ঝাঁঝালো পেঁয়াজের ঝাঁঝলো গুণ

1

তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ যুক্ত গোলাকার পেঁয়াজের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। প্রতিদিনের খাবারে পেঁয়াজ অপরিহার্য একটি অংশ। তাছাড়া গরম গরম শিঙ্গাড়া অথবা পুড়ির সাথে পেঁয়াজ না থাকলে অনেকের বিকেলের নাস্তাটা ঠিক জমে না। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের সাথে জড়িয়ে থাকা এই সবজির জানা অজানা গুণাবলি নিয়ে আজকের আয়োজন।

কাঁচা অথবা রান্না করা- উভয়ভাবেই পেঁয়াজ অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। পেঁয়াজ যেমন খাবারে স্বাদ আনে, তেমনি বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। আর সে কারণে বহু গুনে গুণান্বিত এই সবজির ১২ টি গুনাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

১। ক্যান্সার প্রতিরোধক

ইউনিভার্সিটি অব গুয়েলফ এর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্তন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার এর কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম লাল পেঁয়াজ। লাল পেঁয়াজে উচ্চ পরিমাণে কুয়েরসেটিন এবং এন্থোসায়ানিন থাকার কারণে এমনটা হয়ে থাকে। পেঁয়াজে উপস্থিত এই উপাদানগুলো ক্যান্সার কোষগুলোর জন্য নিজে নিজে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পথ খুলে দেয়- অনেকটা আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করার মত, মানবদেহকে ক্যান্সারের জন্য অনুপযোগী করে তোলে আর এর ফলে ক্যান্সার কোষ বাড়তে পারেনা। আরও পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, যে সকল মানুষ বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ খায়, তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম থাকে। ক্যান্সার থেকে বাঁচতেই সই, বার্গারের ভেতরে কাঁচা লাল পেঁয়াজের টুকরো দিয়ে খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন।

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ Source: Pngtree

২। হার্টের সুরক্ষায় পেঁয়াজ

লাল পেঁয়াজে উপস্থিত ফ্লেভনয়েডস আপনার হৃদপিণ্ডের সুস্থতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজে আরও আছে প্রচুর পরিমাণে অরগ্যানোসালফার, যা হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। এক আর্জেন্টাইন গবেষণায় জানা গেছে যে, পেঁয়াজে পাওয়া অরগ্যানোসালফার কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পেঁয়াজের থিওসালফাইনেট হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমায়। পেঁয়াজ রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ হ্রাস করে যা হৃদপিণ্ডের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত দরকারি। পেঁয়াজের উপাদান রক্তকণিকাগুলোর একটির সাথে আরেকটি লাগতে বাঁধা দেয়, রক্তপিণ্ড সৃষ্টি হতে পারেনা, ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।

৩। ব্লাড সুগার কমায়

একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, পেঁয়াজের উপাদান ব্লাডসুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের একটি সালফার উপাদান এবং কুয়েরসেটিন ব্লাড সুগারে কল্যাণকর প্রভাব ফেলে।

৪। হজমে সহায়তা

পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা প্রাকৃতিকভাবে রেচন প্রক্রিয়ার সহায়ক হিসেবে কাজ করে অন্ত্র আন্দোলন সহজ এবং আরামদায়ক করে তোলে। দেহের অন্ত্র সাফ করতে এবং শরীর থেকে বর্জ্য নিষ্কাশনে ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেঁয়াজের আছে স্যাপোনিন যা পেট ব্যথার উপশম করে। পেঁয়াজের ফাইটোকেমিকেলস গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঝুঁকি কমায়। পেঁয়াজের প্রাকৃতিক প্রি-বায়োটিক উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৫। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

পেঁয়াজের সেলেনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রাশিয়ায় ঠাণ্ডা এবং ফ্লু এর উপশমের জন্য হারবাল মেডিসিন হিসেবে পেঁয়াজ ব্যবহৃত হয়। ঠাণ্ডা লাগার উপশম হিসেবে পেঁয়াজের চা অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া পেঁয়াজের রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলেও ঠাণ্ডা লাগা থেকে মুক্তি মেলে। এছাড়া পেঁয়াজের উপাদান সমূহ অ্যাজমা থেকে সুস্থতা লাভে সহায়তা করে।

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ
Source: /www.naturalfoodseries.com

৬। ঘুম বর্ধক

পেঁয়াজের প্রিবায়োটিকস ঘুম বাড়ায় এবং স্ট্রেস কমায়। পাকস্থলীর গুড ব্যাকটেরিয়া প্রিবায়োটিক ফাইবারের রেচন ঘটায়, তখন সেই ব্যাকটেরিয়া দ্বিগুণ হয় এবং পাকস্থলী সুস্থ রাখে- এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এর ফলে মেটাবলিক বাইপ্রোডাক্ট উন্মুক্ত হয়। এই বাইপ্রোডাক্টগুলো মস্তিষ্কের ক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং ঘুম বাড়ায়।

৭। অ্যানিমিয়া নিয়ন্ত্রণে

দেহে আয়রনের অভাবে অ্যানিমিয়া হয় এবং তা হয়ে উঠতে পারে মরণঘাতি। সাধারণত দেহের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিক রাখতে বিভিন্ন ধরণের ওষুধের ব্যবহার বর্তমানে স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু প্রাকৃতিক পন্থা অনুসরণ করলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো সম্ভব।   

৮। সুস্থ হাড়

ভাঙ্গা হাড় নিরাময়ে পেঁয়াজ উপকারী। দেখা গেছে যে। পেঁয়াজে উপস্থিত কন্ড্রসাইটস হাড়ের বৃদ্ধি এবং জোড়া লাগাতে সাহায্য করে। এছাড়াও পেঁয়াজে এমন কিছু উপাদান আছে যা দেহের যোজক কলা তৈরিতে অবদান রাখে।

পেঁয়াজ
পেঁয়াজ
Source: Wikipedia

৯। চোখের সুস্থতায় পেঁয়াজ

পেঁয়াজের সালফার চোখের লেন্সের অবস্থার উন্নতি ঘটায়। পেঁয়াজের সালফার গ্লুটাথিওন নামের এক ধরণের প্রোটিন তৈরিকে ত্বরান্বিত করে যা চোখের এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। বেশি পরিমাণে গ্লুটোথিওন থাকলে গ্লুকোমায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে।

১০। এন্টি-এজিং এ অবদান

পেঁয়াজে এন্টি অক্সিডেন্ট থাকার কথা নিশ্চয়ই অজানা নয়। পেঁয়াজের এন্টি অক্সিডেন্ট দেহের ভেতরে এন্টি অক্সিডেন্ট এর উৎপাদন ত্বরান্বিত করে। চামড়ার মাধ্যমে বিভিন্ন রকম দূষিত উপাদান আমাদের দেহে প্রবেশ করে যার ফলে স্কিন সেল এজিং ঘটে। পেঁয়াজের ডিটক্সিফাইং এবং এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো এই এজিং প্রসেসের গতি কমিয়ে দেয়।

১১। চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায়

পেঁয়াজ চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। চুল পড়া এবং চুল পেকে যাওয়ার মত সমস্যার দূরীকরণ করে পেঁয়াজ। চুলে এবং চুলের গোঁড়ায় পেঁয়াজের রস নিয়মিত দিলে চুল পড়া কমে গিয়ে নতুন চুল গজানো ত্বরান্বিত করে। পেঁয়াজের রস চুলে লাগালে খুশকি দূর হয়। পেঁয়াজের রসের সাথে দই মিশিয়ে টা চুলে আধাঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই হেয়ার প্যাক চুলের গোঁড়া শক্ত করে এবং চুলের খুশকি দূর করে। এমন কি, চুলের উকুন দূর করতে পেঁয়াজের রস অত্যন্ত উপকারী।

১২। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি

পেঁয়াজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি এবং ই আছে যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। ত্বকের দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রসের সাথে অলিভ অয়েল মুখে লাগালে ব্রণ থেকে উপশম পাওয়া যায়। ত্বকের কালো দাগ দূর করে ত্বকে পুষ্টি যোগায়।

Source Feature Image
Leave A Reply
1 Comment
  1. Vjrgph says

    terbinafine order – fluconazole sale buy grifulvin v online cheap

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More