প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন – প্রথম পর্বের পর-
গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম নেপোলিয়নের প্রাথমিক জীবন। এবং পরবর্তী সময়ে কিভাবে একজন সাধারণ সৈনিক ফ্রান্সের সম্রাটে পরিণত হয়ে সমগ্র ইউরোপে নিজের প্রভুত্ব সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হন। আর দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে আমরা আলোচনা করব কিভাবে নেপোলিয়ন ইউরোপে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন এবং ইউরোপের অনেকাংশ ক্ষমতাবলে করতলগ্রস্থ করেন। আবার কয়েকটি ভুল সিদ্ধান্তের ফলেই তার গড়ে তোলা সাম্রাজ্য তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায়।
নেপোলিয়নের যুদ্ধাবলী:
১৮০২ সালে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড এর মধ্যে এমিয়েন্স চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তাছাড়া শতাব্দী ধরে চলতে থাকা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও উপনৈবেশিক দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। নেপোলিয়ন সম্রাট হবার পর শতবর্ষব্যাপী যুদ্ধের প্রতিশোধ নেবার জন্যও উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। নেপোলিয়ন সর্বপ্রথম জার্মানির অন্তর্গত ব্রিটিশদের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হ্যানোভারে বন্দর আক্রমণ করে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করেন। অতঃপর তিনি ইংল্যান্ডের সাথে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী জেনে বিশাল সৈন্যবাহিনী প্রস্তুত করে যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। ওদিকে ইংল্যান্ড এর প্রধানমন্ত্রীও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কুটনৈতিকভাবে ইউরোপকে একতাবদ্ধ করতে চেষ্টা চালান। ১৮০৫ সালে ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও সুইডেন মিলে এই জোট গড়ে উঠে। এই সংবাদ শুনেই নেপোলিয়ন ইংল্যান্ড আক্রমণের চিন্তা পরিত্যাগ করে ক্ষিপ্রতার সাথে অস্ট্রিয়া আক্রমণ করে বসেন। নেপোলিয়ন উলমের যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করে সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রান্সিসকে অবমাননাকর চুক্তিতে আসতে বাধ্য করেন। পাশাপাশি বর্তমান জার্মান বা তৎকালীন প্রাশিয়াও ফ্রান্সের অধিভুক্ত হয়। ফলে ইউরোপে ফ্রান্সের আরেক দফায় শক্তি বৃদ্ধি পায়। জোট বাহিনী তাদের সাহায্যে কিছুই করতে পারেনি বা এগিয়েও আসেনি।
উপদ্বীপে যুদ্ধ:
ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ফ্রান্স মহাদেশীয় ব্যবস্থা নেয়। অল্প কথায় মহাদেশীয় ব্যবস্থা হলো ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছেদ ও মিত্র দেশ সমূহের সাথে ব্রিটেনকে ব্যবসা বাণিজ্য না করতে দিয়ে তার অর্থনীতিকে পঙ্গু করা। অবশ্য শেষ পর্যন্ত ফ্রান্স নিজেই তার ফাঁদে পড়ে। ব্রিটেনকে জব্দ করতে গিয়ে শেষমেশ ফ্রান্সের নিজ অর্থনীতিই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। যাহোক এই উপমহাদেশীয় ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে ফ্রান্স স্পেন এর সহায়তায় ১৮০৭ সালে পর্তুগাল দখল করে। পরবর্তী সময়ে নেপোলিয়ন চক্রান্ত করে স্পেনের সম্রাট চার্লসের আমলে বিশাল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে স্পেন দখল করেন এবং নিজ ভ্রাতা জোসেফ বোনাপার্টকে ক্ষমতায় বসান । কিন্তু তিনি ক্ষমতায় মাত্র ১১ দিন স্থায়ী হতে সমর্থ হয়েছিলেন।
প্রাক্তন শাসকরা গোলযোগের সুযোগে ক্ষমতা হাতে তুলে নিয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে। তদ্রূপ জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পর্তুগালও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইংল্যান্ডও নেপোলিয়নের সংকটের সুযোগ নিয়ে স্পেন ও পর্তুগালের পাশে দাঁড়ায়। ১৮১২ সালে ইংরেজ সেনাপতি ওয়েলিংটন ডিউক স্যামালাস্কা ও ১৮১৩ সালে ভিক্টোরিয়ার যুদ্ধে স্পেন থেকে ফরাসীদের পুরোপুরি বিতাড়িত করেন। পর্তুগাল থেকেও ফরাসীরা বিতাড়িত হয়। এই স্পেন দখলই নেপোলিয়নের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা তিনি নিজেই বলেন,
“স্পেনের ক্ষতই আমার ধ্বংস ডেকে এনেছিল”।
রুশ বা মস্কো অভিযান:
অস্ট্রিয়ার পরাজয়ের মাধ্যমে ইউরোপের স্থল শক্তির মধ্যে রাশিয়ার সাথে সমক্ষ যুদ্ধ বাকী ছিল ফ্রান্সের। উচ্চাভিলাষী নেপোলিয়ন এখানেও নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে মনস্থ করেন। এবং ১৮০৭ সালে দুই দুইবার রাশিয়াকে পরাজিতও করেন। ১৮০৭ সালে স্বাক্ষরিত টিলসিটের সন্ধির ফলে ফ্রান্স এবং রাশিয়া মিত্রতায় আবদ্ধ হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই এই চুক্তির পতন ঘটে। কয়েকটি কারণে নেপোলিয়ন রাশিয়ার সম্রাট আলেকজান্ডার এর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হন এবং ১৮১২ সালে ৬ লক্ষ সৈন্য নিয়ে মস্কো অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। বিনা বাঁধায় নেপোলিয়ন স্মলেনেস্ক দখল করে রাশিয়ায় প্রবেশ করেন। রাশিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নেপোলিয়ন মধ্য রাশিয়ায় প্রবেশের জন্য উদ্যোগ নেন।
নেপোলিয়ন শীতকে উপেক্ষা করেই সৈন্য নিয়ে এগিয়ে যান। ঠিক একই ভুলের মাসুল হিটলারকেও দিতে হয়েছিল। রুশরাও পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে সকল শস্য ধ্বংস করে জনশূন্য শহর ফেলে চলে যায়। সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার শীত যখন হিমাঙ্কের নীচে তখন মস্কোর কাছে বোরাডিনের রণাঙ্গনে উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়। নেপোলিয়ন জয়লাভ করলেও তার সৈন্য ও রশদের বিপুল ক্ষতি হয়। এরপর নেপোলিয়ন মস্কোয় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। নেপোলিয়ন ভেবেছিলেন যে রুশরা শান্তি চুক্তির জন্য আসবে কিন্তু তা হয়নি। এদিকে প্রচণ্ড শীত ও খাদ্যাভাবে নেপোলিয়নের সৈন্যরা চরম দুর্দশায় পতিত হয়। রুশদের গুপ্ত হামলায় নেপোলিয়ন বাহিনী ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়ন ৬ লক্ষ সেনার মধ্যে মাত্র ৫০,০০০ সেনা নিয়ে প্যারিসে ফিরতে পেরেছিল। এভাবেই নেপোলিয়নের উচ্চাভিলাষী অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ফলে ইউরোপে নেপোলিয়নের সামরিক প্রতিভা ও জনপ্রিয়তা দারুণভাবে হ্রাস পায়। সাথে সাথে এই যুদ্ধ নেপোলিয়নের ব্যর্থতা ও তার পতনের দিকে ঠেলে দেয়। ইউরোপের অন্যান্য শক্তিও মনে করতে থাকে যে নেপোলিয়ন আর অপরাজেয় নয়। যদিও খুব দ্রুতই আবার শক্তিবৃদ্ধি করে নেপোলিয়ন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দিকে যায়।
প্রাশিয়ার মুক্তির সংগ্রাম:
রাশিয়ায় নেপোলিয়নের পরাজয় ইউরোপে নব উন্মাদনা সৃষ্টি করে। নেপোলিয়নের দুর্দিনে জার্মানিরা প্রতিশোধ গ্রহণের মোক্ষম সময় মনে করে। ১৮১৩ সালের প্রাশিয়া ও রাশিয়া একত্রিত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এরমধ্যেই আবার ইংল্যান্ড রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, সুইডেনকে নিয়ে আবার জোট তৈরি করে। দক্ষিণ দিক থেকে রাশিয়া ও প্রাশিয়া ফ্রান্সের অভিমুখে যুদ্ধযাত্রা শুরু করে। উত্তর দিক থেকে সুইডেনের সেনারা এগুতে থাকে। এই খবর পেয়েই নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়া হামলা করে জীবনের শেষ বড় বিজয় অর্জন করেন। যদিও এ বিজয় ছিল ক্ষণস্থায়ী। কেননা মিত্র শক্তি চতুর্দিক থেকে নেপোলিয়নকে ঘিরে ফেলে। অবশেষে নেপোলিয়ন লাইপাজিগে তিন দিন যুদ্ধ করে ব্যর্থ অবস্থায় ফ্রান্সে ফিরে যান। ফ্রান্সের বাইরের সকল ভূখণ্ডই তখন স্বাধীন হয়ে যায়।
নেপোলিয়নের সিংহাসন ত্যাগ:
১৮১৪ সালে যুদ্ধে জয়ী মিত্ররা নেপোলিয়নকে সন্ধি করার আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে মিত্র বাহিনী একত্র হামলা করে ফ্রান্স দখল করে নেয়। এবার নেপোলিয়নকে চুক্তিতে আসতেই হয়। ৬ এপ্রিল নেপোলিয়ন ফন্টেনব্লু চুক্তির মাধ্যমে সিংহাসন ত্যাগ করে ভূমধ্যসাগরের এলবা দ্বীপে চলে যান। তাকে দুই মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক পেনশন দিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই নেপোলিয়নের রাজনৈতিক জীবনের যবনিকা নেমে আসে।
নেপোলিয়নের প্রত্যাবর্তন: ১০০ দিবসের রাজত্ব
নেপোলিয়নের নির্বাসনের ফলে ফ্রান্সে চতুর্দশ লুইয়ের ভাই অষ্টাদশ লুইকে সিংহাসনে বসায় মিত্র শক্তি। কিন্তু ফরাসী জনগণ তার প্রতি রুষ্ট হন। সারাদেশে গোলযোগ লেগে যায়। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় দেশ। সেনাবাহিনীও এক প্রকার বিদ্রোহ করে বসে। এই সংবাদ শুনে নেপোলিয়ন ভীষণ উৎসাহিত হয়ে উঠেন এবং বিস্তর পরিকল্পনা ছাড়াই এলবা দ্বীপ থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে গমন করেন। জনগণও তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেন। তাকে বাঁধা দেবার কেউই ছিলনা। নেপোলিয়ন ২০ মার্চ প্যারিসে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং অষ্টাদশ লুই পালিয়ে যান। তবে এবার আর অত শক্তিশালী সরকার গঠন করতে সমর্থ হননি নেপোলিয়ন। নেপোলিয়নের সিংহাসনে আরোহণের কথা শুনে মিত্র বাহিনী আবার নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে এগিয়ে আসে। নেপোলিয়নও অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে শেষবারের মতো লক্ষাধিক সৈন্য জোগাড় করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন।
১৮১৫ সালে বিখ্যাত ওয়াটারলু যুদ্ধে সম্মিলিত প্রাশিয়া ও ইংরেজ বাহিনীর কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হন। এটিই ছিল নেপোলিয়নের জীবনের শেষ যুদ্ধ। এবার নেপোলিয়নকে ৫০০০ মাইল দূরে মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরের দুর্গম সেন্ট হেলেন দ্বীপে নির্বাসন দেয়া হয়। এই স্থানেই ছয় বছর অতিবাহিত করার পর ১৮২১ সালে এই মহান শক্তিশালী বীরের জীবনাবসান হয়। এর মাধ্যমেই ম্লান হয়ে যায় একজন সফল বিজেতার সকল অর্জন।
রেফারেন্স:
১,উইকিপিডিয়া
২,ইউরোপের ইতিহাস
৩,ব্রিটানিকা
৪,ওয়ার হিস্ট্রি
৫, ফরাসী বিপ্লব
https://c.happyfarmbali.farm/31138612-organ-trail.html – Organ Trail
The crux of your writing whilst sounding agreeable initially, did not sit very well with me after some time. Someplace within the paragraphs you actually were able to make me a believer unfortunately just for a short while. I however have got a problem with your jumps in assumptions and one might do nicely to help fill in those gaps. In the event you actually can accomplish that, I will surely end up being amazed.