অপারেশন জ্যাকপট: পাকিস্তানী বাহিনীর ভিত কাঁপিয়ে দেয়া আত্মঘাতী মিশন (প্রথম পর্ব)

2

১৯৭১ সালের মার্চ মাস। দক্ষিণ ফ্রান্স শহরের উপকূলীয় শহর তুঁলো বন্দরে পাকিস্তানী সাবমেরিন পিএনএস ম্যানগ্রোতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল ৫৭ জন নাবিক যার মধ্যে ছিলো ১৩ জন বাঙ্গালী। প্রশিক্ষণ চলাকালীন তারা শুনতে পায় ২৫-শে মার্চের রাতে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক মাতৃভূমি বাংলার বুকে আঘাত হানার সংবাদ। বর্বর গণহত্যার কথা শুনে তাঁরা আঁতকে উঠলেন। দেশমাতৃকার এহেন বিপদে চুপ করে থাকাটা সন্তানের পক্ষেঅসম্ভব। প্রশিক্ষণস্থল হতে পালিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন তাঁরা। তবে দূরত্ব সম্পর্কে বলতে গেলে চোখ কপালে উঠার মতোই। ফ্রান্স হতে স্পেন, এরপর রোম। ওইখান থেকে জেনেভা হয়ে ভারত..!! শুধুমাত্র দেশমাতৃকার টানেই অদ্দুর পথ পাড়ি দিতে তাঁরা রাজি হয়ে গিয়েছিলো। দেশপ্রেমকে তাঁরা অস্ত্র বানিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিলো পাক হানাদার বাহিনীর মেরুদণ্ড, গতিশীল করেছিলো দেশের যুদ্ধের পথ, রুখে দিয়েছিলো পাক হানাদারের বিদেশি সাহায্যের পথ। সেদিনের উদ্যম সাহসীরা সঞ্চার করেছিলো এক স্বপ্নের যেখানে রচিত হচ্ছিলো লাল সবুজের মাঝে একটি দেশের অস্তিত্ব যার নাম বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ
Source: Wikipedia, the free encyclopedia

দামাল ছেলেগুলো ছিলো

১. গাজী মোঃ রহমতউল্লাহ। (বীর প্রতীক, পরে লেফটেন্যান্ট), চিফ রেডিও আর্টিফিসার।

২. সৈয়দ মোঃ মোশাররফ হোসেন। (ইঞ্জিনিয়ার আর্টিফিসার)

৩. আমিন উল্লাহ শেখ। (বীর বিক্রম)

৪. মোঃ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। (বীর উত্তম পরে কমোডোর), রেডিও অপারেটর।

৫. মোঃ আহসানউল্লাহ। (বীর প্রতীক), ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক্যাল।

৬. আবদুর রকিব মিয়া। (বীর বিক্রম এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), ইলেকট্রিক্যাল মেকানিক।

৭. জ. আবিদুর রহমান। (বীর বিক্রম), স্টুয়ার্ড।

৮. বদিউল আলম। (বীর উত্তম)

সুত্রপাত:

সময়কাল ১৯৭০-৭১। ফ্রান্স হতে “সাবমেরিন ম্যানগ্রো” কিনে নেয় পাকিস্তান। উক্ত সাবমেরিনের একজন নাবিক মোঃ আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী। পেশায় একজন সাবমেরিনার হলেও তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিলো তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা যিনি পরবর্তীতে একজন বীর উত্তম ও বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত হোন। স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ববর্তী ফ্রান্সের তুঁলো বন্দরে প্রশিক্ষণরত ১৩ জন বাঙালীর মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। ৩১-শে মার্চ প্রশিক্ষণ শেষে ১ এপ্রিল তাঁদের ওই সাবমেরিন চালিয়ে পাকিস্তান যাওয়ার কথা থাকলেও ওয়াহেদ চৌধুরীর হঠাৎ পরিকল্পনায় বদলে যায় দৃশ্যপট। ২৬ শে মার্চ গণহত্যার কথা জানার পরপর তাঁরা কষতে থাকেন পরিকল্পনার ছক তবে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে। তিনি সবাইকে পরিকল্পনার ব্যাপারে জানাতে লাগলেন পৃথকভাবে যাতে কোনভাবেই ঘটনার সাক্ষী থেকে না যায়। বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপনে চলতে থাকে কারণ তাঁদের বাইরে কেউ জানতে পারলে নিশ্চিত বিদ্রোহী হিসেবে গণ্য হবে এবং যার ফলাফল নির্ঘাত ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড।

 

বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোদের আক্রমণের পূর্ব মুহূর্তের একটি দৃশ্য
বাংলাদেশের নৌ-কমান্ডোদের আক্রমণের পূর্ব মুহূর্তের একটি দৃশ্য
Source: thedailystar.net

তুঁলো বন্দর হতে পলায়ন:

একাধিক বৈঠকের পর স্থির করা হয় গোপনে পালাতে হবে তাঁদের। কোনো ধরণের সন্দেহের উদ্রেক যাতে না হয় সেজন্য তাঁরা একে অপরের সাথে স্বাভাবিকের মতো চলাফেরা এবং ব্যবহার বজায় রাখতো। আরো বাড়তি সতর্কতার খাতিরে অন্যদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক কাটাতে বাঙালী নাবিকদের সব মালপত্র নেভাল মেস হতে সাবমেরিনে তুলে নেয়া হয়।

তবে শেষমেশ ১৩ জনের মধ্যে ৯ জন জাহাজ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের ব্যাপারে সম্মত হলেন এবং গঠন করা হল নৌ উইং বা নৌ কমান্ডো বাহিনী। বাকি চারজনের পরিবার পাকিস্তানে থাকায় তারা পাকিস্তানের বিপক্ষে যেতে নারাজ ছিলো। তবে তারা প্রতিজ্ঞা করেছিলো পরিস্থিতি যাই হবে হোক তারা কোনদিনও বিদ্রোহী বাঙালীদের সম্পর্কিত কোনকিছুই ফাঁস করবে না।

সময় ২৭-শে মার্চ, ১৯৭১। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বিকেল পাঁচটায় তাঁরা ৯ জন মিলিত হয় পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ধারণের জন্যে।

ওইদিকে পরিকল্পনাকারীর মধ্যে আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী এবং আবদুর রকিব মিয়া জাহাজের কি-বক্স হতে লকারের চাবি নিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং পাসপোর্ট সংগ্রহে নিয়ে নেন। এখানে তাঁরা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। বাঙালী যারা ছিলো তাঁদের পাসপোর্ট আনার সময়ে বুদ্ধি করে নিয়ে আসলেন সকল প্রশিক্ষণরত নাবিকদের পাসপোর্ট কারণ শুধুমাত্র বাঙালীদের পাসপোর্ট নিয়ে আসলে বিদ্রোহের ব্যাপারটা সহজেই অনুমেয় হতো। পরেরদিন বিমানের টিকেট কেনার উদ্দেশ্য গোপন রেখে আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী এবং বদিউল আলম জাহাজ হতে ছুটি নিয়ে নেন কিন্তু এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশনে বিপদের আশংকা করে পরিকল্পনা বাতলে রেলপথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

সময় ৩১-শে মার্চ ১৯৭১। তুঁলো বন্দর ছেড়ে পালানোর দিন। এক এক করে মুক্তিকামী বাঙালী অফিসাররা কেনাকাটা করার কথা বলে বেরিয়ে পড়েন সাবমেরিন হতে। ট্রেন ছাড়বে রাত এগারোটায়। ইতিমধ্যে সাবমেরিনে থাকা কিছু আফ্রিকান মেরিনারকে বাঙালীদের সিদ্ধান্তের কথা জানালে তাঁরাও সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন এবং একে একে ছোট ব্যাগ বন্দরের বাইরে পাঠাতে শুরু করে তাঁরা। বাঙালী নাবিকদের মারশেঁতে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন আফ্রিকান বন্ধুরা।

চট্টগ্রাম পোর্টে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত জাহাজ
চট্টগ্রাম পোর্টে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত জাহাজ
Source: প্রাণের ৭১

ইতিমধ্যে ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে আসলেও সঙ্গী আবদুল মান্নানের কোন দেখা নেই। চরম উদ্বেগের জন্ম নেয় অন্যান্য সঙ্গীদের মধ্যে এই ভেবে তিনি ধরা পড়লেন কিনা চিন্তা করে। বলাবাহুল্য, তিনি পথ ভুলে লন্ডনে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে সময় থেমে নেই, একে একে ৮ জন সবাই বসে পড়ে ট্রেনের কামরায়। সকাল আটটায় জেনেভা শহরে প্রবেশ পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ভিসা না থাকার দরুন তাঁদের ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। বিভিন্ন ধরণের যুক্তি উপস্থাপন করার পরেও কোনভাবেই ছাড় দিতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে পালিয়ে আসার ব্যাপারটা জানাজানি হলে পাকিস্তান দূতাবাসকে জানানো হলে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। ফলশ্রুতিতে ইমিগ্রেশন সংলগ্ন কামরায় বন্দি তাঁরা, পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের হাতে। বেশ সময় পার হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে তাঁদের ফ্রান্সে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। আসল পরিচয় জেনে যাওয়ার চেয়ে বরং ফ্রান্সে ফেরত যাওয়াটা অনেক নিরাপদ ভেবে তাঁরা যারপরনাই খুশি।

বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা প্যারিসে ফিরে আসেন। বারবার ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগের ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। পরক্ষণে তাঁরা লিয়ন শহরে আত্মগোপন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এদিকে পাকিস্তানী কর্মকর্তাগণ জেনে যায় বাঙালী অফিসারদের পালিয়ে যাওয়ার কথা তবে তাঁরা যাত্রা বিলম্ব না করে তুঁলো বন্দর হতে সাবমেরিন নিয়ে রওনা দেয়। তবে সাবমেরিন স্পেনের বন্দরে পৌঁছামাত্র ফ্রান্স কর্তৃপক্ষকে পালিয়ে যাওয়া বাঙালী অফিসারদের কথা অবহিত করলে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে খবরটা। গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ তৎপর বাঙালী অফিসারদের খোঁজে। বাঙালী অফিসাররা ভারতীয় পর্যটক পরিচয়ে লিয়নের একটি হোটেলে উঠে তবে ভাগ্য নিতান্তই খারাপ হওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের পাসপোর্ট দেখতে চায় এবং পরে দেখাতে না পারায় হোটেল ত্যাগের নির্দেশ দেয় তাঁদের। একের পর এক হোটেলে তাঁরা আশ্রয় নিতে ব্যর্থ হলেন ভিসা এবং পাসপোর্ট প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়ে। তাঁরা বুঝতে পারলো ফ্রান্সে থাকা সম্পূর্ণ অনিরাপদ। বহুকষ্টে পরিচয় গোপন রাখার স্বার্থে দ্বিগুণ অর্থের বিনিময়ে এক মহিলার হোটেলে ঠাঁই হলো তাঁদের। দিনের বেলা হোটেলে অবস্থান করে রাতের বেলা দলে বিভক্ত হয়ে ফ্রান্স হতে অন্য দেশে যাওয়ার পথ খুঁজতেন তাঁরা।

ভাগ্য সহায় হলো একসময়। লিয়নের একটি টুরিস্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে গাজী মোঃ রহমতউল্লাহ জানতে পারেন এক চমকপ্রদ সংবাদ। তিনমাসের জন্য পাকিস্তানি নাগরিকগণ ভিসা বিহীন স্পেনে প্রবেশ করতে পারবে। হোটেলে ফেরার পথে একটি পর্যটক গাইড এবং ম্যাপ কিনে  তিনি তাৎক্ষণিক খবরটি তাঁর দলের সাথে আলোচনা করেন।

পরেরদিন স্পেনের সীমান্তে ইমিগ্রেশনে পাকিস্তানি পাসপোর্ট দেখাতেই ঢুকার অনুমতি পেয়ে যায় তাঁরা। সেখান হতে বার্সেলোনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় ঘটে যায় আরেক বিপত্তি। ভুলবশত তাঁরা দুই গ্রুপ উঠে পড়েন দুইটি ভিন্ন ট্রেনে। ফলস্বরুপ ভিন্ন সময়ে গিয়ে পৌঁছেন বার্সেলোনা। ঠিক দুইদিন বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরার পরে একে অপরের দেখা পান। তাঁরা বুঝতে পারেন নতুন শহরটাও তাঁদের জন্য নিরাপদ নয় কারণ গোয়েন্দা তল্লাশি এখানেও চলছে। দেরী না করে তাঁরা মাদ্রিদে ভারতীয় দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। ওইখানে চার্জ দ্যা এফেয়ার্স মিঃ বেদির সঙ্গে দেখা করে আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করে জানতে পারেন, পলায়নরত সৈনিকেরা চাইলেই প্যারিসের ভারতীয় দূতাবাসে আশ্রয় নিতে পারতো কারণ সাবমেরিন হতে পালানোর খবর প্রচারিত হওয়ার পর সব ভারতীয় দূতাবাসে জানিয়ে দেয়া হয় পলাতকদের সন্ধান পাওয়া মাত্রই যেনো তাঁদের দিল্লী নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়। অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে আসে দলের মাঝে। এতদিনের দৌঁড়ছুট ফুরিয়ে এলো বলে।

অপারেশন জ্যাকপট - ১৯৭১
অপারেশন জ্যাকপট – ১৯৭১
Source: রোমাঞ্চকর সামরিক বিষয়

এরপর যাবতীয় ব্যবস্থার করে বিমানে উঠে পড়লো বাংলার দামাল ছেলেরা। ইতিমধ্যেই মাদ্রিদে একটি সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় দূতাবাসের প্রতিনিধিরা তাঁদের সম্পর্কে জানিয়ে দেয় আর বিবিসি সংবাদটি পৌঁছে দেয় সারাবিশ্বে। রোমে অবতরণের সাথেসাথেই সাংবাদিকরা তাঁদের ঘিরে ধরে কারণ এক সাংবাদিকের জবাবে বিদ্রোহী নাবিক বলেন,

“আমরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্যই ভারত হয়ে বাংলাদেশে যাবো। মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধ করবো।”

এদিকে পাকিস্তানী দূতাবাস তাঁদের নিজেদের নাগরিক বলে সরিয়ে ফেলার পাঁয়তারা করলে ভারতীয় দূতাবাস তৎক্ষণাৎ তা নশ্চাৎ করে দিয়ে একটি হোটেলে তাঁদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেন এবং কড়া পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করে দেন এবং সুইস বিমানে ভারতের উদ্দেশ্যে চড়ে না বসা পর্যন্ত কারোও কথায় কান না দিতে সতর্ক করে দেন। তবে পাকিস্তানীদের তৎপরতা বন্ধ নেই। বিভিন্ন রকমের বাধা, হরেকরকমের অনুরোধ-প্রলোভন দেখিয়ে যাচ্ছে তাঁদের।

তবে দামাল ছেলেদের বুকের পুরোটা অংশ জুড়ে রয়েছে মাতৃভূমিকে হানাদারদের কবল হতে মুক্ত করার স্বপ্ন। সব ধরণের প্রলোভন ঠেলে তাঁরা এগিয়ে চললো এবং বিমানে উঠে পড়লো। একেকজনের মন তখন পড়ে আছে মাতৃভূমির মাটিতে। একটা সময় জেনেভা হতে সুইস বিমানটি গিয়ে পৌঁছাল বোম্বে বিমানবন্দরে। নৌ-কমান্ডোরা পা রাখলো ভারতের মাটিতে। এখান থেকেই তাঁদের প্রস্তুতি নিতে হবে দেশ স্বাধীনের।

(চলবে……….)

দ্বিতীয় পর্ব এখানে পাবেন – ক্লিক করুন 

Source Featured Image
Leave A Reply
2 Comments
  1. Xyeqvo says

    rybelsus 14mg tablet – desmopressin online order desmopressin ca

  2. Ujenoh says

    order lamisil 250mg generic – terbinafine brand griseofulvin price

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More