ইরাক-ইরান যুদ্ধ: ইরানের উপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ না ব্যাটল অফ কাদেসিয়া?

40

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘটিত হওয়া সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম ইরাক ইরান যুদ্ধ ৷ ইরানের উপর চাপিয়ে দেয়া প্রায় আট বছর (১৯৮০-১৯৮৮) ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ৷ ইরাক ইরান যুদ্ধ বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম কোন যুদ্ধ যেখানে সরাসরি হেলিকপ্টার যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৷ ১৯৯১ সালের ইরাকের কুয়েত দখলকে উপসাগরীয় যুদ্ধ বলা হলেও এর আগে ইরাক ইরান এর যুদ্ধকেও উপসাগরীয় যুদ্ধ বলা হত। আবার কেউ কেউ পরে একে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ হিসেবে নামকরন করেন ৷ যুদ্ধের প্রথম দিকে ইরাকি শাসক সাদ্দাম হোসেন একে “ঘুর্ণিবায়ুর যুদ্ধ” বা “ব্যাটল অব ক্বাদেসিয়া” হিসেবেও উল্লেখ করতেন।

ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণ কী ছিল?

ইরাক-ইরানের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের মূল কারণ সীমান্ত নিয়ে বিরোধ ৷ ইরানের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে শাতিল-আরব বা ইউফ্রেটিস ও তাইগ্রীস নদীর অববাহিকায় জলাভূমি ইরাক ও ইরানের সীমারেখা নির্ধারণ করছে ৷ এই অঞ্চল নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বিরোধ বহু দিনের ৷ এই বিরোধ নিরসনের জন্য উভয় দেশের মধ্যে বহুবার চুক্তি সম্পাদিত হয়, যেমন:- ১৮৪৭ সালের এরজুরাম চুক্তি, ১৯১৩ সালের চুক্তি, ১৯৩০ ও ১৯৭৫ সালের চুক্তি ৷ ১৮৪৭ সালে এরজুরাম চুক্তি সম্পাদনের সময় ইরাক অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল ৷ এই চুক্তির ২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছিল যে, শাতিল-আরব ওসমানী বা অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তুর্ভুক্ত থাকবে ৷ পরবর্তীকালে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলে মসজিদ-ই-সুলায়মান নামক স্হানে তেলের খনি আবিষ্কৃত হলে এবং শাতিল-আরব ভূখন্ডের পূর্ব উপকূলে মুহাম্মারা বা খুররমশহরে বন্দরনগরী প্রতিষ্ঠিত হলে ইরাক ও ইরানের মধ্যে এক সীমান্ত সঙ্কট দেখা দেয় ৷ ১৯১৩ সালে চতুর্থ শক্তির-পারস্য, রাশিয়া, ব্রিটেন ও অটোমান কর্তৃক চুক্তি সম্পাদিত হলে মুয়াম্মারা বরাবর একটি সীমারেখা নির্ধারিত হয় ৷ এই সীমান্ত রেখাকে ‘থলওয়েল’ বা গভীরতর স্রোতধারায় মধ্যবর্তী রেখা বলা হয় ৷ ১৯১৩ সালে সম্পাদিত চুক্তি বেশিদিন কার্যকরী হয়নি ৷

ইরাক-ইরান যুদ্ধ
Source: Middle East Monitor

ষোড়শ শতাব্দীতে ইরানে শিয়া সাফাভীদের উত্থানে সুন্নী অটোমান এবং শিয়া সাফাভীদের মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীতে অটোমান সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হলেও শিয়া-সুন্নী আদর্শিক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটায়নি ৷ ফলে ইসলামী বিপ্লবে ইরানে নতুন উদ্দীপনায় শিয়া শক্তির উদয় হলে সাদ্দাম হোসেন সঙ্গত কারণেই শঙ্কিত হয় ৷

কুর্দি সমস্যাকে কেন্দ্র করেও বিরোধ বাধে দু দেশের মধ্যে ৷ ইরাকের কুর্দি জনগোষ্ঠী তাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে উত্তর ইরাকে আলাদা একটি দেশ বা স্বায়ত্ব শাসিত প্রদেশ রূপান্তরের প্রচেষ্টায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী কাল থেকেই পায়তারা করে আসছিল ৷ লীগ অব ন্যাশনস-এর চার্টারে বিস্তৃতভাবে স্বীয় শাসনের প্রস্তাবনা না থাকলেও ‘স্বীয় শাসনের’ উল্লেখেই কুর্দিদের মধ্যে একটা আশার আলো সঞ্চিত হয় ৷ কঠোর নিয়ন্ত্রণে এই প্রত্যাশা দমিত হলেও তারা সুযোগ বুঝেই রাষ্ট্রের বিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ৷ কুর্দি সমস্যা ও ইরাক-ইরান দ্বন্দ্বে ১৯৭৫ সালে আলজিয়ার্স সম্মেলনে ইরানকে শাতিল-আরব এলাকায় ৫১৮ কি.মি ভূমি ইরাকের পক্ষ থেকে দেয়া হয় যাতে ইরান ভবিষ্যতে কুর্দিদেরকে ইরাকের বিরুদ্ধে সমর্থন না দেয় ৷ সাদ্দাম হোসেন ইরানের প্রতি এই প্রশমিতকরণ নীতি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি ৷ কিন্তু কুর্দি গোষ্ঠী ইরানে ইসলামী বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে এই পরিবর্তনকে তাদের জন্য একটি ইতিবাচক সুযোগ বলে বিবেচনা করে ইরাক বিরোধী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে ৷

সাদ্দাম হোসেন ইরাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলে সীমান্ত নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় ৷ সাদ্দাম হোসেন ইরানে সরকার পরিবর্তন এবং ইসলামী বিপ্লবের নাজুক পরিস্হিতির সুযোগে সীমান্তে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ খুঁজতে থাকেন ৷ ১৯৭৯ সালের অক্টোবর মাসে লেবাননে ইরাকি রাষ্ট্রদূত ইরানের প্রতি তিনটি দাবী পেশ করেন:-  ১) ১৯৭৫ সালের চুক্তি বাতিল ২) ইরান কর্তৃক ১৯৭১ সালে দখলকৃত আবু মুসা ও তানব্ দ্বীপসমূহ ফেরত দেয়া এবং ৩) ইরানের বেলুচ, কুর্দ ও আরবদের আত্মনিয়ন্ত্রণ দান ৷ ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে বাগদাদ বেতার থেকে ঘোষণা করা হয় যে, ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী তেহরানে অবস্হিত ইরাকি কূটনীতিবিদদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে ৷ ডিসেম্বরে ইরান ইরাক সরকারের কাছে অভিযোগ করে, ইরাক বাহিনী আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে ইরানের ভূখন্ডে প্রবেশ করেছে ৷ এভাবে উভয় দেশের মধ্যে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ চলতে থাকে ৷ পরিশেষে পরিস্হিতি এমন অবনতি হয় যে, ইরান ও ইরাক ১৯৮০ সালের মার্চ মাসে তাদের দূতদের স্ব স্ব দেশে ডেকে পাঠায় ৷ এপ্রিল মাসে ইরাকি পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাদূল হাম্মাদী জাতিসংঘের মহাসচিবের নিকট একটি চিঠি পাঠান ৷ এই পত্রে ইরানের উপসাগরীয় দ্বীপসমূহ ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয় ৷ এর জবাবে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাদিক কভুরজাদে এক বিবৃতিতে বলেন, ইরাকি সরকার সম্পূর্ণরূপে সাম্রাজ্যবাদী ও জাইয়নবাদী মনোবৃত্তিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে ৷ ইরাক ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত অবনতি হতে থাকে যখন ইরানের একটি তেল শোধনাকারে অগ্নিকান্ড ঘটে ৷ এই ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণে ইরানের গ্যাস পাইপের যথেষ্ট ক্ষতি হয় এবং ইরান ইরাককে এ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করে ৷ ইরান ও ইরাকের মধ্যে এর ফলে যুদ্ধ প্রস্তুতি শুরু হয় এবং ইরান ৭ এপ্রিল তার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয় ৷ খোমেনী সরকার সাদ্দাম হোসেনের ইরাকি বাথ পার্টি পরিচালিত সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু আখ্যায়িত করে ৷ এর ফলে ইরান ও ইরাকের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায় ৷ যুদ্ধের শুরুতে ইরাক থেকে হাজার হাজার ইরাকি শিয়া ও কুর্দিদের বহিষ্কার করা হয় ৷ এ সমস্ত উদ্বাস্তু ইরানে আশ্রয় গ্রহণ করে ৷

ইরাক-ইরান যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

যুদ্ধে ইরানের পক্ষে নেতৃত্ব প্রদান করেন ধর্মীয় নেতা রুহুল্লাহ খোমেনি এবং ইরাকের পক্ষে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ৷ উভয় দেশের সামরিক শক্তি তুলনামূলকভাবে সমান সমানই ছিল বলা যায় ৷ কিন্তু ট্যাংক বহরে ইরাকের রাশিয়া নির্মিত ২৭০০-T থাকায় ইরানের ট্যাংক বহর অপেক্ষা শক্তিশালী ছিল ৷ বিমান বাহিনীতে ইরানের ৪৪৫টি মার্কিন জঙ্গী বিমান থাকলেও শাহের পতনের পর জঙ্গী বিমানের মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ব্যবহার উপযোগী ছিল ৷ পক্ষান্তরে ইরাকের ২৩০ টি সোভিয়েত মিগ-২১ ও ২৩ এবং বোমারু বিমান থাকায় আকাশে ইরানের চেয়ে ইরাক প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে৷ অবশ্য ইরানি নৌবাহিনী ইরাকি নৌবাহিনী অপেক্ষা দ্বিগুণ ছিল ৷

ইরাক ইরান যুদ্ধ ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৮৮ সালের ২০ অগাস্ট পর্যন্ত অব্যহত ছিল ৷ যুদ্ধ সংঘটিত হয় তিন পর্যায়ে ৷

ইরাক ইরান যুদ্ধ
Source: parstoday.com

প্রথম পর্যায়ে ইরানে ইরাকের প্রাধান্য ছিল এবং তারা জয়লাভ করে ৷ ইরাকি আক্রমণ প্রথম থেকেই ক্ষিপ্রতার সাথে পরিচালিত হয় ৷ ইরাক সীমান্তবর্তী কাসর-ই-শিরীন ও মেহরান দখল করে আবাদানে অভিযান করে এবং খোররামশহর দখল করে ৷ তারা কারুন নদী পার হয়ে আহওয়াজ ও দেজফুলের দিকে অগ্রসর হয় ৷ শুশানগার্ডসহ ইরানের খুজিস্তানের বেশ কয়েকটি শহর ইরাকের অধিকারে আসে ৷ ইরান বাগদাদ, বাকুবা ও মসুলে বিমান হামলা চালালে ইরাকি বিমানবাহিনী আহওয়াজ, কেরমানশাহ, রিজাইয়া প্রভৃতি শহরে বোমা নিক্ষেপ করে ৷ জাপানীদের দ্বারা নির্মিত খোমেনী বন্দরে অবস্হিত পেট্রো রাসায়নিক কারখানা ইরাকি বোমার আঘাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ৷ ইরাকের এই তীব্র আক্রমণে এবং নতুন ইসলামী বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ইরান হতচকিত হয়ে প্রথমে শুধু আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্হা গ্রহণ করে ৷ প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধে ইরাক তার মুখ্য উদ্দেশ্য অর্জন করতে না পারলেও সাময়িক সামরিক বিজয় তারাই অর্জন করে ৷

প্রথম পর্যায়ে বিপর্যস্ত হলেও ইরানি বাহিনী সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করে দ্বিতীয় পর্যায়ে সামরিক সাফল্য অর্জন করে ৷ নবগঠিত ইরানি বিপ্লব পরিষদ সেনাবাহিনীকে সুসংহত করতে না পারলেও স্বেচ্ছাসেবক দল,অগণিত লোকবল ও সেনাবাহিনী ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরাকের উপর প্রচন্ড অভিযান চালায় ৷ তারা আবাদান থেকে কারুন নদী অতিক্রম করে আহওয়াজের দিকে অভিযান করে ইরাকি বাহিনীকে বিতাড়িত করে ৷ ইরাকি বাহিনীর আক্রমণ অব্যহত থাকে এবং ১৯৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাসর-ই-শিরীনের নিকট ইরানি বাহিনী ইরাকি বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করে ৷ আহওয়াজ ও শুশানগার্দ এলাকায় ইরাক প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করায় ইরানের আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব হয় ৷ কিন্তু ১৯৮২ সালের মে মাসে ইরান বাহিনীর তীব্র চাপের মুখে ইরাকি বাহিনী এ অঞ্চল ত্যাগ করে খোররমশহরে অবস্হান নেয় ৷ কিন্তু ইরান ইরাকি বাহিনীকে পরাস্ত করে খোররমশহরে পুর্নদখল করে ৷ ইরানি বাহিনীর প্রবল আক্রমণে ইরাকি বাহিনী শাতিল-আরব পার হয়ে ইরাকের অভ্যন্তরে অবস্হান নিতে বাধ্য হয় ৷ শুধু তাই নয় ইরানি গোলন্দাজগণ ফাও ও বসরার উপকন্ঠে গোলাবর্ষণ করতে থাকে ৷ ইরানের পদাতিক বাহিনীর অগ্রগতি ইরাকি বিমান বাহিনীর আক্রমণে বিঘ্নিত হয় ৷ ইরানি বিমান বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে এই সময়ে বসরার নৌঘাটি এবং বাগদাদসহ ইরাকের শিল্পশহর সমূহ বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয় ৷ সেসময় ইরাকের অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হয়ে ফুটে ওঠে। এ অবস্থায় ইরাকের সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটতে পারে এবং সেখানে ইরানের মতই একটি বিপ্লবী সরকার গঠিত হতে পারে বলে মার্কিন সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। ফলে মার্কিন সরকার ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ইরানকে অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সামগ্রী সংগ্রহে বাধা দিতে থাকে।

ইরান ইরাক যুদ্ধ এর তৃতীয় পর্যায়ে কোন পক্ষেরই তেমন কোন লাভ হয়নি ৷ উভয় দেশ স্ব স্ব অবস্হান সুদৃঢ় করে ৷ ১৯৮৪ সালে ইরাক ইরানের তেল রপ্তানী ক্ষতিগ্রস্হ করতে ইরান অভিমুখে আগত কুয়েত এবং সৌদি ট্যাঙ্কারসমূহে আক্রমণ চালায় ৷ এই প্রেক্ষাপটে সাদ্দাম হোসেন সরাসরি ওয়াশিংটনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্হাপন করে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে ইনটেলিজেন্স এবং পরবর্তীতে কুয়েত ট্যাঙ্কারে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা বহন করে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রচেষ্টা চালায় ৷ কিন্তু ইরানি আক্রমণ স্তিমিত না হলে ১৯৮৭ এবং ১৯৮৮ সালে সরাসরি আমেরিকান যুদ্ধ জাহাজ ইরান আক্রমণে তৎপর হয় ৷ একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র রাষ্ট্রসমূহকে ইরানের উপর তেল নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানায় ৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র ইরাককে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দ না হলেও ইরাক এবং উপসাগরীয় তেল সমৃদ্ধ দেশসমূহ রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যৌক্তিক কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷ ১৯৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইরান কুর্দীদের সহায়তায় কুর্দী শহর হালাবজা দখল করে ৷ সাদ্দাম হোসেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় তার বিমান বাহিনীকে হালাবজা পুনর্দখলের নির্দেশ দেয় ৷ এই আক্রমণে ইরাকি বিমান বাহিনী রাসায়নিক বিষাক্ত গ্যাসসমৃদ্ধ বোমা নিক্ষেপ করে এবং তাতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয় ৷ যুদ্ধে ইরাক পূর্বেও ইরানে গ্যাস-বোমা নিক্ষেপ করেছিল বলে ইরান প্রতিবাদ করেছিল৷ ইরাকের এই নির্দয় আচরণ বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় তোলে ৷ খোমেনীও তাতে শঙ্কিত হয় এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের আক্রমণ ইরানে হলে তা যে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে তা অনুমান করে এবং অবশেষে দু-পক্ষই যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে ১৯৮৮ সালের ২০ অগাস্ট জাতিসংঘের আহ্বানে যুদ্ধ বিরতিতে সাড়া দেয় ৷ ২০০৩ সালে দু’দেশের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবন্দীর বিনিময় ঘটে।

ইরাক ইরান যুদ্ধ
Source: Learning History

ইরাক ইরান যুদ্ধ শুরু হলে বিভিন্ন আরব দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ৷ পার্শ্ববর্তী জর্ডানের রাজা বাদশাহ হোসেন ইরাকের প্রতি সমর্থন জানান ৷ এ ছাড়া মরক্কোর বাদশাহ, সৌদি আরবের বাদশাহ, কুয়েতের আমির, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন করেন ৷ বিভিন্ন তথ্যানুযায়ী আরব দেশসমূহ ইরানের বিরুদ্ধে পরিচালিত ইরাকের যুদ্ধ তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ সাহায্য দেয় ৷ এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, উপসাগরীয় দেশসমূহ ইরাককে ১৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দিতে রাজি হয় ৷ এ ছাড়া সৌদি আরব ৬ বিলিয়ন, কুয়েত ৪ বিলিয়ন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৩ বিলিয়ন, কাতার ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেয় ৷ অন্যদিকে সিরিয়া এবং লিবিয়া ইরানকে সমর্থন করে ৷ এর ফলে সাদ্দাম হোসেন সিরিয়া ও লিবিয়া থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে নেয় ৷ ইরাক ইরান যুদ্ধ এ তিউনিসিয়া এবং আলজেরিয়া মোটামোটিভাবে নিরপেক্ষ ছিল ৷

ইরাক ইরান যুদ্ধ এর ফলাফল যা হয়েছিল

ইরাক ইরান যুদ্ধ উভয় রাষ্ট্রের জন্য ধ্বংস ডেকে এনেছিল ৷ পাশ্চাত্যের হিসাবে আট বৎসরের এই দীর্ঘ যুদ্ধে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলারের অধিক ব্যয়িত হয়েছিল, দশ লক্ষাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল এবং প্রায় এক মিলিয়ন আহত হয়েছিল ৷ যুদ্ধে লোকসংখ্যার হিসাবে ইরানের ক্ষতি অধিক বলে মনে করা হয় ৷ কিন্তু ইরাকের অবকাঠামো, শিল্পকারখানা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ৷ দু’পক্ষই উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পেট্রো ডলারের সঞ্চিত অর্থ নিঃশেষ করে প্রায় দেউলিয়ার পর্যায়ে উপনীত হয়েছিল ৷ তবে ইরান বৃহদাকার দেশ হওয়ায় অল্প সময়েই তা কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয় ৷ কিন্তু ইরাকের পক্ষে উপসাগরীয় দেশসমূহ থেকে ঋণ নেয়ার কারণে তা উদ্বেগজনক পর্যায়ে উন্নীত হয় ৷ এই ঋণের কারণেই কুয়েতকে জয় করে তার তেল রাজস্বের মাধ্যমে সঙ্কট কাটিয়ে উঠার দুঃসাহসের প্রয়োজন সাদ্দাম হোসেনকে তাড়িত করে ৷ ইরাক ইরান যুদ্ধ এর অবসান হলেও এর দীর্ঘ মেয়াদি প্রতিক্রিয়া হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে এর সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়ে। তেল অস্ত্রের নামে সাদ্দাম সরকারের পতনও এই যুদ্ধের দীর্ঘ মেয়াদী ফল !

Leave A Reply
40 Comments
  1. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# pharmacy website india

  2. RickyGrila says

    mail order pharmacy india buy medicines from India indianpharmacy com

  3. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# medicine in mexico pharmacies

  4. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

  5. RickyGrila says

    buy medicines online in india reputable indian pharmacies india pharmacy

  6. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# pharmacy website india

  7. RickyGrila says

    indianpharmacy com buy medicines from India reputable indian pharmacies

  8. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# п»їlegitimate online pharmacies india

  9. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online

  10. RickyGrila says

    reputable indian online pharmacy indian pharmacy fast delivery india online pharmacy

  11. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# indian pharmacy online

  12. RickyGrila says

    buy medicines online in india best online pharmacy india pharmacy website india

  13. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# india pharmacy

  14. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# india pharmacy mail order

  15. RickyGrila says

    canadian pharmacy ltd canada drug pharmacy trustworthy canadian pharmacy

  16. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# best india pharmacy

  17. RickyGrila says

    best online canadian pharmacy ordering drugs from canada canadian pharmacy 365

  18. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# mexican mail order pharmacies

  19. MichaelLIc says

    http://canadaph24.pro/# canadian drug pharmacy

  20. RickyGrila says

    canadian discount pharmacy canadian pharmacies canada drugstore pharmacy rx

  21. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# mexican border pharmacies shipping to usa

  22. RickyGrila says

    top 10 pharmacies in india Generic Medicine India to USA top 10 pharmacies in india

  23. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# best canadian pharmacy

  24. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# Online medicine order

  25. RickyGrila says

    mexican online pharmacies prescription drugs п»їbest mexican online pharmacies mexico drug stores pharmacies

  26. MarcelZor says

    https://indiaph24.store/# online shopping pharmacy india

  27. RickyGrila says

    canadian pharmacies online Licensed Canadian Pharmacy pharmacy rx world canada

  28. MarcelZor says

    http://canadaph24.pro/# canadian online drugs

  29. RickyGrila says

    canadianpharmacyworld Large Selection of Medications from Canada trusted canadian pharmacy

  30. RickyGrila says

    mexico drug stores pharmacies Online Pharmacies in Mexico mexico drug stores pharmacies

  31. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online

  32. RickyGrila says

    п»їbest mexican online pharmacies mexico pharmacy п»їbest mexican online pharmacies

  33. Fjppdv says

    order generic prandin 1mg – repaglinide drug order empagliflozin 10mg sale

  34. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# best india pharmacy

  35. RickyGrila says

    top online pharmacy india Generic Medicine India to USA indian pharmacy paypal

  36. MarcelZor says

    http://indiaph24.store/# Online medicine home delivery

  37. MichaelLIc says

    https://indiaph24.store/# india pharmacy mail order

  38. RickyGrila says

    Online medicine order indian pharmacy Online medicine home delivery

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More