প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন

0

ভারতমহাদেশ- এক বিশালতার নাম যাকে নির্দিষ্টকোনো  সীমারেখায়  অংকিত করা যায়না। হাজারো ঐতিহ্য, সংস্কৃত্‌ ধর্ম বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতা এবং আধুনিকতার মিলনে এক অনন্য দেশ ভারত। হাজার উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যুগের পর যুগ অতিবাহীত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই ভারতীয় সভ্যতা।

দক্ষিন এশিয়াঃ

দক্ষিণ এশিয়া প্রাথমিক চারটি স্থান এর মধ্যে অন্যতম যেখানে মানব সভ্যতা শুরু হয় – মিশর, চীন  এবং ইরাক (টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস) -এর অনুরূপ। দক্ষিণ এশিয়ায় সভ্যতা সিন্ধু  নদীর তীরেই শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া  ভূখণ্ডের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন   পর্বতমালা, নদী এবং বিশাল ত্রিভূজীয় আকৃতির উপদ্বীপের ভারত।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
Source: Social Studies with Mr. McGinty – blogger

৫০ অথবা ৬০ মিলিয়ন বছর আগের ইন্ডিয়াঃ

প্রায় ৫০ অথবা ৬০  মিলিয়ন বছর আগে ভারত ধীরে ধীরে এশিয়ায়  বিস্তার  লাভ করে এবং হিমালয় ও হিন্দু কুশ পর্বতমালার সৃষ্টি হয়, যা আশেপাশের  এলাকা  থেকে ভারতকে বেষ্টিত করে রাখে।  উপকূলের বাইরে, খাইবার পাস পর্বতমালার মধ্য দিয়ে কেবল কয়েকটি সংকীর্ণ পথ ছিলো যা অন্যান্য মানুষকে এই ভূখণ্ডে প্রবেশে  সহায়তা করে। অন্যান্য  বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে হচ্ছে আধুনিক পাকিস্তানের সিন্ধু নদী এবং আধুনিক দিনের ভারতবর্ষের গঙ্গা নদী। সিন্ধু নদী “থর মরুভূমি” নামে একটি শুষ্ক এলাকায় অবস্থিত – এই আদ্র জলবায়ু হল বিশ্বের প্রথম মানব সভ্যতাগুলির মধ্যে অন্যতম। সিন্ধু নদীতে পানি প্রধানত হিমবাহ , গ্রীষ্মমন্ডলীয় পর্বত  এবং প্রাকৃতিক ঝরনা থেকে বেরিয়ে  আসে।  যা কৃষকদের জন্য সেচের জল হিসাবে  ব্যবহার  করা হতো বলে ধারণা করা হয়।। বর্তমানের অধিকাংশ দক্ষিণ এশিয়ায় বার্ষিক মৌসুমী বায়ুর   পরিবর্তনের ফলে প্রবল বৃষ্টিপাত হতো বলে কিছু ঐতিহাসিকরা দাবি করেন , সিন্ধু উপতক্যায় প্রবল বৃষ্টিপাত থাকায় প্রতিবছর দুটি  বড় বন্যা ঘটতো ।

প্রারম্ভিক ইতিহাসঃ

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন

দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম মানুষের কিছু কিছু অংশ আজ থেকে প্রায় ৭৫০০ বছর আগের। এই  আদিম মানুষ হাতিয়ার তৈরি করত পাথর ও কাঠের সাহায্যে এবং তাদের প্রধান পেশা ছিল পশু শিকার। পাশাপাশি বন থকে খাদ্য সংগ্রহ করা। নৃতাত্ত্বিকদের মতানুসারে প্রায় ৫০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে  দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিকাজ উন্নত হয়েছিল। ধীরে ধীরে লোকজন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে এবং গ্রামগুলি ধীরে ধীরে উন্নত হয়- অবশেষে এই গ্রামগুলি শহরে পরিণত হয় এবং বিশ্বের প্রথম মানব সভ্যতার সৃষ্টি হয়।

এই সভ্যতাটি অনেক নামে পরিচিতঃ প্রাচীন ভারত, সিন্ধু উপত্যকা, এবং হারাপ্পান সভ্যতা। ঐতিহাসিকগণ ও প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশ্বাস করেন যে সিন্ধু উপত্যকায় সভ্যতার শুরু হয়েছিল প্রায় ৩০০০খ্রিষ্টপূর্বাব্দে । খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ এর দিকে প্রাচীন ভারত ও মেসোপটেমিয়ায় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রমাণ রয়েছে। এই  প্রমাণটি প্রাচীন ভারতীয়দের  ব্যবসা বাণিজ্যের উপর চরম নির্ভরতাকে তুলে ধরে।

অন্যান্য প্রাথমিক সভ্যতাগুলির চেয়ে যে ভারতীয়রা ব্যবসা বাণিজ্যে অনেক অগ্রসর ছিলো এটা তারই প্রমাণ।

প্রাচীন ভারতঃ

প্রাচীন ভারতকে প্রায়ই হরপ্পান সভ্যতাও বলা হয় । কারণ প্রাচীন শহরগুলি হরপ্পা নামে পরিচিত ছিল। হরপ্পা ছিলো  সিন্ধু নদী উপত্যকায় প্রায় ১৫০০টি শহর এর মাঝে অন্যতম। আরেকটি সুপরিচিত শহর  যাকে মহেঞ্জোদারো বলা হয়। ঐতিহাসিকগণ প্রাচীন ভারতের  চারটি প্রধান সভ্যতাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় বলে মনে করেন এই সভ্যতাকে। এই সভ্যতা ১৯২০ সালের আগে পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি, এবং এর বেশিরভাগই একটি রহস্য ঘেরা। অন্যদিকে সিন্ধু  সভ্যতাও খুব রহস্যময় কারণ ঐতিহাসিকরা “ইন্দুস  স্ক্রিপ্ট” নামক জটিল লিখিত ভাষা এখনো অনুবাদ করতে পারেননি।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
ইন্দুস স্ক্রিপ্ট” নামক জটিল লিখিত ভাষা
Source: Realhistoryww

প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ এর মত বিভিন্ন লিখিত চিহ্ন সহ হাজার হাজার প্রতীক চিহ্ন রয়েছে যা এখনো  অনুবাদ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি । এই প্রতীকগুলির মধ্যে বেশিরভাগ নরম মাটিতে  সীলমোহর দিয়ে খোদাই করা। একটি সীল যা বর্তমানের একটি স্ট্যাম্প অনুরূপ,   নরম কাদামাটি একটি ছাপ তোলার কাজে এই সীলমোহর গুলো ব্যবহার করা হতো। সীলগুলির মধ্যে  কিছু ছিলো সিলিন্ডার আকৃতির মতো যা কখনও কখনও মাটির উপর ঘুরিয়ে ছাপ দেওয়া হতো। মেসোপটেমিয়াতে সিন্ধু স্ক্রিপ্টের কিছু  প্রতীক আবিষ্কৃত হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে তারা নিয়মিত বাণিজ্য পরিচালনা করে থাকতো এবং এটাই ছিলো তাদের প্রধান পেশা।

প্রত্নতত্ত্ববিদরা শহরগুলির ধ্বংসাবশেষ  খুঁজে পেয়েছেন যা প্রমান করে সেই সময়ের অবিশ্বাস্যভাবে  পরিকল্পিত শহরের ও তাদের শৈল্পিক ছোঁয়ার  অনির্বাণ নিদর্শন । ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে প্রতিটি বড় শহর ৮০০০০ এর মতো লোকজন বসবাস করতে পারতো, তাই  এটিকে প্রাচীন ভারতের সর্ববৃহৎ আদি  জনবহুল সভ্যতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভবনগুলি কাদামাটির-ইট থেকে তৈরি করা হয়েছিল, এটিগুলোকে একটি চুল্লির  মধ্যে পোড়ানো হয়েছিল যাতে মাটিগুলো পাথরের মতো কঠিন হয়ে যায়।  পরিকল্পনাকারিরা  শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও করেন অত্যন্ত সুনিপূণভাবে। শহরের বাড়িগুলি প্রধান সড়কের পাশেই নির্মিত হয়েছিল, কখনও কখনও বহুতলা বাড়ির হদিসও পাওয়া পায়। এবং অধিকাংশ শহরে  তাদের ঘরবাড়িতে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা ছিলো । পানি নিষ্কাশন প্রযুক্তি এতটাই সুনিপূণ ছিলো যা আজ থকে ৩০০০ বছর আগের মানুষের বিচক্ষ্ণতার পরিচয় বহন করে এবং তা আজকের দিনের আধুনিক প্রযুক্তিকেও হার মানায়। যাইহোক, অধিকাংশ মানুষ শহুরে এলাকায় বসবাস করেন নি। বেশিরভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করত চাষাবাদের জন্য।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
Source: thinglink.com

কৃষকরা হাঁস, গম, মটর, তিলের বীজ এবং তুলা সহ বিভিন্ন শষ্যের চাষ করত। পাশাপাশি পশুপাখি পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত।  পুরাতত্ত্ববিদরা  তাদের কংকালের দাঁত পরীক্ষা করার মধ্য দিয়ে আবিষ্কার করেছেন  যে প্রাচীন ভারতীয়  সেই সময়কার মানুষদের খাদ্য কি ছিল। সিন্ধু উপত্যকায় সভ্যতা যে কতটুকু পরিকল্পিত ছিল তার আরেকটি উদাহরণ হলো তাদের শস্য সংগ্রহস্থল। কিছু ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে তারা প্রায় ২০০ফুট  দীর্ঘ একটি বৃহদায়তন   শস্যাগার তৈরি করেছিল শস্য সংগ্রহ  করে রাখার জন্য। তবে, এই ভবনটিতে শস্যের কোন প্রমাণ নেই, তাই আবারও, ঐতিহাসিকরা রহস্যময় সিন্ধু ভ্যালির সভ্যতার ব্যাপারে  কিছুটা অনিশ্চিত।

প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা বিভিন্ন দিক থেকেই  মিশরীয় ও মেসোপটেমিয়ায সভ্যতা থেকে ভিন্ন ছিল। তবে সেই সময় ভারতে খুব বেশি বড় কোনো ভবন ছিল কিনা তা নিয়ে এখনো দ্বিমত রয়েছে। কেননা সবচেয়ে বড় আবিষ্কার করা ভবন টির নাম “দ্য গ্রেট বাথ” । মূলত এটি একটি জনসাধারণের ব্যবহার এর জন্য পুকুর। যা ৪০ ফুট লম্বা, ২০ ফুট চওড়া এবং প্রায় ১০ ফুট গভীর। তবে সেখানে  বৃহত্তর মন্দির বা প্রাসাদগুলির (যা কালের পরিক্রমায় অস্তিত্বহীন হয়ে যায়) উপস্থিতি বড় একটি প্রশ্ন তৈরি করে যে – প্রাচীন ভারত রাজাদের দ্বারা নাকি উচ্চ পর্যায়ের ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা শাষিত হত ? তবে এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে কিঞ্চিত বোঝা যায় যে সেখানে একটি খুব সমমাত্রিক সমাজ ছিল।  যার অর্থ দাঁড়ায় সমাজের সবাই মূলত সমান ছিল। অন্যদিকে  সিন্ধু ভ্যালিতে অস্ত্র ও সামরিক সংস্কৃতির খুব সামান্যই প্রমাণ রয়েছে। অন্যান্য সভ্যতা থেকে বড় যেই পার্থক্য তা হল  জ্যোতির্বিজ্ঞান। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ ছিলোনা বললেই চলে।

সিন্ধু উপত্যকায় ধর্ম কি ছিলো তাও রহস্যময় কারণ  সেই সময়কার ভাষাটি অনুবাদ করা সম্ভব হয়ে উঠেনি এখনো। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে তারা একটি  দেবীমাতার পূজা করতে পারে আবার একাধিক দেব-দেবীর পূজাও করতে পারে। এবং এটাও ধারণা করা হয় যে  “গ্রেট বাথ” হয়তো তাদের পূত-পবিত্রতার স্থান হিসাবে ব্যবহার করা হতো। একটি ছোট হস্তশিল্পের সন্ধান পাওয়া যায় যেখানে কোন এক  ঐতিহাসিক  যাজক  হতে পারে বলে মনে করা হয়, কিন্তু পুরাতত্ত্ববিদ এখনও এরকম কোন ধরনের মন্দির খুঁজে পায়নি।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
সিন্ধু সভ্যতা “পুরোহিত রাজা”
Source: Forskning.no

তবে সিন্ধু স্ক্রিপ্টের কিছু কিছু  চিহ্ন আধুনিক হিন্দুধর্মের   চিত্রের সাথে সম্পর্কিত, কিন্তু ঐতিহাসিকগণ এই প্রতীকগুলির সাথে একমত নন যে এগুলো আসলেই হিন্দু ধর্মের সাথে সাদৃশ্য কিনা। নিচের ছবিটিতে তিনমুখের এক লোককে দেখা যায়  যোগ ব্যায়ামরত অবস্থায় আছে।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
Source: Rudiculous Blog – WordPress.com

এটি ধ্যানের একটি ব্যায়াম ।এই যোগব্যায়াম তাদের আধ্যাত্মিক অনুশীলন এর প্রতীককেই নির্দেশ করে। বিশেষত এই রীতিনীতি হিন্দু ধর্মের মধ্যে ব্যবহৃত হতো প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। তবে একসময় বিশাল ও শক্তিশালী সভ্যতার উত্থান হওয়ায় শেষ হয়ে যায় এই প্রথার।

ইতিহাসবিদদের মতানুসারে (যদিও অনিশ্চিত এখনো)  কয়েকটি তত্ত্ব আছে যে একটি প্রকান্ড ভূমিকম্প এই শহরকে বিধ্বস্ত করে এবং নদী পথ পরিবর্তিত হয়ে যায়, যা তাদের একটি নতুন অবস্থান সরে যেতে বাধ্য করে। আরেকটি তত্ত্ব দাবি করেছে জলবায়ু পরিবর্তিত হতে পারে যা তাদেরকে সরাতে বাধ্য করে। অন্যদিকে  আরেকটি তত্ত্ব প্রস্তাব দেয় যে কিছু  আগ্রাসী সৈন্য বাহিনী কয়েকটি শহর ধ্বংস করে যার ফলে বেশিরভাগ মানুষ  সরে যেতে বাধ্য হয়। তবে এটা আমরা নিশ্চিতভাবে জানি যে  সভ্যতা এখানে বিদ্যমান ছিলো তা ধ্বংস হয় এবং নতুন কোনো মানুষ এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে।

বৈদিক কালঃ

বৈদিক যুগের ভারতীয় ইতিহাসকে “অন্ধকার যুগ”বলা হয়। প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, ইন্দো-ইউরোপীয়রা ভারতে চলে আসে। এই মানুষগুলো কৃষ্ণ সাগর এবং ক্যাস্পিয়ান সাগর  এর মধ্যবর্তী এলাকা থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন

৪০০০ ও ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে, ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে ইন্দো-ইউরোপীয়রা স্থানান্তরিত হতে থাকে। কিছু মানুষ ইউরোপ গিয়েছিল রোমানস্ এবং গ্রিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে; আবার  কিছু মানুষ তুরস্কের মধ্যে স্থায়ী বসবাস শুরে করে এবং পরবর্তীতে তারাই ‘হিট্টিট’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কিছু ইরানে বসবাস শুরু করে  পরবর্তীতে তারাই পার্সিয়ান জাতি হয়ে ওঠে, এবং  অন্যরা দক্ষিণ-পূর্ব থেকে পাকিস্তান ও ভারতে প্রবেশ করে।  ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত উত্তর ভারতে আর বড় কোনো স্থানান্তর ঘটেনি। তবে  ভারতে, এই ইন্দো-ইউরোপীয়দেরকে আর্য বলা হয়। কিছু কিছু লোক ইন্দো-ইউরোপীয়দের এই আগমনের বিরোধিতা করেছেন, তবে, এই ইন্দো-ইউরোপীয় জনগণ এর (সংস্কৃত ভাষার অনুরূপ) কথ্য ভাষাটি গ্রিক ও লাতিনের মতো অন্যান্য ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষারই অনুরূপ। তাই এই এলাকায় কথিত ভাষায় ব্যবহারিত অনেক শব্দ তাদের ভাষার সাথে মিলে যায়।

অন্যদিকে  কিছু  ডি,এন,এ এর  প্রমাণ এই অঞ্চলে ইন্দো ইউরোপীয়দের আগমনকে  সমর্থন করে। তবে, এটি ইতিহাসের এমন একটি তত্ত্ব যার সাথে অনেক ঐতিহাসিকরা একমত না।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
Source: বিবেকভারতী – WordPress.com

তাদের কথ্য ভাষা ছাড়াও, ভারত-ইউরোপীয়রা প্রায় একই ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে ভারতে নিয়ে আসে। হিন্দুধর্মের গল্প , বিশ্বাসসমূহ এবং গানের একটি সংগ্রহ লিপিবদ্ধও করা হয়েছিল যা মূলত “বেদ” নামে পরিচিত।  সংস্কৃত নামক একটি ভাষায় বেদকে প্রথম লেখা হয়েছিলো । সংস্কৃত একটি কথ্য ভাষা ছিল।

ইন্দো-ইউরোপীয়রা প্রথমদিকে  সিন্ধু নদী বরাবর বসতি স্থাপন করে। ধীরে ধীরে তারা স্থানীয় ভারতীয় লোকেদের সাথে বসতি স্থাপন করে এবং মিশতে শুরু করে। এবং এই সময়েই ভারতে প্রথম বর্ণ প্রথার সূচনা হয়েছিল। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ইন্দো-ইউরোপীয়রা তাদের সমাজও অনুরূপ বিভাজন করেছিল। কিন্তু ঐতিহাসিকরা এই বিষয়ে একমত নন যে, কীভাবে বর্ণ প্রথার জন্ম হয়েছিল।

প্রাচীন ভারত সভ্যতার রহস্যের উত্থান-পতন
Source: Timetoast

এই সকল জাতিভেদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ব্রাক্ষ্মণ ও পুরোহিতরা। প্রতিটি জাতের মধ্যে কয়েক ডজন ছোটো গোষ্ঠী রয়েছে। বিভিন্ন গোত্র থেকে আসা মানুষ একসঙ্গে খেতে পারতোনা। সাধারণত একজন জাতের মানুষ অন্য বর্ণের  মানুষকে বিয়ে বা বন্ধুত্ব করতো না। নিচু জাতের মানুষদের মন্দিরগুলিতে অনুমতি দেওয়া হয় নি। তবে আজকের দিনের আধুনিক ভারত এই বর্ণ প্রথাকে নিষিদ্ধ করেছে এবং শহুরে এলাকায় অধিকাংশ লোক জাতিগত এই ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে। যদিও সংস্কৃতি পূজারী গ্রামাঞ্চলে বর্ণবিদ্বেষী মনোভাব এখনও বিদ্যমান।

ভারতীয় রাজবংশ এবং বিদেশী আক্রমণসমূহঃ

প্রায় ১০০০ বছর ধরে ইন্দো-ইউরোপীয় ও আদিবাসীরা ভারতীয় উত্তরের অঞ্চলটিতে বসবাস করেছিলো। শহর ও নগর এর  সংখ্যা ও আকার  ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে । ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে  এটি ধীরে ধীরে ১৬ টি  রাজ্যে পরিণত হয় যা মহা-জনপ্রদেশ  নামে পরিচিত হয়। এই সময়েই সিদ্ধার্থ গৌতম সত্যের সন্ধানে  রাজকুমার ঊপাধী ত্যাগ করেন। রাজকীয় প্রাসাদ থেকে বের হয়ে সিদ্ধার্থ  গৌতম লক্ষ্য করেছিলেন যে, অধিকাংশ মানুষ জীবনযাপনে  নিদারূণ যন্ত্রণা ভোগ করছিলো। তিনি সমাজের  শাসক শ্রেণী যাজকদের উপড় বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন  তাই তিনি তাঁর রাজকীয় জীবন ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং প্রকৃত সত্য খুঁজে বের করার জন্য একটি যাত্রা শুরু করেছিলেন। পরবর্তিতে তিনি সিদ্ধি লাভ করে সারা বিশ্বে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন।

৫২০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে, পারসিয়ানরা আক্রমন করে উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশের বেশ কিছু অংশের দখল নিয়ে  নেয়। এই বিজয়  অর্জিত হয় মহান ফার্সি নেতা দারিয়াস এর অধীনে। পারস্য শাষকরা এই অঞ্চ্ল প্রায় ২০০ বছর ধরে শাষন করে। পরবর্তিতে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট দক্ষিণ এশিয়া আক্রমন  করেন। আলেকজান্ডার এবং তার সেনাবাহিনী অর্ধ পৃথিবী পাড়ি দিয়ে ভারত বর্ষে পৌঁছায়। তাই তারা পূর্ন শক্তি নিয়ে যুদ্ধ করার অবস্থাতে ছিলোনা। দীর্ঘপথ পাড়ী দিয়ে তারা সম্পূর্ণভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলো।  এবং এটি ছিল ভারত  যেখানে এসে  আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী অবশেষে যুদ্ধ প্রত্যাখ্যান করেছিল, এবং আলেকজান্ডার গ্রেটকে গ্রীসে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল।  প্রাচীন মিশর, প্রাচীন ইরাক (মেসোপটেমিয়া) এবং প্রাচীন ভারত জুড়ে গ্রিক বিজয় পতাকা এবং পার্সিয়ান বিজয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিলো শুধুমাত্র   প্রাচীন চীন ব্যতিত। আর এর পিছনে প্রধান কারণ ছিল ভৌগলিক  বাঁধা । প্রাচীন চীন সভ্যতার বিস্তৃত মরুভূমি এবং উচ্চ পর্বত দ্বারা   অন্যান্য এলাকা থেকে পৃথক করা ছিলো। । চীন ও বাকি বিশ্বের মধ্যে সিল্ক রোডই ছিলো প্রধান বাণিজ্যিক রাস্তা যা প্রায় ১০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ৪ টি প্রধান সভ্যতার মাঝে সংযোগস্থাপন করেছিলো।

পার্সিয়ান ও গ্রিকরা খাইবার পাসের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল, যেমনটা করেছিল ইন্দো-ইউরোপীয়রা। পারসিয়ানরা ভারতে্র সরকার ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে  কিছু গ্রীক উত্তর-পশ্চিমে পাকিস্তানে অবস্থান করে তাদের সংস্কৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করে, যদিও হিন্দুধর্মের ধর্ম ভারতে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাব বিস্তার করেছিল।তবে সিন্ধু উপত্যকায় কার প্রভাব ছিলো তা সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি এখনো, হয়তো সময় এবং প্রত্নতত্ত্ব কোনো একদিন  এই রহস্যের সন্ধান আমদের দিতে সক্ষম হবেন।

Source:

http://www.ancient-origins.net

https://bn.wikipedia.org

Leave A Reply

Your email address will not be published.

sativa was turned on.mrleaked.net www.omgbeeg.com

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More