তৈমুর বৃত্তান্ত – এক দিগ্বিজয়ী যোদ্ধার উত্থান

2

মনে আছে ছোটবেলায় পড়া সেই গল্পটার কথা? ঐ যে, যুদ্ধে পরাজিত এক ক্ষুধার্ত ব্যক্তি এক গৃহিণীর কাছে ভাত চাইলে গৃহিণী তাকে গরম ভাত দেন এবং তিনি গরম ভাতের একেবারে মধ্যে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। তারপর গৃহিণী তাকে তাচ্ছিল্য করে বলেন, তুমি তো দেখছি তৈমুরের মতই বোকা যে মধ্য থেকে শুরু করে। হ্যাঁ আজ সেই তৈমুর লং এর গল্প শোনাব আপনাদের।

তৈমুর দ্য লেম বা তৈমুর লং বা তামার্লেন
তৈমুর দ্য লেম বা তৈমুর লং বা তামার্লেন
Source: Wikipedia

তৈমুর ( ৯ এপ্রিল ১৩৩৬ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৪০৫ ) ঐতিহাসিক ভাবে তৈমুর দ্য লেম বা তৈমুর লং বা তামার্লেন হিসেবে পরিচিত। তিনি একজন তুর্কি-মংগোলিয় বংশোদ্ভূত শাসক ও রাজ্য বিজেতা ছিলেন। তিনি পারস্য ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলে তৈমুরী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং তৈমুরী রাজবংশের প্রথম শাসক ছিলেন । জন জোসেফ সন্দার্সের মতে তৈমুরের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল ইরানে এবং তিনি যাযাবর ছিলেন না। ট্রানসোক্সানিয়ার বার্লাসে (বর্তমানে যা উজবেকিস্তান) ৯ এপ্রিল ১৩৩৬ সালে জন্মগ্রহণকারী তৈমুর ১৩৭০ সালে পশ্চিম চাঘাতাইখানাত এর শাসন নিয়ন্ত্রণে নেন এবং সেটিকে ভিত্তি করে পশ্চিম, দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া, ককেশাস এবং দক্ষিণ রাশিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি মিশর এবং সিরিয় অঞ্চলের মামলুকের পতন, ওসমানী সাম্রাজ্যের উত্থান এবং দিল্লীর সুলতানি শাসনের উৎখাত করে একসময়য় মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রথম জীবন

তৈমুর ১৩৩৬ সালের ৯ এপ্রিল ট্রানসোক্সানিয়ার বার্লাসে (বর্তমানে যা উজবেকিস্তান) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা তারাক্বাই বার্লাসের একজন মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। জেরার্ডচালিয়ান্ডের মতে তৈমুর মুসলিম ছিলেন এবং চেঙ্গিস খানের বংশধর না হওয়া স্বত্বেও নিজেকে চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারী মনে করতেন। একারণে তিনি স্পষ্টতই তাঁর জীবনকালের সব সময় চেঙ্গিস খানের বিজয়কে উত্তরাধিকারসূত্রে দাবী করতে চেয়েছিলেন।

বাগানে তৈমুরের ভোজ
বাগানে তৈমুরের ভোজ
Source: LiveInternet

(তার মাতৃভাষা চাঘাত অনুযায়ী তৈমুর শব্দের অর্থ লোহা)

মঙ্গল সেনা আক্রমণের মুখে মাত্র নয় বছর বয়সে তৈমুরকে তার মা ও অন্য ভাইদের সাথে যুদ্ধবন্দী হিসেবে সমরকান্দে যেতে হয়। খুব ছোট বয়সেই তৈমুর এবং তার অনুসারীদের একটি ছোট দল ভেড়া, ঘোড়া এবং গবাদি পশু নিয়ে পণ্যদ্রব্যের ভ্রমণকারীদের উপর আক্রমণ চালায়।

কথিত আছে কৈশরের কোন এক সময়ে তৈমুর একটি মেষপালের কাছ থেকে মেষ চুরির চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু শরীরে দুটি তীর বিদ্ধ হওয়ায় তার চুরির চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তীর দুটির একটি তার ডান পায়ে ও আরেকটি তার ডান হাতে বিদ্ধ হয় ফলে তিনি দুটি আঙ্গুল হারান। এরপর থেকে পঙ্গুত্ববরন করে এই আঘাতের চিহ্ন তাকে সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। অনেকে আবার তার পঙ্গুত্বের পেছনে ভেড়া চুরির এই ঘটনাকে মেনে নিতে নারাজ তাদের মতে তৈমুর সিস্টানের খানের হয়ে খোরাসানে (বর্তমানে যা আফগানিস্তানের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলে দাশ্তিমার্গো নামে পরিচিত) ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করার সময় আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরন করেন।  তবে এটিই সত্য যে তিনি যেভাবেই হোক না কেন পঙ্গু হয়েছিলেন এবং এ কারণে তার নাম হয় তৈমুর লং যাকে ইউরোপীয় ইতিহাসে তামার্লেন বলে অভিহিত করা হয়।

ব্যক্তিত্ব

তৈমুরকে সামরিক প্রতিভা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মধ্য এশিয়া শাসনকালে চরম রাজনৈতিক তারল্য পরিস্থিতিতেও মেধা ও কৌশল দিয়ে তিনি যাদুকরের মতো যাযাবরদের অনুগত করে রাখেন। শুধু স্বতন্ত্রভাবে নয় বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেও তিনি অসাধারণ বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। শৈশব থেকেই সমরকান্দ সহ অনেক স্থানে ভ্রমণের কারণে তৈমুর অনেক পণ্ডিতের সান্নিধ্য লাভ করেন এবং ফার্সি, মঙ্গোল এবং তুর্কি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন।

আহমদ ইবনে আরবা শাহ এর মতে তৈমুর আরবি ভাষা জানতেন না। আরও মনে করা হয় তিনি একজন সুবিধাবাদী মানুষ ছিলেন এবং তিনি তুর্কি-মঙ্গোল পূর্বপুরুষের পরিচয় দিয়ে অনেক সুবিধা ভোগ করতেন। তিনি সামরিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে যেখানে যেমন প্রয়োজন সে অনুযায়ী কোথাও ইসলাম ধর্ম আবার কোথাও মঙ্গোল সাম্রাজ্যের আইনকানুন ব্যবহার করতেন।

তৈমুরের মুখাবয়ব
তৈমুরের মুখাবয়ব
Source: Petel.bg

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য তৈমুর বর্বর হিসেবে বিবেচিত, যদিও প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন শিক্ষিত শাসক ছিলেন এবং তিনি পণ্ডিতদের সাহচর্য উপভোগ করতেন এবং তাদের ব্যাপারে তিনি অসম্ভব রকমের সহনশীল এবং উদার ছিলেন যা তার প্রকৃতিবিরুদ্ধ আচরণ ছিল।

তৈমুরের সম্মানার্থে তাকে নিয়ে পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজ একটি গজল লিখেছিলেন। যেখানে তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তৈমুরের গুণগান করেন । গজলটির একটি চরণ এরকম…

“যদি পেতাম তার (তৈমুরের) গালের কালো আঁচিল

আমি দিয়ে দিতাম সমরকান্দ আর বুরখান শহরের পাঁচিল”

সামরিক নেতা হিসেবে তৈমুর

১৩৬০ সালের দিকে তৈমুর সামরিক বাহিনীর প্রধান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন যার সৈন্যরা বেশিরভাগই তুর্কি জনগোষ্ঠীর ছিল। চাঘাতাইখানাতের খানের সাথে তিনি ট্রান্সোক্সিয়ানা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। ভলগা বুলগেরিয়ার ধ্বংসকারী ও সিংহাসনচ্যূতকারগণের সাথে পারিবারিক যোগসূত্র এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে হাত মিলিয়ে এক হাজার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে খোরাসান আক্রমণ করেন। এটি ছিল তার পরিচালিত দ্বিতীয় সামরিক অভিযান এবং এটির বিজয় তাকে পরবর্তীতে খাওয়ারেজম এবং আরগেঞ্চের পতন অভিযান সহ অন্যান্য অভিযানে উদ্বুদ্ধ করে।

ক্ষমতারোহন

চাগাতাই খানের নাম ব্যবহার করে শাসন করার সময়ই তৈমুর আস্তে আস্তে তার নাম যশ কমাতে ও নিজের নাম, যশ, প্রতাপ, প্রতিপত্তি বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করেন। প্রায় একই সময়ের মধ্যে তৈমুর এবং তার শ্যালক হুসেন (যারা প্রথম দিকের প্রায় সকল অভিযানে সহকর্মী ও যুগ্ম সংঘের মাধ্যমে অনেক বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন) পরস্পর বিরোধী এবং শত্রুতে পরিণত হন। হুসেন তিশুরের নিকটবর্তী ইলামাখোয়াজ (মাওয়ারানহের সাবেক গভর্নর) কে শেষ করার জন্য তৈমুরের আদেশ পালন করার প্রচেষ্টার পরিপন্থী তৎপর হওয়ার পর তাদের মধ্যে সম্পর্ক বিরূপ হতে শুরু করে।

বালখের যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী তৈমুর
বালখের যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী তৈমুর
Source: Edebiyat ve Sanat Akademisi

এরপর থেকে তিনি বালখের জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বালখের লোকজন, সহকর্মী উপজাতি, মুসলিম পাদ্রীবর্গ, আদিবাসী ও কৃষক শ্রমিকদের সাথে তাঁর দয়ার কারণে তারা তৈমুরকে অনুসরণ করা শুরু করে। হুসেনের ভারী রাজস্বের বোঝা বহনকারী বালখের সাধারণ লোকজন তৈমুরের উদার নীতিতে দ্রুত তৈমুর ভক্ত হয়ে পড়ে । শেষমেশ ১৩৭০ সালে হুসেন তৈমুরের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং পরবর্তীতে তাকে হত্যা করে তৈমুর বালখের অধিপতি হয়ে ওঠেন। তিনি পরাজিত ও মৃত হুসেনের স্ত্রী এবং চেঙ্গিস খানের বংশধর সারায় মুলখ খানমকে বিয়ে করে নিজেকে চাঘাতাই গোষ্ঠীর একচ্ছত্র শাসক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

তৈমুরের শাসন বৈধ করন

তৈমুরের তুর্কি-মঙ্গোলীয় উত্তরাধিকার তাকে মঙ্গল ও মুসলিম সাম্রাজ্যের শাসক হওয়ার পথে সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ দুটিই দিয়েছিল। মঙ্গোলীয় প্রথা অনুযায়ী তৈমুর কখনোই ‘খান’ পদবী বা মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্যের দাবীদার হতে পারেন না কারণ তিনি সরাসরি চেঙ্গিসখানের উত্তরাধিকারী নন। একারণে বালখ জয় করেও তিনি সরাসরি বালখের পরিপূর্ন শাসক হতে পারেননি তাই পরবর্তীতে তিনি বালখে পুতুল চাঘাতাই শাসক বসিয়ে নিজে সমস্ত ক্ষমতা উপভোগ করতে থাকেন।

সরাসরি চেঙ্গিস খানের বংশধর না হলে কেউ ‘খান’ পদবী ব্যবহার করতে পারবেনা এমন বাধ্যবাধকতার কারণে তৈমুর কখনো ‘খান’ পদবী ব্যবহার করতে পারেননি তার বদলে তিনি ‘আমির’ পদবী ব্যবহার করতেন।

কিন্তু একগুঁয়ে তৈমুর যেকোনো মূল্যে মঙ্গোল সাম্রাজ্যে তার অবস্থান ধরে রাখার বাসনা থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি চিঙ্গিসিট গোত্রের এক রাজকুমারীকে বিয়ে করে রাজ জামাতা পদবী ব্যবহার করতে সক্ষম হন।

তৈমুরী সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি
তৈমুরী সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি
Source: ForoCoches.com

একই ভাবে মহানবী (সা:) এর বংশ কুরাইশ ছাড়া অন্য কেউ নিজেকে খলিফা দাবী করতে পারবেনা বলে ‘খলিফা’ পদবী ও তিনি ব্যবহার করতে পারেননি। এ কারণে তৈমুর নিজের ব্যাপারে গুজব তৈরি করে প্রচার করতে থাকেন। তিনি দাবী করেন তাকে সৃষ্টিকর্তা “অতিপ্রাকৃত ব্যক্তিগত ক্ষমতা” দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যেহেতু অনেক সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তাই তার এ গুজব দ্রুত সাধারণ মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করে। এভাবে তিনি তার ক্ষমতাকে বৈধ রূপ দিতে থাকেন।

সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের সময়কাল

তৈমুর তার জীবনের পরবর্তী ৩৫ বছর বিভিন্ন যুদ্ধ এবং অভিযান পরিচালনা করে কাটান। তিনি যে শুধু তার শত্রুদের মোকাবিলা করে নিজ সাম্রাজ্যকে সুসংহত করেছেন তাই নয় বরং তিনি এই সময়ের মধ্যে পার্শ্ববর্তী অনেক রাজ্য সীমানা আক্রমণ করে নিজ সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করতে থাকেন। পশ্চিম এবং উত্তর পশ্চিমে পরিচালিত তার অভিযানে তিনি কাস্পিয়ান সমুদ্র এবং উড়াল ও ভলগা নদীর তীর পর্যন্ত বিজয় করেন। এবং দক্ষিণ পশ্চিমের অভিযানে বাগদাদ, কারবালা, উত্তর ইরাক সহ পারস্যের প্রায় সবগুলো অঙ্গরাজ্য তার দখলে আসে।

এসময় চেঙ্গিস খানের উত্তরাধিকারী তখতামিস তৈমুরের প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যায়। তৈমুরের আদালতে শরণার্থী হয়ে আসা তখতামিস পরবর্তীতে পূর্ব কিপচাক এবং সোনালী জাতির শাসক হন। তিনি অনেক বিষয় নিয়েই তৈমুরের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন কিন্তু তবু রাশিয়ার বিরুদ্ধে তখতামিসের অবস্থানকে তৈমুর সমর্থন করেন। ফলে ১৩৮২ সালে তখতামিস রাশিয়া আক্রমণ করে মস্কো জ্বালিয়ে দেন।

পারস্য বিজয়

১৩৩৫ সালে আবু সাইদ এর মৃত্যুর পর পারস্যে নেতৃত্বশূন্যতা দেখা দেয়। ফলে পারস্য দ্রুত মুজাফফরি, কার্টিজস, ইরেটিনিডস, চবনাইডস, ইনজুয়েড, জালাইরাড এবং সারবারদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৩৮৩ সাল থেকে তৈমুর পারস্যের তার দীর্ঘ সামরিক বিজয় শুরু করেন, যদিও তিনি ১৩৮১ সালে সারবাদার বংশের খাজা মাজুদের পরে ফার্সি খোরসনের বেশিরভাগ শাসন করেছিলেন।

এরপর তৈমুর তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের দিকে অগ্রসর করেন হেরাত দিয়ে যা ছিল কার্টিজ রাজবংশের রাজধানী। হেরাত যখন আত্মসমর্পণ করেননি তখন তিনি শহরটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেন এবং তার অধিকাংশ নাগরিককে হত্যা করেন। এরপর তৈমুর জার্গস পর্বতমালা দখলের উদ্দেশ্যে পশ্চিমের দিকে রওয়ানা করেন এবং পথিমধ্যে তেহরান বিজয় করেন।

পরের বছর মিসরীয় রাজবংশের নিচে সিস্তান রাজ্য এবং জারঞ্জের রাজধানী ধ্বংস করে তৈমুর তারপর তার রাজধানী সমরকান্দ ফিরে আসেন, যেখান থেকে তিনি তার জর্জিয়ার প্রচারাভিযান এবং গোল্ডেন হর্ডে আক্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেছিলেন।

১৩৮৬ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব দখলকৃত মিজারদান অঞ্চলে তৈমুর যান এবং সেখানে বিদ্রোহের সম্ভাবনা দেখে সাধারণ মানুষের ওপর ভারী করের বোঝা চাপিয়ে দেন। এরপর পুরোদমে পারস্য আক্রমণ করার জন্য তিনি উত্তরে তার জর্জিয়ান ও গোল্ডেন হর্ডের দিকে চলে যান। ফিরে এসে তিনি দেখেন তার নিযুক্ত সেনাপতি সফলতার সাথে সেই অঞ্চলটি রক্ষা করেছে।

এরপর তিনি দক্ষিণের প্রধান দুটি শহর ইসফাহান ও সিরাজের দিকে অগ্রসর হন। ১৩৮৭ খ্রিষ্টাব্দে যখন তিনি ইসফাহানে পৌঁছেন তখন দ্রুত শহরের শাসনকর্তারা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। একারণে তিনি শহরের জনগণকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন যা তিনি সাধারণত যারা তার কাছে বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে থাকে তাদের করতেন। কিছুদিন পরে সামান্য বিদ্রোহের জের ধরে তিনি ইসফাহান শহরে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানোর নির্দেশ দেন তার সেনাবাহিনীকে যার ফলে সেখানে প্রায় ১০০০০০ থেকে ২০০০০০ সাধারণ নাগরিককে হত্যা করা হয়।

 তুঘলকদের বিরুদ্ধে তৈমুর

১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর দিল্লীর সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ্‌ তুঘলককে আক্রমণের মাধ্যমে উত্তর ভারত আক্রমণ করেন। আহির এবং জেটরা তাকে সামান্য মাত্রায় প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু দিল্লীর সুলতানদের তাকে থামানোর মত ক্ষমতা ছিলোনা।

৩০ সেপ্টেম্বর ১৩৯৮ সালে ইন্দু নদী পাড়ি দিয়ে তিনি তুলাম্বা আক্রমণ করেন এবং সেখানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালান। তারপর অক্টোবরে তিনি মুলতানের দিকে অগ্রসর হন।

দিল্লীর তুঘলকদের বিরুদ্ধে তৈমুরের যুদ্ধ
দিল্লীর তুঘলকদের বিরুদ্ধে তৈমুরের যুদ্ধ
Source: hindiekhabar.blogspot.com

আতকের নিকট (বর্তমান পাকিস্তান) তৈমুর ইন্দু নদী পার হন ২৪ সেপ্টেম্বর ১৩৯৮ সালে। তাঁর আক্রমণের কথা তখন সবাই জানতেন তবু তিনি দিল্লির মার্চ মাসে মিরুতের গভর্নর কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন যদিও তা খুব সহজেই ভেদ করে তিনি দিল্লী পৌঁছতে সক্ষম হন।

দিল্লী জয়

১৭ই ডিসেম্বর ১৩৯৮ সালে তৈমুর লং বনাম সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহ্‌ তুঘলক ও মাল্লুইকবালের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। সুলতানের পক্ষে অনেক হাতি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে। যেহেতু তৈমুরের তাতার বাহিনী হাতিকে খুব ভয় পেত তাই তৈমুর যুদ্ধে জয়লাভ করতে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেন। তৈমুর তার যোদ্ধা বাহিনীর সম্মুখ প্রান্তে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। তারপর তৈমুর তার উট গুলোর পিঠে কাঠ ও খড় গাদা বোঝাই  করে পরিখার পাশে জড় করার নির্দেশ দেন। যখন বিপরীত বাহিনীর যোদ্ধা হাতি তাদের দিকে পরিচালনা করা হয় তখন উঠের পিঠে জড় করা কাঠের ওপর আগুন জ্বালিয়ে লোহার খোঁচা দিয়ে উট গুলোকে আঘাত করে সম্মুখে ঠেলে দেওয়া হয় যা দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল কোন প্রাণী আগুনের গোলা নিয়ে তেড়ে আসছে। তাতে কাজ হয় কারণ তৈমুর জানতেন যে হাতিরা দ্রুত ভীত হয়ে পড়ে। মুহুর্তেই তুঘলকদের হস্তি বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং প্রায় অনায়াসেই তৈমুর দিল্লী জয় করেন। দিল্লীর যুদ্ধে তৈমুর প্রায় ১০০০০০ জনকে যুদ্ধবন্দী করেন।

জয়ের পরে দিল্লী
জয়ের পরে দিল্লী
Source: Twitter

মৃত্যু

তৈমুর বসন্তকালে যুদ্ধ করতে পছন্দ করতেন। কিন্তু স্বভাব বিরুদ্ধ হয়ে শীতকালীন এক অভিযানে বের হয়ে পথে তিনি মৃত্যু বরন করেন। ১৪০৪ সালের ডিসেম্বরের শীতে তিনি চীনের মিং সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান ও তাদের একজন দূতকে হত্যা করেন। সে সময় থেকেই তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং চীনের সীমানায় পৌঁছানোর আগেই ১৮ ই ফেব্রুয়ারি ১৪০৫ সালে তিনি মৃত্যু বরন করেন।

তৈমুরকে তার ঘাঁটি সমরকান্দের গোর-এ-আমির এ সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্রঃ

১. Wikipedia

২. Britannica

৩. thoughtco.com

৪. siasat.pk

Leave A Reply
2 Comments
  1. Bwwymp says

    semaglutide pill – semaglutide online buy desmopressin over the counter

  2. Iqditz says

    repaglinide over the counter – prandin 1mg over the counter jardiance 10mg uk

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More