সময় ৬ জুন, ১৮৫৭ সাল। ভারতীয় রাজ্য উত্তর প্রদেশের বর্তমানে দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ হিসেবে খ্যাত কানপুরে চলছিলো বিদ্রোহ আর এর নেপথ্যে ছিলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। সে সময়ে একজন ব্যক্তির কর্মকান্ড হতবাক করে দেয় ব্রিটিশদের। সেই ব্যক্তিটি খুব সহসাই কানপুরের কর সংগ্রাহক চার্লস হিল্লারসডনের ভরসা জিতে নেন এবং খুব কাছের একজন হয়ে যান। বাইরে যতোই ব্রিটিশদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দেখা যায় তার ভিতরে ততোই ছিলো লুকায়িত অন্য কোন সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনা। পরিকল্পনায় ছিলো সে তার ১৫০০ সৈন্য নিয়ে যোগ দিবে এবং ব্রিটিশের সঙ্গ দিবে বিদ্রোহ দমাতে। কানপুরের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ সামনে রেখে তিনি তাঁর সেনা সদস্যদের নিয়ে এগিয়ে গেলেন শহরের উত্তরাংশের ব্রিটিশ গোলা বারুদের ভান্ডারের অভ্যন্তরে। সে সময়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৫৩ তম ইনফেন্ট্রির সদস্যরা মনে করেছিলো তিনি এবং তাঁর সেনারা এসেছিলো ব্রিটিশ কোম্পানীর পক্ষ হয়ে বিদ্রোহ দমাতে সাহায্যার্থে তবে। যাইহোক, যখন তিনি এরিনায় ঢুকে পড়লেন তখন তাঁর মনের অভিব্যক্তি মুখ ফুটে প্রকাশ করলেন, তিনি ছিলেন বিদ্রোহীদের পক্ষের একজন যে কোম্পানীর বিরুদ্ধে লড়তে এসেছেন এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এর অধীনে থাকার মনস্কামনা ব্যক্ত করেন।
কোম্পানীর সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর তিনি গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোডের দিকে অগ্রসর হোন যেথায় তিনি মারাঠা সঙ্ঘ মৈত্রী পেশোয়া প্রথার অধীনস্থ করতে চাইছিলেন এবং এরই মধ্যে কানপুর দখলের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। কল্যাণপুরে পথিমধ্যে দেখা পেলেন বিদ্রোহীদের সাথে এবং জানতে পারলেন তারা দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ এর এর সাথে দেখা করতে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। তাদের অনুরোধ করা হয়েছিলো কানপুর উদ্ধারে সহায়তা করার জন্য কিন্তু প্রথমে তারা অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও পরে যোগ দেয় তবে বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে। জানতে পাওয়া যায় শর্তগুলো ছিলো,
তাদের দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে এবং স্বর্ণ দ্বারা পুরষ্কৃত করতে হবে যদি তারা ব্রিটিশ দুর্গ ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। সেই নায়ক তাদের সব দাবী মেনে নেয় এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়।
১৮২৪ সালের ১৯ শে মে বিথোরের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে মাতা গঙ্গা বাইর গর্ভ হতে জন্মগ্রহণ করেন এই ব্যক্তি যার নাম হলো নানা ধন্দু পান্ত যাকে আমরা সবাই চিনি নানা সাহেব নামে। তিনি ছিলেন ১৮৫৭-৫৮ সালে হওয়া ব্রিটিশ বিদ্রোহের সম্মুখভাগের নেতা। তাঁর পিতা নারায়ণ ভাট ছিলেন একজন শিক্ষিত ব্রাহ্মণ যিনি স্বপরিবারে পশ্চিম ঘাটে গমণ করেন সাবেক পেশোয়ারের অধীনে একজন সহকারী হিসেবে আদালতে কাজের খোঁজে। সেসময় তৃতীয় মারাঠা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পেশোয়া বাজি রাও দ্বিতীয় কে কানপুরের বিথোর নামক স্থানে পাঠিয়ে দেয় যেখানে তিনি এক বিরাট স্থাপনার দেখভাল করতেন। বাজি রাও দ্বিতীয় ছিলেন নিঃসন্তান আর ওই সময়ে ভদ্দরনোক ব্রাহ্মণ নারায়ণ ভাট গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে। তখনই বাজি রাও নানা সাহিব এবং তাঁর ছোট ভাইকে দত্তক হিসেবে নিয়ে নেন ১৮২৭ সালে। তাঁর ছোটবেলা কাটে আজিমুল্লাহ খান, তান্ত্য তোপে আর মানিকার্ণিকা তাম্বের সাথে যিনি পরবর্তীতে রাণী লক্ষ্মী বাই উপাধী লাভ করে।
সময়কাল ১৮৪৮ সাল। ইন্ডিয়ার ব্রিটিশ গভর্ণর জেনারেল লর্ড ডালহৌসে (১৮৪৮-১৮৫৬) এক সম্মিলন চুক্তির প্রবর্তন করেন যা “Doctrine of Lapse” নামে পরিচিত হয়। এই চুক্তির শর্তাবলী ছিলো, ব্রিটিশ অধীনস্থ বিধিনুযায়ী যেসব অঞ্চল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে রয়েছে তা কোন ধরণের বাঁধা বিপত্তি ছাড়াই তাদের দখলে চলে আসবে যদি সেসব অঞ্চলের শাসক সুস্পষ্টভাবে অসমর্থ ঘোষিত হয় অথবা কোন উত্তরাধিকার না রেখেই মৃত্যুবরণ করে। দেশের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ স্থান সাতারা (১৯৪৮), জয়পুর এবং সাম্বালপুর (১৮৪৯), বাগহাট (১৮৫০), নাগপুর (১৮৫৩ এবং ঝাঁসি (১৮৫৪) সালে কোম্পানী দখল করে নেয় উক্ত চুক্তির ক্ষমতাবলে। ওইদিকে ঔদ (Oudh – ১৮৫৬) রাজ্যের শাসককেও অপসারণ করা হয় সঠিকভাবে রাজ্য পরিচালনায় ব্যর্থতার দায়ে। এসব কার্যাদি সম্পাদনের জন্যে ব্রিটিশ কোম্পানী প্রায় ৪ মিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং খরচ করতো। এসব আগ্রাসী ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেই পরবর্তীতে বিদ্রোহের সৃষ্টি করে।
নির্বাসিত হওয়ার পরে বাজি রাও দ্বিতীয় পেনশন হিসেবে প্রায় ৳ ৮০ হাজার পেতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী হতে। তবে ১৮৫১ সালে বাজি রাও দ্বিতীয় এর মৃত্যুর পরে এই সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয় যার কারণ ছিলো নানা সাহেব ছিলো দত্তক নেয়া সন্তান এবং ব্রিটিশ কোম্পানীর শর্ত ছিলো নিজ ঔরসজাত সন্তান হতে হবে যার কারণে উক্ত পেনশনের সুবিধাদি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সেই সাথে বাজি রাও দ্বিতীয় এর রাজ্যও কেড়ে নেয়া হয়। যদিও নানা সাহেব যথেষ্ট বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও বাজি রাও দ্বিতীয় এর মৃত্যুর পরে এমনসব সম্মানহানিকর শর্তারোপের ফলে পেনশন এবং বিভিন্ন ধরণের পদবী ছিনিয়ে নেয়ার কারণে চরমভাবে অপমানিত হোন।
সময়কাল ১৮৫৩, আজিমুল্লাহ খানকে নানা সাহেব ইংল্যান্ডে পাঠান এসব বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সাথে বাতচিত করার জন্যে। তবে আজিমুল্লাহ খান এ ব্যাপারে ব্যর্থ হোন এবং ১৮৫৫ সালে দেশে চলে আসেন খালি হাতে।
সময়টা ছিলো ১৮৫৭ সাল, জুনের ৫ তারিখ যখন জেনারেল হুইলারের পরিখায় আক্রমণের জন্য মনস্থ করা হয়। ওইদিন নানা সাহেব জেনারেল হুইলারের কাছে একটি পত্র পাঠান এই বলে যে সকাল ১০ ঘটিকায় তার স্থানে আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর পরের দিন অর্থাৎ ৬ জুন, নানা সাহেবের সৈন্য (বিদ্রোহীও সংযুক্ত ছিলো) প্রায় সকাল ১০.৩০ টার দিকে আক্রমণ করে বসে। যদিও কোম্পানীর বাহিনী মোটেও এমন ধরণের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিলো না তবে তারা কোনমতে আক্রমণ এড়িয়ে নিজেদের বাঁচাতে সক্ষম হলো যেহেতু আক্রমণকারীরা নিজেই পরিখার অভ্যন্তরে ঢোকার ব্যাপারে অনাগ্রহী মনে হচ্ছিলো। কারণ হিসাবে জানা যায়, নানা সাহেবের সৈন্যরা জানতো কোম্পানী বাহিনীর কাছে গোলা বারুদ রয়েছে যা তারা সন্নিকটে গেলেই বিষ্ফোরণ ঘটাবে। কোম্পানী তাদের নিজেদের দূর্গে তিন সপ্তাহোধিক অবস্থান করে সল্পকিছু পরিমাণ পানি এবং খাদ্য দ্রব্যাদি সহিত এবং তাদের মধ্যে অনেকেই পানি এবং অত্যধিক রোদে মারা যায়। নানা সাহেবের এই আক্রমণের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কিছু বিদ্রোহী এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। জুনের ১০ তারিখে তাঁর সৈন্য সংখ্যা প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজারে রুপান্তরিত হয়।
প্রথম সপ্তাহের অবরোধকালীন, নানা সাহিবের সৈন্যরা স্থানের চারিদিকে অবস্থান নিয়ে পলায়নের রাস্তা তৈরী করেন, সাথে গুলি বর্ষনের জন্য দালানগুলোর আশেপাশে পয়েন্ট তৈরী করে। কোম্পানীর ক্যাপ্টেন জন মোরে প্রতিশোধ এবং পাল্টা জবাব দেয়ার নিমিত্তে আক্রমণের কৌশল হিসেবে রাতের আধারে আক্রমণ চালানোর প্রস্তুতি নেন। নানা সাহিব সরাসরি আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন তবে বিদ্রোহীদের মধ্যে উদ্যমের অভাব একদম সুস্পষ্ট। স্নাইপার এবং গোলাবর্ষণ জুনের ২৩ তারিখ অবধি চললো। দিনটি ছিলো পলাশীর যুদ্ধের ১০০ তম বছর। সেই উদ্যম গায়ে জড়িয়ে সাহিবের সৈন্যরা মিলে পরিখায় স্নাইপার, গোলাবর্ষণের দ্বারা আক্রমণের পর আক্রমণ চালানোর ফলে কোম্পানীর সৈন্যসামন্ত দ্রুত খতম হতে থাকে। জেনারেল হুইলারের মনোবল একসময় ভেঙ্গে পড়ে যখন তাঁর পুত্র গর্ডন হুইলারের শিরোচ্ছেদ করার মাধ্যমে মেরে ফেলা হয়।
পরেরদিন সাহেব রোজ গ্রিনওয়ে নামের এক ইউরোপিয়ান কারাবন্দীর মাধ্যমে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে শপথ করেন ইউরোপিয়নদের সাতিচৌড়া ঘাটে নিরাপদে পৌঁছে দিবে যা আল্লাহাবাদের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জেনারের হুইলার এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেন যেহেতু তা সত্যায়িত ছিলো না যে সাহিব সত্যিই এই চুক্তি করেছে কিনা। পরেরদিন নানা সাহেব পুনরায় সত্যায়িত করে দ্বিতীয় পত্র পাঠান মিসেস জ্যাকোবি নামের আরেক কারাবন্দীর দিয়ে। পরেরদিন আর কোন গোলাবর্ষণ হলো না, জেনারেল হুইলা আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হলো। তাদের সৈন্যদের মৃতদেহ মাটি দেয়ার পর জুনের ২৭ তারিখ প্রত্যুষে ইউরোপীয়ানরা এলাহাবাদের উদ্দেশ্যে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
নানা সাহেব ছিলেন শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি। তিনি সংস্কৃত বিষয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন তবে পাশ্চাত্য কোন শিক্ষা তাঁর ছিলো না যার কারণে শীর্ষ ভারতীয় ইংরেজী পত্রিকাসমূহ পড়তেন যা অনুবাদ করে দেয়া হতো। ব্যক্তিজীবনে তিনি সাংলির চিফের আত্মীয়কে বিয়ে করেন। তবে জুন পেরিয়ে নভেম্বরের দিকে কোম্পানী পুনরায় কানপুর দখল করে ফেলার পর তিনি হঠাৎ উধাও হয়ে যান। তাঁর সেনাপতি তান্ত্য তোপে বহু চেষ্টা চালান দখলদারিত্ব হতে কানপুরকে বাঁচাতে তবে ব্যর্থ হোন। খবর পাওয়া যায়, সেপ্টেম্বরের দিকে নানা সাহেব ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হোন। সন্দেহের তীর ছুটে যায় রাণী লক্ষ্মী বাই, তান্ত্য তোপে আর রাও সাহেবদের দাবী যা ছিলো নানা সাহেব ১৮৫৮ সাল অবধি তাদের গোয়ালিওরের পেশোয়া ছিলেন। পরে আরো খবরে জানা যায়, নানা সাহেব নেপালে পালিয়ে যান ১৮৫৯ সালে। যদিও ইতিহাসবিদরা বলে দিয়েছিলেন নানা সাহেব ১৮৫৮ সালে নেপালে মারা যান কিন্তু বাজি রাও সুরোজ প্রতাপের মতে তিনি ১৯২৬ সাল অবধি বেঁচে ছিলেন। তবে যাই হবে হোক, ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহীদের নিয়ে প্রতাপের সাথে লড়ে জয় ছিনিয়ে আনা সেই ব্যক্তি ছিলো নানা সাহেব।
cost terbinafine 250mg – diflucan 200mg tablet buy griseofulvin generic
buy rybelsus pills – semaglutide 14mg canada DDAVP uk