জলের আকার: গিলেরমো দেল তেরোর এক ঐশ্বরিক সৃষ্টি

দ্য শেপ অফ ওয়াটার

34

আমার মুভি রিভিউয়ের টাইটেল পড়ে আপনি হয়তো হকচকিয়ে উঠতে পারেন যে, “জলের আকার” নামক গিলেরমো দেল তেরো আবার কোন সিনেমার সৃষ্টি করলেন। তবে আপনি যদি নিজেকে মাঝারি সারির সিনেমা বোদ্ধা বলেও গণ্য করে থাকেন, তাহলে এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা, আজ আমি গিলেরমোর একদম সাম্প্রতিককালের বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো অনবদ্য সৃষ্টি “দ্য শেপ অফ ওয়াটার” সিনেমাটি নিয়ে কথা বলছি।

আমরা যারা সিনেমা জগত নিয়ে মোটামুটি হলেও ধারণা রাখি ও সেই জগতের বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত, সম্মাননা ও উৎসবাদি নিয়ে যাদের অল্প-স্বল্প জ্ঞান আছে, তাদের কাছে “অস্কার” শব্দটি নতুন লাগার প্রশ্নই উঠে না। আর এই বছরের অস্কার অর্থাৎ, ৯০তম অ্যাকাডেমিক এওয়ার্ড সম্পর্কে যদি আপনার জানাশোনা থাকে, এতদিনে জেনে গেছেন, গিলেরমোর এই অসামান্য শিল্পকর্ম তাকে শুধু পল টমাস, গ্রেটা গারউইগ, ক্রিস্টোফার নোলানকে পেছনে ফেলে সেরা পরিচালকের পুরস্কারই এনে দেয়নি, এর সাথে এই মুভিটিও ডানকার্ক, দ্য লেডি বার্ড, ফ্যান্টম থ্রেড, কল মি বাই ইয়োর নেইম, গেট আউট, দ্য পোস্ট ও থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিসৌরি এর মতন অতুলনীয় সিনেমাগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাজির ঘোড়া জিতে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারটি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হয়। এবারের অস্কারের আসল চমক ছিল যেন এই সিনেমাটি, অথচ অস্কার জেতার আগেও থ্রি বিলবোর্ড আউটসাইড এবিং, মিসৌরি অথবা ডানকার্কের মতো এতোটা হাইপ সাধারণ সিনেমাপ্রেমীদের কাছে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল সিনেমাটি। তারপর অস্কার হাতে উঠার পর, সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠলো যেন সিনেমাটি। তবে হ্যাঁ, সিনেমাটি নিয়ে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে যতটা পজিটিভ মতামত, তার থেকে নেগেটিভ মতামতের পাল্লা কিন্তু ভারী। অনেকে তো অস্কারের এই সিনেমাকে “সেরা চলচ্চিত্র” হিসেবে ভূষিত করার সিদ্ধান্তকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। আবার অনেকে, সিনেমাটি তাদের মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে অথবা এই সিনেমার আসল মর্মার্থ তারা উদ্ধার করতে পারেননি বলে সম্পূর্ণ দায়ভার গিলেরমোর কাঁধে চেপে দিতে ক্রুদ্ধ হয়ে উঠেছেন। আর এসব প্রেক্ষাপট বিবেক-বিবেচনায় এনে, তাও যদি একটু হলেও কারো উপকারে আসে সেই মনোবাসনা থেকেই আজকের এই সিনেমাকথনটি লিখতে বসেছি।

"দ্য শেপ ওয়াটার" সিনেমার পোস্টার
“দ্য শেপ ওয়াটার” সিনেমার পোস্টার
Source: Metawitches

একটা সিনেমাকে দর্শক মনে ঠাঁই পাবার মতো করে নির্মাণ করতে গেলে একটি অভূতপূর্ব চিত্রনাট্য, সুদক্ষ হাতের পরিচালনা, মন্ত্রমুগ্ধকর অভিনয়শৈলী, বিস্ময়কর সংগীত পরিবেশনা, চমৎকার ক্যামেরার কারসাজি ও হৃদয়স্পর্শী সংলাপ যেমন মৌলিক উপাদান, ঠিক তেমনি সিনেমার গল্পের সাথে ভারসাম্য রেখে মানানসই ও অনন্যসাধারণ একটা নামেরও ভূমিকা কিন্তু অপরিহার্য। আর সিনেমার নামকরণের ক্ষেত্রে, একধারে সিনেমার রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক গিলেরমো দেল তেরো যে কতটা কৌশলী ও চাতুর্যতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

“দ্য শেপ অফ ওয়াটার” নামটি শুনলেই, প্রথমের মাথায় যে প্রশ্নটি এসে ভর করে, সেটি হলো, “জলের আবার আকার হয় নাকি?” ছেলেবেলায় বিজ্ঞান নামক বিষয়ে আমরা সকলেই পড়েছি, “জলের ভর আয়তন আছে, কিন্তু আকার নেই”। আর গিলেরমো নাকি বলছেন, “জলের আকার!” এ কেমন অদ্ভুত কথা! কিন্তু এর অন্তর্নিহিত অর্থ যে কতটা গভীর ও তাৎপর্যযুক্ত তা তো শুধু সিনেমাটিকে গলাধঃকরণ করে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে অনুভব না করলে, বোধগম্য হয়ে উঠবে না। তাহলে চলুন, সিনেমাটিকে একজন সাধারণ সিনেমাখোরের দৃষ্টিকোণ থেকে জেনে আসা যাক।

“দ্য শেপ ওয়াটার” সিনেমাটি শুধু ২০১৭ সালেরই নয়, বর্তমান কালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য রোমান্টিক-ফ্যান্টাসি-ড্রামা ঘরানার সিনেমা। ২ ঘণ্টা ৩ মিনিট সময়সীমার এই সিনেমার প্রথম মুক্তি পায় ২০১৭ সালের ৩১ অগাস্ট ৭৪ তম ভেনিস আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ও সেরা ফিল্ম হিসেবে “গোল্ডেন লায়ন” পুরস্কার অর্জন করে নেয়। এরপর একই বছরের ১ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কের দুটো সিনেমাহলে প্রাথমিকভাবে মুক্তি পেলেও, পরবর্তীতে ৮ ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে উন্মোচন ঘটিয়েছিল। ১৯.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটির বিশ্ব জুড়ে প্রায় ১৪৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করেছে। সিনেমাটিতে মূল চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন স্যালি হকিন্স,মাইকেল শ্যানন, রিচার্ড জেকিন্স, ডগ জোনস, অক্টাভিয়া স্পেন্সার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এছাড়া সিনেমাটির সংগীত আয়োজনে ছিলেন আলেকজান্ডার দেসপ্লেট, যিনি তাঁর জাদুকরী ছোঁয়ায় সিনেমাটির শোভাবর্ধনে ভিন্ন মাত্রা সৃষ্টি করার ফলে যোগ্য দাবিদার হিসেবে সেরা মৌলিক আবহ সংগীত শাখায় অস্কার হাতে তুলে নিয়েছেন।

দুই-দুইটা অস্কার হাতে গিলেরমো দেল তেরো
দুই-দুইটা অস্কার হাতে গিলেরমো দেল তেরো
Source: www.thgeboxofficeupdates.com

এবার সিনেমার গল্পে প্রবেশের পালা চলে এসেছে। সিনেমার একদম প্রথম দৃশ্য থেকে যদি শুরু করে ধীরেধীরে গল্পের ভেতর হারিয়ে যেতে চাই, তাহলে বলতে হবে, সেটি ছিল অন্যরকম অনুভূতি সঞ্চারণ করার মতোই একটা দৃশ্যপট। সেই দৃশ্য দেখে ছেলেবেলায় ঘুমানোর সময় মা-দাদি-নানির মুখ থেকে শোনা রূপকথার গল্প মনে পড়ে যেতে পারে অনেকেরই। সেই সব রূপকথার গল্পে যেমন, “অনেক অনেকদিন আগের কথা…” দিয়ে শুরু হতো, এই সিনেমাতেও তেমনি, “যদি এ ব্যাপারে বলতাম, যদি বলতাম, কী বলতাম?!…” এর মতো কৌতূহল জাগানো সংলাপের মধ্যদিয়ে আরম্ভ হয়েছে। তারপরের বাকিটা তো অতুলনীয় এক গল্পের বহিঃপ্রকাশ। যা কিনা আহামরি কোন নাটকীয়তা অথবা অতিরঞ্জিত গল্পের চিত্রায়ন নয়, বরং খুব সাধারণভাবে অতিসাধারণ এক চিত্রকর্মের পরিব্যাপ্তি।

মুভির প্লট গড়ে উঠেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়কে কেন্দ্র করে। সেই সময়ে ব্যাল্টিমোরে একটি সাধারণ সড়কের পাশে গড়ে উঠা সিনেমাহলের উপরে অবস্থিত বাড়ির একটি ছোট এপার্টমেন্টে একাকিনী বসবাস করতো এলাইসা এস্পোসিতো নামের অতি সাধারণ থেকে আরও সাধারণ নির্বাক এক তরুণী। এলাইসার নিজের আপনজন বলতে এই দুনিয়াতে কেউ ছিল না। তবে তার সুন্দর মন, ভালবাসাপূর্ণ হৃদয় ও মুক্তমনা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পাশের এপার্টমেন্টের সমকামী একাকী বসবাসকারী মধ্যবয়স্ক চিত্রকারের সাথে খুব ভালো সখ্যতা ছিল তার। এলাইসা নিজের দৈনন্দিন জীবনের রুটিরুজির জন্য পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে ব্যাল্টিমোরের একটি গোপন সরকারি গবেষণাগারে কাজ করে থাকে। সেখানেও সহকর্মী জেলডার সাথে অনেকটা বোনের মতো সম্পর্ক তার। তাই আপাতদৃষ্টিতে বলা যায়, এলাইসা মেয়েটা বেশ সুখীই ছিল নিজের আপন ছোট ভুবনে। আসলে, মেয়েটা জানতো কীভাবে ছোট ছোট জিনিসে সুখের সন্ধান করে নিতে হয়। কিন্তু হাজার হোক, নারী হৃদয় তো। তার থেকেও বড় কথা, হোক সে বাকহীন, হোক সে ছোটখাটো পেশায় কর্মরত, কিন্তু দিনশেষে সেও একজন রক্তে- মাংসে গড়া মানবী। তারও মানসিক ও দৈহিক চাহিদা বলতে কিছু আছে। কিন্তু এলাইসাকে তার মতো করে, তার খুঁতগুলোকে মেনে নিয়ে ভালবাসবে এমন পুরুষ কোথায় পাবে সে? এমনিভাবে নিজের আপন সত্তাকে আগলে ধরে এলাইসা যখন দিনযাপন করছিল, তখন আকস্মিক তাদের গবেষণাগারে নিয়ে আসা হয় অদ্ভুত এক প্রাণীকে। বাকিদের মুখে প্রাণীটি “মূল্যবান বস্তু” নামে পরিচিত হলেও, এলাইসার নজরে সে ছিল, স্বপ্নাদেশ থেকে আগত এক “উভচর মানব”। আর সেই জলমানবকে ধীরেধীরে আপন করে নিতে উৎসুক হয়ে উঠে সে। এরপর আর কী? বাকি সবার কাছে এই উভচর মানব যতই বিপদজনক “জলদানব” হিসেবে অভিহিত হোক না কেন, এলাইসা ঠিকই চিনে নিয়েছিল, সে-ই তার স্বপ্নের মানব। কিন্তু রূপকথার অন্যান্য গল্পের মতনই এই গল্পেও ছিল তৃতীয় মানে শত্রুপক্ষের উপস্থিতি। আর এই শত্রুপক্ষ যখন এলাইসা ও তার ভালবাসার উভচর মানবকে পরস্পর থেকে আলাদা করার লীলা খেলায় মেতে উঠতে শুরু করে, তখন শুরু হয় অন্য এক ভালবাসার সংগ্রামের গল্প।

সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে এলাইসা ও উভচর মানব
সিনেমার একটি গানের দৃশ্যে এলাইসা ও উভচর মানব
Source: Theflimexperience.net

সিনেমাটি সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলতে চাই, যেগুলো একে আসলেই এক অপূর্ব সৃষ্টি হিসেবে সিনেমাপ্রেমীদের থেকে শুরু করে সিনেমা সমালোচকদের সামনে তুলে ধরতে পারে বলে আমি মনে করি।

প্রথমত, মুভির নামকরণের কথা যদি বলতে চাই, তাহলে বলতেই হয়, গিলেরমো এই ক্ষেত্রে শতভাগ সফল। জলের যেমন কোন আকার নেই, ভালবাসারও ঠিক তাই। জলকে যেই পাত্রে রাখা হয়, জল সেই পাত্রেরই আকার ধারণ করে থাকে। আর তাই তো, এলাইসা ও উভচর মানব পরস্পরের সকল অমিল, জাতি-বর্ণের কথা তো বাদই দিলাম, এমনকি প্রজাতিগত ভেদাভেদ ভুলে যখন পরস্পরের হৃদয়ে ভালবাসা নামক অমৃত ঢেলে দিয়েছিল, তখন হৃদয় অতশত না বুঝে সেই অমৃতকে আপন করে নিয়েছিল। কারণ ভালবাসা কী আর বাহ্যিক রূপ অথবা বাস্তবিকতা বুঝে? ভালবাসাও যে জলের মতো আকারহীন।

দ্বিতীয়ত, এলাইসার একটা অতীত রয়েছে, যেটি নাকি পুরো সিনেমা জুড়ে ছিল অপ্রকাশিত ও উপেক্ষিত। শুধু তাকে যে নদীর কিনারে কুড়িয়ে পাওয়া হয়েছিল, এইটুকুই দর্শকদের সামনে তুলে ধরা হয়। কিন্তু সিনেমার একদম শেষ দৃশ্য যখন উভচর মানব এলাইসাকে নিয়ে চিরতরে নদীতে ঝাপ দেয়, তখন এলাইসার গলায় দাগ, যেগুলোকে এতদিন সবাই তার বাকশক্তি হারানোর কারণ বলে জেনে এসেছিল, সেগুলো থেকে ফুলকা বের হয়ে আসার ব্যাপারটা একটু আশ্চর্যজনকই কি নয়? তারমানে কি, এলাইসাও উভচর মানবী ছিল? যদিওবা যেহেতু এটি ফ্যান্টাসি ঘরানার মুভি ও গিলেরমো এর সমাপ্তির কোন বিশেষ ব্যাখ্যা প্রদান করেননি, তাই এটির বিবেচনা দর্শকেরা নিজেদের অভিমত অনুযায়ী করে নেওয়াই ভালো।

তৃতীয়ত, সিনেমার আসল সারমর্ম কী ছিল, সেটি নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতেই পারে। আমার যতদূর মনে হয়েছে, গিলেরমো শুধু এইটুকুই বোঝাতে চেয়েছেন, জাতি-শ্রেণী-বর্ণ ইত্যাদি বৈষম্য যুগের পর যুগ, কালের পর কাল ধরে চলে আসছে ও আসবেই। জগতে উদার ও সংকীর্ণ, ভালো ও মন্দ এবং দয়ালু ও বর্বর উভয় প্রকৃতির মানবজাতির বসবাসের ধারা অব্যাহত থাকবেই। আর দুষ্টের দমনের জন্য অলৌকিক কোন সৃষ্টির আগমনও ঘটবে সেটিও চিরন্তন সত্য। সেই উভচর মানবও ঠিক তেমনি কোন এক “অলৌকিক সৃষ্টি”।

সিনেমাটি অস্কার পাবার পর থেকেই নানা জনের নানা তর্ক-বিতর্কের সম্মুখীন হয়েই চলেছে। অস্কারের আগে মুভির জনপ্রিয়তা যতটা ছিল, অস্কার পাবার পর সেটি যেন হঠাৎ করে দশ গুণ বেড়ে গেলো। কারো চোখে গিলেরমোর সেরা সৃষ্টি, আবার কারো কাছে অস্কার পাবার অযোগ্য হিসেবে ঘোষিত এই সিনেমাটি আর যাই হোক না কেন, বর্তমানে সিনেমাজগতের আলোচনায় একদম তুঙ্গে অবস্থান করছে। সিনেমা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি আর বলার প্রয়োজনবোধ করছি না। তারচেয়ে বরং পুরো সিনেমার মধ্যে যেই সংলাপটি আমার মন কেড়ে নিয়েছে, সেটি দিয়ে রিভিউটি এখানেই শেষ করছি।

“যখন সে আমার দিকে তাকায়, যে দৃষ্টি দিয়ে সে আমার দিকে তাকায়… সেই দৃষ্টি দিয়ে সে আমার ঘাটতি অথবা আমি কতটা অপূর্ণ সেসব খুঁজে বেড়ায় না। সে আমি যা তাই দেখে, আমাকে আমি যেমন ঠিক তেমনি দেখে। আমার উপস্থিতি তাকে খুশি করে তোলে। প্রতিটি বার। প্রতিটি দিন। এখন, হয় আমি তাকে প্রাণে বাঁচাতে পারি, নয়তো মরতে দিতে পারি।”

– এলাইসা।

 

The Shape of Water

IMDB Rating: 7.6/ 10

Rotten Tomatoes Rating: 92%

Personal Rating: 9.5/10

 

Leave A Reply
34 Comments
  1. MarcelZor says

    https://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

  2. RickyGrila says

    buying prescription drugs in mexico online mexico pharmacy mexican drugstore online

  3. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico

  4. RickyGrila says

    mexico drug stores pharmacies mexican pharmacy medicine in mexico pharmacies

  5. StevenJeary says

    canadian pharmacy: Large Selection of Medications from Canada – canadianpharmacymeds

  6. RickyGrila says

    п»їbest mexican online pharmacies mexico drug stores pharmacies medicine in mexico pharmacies

  7. MichaelLIc says

    http://indiaph24.store/# india pharmacy mail order

  8. RickyGrila says

    canadian pharmacy meds Large Selection of Medications from Canada pharmacy canadian superstore

  9. RickyGrila says

    mexican online pharmacies prescription drugs Mexican Pharmacy Online mexican border pharmacies shipping to usa

  10. StevenJeary says

    certified canadian pharmacy: Large Selection of Medications from Canada – canadian pharmacy online

  11. RickyGrila says

    buying from online mexican pharmacy mexican pharmacy mexico pharmacy

  12. RickyGrila says

    buying prescription drugs in mexico mexican pharmacy buying prescription drugs in mexico online

  13. RickyGrila says

    reputable indian online pharmacy buy medicines from India indianpharmacy com

  14. StevenJeary says

    cheapest pharmacy canada: canadian compounding pharmacy – canadian pharmacy online

  15. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# escrow pharmacy canada

  16. MarcelZor says

    http://mexicoph24.life/# best online pharmacies in mexico

  17. RickyGrila says

    buying from canadian pharmacies Certified Canadian Pharmacies canadian pharmacy no scripts

  18. RickyGrila says

    best canadian pharmacy canadian world pharmacy northern pharmacy canada

  19. StevenJeary says

    onlinecanadianpharmacy: Prescription Drugs from Canada – canada pharmacy reviews

  20. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# mexican pharmaceuticals online

  21. RickyGrila says

    Online medicine home delivery indian pharmacy best india pharmacy

  22. RickyGrila says

    mexico drug stores pharmacies Online Pharmacies in Mexico mexico drug stores pharmacies

  23. MichaelLIc says

    https://mexicoph24.life/# п»їbest mexican online pharmacies

  24. RickyGrila says

    my canadian pharmacy reviews canadian pharmacies reputable canadian online pharmacies

  25. RickyGrila says

    indian pharmacy paypal online shopping pharmacy india india online pharmacy

  26. MichaelLIc says

    https://canadaph24.pro/# canadian pharmacy ed medications

  27. RickyGrila says

    buy prescription drugs from india top 10 online pharmacy in india top online pharmacy india

  28. RickyGrila says

    buying prescription drugs in mexico Mexican Pharmacy Online mexican online pharmacies prescription drugs

  29. Uruhwu says

    buy metformin pills – januvia where to buy buy acarbose 25mg pills

  30. MichaelLIc says

    http://mexicoph24.life/# mexico drug stores pharmacies

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More