৪৮০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ । পারস্য সম্রাট জারক্সিস তার বিশাল বাহিনী নিয়ে আসছেন গ্রীস দখল করতে । দুইলক্ষ সৈন্যের পারস্য বাহিনীর বিরুদ্ধে (কোন কোন ইতিহাসবিদ মনে করেন সংখ্যাটি বিশ লক্ষও হতে পারে) অবস্থান নিয়েছে হাজার দশেক গ্রীক সৈনিক । এদের নেতৃত্বে আছেন স্পার্টার রাজা লিওনাইডাস তার নিজস্ব তিনশ সৈনিক সহ । আরো আছে ফোসান, থেস্পিয়ান, থেবান যোদ্ধা । যুদ্ধের শুরুতে জারক্সিস তার দূত পাঠান আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দিয়ে । তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হবে না, তারা বিবেচিত হবে পারস্য সাম্রাজ্যের বন্ধু হসেবে । শুধুমাত্র পারস্য আনুগত্য মেনে নিতে হবে । কিন্ত তা মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না গ্রীকদের কাছে । দূত তখন অস্ত্রত্যাগে চাপ প্রয়োগ করলে লিওনাইডাস বলেন, “নিজের যোগ্যতায় নিয়ে যাও ।” ক্ষিপ্ত দূত বলে বসে, “আমাদের তীরন্দাজরা তোমাদের সূর্য ঢেকে ফেলবে ।” তা শুনে রাজার সেনাপতি বলে ওঠেন, “ভালোই তো, তাহলে আমরা ছায়াতে আরামে যুদ্ধ করব !”
ইতিহাসবিদ হেরোডটাসের বর্ণনার আলোকে উপরের উক্তিদুটি পাওয়া যায় । ব্যাটল অফ থার্মোপলি- যা নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক বীরত্বগাথা, আছে চলচ্চিত্র (জ্যাক স্নাইডার পরিচালিত 300) । এই যুদ্ধের গল্প গ্রীক যোদ্ধাদের, বিশেষত স্পার্টানদের বীরত্ব, কখনো পিছিয়ে না যাওয়া মনোভাব প্রকাশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত । তো পাঠক, আজ আমরা এই যুদ্ধের আদলে জেনে নিই বিশ্বের অন্যতম সেরা সেনাবাহিনী, স্পার্টান যোদ্ধা দের সম্পর্কে ।
পাহাড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আছেন এক বয়স্ক পুরুষ । হাতে এক নবজাতক । নেড়েচেড়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে বাচ্চাটিকে । কোনরকম শারীরিক ত্রুটি থাকলে বাচ্চাটি নিক্ষিপ্ত হবে পাহড়ের পাদদেশে । কোন নবজাতকের জন্মের পর এমন দৃশ্য স্পার্টান সমাজে বেশ প্রচলিত ছিল । তারা ছিল সম্পূর্ণ সামরিক জাতি, প্রত্যেক পুরুষের জন্য বাধ্যতামূল্ক ছিল সৈনিক হওয়া । যদি জন্মের সময়ই কোন ত্রুটি চোখে পরে, তো তাকে বাচিয়ে রাখার কোন প্রয়োজন আছে বলে রাষ্ট্র মনে করত না । এখানে বাচ্চার বাবা-মার মত অপ্রয়োজনীয় । প্রত্যেক সদস্যের রাষ্ট্রের জন্য কোন না কোনভাবে কিছু করতে হবে । পুরুষদের কাজ ছিল সৈনিক হওয়া আর নারীরা তার ছেলে সন্তান রাষ্ট্রের জন্য আত্মত্যাগ করত । তাদের সমাজে কেবল দুধরণের মৃত্যু সম্মানসূচক ধরা হত- যুদ্ধের ময়দানে কোন পুরুষের আর সন্তান জন্মদানে কোন নারীর মৃত্যু ।
প্রথম পরীক্ষা পাশের পর, ছেলে সন্তান তার পরিবারের সাথে ৭-৮ বছর বয়স পর্যন্ত থাকতে পারত । তারপর তার জন্য রাষ্ট্র পরিচালিত Agoge যোগদান ছিল বাধ্যতামূলক । এখানে তাদের শেখানো হত সাধারণ পড়াশোনার পাশাপাশি যুদ্ধবিদ্যার নানা কলাকৌশল । চলত কঠোর প্রশিক্ষণ, শারীরিক এবং মানসিক । অনেক সময় তাদের ইচ্ছা করেই কম খাবার দেওয়া হত, বাধ্য করা হত ক্ষুধার যন্ত্রণা সইতে না পেরে চুরি করতে । কিন্ত ধরা পড়লে পেতে হত কঠোর শাস্তি, কারণ ধরা না পড়ে চুরি করা শেখানো ছিল মূল উদ্দেশ্য । একজন সৈনিকের সন্তর্পণে চলা শেখা খুব প্রয়োজন । তাদের বছরে একটার বেশি কাপড় দেওয়া হত না, ঘুমানোর জন্য থাকত না আলাদা বিছানা । মাটিতে, পাতা বিছিয়ে যেভাবে নিজেরা ব্যবস্থা করতে পারে । এগুলো সব ছিল অমানবিক শারীরিক ও মানসিক সহ্যক্ষমতা এবং দেশের প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য সম্পন্ন নাগরিক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া । এজন্যই স্পার্টানদের মধ্যে এথনীয়ানদের মত কোন কবি-সাহিত্যিক বা দার্শনিক তৈরী হয় নি ।
সাত/আট বছর বয়সে প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে তা চলত প্রায় বিশ বছর বয়স পর্যন্ত । বিয়ের জন্য উৎসাহিত করা হত ত্রিশ বছর বয়সের দিকে । একজন যোদ্ধার প্রায় ষাট বছর বয়স পর্যন্ত মিলিটারি সার্ভিস বাধ্যতামূলক ছিল, যদি এতদিন বেচে থাকত তো । যোদ্ধাদের সবসময় ব্যস্ত থাকতে হত যুদ্ধ নিয়ে । তদের নিজেদের দাস সম্প্রদায়, হেলটদের সামলানোর জন্যও কাজে লাগানো হত । আর প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রীক রাষ্ট্রগুলোর সাথে রেষারেষি তো লেগেই থাকত ।
স্পার্টান পুরুষরা যুদ্ধে ব্যস্ত থাকত, আর নারীরা তাদের যুগ অনুযায়ী অন্যান্য গ্রীক রমনীদের থেকে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করত । তাদের কারো কারো নিজস্ব ব্যবসা ছিল, তাদের নিজস্ব জীবনসাথী নির্ধারণের অধিকার ছিল । এমনকি তৎকালীন স্পার্টান নারীরা অনেকরকম খেলাতেও অংশগ্রহণ করত । তো,পাঠক, একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন তো, সাধারণ জীবনধারণের কাজগুলো, যেমন খাদ্য উৎপাদন, এই কাজগুলো কারা করত ?
স্পার্টা ছিল সম্পূর্ণ একটি দাসনির্ভর সমাজ । তাদের সমস্ত কাজ করত হেলটরা । হেলটরা সংখ্যায় ছিল অনেক বেশি । সেজন্য তাদের দমিয়ে রাখতে সেনাবাহিনী প্রয়োজনে ব্যবহার হত । তাদের ছিল Kryptea নামক বিশেষ বাহিনী, যার কাজ ছিল অনেকটা গুপ্তচর আর পুলিশের মাঝামাঝি । আবার এই হেলটদেরই ব্যবহার করা হয়েছে কোন কোন যুদ্ধে । থার্মোপলির পর ৪৭৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্ল্যাটিয়ার যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ হাজার হেলট নিযুক্ত করা হয়েছিল । এরপর অনেক বছর পর পেলোপনেশীয় যুদ্ধে (৪৩১-৪০৪ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) স্পার্টান বাহিনীতে রীতিমত প্রশিক্ষণ দিয়ে হেলটদের নিয়োগ দেয়া হয় ।
বাচ্চা ছেলেদের যখন প্রথম Agoge এ আনা হয়, তার পরবর্তী দশ/বারো বছর তাদের চুল ছোট রাখা বাধ্যতামূলক থাকে । কিন্ত তাদের রাষ্ট্রীয় প্রশিক্ষণ শেষ হলে তারা যখন বাহিনীতে যোগ দেয়, তখন তাদের চুল বড় রাখতে উৎসাহিত করা হয় । তারা মনে করত এতে যোদ্ধাদের আরো বিশা্লদেহী দেখাত আর ভয়ঙ্কর দর্শন যোদ্ধাদের রীতিমত যমদূতের মত লাগত্ । এছাড়া এটা ছিল তাদের মতে স্বাধীনচেতা মানসিকতার পরিচয় । তারমানে এই নয় যে-আমি যা ইচ্ছা তাই করব, রাষ্ট্রের নিকুচি করি । বরং তারা অন্যকোন শক্তি বা রাজার পদানত হবে না এই ছিল তাদের স্বাধীনতার দর্শন । ব্যপারটা কেমন যেন অদ্ভূত, যে জাতি এত স্বাধীনচেতা তারা বিশাল দাস সমাজের মালিক, যেন স্বাধীনতা কেবল তাদের পৈতৃক সম্পদ । আর এই দাসদের তারা কতটা নিচের সারিতে রাখত তার একটু ধারণা পাওয়া যাবে Agoge এর শেষ পরীক্ষা সম্পর্কে জানলে । এই পরীক্ষার জন্য একজন হেলটকে নির্দিষ্ট কোন জায়গায় রেখে আসা হত । আর একজন শিক্ষানবিশ যোদ্ধার কাজ হত সবার চোখ এড়িয়ে পাহারারত সৈনিকদের ফাঁকি দিয়ে খালি হাতে সেই দাসকে হত্যা করে ফেরত আসা । ধরা পড়লে পেতে হত কঠোর শাস্তি, খুন করার জন্য তো অবশ্যই নয়, খুন করে ধরা পড়ার জন্য ।
এবার থার্মোপলির যুদ্ধে আমরা একটু ফেরত যাই । লিওনাইডাস যখন এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন, তখন তার বয়স প্রায় পঞ্চাশ । তার সাথে রয়েছে প্রায় হাজার দশেক গ্রিক সেনা, আর তার নিজস্ব তিনশ যোদ্ধা । স্পার্টান পরিষদ তখনো অন্যান্য গ্রিক রাষ্ট্রের সাথে মিলে পারস্য আক্রমণ ঠেকানোর মত ব্যাপার মেনে নিতে পারছিল না । তাই তারা এ যুদ্ধে এথেন্সের থেমিসটিক্লিসের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছিল না । কিন্ত লিওনাইডাস বদ্ধপরিকর এ যুদ্ধে যাওয়ার ব্যপারে । তিনি দৈববাণী অনুযায়ী বিশ্বাস করেছিলেন তিনি যদি এ যুদ্ধে যোগ না দেন, তবে তাদের ধ্বংস কেউ ঠেকাতে পারবে না ।
স্পার্টানরা যদিও যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনদিকে খুব একটা মনোযোগী ছিল না, তারপরও তাদের মধ্যে দেবতাদের খুশি করার একটা মানসিকতা ছিল । তারা নিয়মিত ডেলফিতে দেবতা অ্যাপোলোর মন্দিরে অর্চনা করত । বড় ধর্মীয় উৎসবের আগে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকত । কোন বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঠেকানোর আগে দেবতাদের সম্মতি লাভের আশায় রাজা দেবতা জিউসের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করতেন । যজ্ঞের আগুন একজন নির্দিষ্ট বাহক পুরো যুদ্ধের সময় বহন করত দৈব সুরক্ষার আশায় । এই বাহককে বলা হত Pyrphorus ।
থেমিস্টিক্লিসের আহ্বানের পর রাজা লিওইনাইডাসকে মন্দিরের পুরোহিত জানান হয় পারস্য বাহিনী তাদের ধ্বংস করবে অথবা হেরাক্লিসের বংশধরদের রাজা মারা যাবেন । হেরাক্লিসকে ধরা হয় জিউসপুত্র হিসেবে । লিওনাইডাস নিজেকে হেরাক্লিসের বংশধর বলে মনে করতেন । তিনি বিশ্বাস করেছিলেন তার আত্মত্যাগ স্পার্টাকে বাচাবে । তাই তিনি পীড়াপীড়ি করে যুদ্ধে যাবার জন্য পরিষদকে রাজি করান কিন্ত মাত্র তিনশ নিজস্ব সেনা সাথে নেবার অনুমতি পান । প্রতিবছর তিনশ সেরা হপলাইট নিয়োগ দেওয়া হত রাজার ব্যক্তিগত রক্ষী হিসেবে । অবশ্য তিনি সাথে নয়শ হেলটকেও নিয়েছিলেন বলা হয়ে থাকে ।
জারক্সিসের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর, লিওনাইডাস যুদ্ধ শুরুর অপেক্ষা করতে থাকেন । বিশাল পারস্য সেনাসমুদ্র ঠেকানোর জন্য লিওনাইডাস থার্মোপলির এই উপকূলীয় রাস্তা বেছে নিয়েছিলেন, কারন এর একদিকে ছিল পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র । আর পথটা খুব বেশি লোক পাশাপাশি চলার মত প্রশস্ত নয় । এইরকম একজায়গায় অবস্থান নিয়ে অল্পসংখ্যক প্রশিক্ষিত লোক অনেক বড় বাহিনীকেও আটকে রাখতে পারে । জারক্সিস প্রথমে হাজার দশেক সেনা পাঠান । এই সৈনিকরা ময়দানে গিয়ে যেন দেখল চকচকে একটি দেয়াল তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।
স্পার্টান যোদ্ধারা ভারী অস্ত্রশস্ত্র আর বর্ম পরে যুদ্ধ করত । তাদের জীবনের শুরুর দিকে Agoge এ প্রশিক্ষণের শুরুর দিকে শেখানো হত Pyrriche নামক একপ্রকার নাচ, যা মূলত ভারী অস্ত্র নিয়ে সাবলীলভাবে নড়াচড়া করা শেখানোর জন্য ব্যবহৃত হত । স্পার্টানদের ভারী অস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল প্রায় তিন ফুট ব্যাসের ঢাল, হপলন । এটি তৈরী হত কয়েক স্তরের কাঠের উপর ব্রোঞ্জের আবরণ বসিয়ে । এর ওজন থাকত প্রায় আট-দশ কেজি । হপলন বহনকারীরা পরিচিত হত হপলাইট নামে । ঢালের একপাশ অনেক সময় খোলা জায়গা থাকত বর্শা দিয়ে আঘাত করার জন্য । এইদুটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন স্পার্টান যোদ্ধার জন্য । এছাড়া তারা বহন করত মাঝারি তলোয়ার । তাদের যদি কেউ প্রশ্ন করত কেন তাদের তলোয়ার আকারে ছোট, তখন তারা উত্তর দিত কারণ এটি শত্রুর হৃদপিন্ড বিদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট বড় । এছাড়া তারা হেলমেট, ব্রেস্টপ্লেট ব্যবহার করত । এই হপলাইট গঠিত ফ্যালাংস ছিল স্পার্টান বাহিনীর মূল শক্তি ।
ফ্যালাংস, ছিল হপলাইট দিয়ে গঠিত বিশেষ ধরণের সমন্বয়, যা নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মেনে গঠিত হত । এ গঠন যত মজবুত হত, যুদ্ধে গ্রীকরা তত বেশই পারদর্শিতা দেখাতে পারত । স্পার্টান ফ্যালাংস সাধারণত প্রতি লাইনে আটজন করে সেনা নিয়ে গঠিত হত । ফ্যালাংসের প্রতি সদস্য নিজের বর্শা নিয়ে তৈরী থাকত । প্রথম দুই লাইনের যোদ্ধারা শত্রুপক্ষের যোদ্ধাদের বর্শা দিয়ে আঘাত করত । আর পিছের লাইনের সবাই সামনের যোদ্ধাদের পিঠে চাপ প্রয়োগ করত । প্রত্যেক লাইনের সদস্য ঢাল দিয়ে একটা দেয়াল তৈরী করত যা শত্রুদের ঠেকাতে ও চাপ প্রয়োগ করে তাদের বাহিনী ছত্রভঙ্গ করতে কাজে লাগত । কিন্ত যদি কোন কারণে তাদের নিজেদের বাহইনী ছত্রভঙ্গ হত তবে তখন যে যার মত যুদ্ধ করতে বাধ্য হত । তবে পালানোর চিন্তা তারা সাধারণত করত না, কারণ তাদের সমাজে যুদ্ধে বিজয়ী অথবা যুদ্ধে নিহত ছাড়া অন্য সৈনিকরা তিরস্কৃত হত ।
রাজা লিওনাইডাস তার দুই যোদ্ধাকে থার্মোপলির যুদ্ধের শুরুতে ফিরে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন, কারণ তারা চোখে ইনফেকশন বাঁধিয়েছিল । ফ্যালাংসের মূল ভিত্তি ছিল সবার একসাথে কাজ করতে পারা কিন্ত একজন যদি চোখে না দেখে ঠিকমত তবে তা পুরো বাহিণীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে । কিন্ত রাজার আদেশ মেনেও তারা সমাজে ধিক্কৃত হতে থাকে । তাদের সন্তানদের নিয়ে মানুষ উপহাস করত । পরের বছর আরেকটি পারস্য আক্রমণ হয়েছিল যাতে তারা যোগদান করে মারা যায় । এবার তাদের কাপুরুষ সিল যেন উঠিয়ে নেওয়া হয় । সহযোদ্ধাকে ফেলে পালিয়ে আসার ব্যাপারটা তারা মেনেই নিতে পারত না । এইধরণের মানসিকতার জন্যই স্পার্টানরা ঢালের গুরুত্ব দিত সবচেয়ে বেশি । কেননা অন্য সব অস্ত্র নিজেকে রক্ষার জন্য কিন্ত ঢাল অন্যকে রক্ষা করার জন্য কেননা ফ্যলাংসের গঠন এমন থাকত যে প্রত্যেকে তার পাশের যোদ্ধার ঢাল দিয়ে নিজেকে রক্ষা করত আর প্রত্যেকের ঢাল পাশাপাশি এক হয়েই তাদের দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরী হত । এমনকি বলা হয়, যুদ্ধে পাঠানোর আগে মা নাকি তার সন্তানকে বলতেন, “হয় ঢাল নিয়ে বিজয়ী বেশে ফেরত আসবে নইলে লাশ হয়ে এর উপর ।” স্পার্টান মায়েরা সন্তানদের একটু ভিন্নভাবে ভালবাসতেন !
থার্মোপলির উপত্যকা । একপাশে লিওনাইডাস তার নিজের তিনশ স্পার্টান সৈনিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন অন্যদিকে আছে সম্রাট জারক্সিসের লাখ লাখ সৈনিক । অন্যদিকে থেমিসটিক্লিস তার নৌবহর নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন আরটিমিসইয়ান স্ট্রেইট যেন সাগর থেকে কোণ আক্রমণ না আসে । জারক্সিস প্রথমদিন হাজার দশেক সৈনিক পাঠান । কিন্ত তারা গ্রীকদের সামনে কচুকাটা হয় । পারস্য সৈনিকরা এই ধরনের যুদ্ধের জন্য অভ্যস্ত নয় । তারা এত ভারী বর্মও পরে না । তাদের প্রথম আক্রমণে যখন হাজার হাজার তীর ছোঁড়া হয়, গ্রীকদের ভারী ঢাল তা অনায়াসে ঠেকিয়ে দেয় । এরপর তাদের উপর যেন সাক্ষাৎ যমদূত নেমে আসে ।
অবস্থা বেগতিক দেখে জারক্সিস পরেরদিন তার বিশেষ বাহিনী পাঠান, The Immortals । কিন্ত এরাও গ্রীকদের সামনে কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না । এরমধ্যে জারক্সিস আরেকটি পথের সন্ধান পান যা একটু ঘুরে গিয়ে থার্মোপলির পিছে মিলিত হয় । লিওনাইডাস নিজেও এই পথের কথা জানতেন, তাই তিনি সেখানে পাহারাও বসিয়েছিলেন । কিন্ত পাহারাদাররা পারস্য বাহিনীর বিশালতা দেখে ভয়ে পালিয়ে যায় । লিওনাইডাস এই খবর পান অন্য এক বাহকের মাধ্যমে । তিনি বুঝতে পারেন মৃত্যু নিশ্চিত । তাই সবাইকে নির্দেশ করেন পালিয়ে যেতে, আবার শক্তি সঞ্চয় করে নতুনভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে । কিন্ত স্পার্টানরা রয়ে যায় । আর তাদের সাথে থাকে আরো প্রায় হাজারখানেক অন্যান্য গ্রীক যোদ্ধা ।
থার্মোপলির যুদ্ধের শেষদিন । গ্রীকদের চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে পারস্য বাহিনী । চারদিক থেকে অনবরত আক্রমণ হচ্ছে । গ্রীকরা তাদের শেষ যুদ্ধ করছে । তারা কি অমরত্বের জন্য এই যুদ্ধ করছিল ? নাকি যারা পালিয়ে গিয়েছিল তাদের কিছু বাড়তি সময় পাইয়ে দেবার জন্য ? লিওনাইডাস কি আসলেই মনে করেছিলেন তার ত্যাগ স্পার্টাকে বাচাবে ? কিন্ত একটা কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, তাদের এই বীরত্বের একটা প্রভাব পরবর্তী পারস্য আক্রমণ ঠেকানোতে সমগ্র গ্রীসকে এক করেছিল ।
থার্মোপলির এই যুদ্ধ পশ্চিমের সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধ গুলোর একটি ধরা হয় । লিওনাইডাস আর তার স্পার্টান যোদ্ধা এবং তাদের সাথে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করা থেসপিয়ানদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বর্তমান Kolonos hill, যেখানে তারা শেষবারের মত মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে গিয়েছিল বলে মনে করা হয়, একটা সৌধ নির্মিত আছে, যেখানে লেখা আছে, “Go, tell the Spartans, stranger passing by, that here, obedient to their law, we lie .”
তথসূত্রঃ
১. https://www.history.com/topics/ancient-history/sparta
২. https://www.history.com/topics/ancient-history/sparta
৩. https://www.nationalgeographic.com/archaeology-and-history/magazine/2016/11-12/sparta-military-greek-civilization/
৪. https://io9.gizmodo.com/were-the-spartans-truly-the-greatest-warriors-of-all-ti-1536740733
৫. https://www.youtube.com/watch?v=e_1d3ZasrTA
zetia 10 mg side effects
zofran and ssris