথ্যনিষ্ঠ লেখকদের। যাদের সাহিত্য মূলত আলোচনা ভিত্তিক। ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের সম্পর্ক, বিজ্ঞানের উন্নতির পেছনে ইসলামের স্বর্ণযুগের অবদান, ইসলামের মৌলিক ঐক্য- এসবই ছিল তাদের সাহিত্যের মূল ভিত্তি। এই ধারার লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শেখ আব্দুর রহিম মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী প্রমুখ। আরেক ধরনের লেখক রয়েছেন যাদের কাজ মূলত ধর্মতত্ত্ব নিয়ে। এই ধারার সাহিত্যিকদের মূল উদ্দেশ্য ধর্ম প্রচার করা। ইসলামের বিভিন্ন মাযহাবের তুলনামূলক আলোচনা, খ্রিস্টানদের সাথে মুসলমানদের মতপার্থক্য, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গড়ে উঠেছে তাদের সাহিত্যকর্ম। ধর্মতত্ত্ব বিষয়ক লেখকদের মধ্যে নইমুদ্দিন, মেহেরুল্লাহ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
সর্বোপরি এ গ্রন্থে লেখক সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রেক্ষিতে ইংরেজ আমলে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যকর্ম তুলে ধরেছেন। তিনি ইংরেজ আমলে বাংলা সাহিত্যের মুসলিম অবদানের ধারা অনুসরণ করে লেখকদের চিন্তাধারার পরিচয়দান করতে চেষ্টা করেছেন।
শেষে রবীন্দ্রনাথের চিরপরিচিত উক্তি দিয়ে শেষ করি-
“যেতে নাহি দিব।
হায়! তবু যেতে দিতে হয়,তবু চলে যায়।”
সারাদেশ আজ হারালো একজন অভিভাবককে। ওপারে ভালো থাকবেন স্যার।
বই এর নামঃ মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য(১৭৫৭-১৯১৮)। লেখকঃ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান
প্রকাশকঃ চারুলিপি প্রকাশনা। অনলাইলে প্রাপ্তিঃ রকমারি.কম
Remark: তথ্যসূত্র: ১.মুসলিম-মানস ও বাংলা সাহিত্য(১৭৫৭-১৯১৮)। লেখক: আনিসুজ্জামান প্রকাশকাল: প্রথম চারুলিপি প্রকাশ, ফাল্গুন ১৪১৮/ফেব্রুয়ারি ২০১২।
buy terbinafine for sale – lamisil usa buy griseofulvin
https://mexicoph24.life/# mexico pharmacy
https://mexicoph24.life/# mexican drugstore online
buy lamisil 250mg online cheap – diflucan ca buy grifulvin v generic
https://mexicoph24.life/# mexican online pharmacies prescription drugs
https://canadaph24.pro/# buy canadian drugs
https://indiaph24.store/# india pharmacy mail order
http://canadaph24.pro/# online canadian pharmacy reviews
http://indiaph24.store/# top online pharmacy india
http://indiaph24.store/# buy medicines online in india
https://indiaph24.store/# indian pharmacy
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy world reviews
buy rybelsus 14 mg online – buy desmopressin no prescription DDAVP price
https://indiaph24.store/# india pharmacy mail order
https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy service
https://canadaph24.pro/# the canadian drugstore
https://canadaph24.pro/# trustworthy canadian pharmacy
https://indiaph24.store/# indian pharmacies safe
http://indiaph24.store/# india pharmacy
http://canadaph24.pro/# canada rx pharmacy world
http://canadaph24.pro/# canada discount pharmacy
http://mexicoph24.life/# buying prescription drugs in mexico online
https://mexicoph24.life/# mexican border pharmacies shipping to usa
http://mexicoph24.life/# reputable mexican pharmacies online
http://indiaph24.store/# online shopping pharmacy india